বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরপরই মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে নিজেরাও আত্মগোপনে চলে গেছেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। চেষ্টা করেও যারা দেশত্যাগে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। দলের দুঃসময়ে নেতাদের পাশে না পেয়ে আতঙ্ক আর হতাশায় দিন পার করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তাদের অনেকে গ্রেপ্তার আতঙ্কে রযেছেন। ফলে দীর্ঘ ১৫ বছর রাজপথ দাঁপিয়ে বেড়ানো নেতাকর্মীরা অজানা শংঙ্কায় দিন পার করছেন।

দীর্ঘ ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে বিনাভোটে সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এলাকায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমিদখল, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জড়িয়ে অনেকে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দেশে আলিশান বাড়ি, গাড়িসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়লেও অনেকে মোটা অংকের অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। অর্থ সম্পদ ও বাড়ি-গাড়ি ফেলে এতটা আকস্মিকভাবে দেশ থেকে পালাতে হবে, এমনটা তাদের কল্পনায়ও ছিল না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্র আন্দোলনে দেশ যখন উত্তাল, ঠিক সেই সময়ে নিজেকে সেইভ জোনে নিতে জুলাই মাসের শেষ দিকে বিদেশে পাড়ি জমান মন্ত্রি-প্রতিমন্ত্রীসহ কয়েক ডজন হেভিয়েট নেতা। শুরুতে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার তালিকায় রয়েছেন বরিশালসহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের আওয়ামী লীগের অভিভাবক হিসেবে পরিচিত আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি এক দফায় রূপ নিলে তড়িঘড়ি করে ছোট ছেলে আশিক আব্দুল্লাহকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান তিনি। আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর অনুপস্থিতি বরিশালের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মিদের হতাশায় ফেলে দেয়। বিগত দিনে যতবারই আওয়ামী লীগের দুঃসময় এসেছে, ততবারই তিনি ভারতে পালিয়ে নিজেকে রক্ষা করেছেন। বরিশাল-৪ আসনের এমপি পংকজ দেবনাথও নিরাপদে ভারতে পালিয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকে।

অনেক চেষ্টা করেও দেশ থেকে পালাতে পারেননি বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর বড় ছেলে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। এছাড়া আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছোট ভাই বরিশাল সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাতও দেশ থেকে পালাতে পারেননি। বর্তমানে চাচা-ভাতিজা (খোকন-সাদিক) দেশের মধ্যে সুরক্ষিত স্থানে আত্মগোপনে আছেন বলে মনে করছেন তাদের বিশ্বস্তজনেরা।

একইভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে আছেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দুই বারের সংসদ সদস্য তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুছ, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বরিশাল জেলা পরিষদের প্রশাসক একেএম জাহাঙ্গীর হোসেন, বাকেরগঞ্জ উপজেলা ও পৌরসভা নিয়ে গঠিত বরিশাল-৬ আসনে প্রথমবার নৌকার টিকিট নিয়ে এমপি হওয়া অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আব্দুল হাফিজ মল্লিক। সরকার পতনের পর তাদের খোঁজ নেই। এলাকার ঘনিষ্ঠজনরাও তাদের অবস্থান জানেন না।

শুধু এই নেতারা নন, বরিশালের ১০ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ৬টি পৌরসভার মেয়র, এসব এলাকার আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের খোঁজ নেই। 

এদিকে, অনেকে ভারতে পালাতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২২ সেপ্টেম্বর সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.

) জাহিদ ফারুক শামীম রাজধানী ঢাকায় র‌্যাবের হাতে আটক হয়ে কারাগারে রয়েছেন। বরিশাল-৫ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুক ২০১৯ সাল থেকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। গত ২২ আগস্ট বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে ঢাকার নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একইভাবে বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. শাহে আলম তালুকদার গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর গুলশান এলাকায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। গত ২৬ অক্টোবর ঢাকা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাত ভাই এবং সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছেলে সেরনিয়াবাত মঈন আব্দুল্লাহকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত ২৯ অক্টোবর গৌরনদী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারিছুর রহমানকে ঢাকার রামপুরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

একইভাবে গত ১৪ নভেম্বর বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনের সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। ২৬ ডিসেম্বর ঢাকার কাকরাইলের বাসা থেকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা বলরাম পোদ্দারকে গ্রেপ্তার করে রমনা থানা পুলিশ।  

এছাড়াও বেশ কিছু স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার হওয়ায় এবং অধিকাংশ নেতা আত্মগোপনে থাকায় তুণমূলের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হতাশায় পড়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘‘কীভাবে নিজেদের সেইভ করব জানি না। ক্ষমতায় থাকাকালীন শুধু নেতাদের হুকুম পালন করেছি। তারা শত শত কোটি টাকার মালিক হয়ে আত্মগোপনে আছেন, আর আমরা কর্মীরা পালাতে না পেরে মার খাচ্ছি। রাতে ভয়ে নিজ বাশায় ঘুমাতে পারি না। জানি না আগামীতে কী অপেক্ষা করছে।’’
 

ঢাকা/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ র প ত র কর ন ত কর ম আসন র স র আওয় ম হয় ছ ন কর ম র উপজ ল করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রীক পুরাণের যুদ্ধের দেবী এথেনা সম্পর্কে কিছু চমকপ্রদ তথ্য

গ্রীক পুরাণের যুদ্ধের দেবী এথেনা। তিনি জ্ঞান, কৌশলগত যুদ্ধ, সভ্যতা, আইন ও ন্যায়বিচার, শক্তি, শিল্প ও কারুশিল্পের দেবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এথেনা শুধুমাত্র যুদ্ধের দেবী ছিলেন না, তিনি যুদ্ধের বুদ্ধিবৃত্তিক ও কৌশলগত দিকটি উপস্থাপন করতেন। তিনি সাধারণত বীরদের অনুপ্রাণিত করতেন এবং ন্যায়সঙ্গত লড়াইয়ে সহায়তা করতেন।তিনি বয়ন, সেলাই এবং অন্যান্য কারুশিল্পের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

এথেনা গ্রিসের বিভিন্ন শহর, বিশেষ করে এথেন্স শহরের রক্ষাকর্ত্রী ও পৃষ্ঠপোষক দেবী হিসেবে পূজিত হতেন। তিনি পার্সিয়াস, হেরাক্লিস, ওডিসিউস এবং জেসনের মতো বিখ্যাত গ্রিক বীরদেরকে তাদের অভিযান পরিচালনায় সহায়তা করেছিলেন।তিনি একজন কুমারী দেবী ছিলেন এবং তাঁর কোনো সন্তান ছিল না। 

আরো পড়ুন:

পশ্চিমা সভ্যতার ‘দোলনা’ বলা হয় যে শহরকে

শীতে চুল ‘ডিপ কন্ডিশনিং’ করার উপায়

জন্ম ও পৌরাণিক কাহিনী

এথেনার জন্মকাহিনী বেশ চমকপ্রদ। প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, তিনি দেবরাজ জিউস এবং জ্ঞান ও কৌশলের টাইটানিস মেটিসের কন্যা। জিউস ভবিষ্যদ্বাণী জানতে পারেন যে, মেটিসের সন্তান তাকে সিংহাসনচ্যুত করবে, তাই তিনি মেটিসকে গিলে ফেলেন। এর কিছুদিন পর জিউসের প্রচণ্ড মাথাব্যথা শুরু হয় এবং তিনি হেফেস্টাসকে (অগ্নি ও কর্মকার শিল্পের দেবতা) তার মাথা কুড়াল দিয়ে কেটে দিতে বলেন। মাথা কাটার পর, এথেনা সম্পূর্ণ প্রাপ্তবয়স্ক এবং বর্ম পরিহিত অবস্থায় জিউসের মাথা থেকে বেরিয়ে আসেন। 

এথেন্স শহরের নামকরণ এথেনার নামানুসারে করা হয়েছিল। শহরটির পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে এথেনা এবং সমুদ্রের দেবতা পসেইডনের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা হয়েছিল। পসেইডন তার ত্রিশূল দিয়ে মাটিতে আঘাত করে একটি নোনা জলের ঝর্ণা তৈরি করেন। অন্যদিকে, এথেনা একটি জলপাই গাছ তৈরি করেন, যা খাদ্য, তেল, কাঠ এবং ছায়া প্রদান করত। শহরের লোকেরা এথেনার উপহারকে বেশি উপযোগী মনে করে এবং এথেনাকে তাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বেছে নেয়। এথেন্সের অ্যাক্রোপলিসে অবস্থিত বিখ্যাত পার্থেনন মন্দিরটি তার সম্মানে নির্মিত হয়েছিল। 

এথেনার প্রধান প্রতীকগুলির মধ্যে রয়েছে পেঁচা। যা জ্ঞানের প্রতীক। জলপাই গাছ হলো শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক।ঢাল তার যোদ্ধার পরিচয় বহন করে। 

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ