বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত জালাল উদ্দিনের মরদেহ উত্তোলন
Published: 15th, January 2025 GMT
শরীয়তপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত জালাল উদ্দিনের মরদেহ দাফনের ৬ মাস পর কবর থেকে তোলা হয়েছে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
আদালতের নির্দেশে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার আনন্দ বাজার গণকবরস্থান থেকে মরদেহটি তোলা হয়। নিহত জালাল উদ্দিন উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নের আনু সরকার কান্দি এলাকার মোহসন রাড়ীর ছেলে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিহত জালাল উদ্দিন ঢাকার মানিকনগরের ব্যবসায়ী ছিলেন। গত বছরের ২০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বাসা থেকে সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ পড়তে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এরপর মরদেহ নিজ গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে দাফন করা হয়। এ বিষয়ে গত ২০ নভেম্বর নিহত জালালের স্ত্রী মলি বাদী হয়ে ১২৯ জনের নাম উল্লেখসহ ২৫০ জনকে আসামি করে মুগদা থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে আদালতের নির্দেশে মরদেহটি তোলা হয়। মরদেহ তোলার সময় শরীয়তপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আছিফ হায়দার, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই কাইয়ুম, সখিপুর থানা পুলিশ ও নিহত জালালের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
রেললাইনে মিলল মরদেহ, পুলিশের ধারণা ধর্ষণের পর হত্যা
ঢাকা মেডিকেল মর্গে জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ৬ বেওয়ারিশ লাশের সন্ধান
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মুগদা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক কাইয়ুম বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পুলিশ ও চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। এ কারণে জালালের মরদেহের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করা যায়নি। ওই অবস্থায় তাকে দাফন করা হয়েছিল। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে মরদেহটি কবর থেকে তুলতে আদালতে আবেদন করা হয়। আদালতের নির্দেশ পেয়ে জালালের মরদেহ কবর থেকে তোলা হয়। বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে একই কবরস্থানে আবার মরদেহটি দাফন করা হবে।
এ ব্যাপারে সখিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুল হক বলেন, মরদেহটি উত্তোলনের পর ময়নাতদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা/আকাশ/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মরদ হ র মরদ হ
এছাড়াও পড়ুন:
‘সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশের’ শর্তে রাজসাক্ষী মামুনকে ক্ষমার আদেশ ট্রাইব্যুনালের
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যার ঘটনায় নিজের এবং মামলার প্রধান আসামির অপরাধ সম্পর্কিত ‘সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশের’ শর্তে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে ক্ষমা করার বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ আদেশ প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গত বৃহস্পতিবার দুই পৃষ্ঠার এ লিখিত আদেশ দেন। যা শনিবার গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের আদেশে বলা হয়েছে, সুনির্দিষ্ট ৫টি অভিযোগের ভিত্তিতে ১০ জুলাই তিন অভিযুক্ত- শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ এর ধারা ৩(২)(এ), ৩(২)(জি), ৩(২)(এইচ), ৪(১), ৪(২), ৪(৩) এর অধীনে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আদেশের দিন অভিযুক্ত চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। অপর দুই আসামি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক।
অভিযোগ গঠন করার পর তা চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পড়ে শোনানো হয় এবং তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় তিনি দোষী স্বীকার করবেন কি না। তখন তিনি দোষ স্বীকার করেন এবং জানান যে, তিনি সংশ্লিষ্ট অপরাধসমূহ এবং এই অপরাধ সংঘটনে জড়িত প্রত্যেক ব্যক্তির সম্পর্কে তার জ্ঞাতসারে জানা সব তথ্য ‘সৎভাবে ও সম্পূর্ণভাবে’ প্রকাশ করতে ইচ্ছুক। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের পক্ষে তার আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ ক্ষমা প্রদান করার জন্য একটি আবেদন করেন ট্রাইব্যুনালে।
আদেশে এ বিষয়ে বলা হয়, প্রধান কৌঁসুলি এই শর্তে ক্ষমা প্রদানের বিষয়ে সম্মতি প্রদান করেন যে- অভিযুক্ত চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ‘সম্পূর্ণ ও সত্য তথ্য প্রদান করবেন’, যা অভিযোগের অপরাধের বিচার কার্যক্রমে সহায়ক হবে। উপর্যুক্ত তথ্য ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ট্রাইব্যুনাল মনে করে যে, অভিযুক্ত চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে ক্ষমা প্রদান করা উপযুক্ত এবং সেই মোতাবেক তাকে শর্তসাপেক্ষে ক্ষমা প্রদান করা হয়েছে যে- তিনি সংশ্লিষ্ট অপরাধসমূহ এবং সংশ্লিষ্ট সব ব্যক্তি সম্পর্কে তার জানা সব তথ্য ‘সম্পূর্ণ ও সত্যভাবে’ প্রকাশ করবেন। ‘অভিযুক্ত এ শর্তে ক্ষমা গ্রহণ করেছেন এবং সে অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল তাকে সাক্ষী হিসেবে পরবর্তীতে সাক্ষ্যদানের জন্য ডাকবে।’
আদেশে বলা হয়, ‘চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন যেহেতু ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং তা গ্রহণ করেছেন, তাই তাকে কারাগারে অন্যান্য বন্দিদের থেকে আলাদা রাখার প্রয়োজন। সে মোতাবেক সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হলো যেন তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাকে অন্য বন্দিদের থেকে আলাদা করে রাখা হয়।’
এই আদেশের একটি অনুলিপি সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করতে এবং প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
গত ১০ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। তাদের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছিল।
আদেশের সময় ট্রাইব্যুনাল সাবেক আইজিপিকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি অভিযোগ স্বীকার করছেন কি না? এরপরই মামুন নিজের অভিযোগ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন। পরে আদালত মামুনের আবেদন মঞ্জুর করে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন।
আদালতে চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে আমাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা সংঘটনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য। এ ঘটনায় আমি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছি। আমি রাজসাক্ষী হয়ে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার বিস্তারিত আদালতে তুলে ধরতে চাই। রহস্য উন্মোচনে আদালতকে সহায়তা করতে চাই।’