গাজা নিয়ে ট্রাম্পের সুরে কথা বললেন ইসরায়েলের মন্ত্রী
Published: 6th, February 2025 GMT
গাজা উপত্যকা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সুরে সুর মিলিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। ‘গাজার যেসব বাসিন্দা উপত্যকাটি ছেড়ে যেতে চান, তাঁদের সে সুযোগ দেওয়ার জন্য’ পরিকল্পনা করতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
১৫ মাস ধরে চলা সংঘাতে বিধ্বস্ত গাজায় ২১ লাখ ফিলিস্তিনি বসবাস করেন। ইসরায়েল কাৎজ বলেন, গাজার বাসিন্দাদের নিজেদের অবস্থান থেকে ‘সরে যাওয়ার এবং অভিবাসনের স্বাধীনতা’ রয়েছে। যেসব দেশ হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধের সমালোচনা করেছে, তারা এই ফিলিস্তিনিদের জায়গা দিতে ‘বাধ্য’।
এর আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, সংঘাত শেষে গাজার নিয়ন্ত্রণ নেবে যুক্তরাষ্ট্র। গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হবে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর ভাষ্যমতে, গাজা পুনর্গঠনের জন্য সাময়িক সময়ের জন্য বাসিন্দাদের সরানো হবে। তবে ট্রাম্প স্পষ্টই বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দেওয়াটা হবে স্থায়ী।
ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা নাকচ করে দিয়েছে ফিলিস্তিনি নেতা ও আরব দেশগুলো। তাদের ভাষ্য, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হলে তা হবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাইল বাকেরি বলেছেন, এটি ফিলিস্তিনকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়ার ইসরায়েলি পরিকল্পনার অংশ।
আরও পড়ুন‘ট্রাম্প একজন উন্মাদ’: যুক্তরাষ্ট্রের গাজা দখলের পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনির প্রতিক্রিয়া৪ ঘণ্টা আগেউদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও। ‘যে কোনো ধরনের জাতিগত নিধন এড়ানো জরুরি’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। গুতেরেস বলেছেন, ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হবে গাজা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার জবাবে সেদিন থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এতে এখন পর্যন্ত উপত্যকাটিতে ৪৭ হাজার ৫৫০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১১ হাজার ৬০০ জন। ধ্বংস হয়ে গেছে গাজার প্রায় ৭০ শতাংশ ভবন। হামলার মুখে একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
আরও পড়ুনগাজায় জাতিগত নিধন এড়িয়ে চলতে বললেন জাতিসংঘ মহাসচিব৬ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশের আরও শক্তিশালী অংশীদারত্ব প্রয়োজন: বিশ্বব্যাংক
সরকারি, বেসরকারি ও কমিউনিটি পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও অংশীদারত্বমূলক কার্যক্রম বৃদ্ধির মাধ্যমে জলবায়ু সংকটের বুদ্ধিদীপ্ত সমাধান করতে পারে বাংলাদেশ। যা শুধু জলবায়ু ঝুঁকিই কমাবে না বরং টেকসই সমাধান দেবে।
সোমবার বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘ফ্রম রিস্ক টু রেজিলিয়েন্স: হেলপিং পিপল অ্যান্ড ফার্মস অ্যাডাপ্ট ইন সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক প্রতিবেদনে প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে, এই অংশীদারত্বমূলক কাজকে অগ্রাধিকার দিলে পরিবার ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেশি শক্তিশালী হবে, দীর্ঘ মেয়াদে যার অগ্রগতি হবে আরও স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক।
বেসরকারি খাতের সম্পদ ও বিনিয়োগ উপযুক্ত স্থানে সরিয়ে নেওয়া হলে জলবায়ু সংকটজনিত ক্ষয়ক্ষতি এক-তৃতীয়াংশ কমানো সম্ভব বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। বাজেট সংকটের মধ্যেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো অর্থায়নে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি, পরিবহন ও ডিজিটাল নেটওয়ার্কের উন্নয়ন ও নমনীয় সামাজিক সুরক্ষা কাঠামো প্রবর্তনের মাধ্যমে বেসরকারি খাতকে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জনসংখ্যার আধিক্য, উচ্চ তাপমাত্রা ও অবস্থানগত কারণে দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের সর্বোচ্চ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম, আর এই অঞ্চলে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০৩০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলের ৯০ শতাংশ মানুষ চরম উচ্চ তাপের ঝুঁকিতে থাকবে ও প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ বন্যার ঝুঁকিতে থাকবে। ইতিমধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলে পানি ও মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষের জীবন প্রভাবিত হচ্ছে।
দেশের ২৫০টি উপকূলীয় গ্রামে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সবচেয়ে জরুরি জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো। দীর্ঘ মেয়াদে ৫৭ শতাংশ পরিবার পর্যাপ্ত দুর্যোগ-সুরক্ষা অবকাঠামোর অভাবকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছে; ৫৬ শতাংশ পরিবার বলেছে, আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে তারা প্রয়োজনীয় অভিযোজন করতে পারছে না।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শুধু পরিবেশগত নয়, বরং মানবিক। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভুগছে দরিদ্র ও কৃষিনির্ভর পরিবারগুলো।
জরিপে দেখা যায়, আগামী ১০ বছরে আবহাওয়াজনিত ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে দক্ষিণ এশিয়ার তিন-চতুর্থাংশ পরিবার ও প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে ৬৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এবং ৮০ শতাংশ পরিবার কোনো না কোনোভাবে অভিযোজনমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের উন্নত প্রযুক্তি বা অবকাঠামোর বদলে কম খরচের সাধারণ সমাধানের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের বাঁধ, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণসহ বিভিন্ন সরকারি বিনিয়োগ দুর্যোগের সময় অনেক প্রাণ বাঁচিয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সঠিকভাবে পরিকল্পিত সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি এবং হালনাগাদ তথ্য দুর্যোগের সময় দরিদ্র মানুষের বড় সহায়ক হতে পারে। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে সরকারি উদ্যোগের পরিধি সীমিত। এ অবস্থায় জলবায়ু অভিযোজনে বেসরকারি খাতকে সামনে এনে একটি সমন্বিত নীতিপ্রকল্প প্রয়োজন বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর জ্যাঁ পেসমে বলেন, ‘বাংলাদেশের জলবায়ু সহনশীলতা বারবার নতুনভাবে পরীক্ষিত হচ্ছে। অভিযোজন ব্যাপক হলেও ঝুঁকি দ্রুত বাড়ছে, ফলে আরও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। দুর্যোগ সহনশীলতা গড়ে তুলতে আগাম সতর্কবার্তা ব্যবস্থা, সামাজিক সুরক্ষা, জলবায়ুবান্ধব কৃষি এবং ঝুঁকিভিত্তিক অর্থায়ন বাড়াতে হবে। শহরাঞ্চলেও পরিকল্পিত হস্তক্ষেপ জরুরি।’
জলবায়ু অভিযোজনে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি উদাহরণ বলে উল্লেখ করেছেন প্রতিবেদনটির সহ-লেখক ও বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ সিদ্ধার্থ শর্মা। তার মতে, পরিবার ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যে অভিযোজন করছে, কিন্তু সংকটের প্রকৃতি এতটাই জটিল ও বিস্তৃত যে সরকার ও বেসরকারি খাতকে আরও সমন্বিত ও জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রতিবেদনটি আরও বলছে, বাংলাদেশ অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতের জন্য শক্ত ভিত্তি তৈরি করতে পারে। আগাম সতর্কবার্তা ও সাইক্লোন সেন্টারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের সুফল ইতিমধ্যে মিলেছে; প্রাণহানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। সঠিক বিনিয়োগ ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারলে স্থানীয় অভিযোজনে সাফল্য আরও বাড়ানো সম্ভব বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে নতুন প্রযুক্তিনির্ভর অভিযোজন কৌশল গ্রহণ করতে পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি রাস্তাঘাট নির্মাণ, স্বাস্থ্যসেবাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছে, যা কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করবে এবং মানবসম্পদের সুরক্ষা দেবে।