ইমরান হোসেনকে আহ্বায়ক ও ফয়সাল প্রিন্সকে সদস্য সচিব করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিশোরগঞ্জ জেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্যর সচিব আরিফ সোহেল ৩২১ সদস্যের জেলা কমিটির অনুমোদন দেন।

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নবগঠিত এ কমিটির পরিচিতি ও কর্মপরিকল্পনা সংক্রান্ত সভা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।  জেলা পাবলিক লাইব্রেরিতে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিশোরগঞ্জ জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন বলেন, “শেখ হাসিনা দিল্লিতে বসে দেশবিরোধী চক্রান্ত করছেন। তিনিসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তাদের কৃতকর্মের জন্য কোনো অনুশোচনা নেই। যাদের হাতে দুই হাজার ছাত্র-জনতার রক্ত লেগে আছে, যারা ছাত্র-জনতাকে পঙ্গু করেছে, নিঃস্ব করেছে তাদের আওয়ামী লীগের ব্যানারে কোনো রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। কিশোরগঞ্জেও আওয়ামী লীগের ব্যানারে কোনো রাজনীতি চলবে না। যারাই এমন স্পর্ধা দেখাবে আমরা তাদের প্রতিহত করব।”

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- সদস্য সচিব ফয়সাল প্রিন্স, মুখ্য সংগঠক শরিফুল হক জয়, মুখপাত্র সাব্বিরুল হক তন্ময়, সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক মামুন মিয়া, যুগ্ম-আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান রনি, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ইয়াজ ইবনে জসীম, যুগ্ম সদস্য সচিব আদিফুর রহমান, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক রহমত উল্লাহ চৌধুরী হাসিন।

ঢাকা/রুমন/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক শ রগঞ জ কম ট র

এছাড়াও পড়ুন:

সংস্কার নাকি দুর্বল সরকার গঠনের চেষ্টা

সংস্কার নিয়ে তামাশা চলছেই; সংস্কারের কথা বলে দেশটাকেই যেন অনেকটা স্থবির করে দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছেন। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ মেলেনি লাখো বেকার তরুণ-তরুণীর। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি আশানুরূপ হয়নি—সব মিলিয়ে কোথায় যেন একধরনের খাপছাড়া পরিস্থিতি।

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কয়েক দিন আগে কথা বলছিলাম বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, সংস্কারের নামে আমাদের আশাহত করা হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সেবা খাতে দৃশ্যমান কোনো সংস্কার করা হয়নি। পরিবেশ ও নদ-নদীগুলো রক্ষার কোনো উদ্যোগ আমরা দেখিনি। আমরা তিস্তার পানির জন্য সমাবেশ করেছি। খালগুলোকে উদ্ধারের কথা বলছি। এ ছাড়া দেশের ব্যবসায়ীরা দ্বিধাগ্রস্ত। বিনিয়োগ কমে গেছে। নতুন কোনো কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি। বেকারত্ব বাড়ছে, অনিশ্চয়তা বাড়ছে। বিনিয়োগের জন্য দেশে স্থিতিশীলতা দরকার। নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার দেশে সেই স্থিতিশীলতা আনতে পারে। এ জন্যই আমরা শুরু থেকেই দ্রুত নির্বাচনের কথা বলেছিলাম। রাষ্ট্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্যই নির্বাচন দ্রুত হওয়া দরকার ছিল। এটা কোনো দলের ক্ষমতায় যাওয়ার বিষয় ছিল না। নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার দেশের জন্য যা করতে পারবে, অনির্বাচিত অস্থায়ী সরকার তা করতে পারবে না। কে কতবার প্রধানমন্ত্রী হবে তার থেকে জনবান্ধব রাষ্ট্র গঠন করা জরুরি। জনবান্ধব রাষ্ট্র গঠন করতে পারলে শাসনতান্ত্রিক অন্যান্য সংকট এমনিতেই কেটে যাবে।

সব মিলিয়ে দেশে একটা অনিশ্চয়তার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এই পরিবেশের মধ্যেই সরকার জুলাই সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫ অনুমোদন করেছে। এখানে নতুন কী আছে? ভবিষ্যতে একটি অতি দুর্বল সরকার গঠনের অভিলাষ নিয়ে এই আদেশ করা হয়েছে। যেমন সাংবিধানিক বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য যে বোর্ড বা কমিটি গঠন করা হবে, সেখানে ক্ষমতাসীন দলের কোনো ক্ষমতা থাকবে না। ক্ষমতা থাকবে সব বিরোধী দল ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের হাতে। অধিকাংশ বিল সংসদে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বিলম্বিত হবে। জুলাই সনদের নামে একধরনের সাংবিধানিক ক্যুর বন্দোবস্ত রেখেই সরকার আদেশ অনুমোদন করেছে। ফলে দেশে ভবিষ্যতে তিউনিসিয়ার মতো দুর্বল সরকার গঠিত হবে এবং বারবার সরকার পরিবর্তন হবে। এর ফলে অরাজনৈতিক শক্তির নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পাবে রাষ্ট্রের ওপর।

বিএনপিসহ কয়েকটি দল অভিযোগ করছে, এই আদেশ অনুমোদনের মাধ্যমে সরকার স্বাক্ষর করা সনদ থেকে সরে এসেছে। এটাকে তারা দেশ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরাসরি বেইমানি বলে অভিযোগ করছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি বলেছেন, ‘এমন তো হওয়ার কথা ছিল না।’ আমরা তারেক রহমানের সঙ্গে একমত। দেশ যে অনিশ্চিত পরিস্থিতির মুখে এসে দাঁড়িয়েছে, তা আদৌ হওয়ার কথা ছিল না।

আমরা দেশের সার্বিক অবস্থার সংস্কার চেয়েছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম, আমাদের শিক্ষা খাতের ব্যাপক সংস্কার হবে। কোচিং ব্যবসার কবল থেকে রক্ষা পাবে জাতি। শিক্ষকেরা প্রাইভেট পড়ানোর থেকে শ্রেণিকক্ষে বেশি মনোযোগ দেবেন। বইয়ের বোঝা নিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যেতে হবে না।

আমাদের আশা ছিল রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতের অরাজক পরিস্থিতির অবসান ঘটবে। সরকারি হাসপাতালগুলো রোগীদের আস্থার জায়গায় পরিণত হবে। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো রোগীদের পকেট কাটার মেশিন হওয়ার দুর্নাম ঘোচাবে। স্বাস্থ্যসেবা দেশে রীতিমতো এক আতঙ্কের নাম। কারও কোনো ব্যাধি হলে চিকিৎসা ব্যয়ের কথা মনে করেই অর্ধেক আয়ু কমে যায়। বাকিটুকু শেষ হয় চিকিৎসা করাতে গিয়ে। এ অবস্থার অবসান ঘটিয়ে জনমানুষের দোরগোড়ায় নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে পারত সরকার।

সড়ক-মহাসড়কে স্বস্তি ফিরে আসবে বলে আমরা মনে করেছিলাম। বেপরোয়া গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমে আসবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি আর রাস্তায় নামবে না। ঘরে না ফেরা পর্যন্ত পরিবারের সদস্যরা দুশ্চিন্তায় থাকবেন না। শহরের ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত হবে। ফুটপাত মুক্ত করতে পারলে স্থানীয় পর্যায়ে চাঁদাবাজির রাজনীতি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বন্ধ হয়ে যেত।

আরও পড়ুনরাষ্ট্র ও রাজনীতিতে জনগণের হিস্যা কোথায়১৪ জুন ২০২৫

মোদ্দাকথা, গত ১৭ বছর বা তার আগে থেকে আমাদের দেশে অরাজকতার যে জঞ্জাল জমেছিল, তা পরিষ্কার হবে। আমরা ফের নতুন করে যাত্রা শুরু করব; কিন্তু আমরা কি আদৌ শুরু করতে পেরেছি? না, আমরা পারিনি। হ্যাঁ, আমরা এটাও জানি, রাতারাতি আকাশসম চাহিদা অনুসারে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। হুট করে এক সকালেই সবকিছুর পরিবর্তন হয়ে যাবে না; কিন্তু আমরা অন্তত শুরুটা দেখতে চেয়েছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম, দখল হয়ে যাওয়া নদীগুলো উদ্ধার হোক, পরিবেশদূষণ বন্ধ হোক। খাবারে ভেজাল দেওয়া কারবারিরা জবাবদিহির মুখোমুখি হোক। কথায় আছে—সকালের রোদ দেখেই দিনের ভাব বোঝা যায়। আমরা আদৌ সরকারের কার্যকলাপের মধ্যে সে রকম কোনো ভাব দেখতে পাইনি। আমরা চেয়েছিলাম, রাষ্ট্র পরিচালনার একটি আদর্শ মডেল এই সরকার তৈরি করে দিয়ে যাক; কিন্তু সরকার সেদিকে না হেঁটে রাজনৈতিক দলগুলোর মতো ক্ষমতা ভাগাভাগির পথে গেছে সংস্কারের নামে।

এখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হতে পারে, এতসব সমস্যার সমাধান করা আমাদের কাজ নয়। এটা অন্তর্বর্তী সরকার। এর চরিত্র অনুসারে সব কাজ করা সম্ভব নয়। তাহলে এই সরকারের উচিত ছিল অনেক আগেই নির্বাচন দেওয়া। যদি কোনো কাজই করতে না পারে, তাহলে গদিতে বসে থেকে জনগণের অর্থ অপচয়ের কোনো কারণ থাকতে পারে না। একগাদা কমিশন বানিয়ে জনগণের চোখে ধুলো দেওয়ার কোনো দরকার ছিল না।

সংস্কারের নামে আমরা দেখছি বিরোধী দলের শাসন কায়েমের পরিকল্পনা। শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতার ভারসাম্য আনার কথা বলে সরকারি দলের হাত-পা বেঁধে ফেলার পরিকল্পনা হচ্ছে। সাংবিধানিক পদগুলোতে নিয়োগ কমিটিতে সরকারি দলকে সংখ্যালঘু বানানো হয়েছে। বিরোধী ও নিরপেক্ষ সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ বানানো হয়েছে। এই নিরপেক্ষ সদস্যরা আবার আসবেন বিরোধী মত থেকে বা তাদের পছন্দ অনুসারে। কারণ, বিরোধীদের পছন্দ অনুসারে না দিলে আবার এক অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে।

প্রকৃতপক্ষে বিশাল এক সুদূরপ্রসারী চিন্তা নিয়ে ভবিষ্যতে একধরনের দুর্বল সরকার গঠনের পরিকল্পনা করেছে সরকার ও কমিশন। এমন একধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টির পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে কোনো সরকার সুষ্ঠুভাবে সরকার পরিচালনা করতে না পারে।

নির্বাচিত সরকার এলেই কি সব সমস্যার সমাধান হবে? না, রাতারাতি পরিবর্তন হবে না। অতীতের অভিজ্ঞতা তা বলে না; কিন্তু তাই বলে নতুন করে শুরু করা যাবে না এমন কোনো কথা নেই। ’২৪ সালের আগস্ট আমাদের সেই সুযোগ সামনে নিয়ে এসেছিল। একটি জবাবদিহিমূলক সরকার গঠনের সুযোগ করে দিয়েছিল। কিন্তু কতিপয় রাজনৈতিক দল ও সরকারের অদূরদর্শিতার কারণে আমরা এই সুযোগ হারাতে বসেছি।

ড. মারুফ মল্লিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক

*মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ