কিশোরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটি গঠিত
Published: 7th, February 2025 GMT
ইমরান হোসেনকে আহ্বায়ক ও ফয়সাল প্রিন্সকে সদস্য সচিব করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিশোরগঞ্জ জেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্যর সচিব আরিফ সোহেল ৩২১ সদস্যের জেলা কমিটির অনুমোদন দেন।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নবগঠিত এ কমিটির পরিচিতি ও কর্মপরিকল্পনা সংক্রান্ত সভা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। জেলা পাবলিক লাইব্রেরিতে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিশোরগঞ্জ জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন বলেন, “শেখ হাসিনা দিল্লিতে বসে দেশবিরোধী চক্রান্ত করছেন। তিনিসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তাদের কৃতকর্মের জন্য কোনো অনুশোচনা নেই। যাদের হাতে দুই হাজার ছাত্র-জনতার রক্ত লেগে আছে, যারা ছাত্র-জনতাকে পঙ্গু করেছে, নিঃস্ব করেছে তাদের আওয়ামী লীগের ব্যানারে কোনো রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। কিশোরগঞ্জেও আওয়ামী লীগের ব্যানারে কোনো রাজনীতি চলবে না। যারাই এমন স্পর্ধা দেখাবে আমরা তাদের প্রতিহত করব।”
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- সদস্য সচিব ফয়সাল প্রিন্স, মুখ্য সংগঠক শরিফুল হক জয়, মুখপাত্র সাব্বিরুল হক তন্ময়, সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক মামুন মিয়া, যুগ্ম-আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান রনি, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ইয়াজ ইবনে জসীম, যুগ্ম সদস্য সচিব আদিফুর রহমান, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক রহমত উল্লাহ চৌধুরী হাসিন।
ঢাকা/রুমন/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক শ রগঞ জ কম ট র
এছাড়াও পড়ুন:
দোয়া কবুলের অলৌকিক রহস্য: নবী যাকারিয়া ও মারইয়ামের শিক্ষা
আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আশা করি, অপেক্ষা করি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমরা যা কিছু চেয়েছ, তিনি তোমাদের তা দিয়েছেন। আল্লাহর নেয়ামত গুণে শেষ করতে পারবে না।” (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৩৪)
এখানে ‘কিছু’ বলেননি, বলেছেন ‘সব’। অর্থাৎ, কোনো দোয়াই ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। শুধু চাইতে হবে খাঁটি মনে, একনিষ্ঠভাবে। এই নিয়ম মনে রাখলে আমাদের স্বপ্ন আর আল্লাহর দানের মধ্যে কোনো বাধা থাকবে না।
কখনো কখনো দোয়া এমনভাবে কবুল হয় যে আমরা নিজেই অবাক হয়ে যাই। যাকারিয়া (আ.) বৃদ্ধ বয়সে, স্ত্রী বন্ধ্যা তবু সন্তান চেয়েছিলেন। কবুল হওয়ায় বললেন, “হে আমার প্রতিপালক, কীভাবে আমার সন্তান হবে? আমার স্ত্রী তো বন্ধ্যা, আর আমি বার্ধক্যের চরমে পৌঁছেছি।” আল্লাহ বললেন, “এমনই। তোমার প্রতিপালক বলেছেন, এটা আমার জন্য সহজ। আমি তো আগেও তোমাকে সৃষ্টি করেছি, যখন তুমি কিছুই ছিলে না।” (সুরা মারইয়াম, আয়াত: ৮-৯)
এই অলৌকিক কবুলের পেছনে এক গভীর রহস্য আছে। যাকারিয়া ও মারইয়াম (আ.)-এর জীবন থেকে আমরা তা শিখতে পারি।
আরও পড়ুনঅলসতা দূর করার জন্য নবীজির শেখানো দোয়া২১ অক্টোবর ২০২৫আল্লাহ আমাদের দোয়ায় উৎসাহ দেন। বিপদে পড়া মানুষের দোয়া তিনি কবুল করেনই। বলেন, “কে সাড়া দেয় বিপদগ্রস্তের ডাকে যখন সে ডাকে? কে দূর করে কষ্ট? কে তোমাদের পৃথিবীর খলিফা বানায়? আল্লাহ ছাড়া কি কোনো উপাস্য আছে? তোমরা খুব কমই চিন্তা করো।” (সুরা নামল, আয়াত: ৬২)।
এই আয়াতে ‘মুদতার্রি’ নামে একটা শব্দ বলা হয়েছে, যার অর্থ হলো, এমন ব্যক্তি, যে চারদিক থেকে বিপদে ঘেরা। এমন অবস্থায় যে ব্যক্তি আর কারো দিকে তাকায় না, শুধু আল্লাহকে ডাকে। এমন একনিষ্ঠতায় আল্লাহ সাড়া দেন, কষ্ট দূর করেন, এমনকি পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দেন।
আল্লাহ খুব কাছে। তিনি বলেন, “আমার বান্দারা যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করে, আমি কাছেই আছি। ডাকলে সাড়া দিই। তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয়, আমার প্রতি ইমান আনে, যাতে সঠিক পথ পায়।” (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬)।
দোয়া কবুলের সঙ্গে আল্লাহর হুকুম মানা জড়িত। যারা রাত-দিন দোয়া করে, তাদের সঙ্গে থাকতে বলেন, “যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের রবের সন্তুষ্টি কামনা করে ডাকে, তাদের সঙ্গে ধৈর্য ধরো। দুনিয়ার জাঁকজমকের লোভে তাদের থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ো না।” (সুরা কাহফ, আয়াত: ২৮)।
দোয়া না করাকে আল্লাহ অহংকার বলেন, “তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, আমাকে ডাকো, আমি সাড়া দেব। যারা আমার ইবাদত না করে অহংকার করে, তারা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (সুরা গাফির, আয়াত: ৬০)
এমনকি কাফিরের খাঁটি দোয়াও তিনি কবুল করেন। তিনি বলেন, “যখন তারা নৌকায় উঠে, আল্লাহকে খাঁটি মনে ডাকে। কিন্তু স্থলে পৌঁছলে শিরক করে।” (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৬৫)
আল্লাহর দয়া অসীম।
এবার আসি মূল রহস্যে। যাকারিয়া (আ.) মারইয়ামের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। কোরআনে এসেছে, “যাকারিয়া তাকে লালন-পালন করেন।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩৭)। মারইয়াম আল্লাহর হুকুম মেনে চলতেন। “হে মারইয়াম, তোমার প্রতিপালক জন্য একাগ্র হও, সিজদা করো, রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৪৩)। তিনি ছিলেন তাকওয়াবান: “আমি রহমানের আশ্রয় চাই তোমার কাছে, যদি তুমি তাকওয়াবান হও।” (সুরা মারইয়াম, আয়াত: ১৮)। কিতাব ও কালিমায় বিশ্বাসী, একনিষ্ঠ: “মারইয়াম... যে তার সতীত্ব রক্ষা করেছে... সে তার রবের কালিমা ও কিতাবে বিশ্বাস করেছে এবং একনিষ্ঠ ছিল।” (সুরা তাহরিম, আয়াত: ১২)
আরও পড়ুনবদ নজরের দোয়া: ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫মারইয়ামের মিহরাব ছিল ইবাদত ঘর। যাকারিয়া প্রতিবার গিয়ে দেখতেন, তার কাছে রিজিক। “যখনই যাকারিয়া তার মিহরাবে প্রবেশ করতেন, তার কাছে রিজিক পেতেন।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩৭)। জিজ্ঞাসা করলেন, “এটা কোথা থেকে?” মারইয়াম বললেন, “আল্লাহর কাছ থেকে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অগণিত রিজিক দেন।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩৭)
এখানে যাকারিয়া দুটি জিনিস বুঝলেন: ইবাদত ও দোয়া – এই দুয়ে রিজিক আসে।
যাকারিয়া আগেও দোয়া করতেন, কবুল হতো: “আমি তোমার দোয়ায় কখনো হতাশ হইনি।” (সুরা মারইয়াম, আয়াত: ৪)। কিন্তু এবার অলৌকিক কিছু দেখে অলৌকিক দোয়া করলেন। তিনটি দোয়া:
১. “হে আমার প্রতিপালক, আমাকে তোমার কাছ থেকে পবিত্র সন্তান দান করো। তুমি দোয়া শোনো।” (সুরা আল-ইমরান, আয়াত: ৩৮)। শুধু সন্তান নয়, ‘তাইয়্যিবা’ – পবিত্র।
২. “আমার হাড় দুর্বল, মাথা পেকে গেছে... আমি উত্তরাধিকারী নিয়ে চিন্তিত, স্ত্রী বন্ধ্যা। আমাকে তোমার কাছ থেকে উত্তরাধিকারী দাও, যে আমার ও ইয়াকুব পরিবারের উত্তরাধিকারী হবে। তাকে সন্তুষ্টকারী বানাও।” (সুরা মারইয়াম, আয়াত: ৪-৬)।
৩. “হে প্রতিপালক, আমাকে একা রেখো না, তুমি সর্বোত্তম উত্তরাধিকারী।” (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮৯)
দোয়া গোপনে, খাঁটি মনে: “যখন সে তার রবকে গোপনে ডেকেছিল।” (সুরা মারইয়াম, আয়াত: ৩)। সঙ্গে সৎকর্ম: “যাকারিয়া, ইয়াহইয়া... সবাই সৎকর্মশীল।” (সুরা আনআম, আয়াত: ৮৫)
কবুল তৎক্ষণাৎ, “সে মিহরাবে নামাজ পড়ছিল, ফেরেশতা ডেকে বলল, আল্লাহ তোমাকে ইয়াহইয়ার সুসংবাদ দিচ্ছেন – আল্লাহর কালিমার সত্যায়নকারী, নেতা, সংযমী, নবী, সৎকর্মশীল।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩৯)। পাঁচ গুণ: সত্যায়নকারী, নেতা, সংযমী, নবী, সৎ। স্ত্রী সুস্থ হলেন: “আমি তার দোয়া কবুল করলাম, ইয়াহইয়া দান করলাম, তার স্ত্রীকে সংশোধন করলাম। তারা সৎকাজ দ্রুততায় করত, আশা-ভয়ে দোয়া করত, আমাদের সামনে বিনয়ী ছিল।” (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৯০)
আনন্দে মিহরাব থেকে বেরিয়ে কওমকে বললেন, সকাল-সন্ধ্যা তাসবিহ পড়ো। (সুরা মারইয়াম, আয়াত: ১১)। নামও আল্লাহ দিলেন: “হে যাকারিয়া, আমরা তোমাকে ইয়াহইয়া নামে পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি – আগে এ নামে কাউকে রাখিনি।” (সুরা মারইয়াম, আয়াত: ৭)।
রহস্যটি কী? আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক। “আল্লাহকে বেশি স্মরণ করো, যাতে সফল হও।” (সুরা আল-আনফাল, আয়াত: ৪৫)। “আমাকে স্মরণ করো, আমি তোমাদের স্মরণ করব।” (সুরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৫২)। শয়তান স্মরণ ভুলিয়ে দেয়। (সুরা আল-মুজাদালাহ, আয়াত: ১৯)।
সুতরাং দোয়া কবুল হোক তা চাইলে খাঁটি মন, সুন্দর ধারণা, কাতর মিনতি, আল্লাহর নাম-গুণে ডাকা, পাপ থেকে দূরে, নামাজ-ইবাদত ঠিক রাখা। এসব আসবে তাকওয়ায়। “গ্রামবাসী যদি ইমান আনে ও তাকওয়া অবলম্বন করে, আমি আকাশ ও পৃথিবী থেকে বরকতের দরজা খুলে দেব।” (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৯৬)। বরকত – বহুবচন। আল্লাহ ওয়াদা খেলাফ করেন না।
যাকারিয়া-মারইয়াম (আ.)-এর মতো দোয়া করি, তাহলে অলৌকিকভাবে সেই দোয়া কবুল হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।
আরও পড়ুনসুস্বাস্থ্য ফিরে পেতে নবীজিকে ফেরেশতা জিবরাইলের দোয়া ও উপদেশ১৭ অক্টোবর ২০২৫