আ’লীগের ঝটিকা মিছিল ঠেকাতে অভিযান জোরদার
Published: 21st, April 2025 GMT
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীর ঝটিকা মিছিলের ঘটনা বেড়েছে। তাদের মিছিল ঠেকাতে তৎপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জোরদার করা হয়েছে গ্রেপ্তার অভিযান। গতকাল রোববার আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ১৬ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) ও কদমতলী থানা পুলিশ। এর আগের তিন দিনে ১৪ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় জড়িত। তারা বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল বের করে জনমনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী শনিবার উত্তরা এলাকার থানা পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে যেন মিছিল করতে না পারে, সেটা পুলিশকে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল নিয়ে নগরবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
ডিএমপির মিডিয়া শাখা থেকে গতকাল জানানো হয়েছে, এদিন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ১৬ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ী ও শাহবাগে ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারী যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে যাত্রাবাড়ী ও শাহবাগ থানা পুলিশ।
অপরদিকে রাজধানীতে পৃথক অভিযানে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ১০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। এ ছাড়া ১২ মামলার আসামি যুবলীগ নেতা রাজনকে গ্রেপ্তার করেছে কদমতলী থানা পুলিশ।
খুলনার একাধিক স্থানে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলের পর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ২৫ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার নগরীর বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মুকুল ও নাভারণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহজাহান আলীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার বিকেলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, নাশকতার মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে আত্মগোপনে থাকা যশোর আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে রোববার দুপুরে পুলিশের অভিযানের পর সন্ধ্যায় শহরের পুরোনো কসবা কাঁঠালতলা মোড়ে ঝটিকা মিছিল করেছে দলটির নেতাকর্মীরা। শরীয়তপুরে শনিবার রাতে মশাল জ্বালিয়ে ঝটিকা মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। পরদিন আওয়ামী লীগের পক্ষে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল সকাল ৬টার দিকে কিশোরগঞ্জে ঝটিকা মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ।
(তথ্য দিয়েছেন খুলনা ব্যুরো, যশোর অফিস এবং শরীয়তপুর ও কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ছ ন ত কর ম ক ম ছ ল কর আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
যোগ্যদের মধ্যে ১৯% ভাতা সুবিধা পান
প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও হতদরিদ্রদের জন্য সরকারের চলমান সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা। পাঁচটি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলছে, এসব কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্যতা আছে—এমন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের মধ্যে মাত্র ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ এ সুবিধা পান।
এক গবেষণার ভিত্তিতে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়। সেখানে ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক ওই গবেষণার ফল প্রকাশ করা হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারের একটি অঙ্গীকার ছিল কৌশলগত প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। সেটি করা হয়নি। সরকারের অঙ্গীকার ছিল সমতলের আদিবাসীদের জন্য আলাদা ভূমি কমিশন করা, সেটিও করা হয়নি। ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবিসংবাদ সম্মেলনে গবেষণার বিস্তারিত তুলে ধরেন টিআইবির রিসার্চ ফেলো রাজিয়া সুলতানা। তিনি জানান, ২০২৪ সালের জুন থেকে গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত এ গবেষণার কাজ চলে। সমতল থেকে ২২টি ও পাহাড় থেকে ৭টিসহ মোট ২৯টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের ওপর এ গবেষণা পরিচালিত হয়। এসব সম্প্রদায় হলো চাকমা, মারমা, গারো, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, পাংখোয়া, গঞ্জু, বাগদু, পাত্র, খাসিয়া, ওঁরাও, রাখাইন, গোরাইত, ম্রো, বম, কোচ, মুন্ডা, মাহাতো, মালপাহাড়ি, রাজোয়ার, ভূমিজ, সাঁওতাল, হুদি, বর্মন, কুরমি মাহাতো, মাহালি, কোরা, মণিপুরি ও বেদিয়া মাহাতো।
গবেষণায় বলা হয়, আদিবাসী অধ্যুষিত ১০টি ইউনিয়নে বয়স্ক ভাতার সুবিধা পাওয়ার যোগ্য ছিলেন ১ হাজার ৬৭৬ জন। এঁদের মধ্যে এ সুবিধা পাচ্ছেন মাত্র ৩৫৫ জন। শতাংশের হিসাবে যা এটি ২১ দশমিক ২ শতাংশ।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ৮টি ইউনিয়নে বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা পাওয়ার যোগ্য ছিলেন ৪৯৮ জন। কিন্তু এ সুবিধার আওতায় আছেন মাত্র ৬০ জন। শতাংশের হিসাবে যা ১২ শতাংশ। ৭টি ইউনিয়নে প্রতিবন্ধী ভাতা ও উপবৃত্তির যোগ্য ছিলেন ৫৮৩ জন। কিন্তু দেওয়া হয়েছে ১৮৪ জনকে, যা ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ। ছয়টি ইউনিয়নে মা ও শিশুসহায়তা ভাতার জন্য যোগ্য ৫৯৪ জন। এ সুবিধা পাচ্ছেন ১২৮ জন। শতাংশের হিসাবে এটি ২১ দশমিক ৫ শতাংশ। চারটি ইউনিয়নে ভালনারেবল উইমেন বেনিফিটের (ভিডব্লিউবি) যোগ্য পাওয়া গেছে ১ হাজার ৩৩৮ জন; কিন্তু এ সুবিধা পাচ্ছেন ১৬৬ জন। শতাংশে এটি ১২ দশমিক ৪ শতাংশ।
২০১০ সালের খানা ব্যয় জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে গবেষণায় বলা হয়, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তির হার ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ, যেখানে জাতীয় পর্যায়ে অন্তর্ভুক্তির এ হার ২৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
প্রচার-প্রচারণার না থাকায় এসব সুবিধার কথা অনেক আদিবাসী জানতে পারেন না বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। ফলে অনেকে আবেদন করতে পারেন না। আবার যাঁরা আবেদন করেন, আবেদনপ্রক্রিয়ায় হয়রানি, স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব ও যাচাই-বাছাই এবং নির্বাচনে অনিয়মের কারণে তাঁদের অনেকে বাদ পড়েন বলে গবেষণায় তথ্য দেওয়া হয়েছে।
২০২২ সালের একটি খানা আয়-ব্যয় জরিপের ফলাফল তুলে ধরে গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জাতীয় দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটি ৬৫ শতাংশ। অন্যদিকে আদিবাসী অধ্যুষিত সমতল এলাকায় সেটি ৮০ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সেটা পার্বত্য অঞ্চলে হোক বা সমতলে হোক, তাঁদের অধিকারগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে, তাঁদের ন্যায্য প্রাপ্য নিশ্চিত করতে যে কর্মসূচিগুলো আছে, সেগুলোর সারমর্ম গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে।
এসব বৈষম্যের প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যে ৭টি নির্দেশিকার ওপর ভিত্তি করে গবেষণাটি করা হয়েছে, সেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে সুশাসনের ঘাটতি, স্বচ্ছতা, জবাবদিহির ঘাটতি, দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্রই উঠে এসেছে।
বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলেও একই ধরনের সমস্যা রয়েছে জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ চিত্রই দীর্ঘকাল যাবৎ প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে দেশে। তার মধ্যেও আদিবাসীদের বিষয়টি আলাদা গুরুত্বের দাবি রাখে। কারণ, তারা প্রান্তিকের মধ্যেও প্রান্তিক। তাদের ন্যায্য প্রাপ্য রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে পারছে না।
ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, খুব পরিষ্কারভাবে এখানে দেখা যাচ্ছে উন্নয়ন, সমাজ পরিবর্তন, সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা, নিরাপত্তার মূলধারা, তার মধ্যে আদিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারের একটি অঙ্গীকার ছিল কৌশলগত প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। সেটি করা হয়নি। সরকারের অঙ্গীকার ছিল সমতলের আদিবাসীদের জন্য আলাদা ভূমি কমিশন করা, সেটিও করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির এক্সিকিউটিভ ম্যানেজমেন্টের উপদেষ্টা সুমাইয়া খায়ের, আউটরিচ ও কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম ও টিআইবির রিসার্চ পলিসির পরিচালক মো. বদিউজ্জামান।