ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীর ঝটিকা মিছিলের ঘটনা বেড়েছে। তাদের মিছিল ঠেকাতে তৎপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জোরদার করা হয়েছে গ্রেপ্তার অভিযান। গতকাল রোববার আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ১৬ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) ও কদমতলী থানা পুলিশ। এর আগের তিন দিনে ১৪ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় জড়িত। তারা বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল বের করে জনমনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী শনিবার উত্তরা এলাকার থানা পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে যেন মিছিল করতে না পারে, সেটা পুলিশকে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল নিয়ে নগরবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

ডিএমপির মিডিয়া শাখা থেকে গতকাল জানানো হয়েছে, এদিন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ১৬ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ী ও শাহবাগে ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারী যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে যাত্রাবাড়ী ও শাহবাগ থানা পুলিশ। 

অপরদিকে রাজধানীতে পৃথক অভিযানে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ১০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। এ ছাড়া ১২ মামলার আসামি যুবলীগ নেতা রাজনকে গ্রেপ্তার করেছে কদমতলী থানা পুলিশ। 

খুলনার একাধিক স্থানে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলের পর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ২৫ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার নগরীর বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মুকুল ও নাভারণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহজাহান আলীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার বিকেলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, নাশকতার মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে আত্মগোপনে থাকা যশোর আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে রোববার দুপুরে পুলিশের অভিযানের পর সন্ধ্যায় শহরের পুরোনো কসবা কাঁঠালতলা মোড়ে ঝটিকা মিছিল করেছে দলটির নেতাকর্মীরা। শরীয়তপুরে শনিবার রাতে মশাল জ্বালিয়ে ঝটিকা মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। পরদিন আওয়ামী লীগের পক্ষে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল সকাল ৬টার দিকে কিশোরগঞ্জে ঝটিকা মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ। 
(তথ্য দিয়েছেন খুলনা ব্যুরো, যশোর অফিস এবং শরীয়তপুর ও কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি)

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ছ ন ত কর ম ক ম ছ ল কর আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

নবীজি (সা.) যেভাবে নামাজ পড়তেন

নামাজ এমন একটি বিধান যা কোনো অবস্থাতেই বাতিল হয় না—দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে বা ইশারায়—জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এর পালন অপরিহার্য। একজন মুসলিমের কাছে নামাজ কেবল কিছু শারীরিক ক্রিয়া নয়, বরং এটি আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের মাধ্যম।

ইবাদতের এই শ্রেষ্ঠ মাধ্যমটি অবশ্যই আল্লাহর রাসুল মুহাম্মাদ (সা.)-এর দেখানো পদ্ধতিতে আদায় করতে হবে। কারণ, তিনি উম্মতকে সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, “তোমরা সেভাবে নামাজ আদায় করো, যেভাবে আমাকে নামাজ আদায় করতে দেখেছ।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩১)

তোমরা সেভাবে নামাজ আদায় করো, যেভাবে আমাকে নামাজ আদায় করতে দেখেছ।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩১)

এই নির্দেশনা মেনে চলার জন্য নামাজের প্রতিটি ধাপ, তাকবিরে তাহরিমা থেকে শুরু করে সালাম ফেরানো পর্যন্ত, রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী হওয়া আবশ্যক।

নামাজের পূর্ব প্রস্তুতি

নামাজ কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত পবিত্রতা। এই পবিত্রতা অর্জনের জন্য প্রথমে উত্তমরূপে অজু বা অজু সম্পন্ন করতে হবে।

আল্লাহ তায়ালা কোরআনে অজুর পদ্ধতি বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন, “হে ঈমানদারগণ, যখন তোমরা নামাজের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন তোমাদের মুখমণ্ডল এবং কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত করো। আর তোমাদের মাথা মাসেহ করো এবং গোড়ালি পর্যন্ত পা (ধৌত করো)।” (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৬)

রাসুল (সা.) বলেন, “পবিত্রতা ব্যতীত কোনো নামাজ কবুল হয় না।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২৪)

অজু সম্পন্ন করার পর মুসল্লিকে কাবার দিকে মুখ করে দাঁড়াতে হবে। কাবার দিক হল কিবলা। নামাজে দাঁড়ানোর সময় মুসল্লি তার অন্তর দিয়ে যে নামাজটি পড়তে চান (ফরজ বা নফল), সেটির নিয়ত করবেন।

মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা ইসলামে বিধিবদ্ধ নয়। কেননা রাসুল (সা.) এবং তাঁর কোনো সাহাবি মুখে নিয়ত উচ্চারণ করেননি। (বিন বাজ, আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ, সিফাতু সালাতিন নবী (সা.)/৩-৪, দারুল মুগনি, রিয়াদ, ২০০২)।

এছাড়া, ইমাম বা একাকী নামাজ আদায়কারীর জন্য সামনে একটি সুতরাহ (আড়াল বা প্রতিবন্ধক) রাখা মুস্তাহাব, কারণ রাসুল (সা.) এর নির্দেশ দিয়েছেন।

আরও পড়ুন‘যাও, আবার নামাজ পড়ো, কারণ তুমি নামাজ পড়োনি’১৮ অক্টোবর ২০২৫নামাজের সূচনা ও কিরাত

নামাজ শুরু হয় তাকবিরে তাহরিমা-এর মাধ্যমে। মুসল্লি উভয় হাত কাঁধ বরাবর বা কান পর্যন্ত তুলে ‘আল্লাহু আকবার’ বলবেন। এটাই তাকবির। তাকবির বলার সময় দৃষ্টি থাকবে সিজদার স্থানের দিকে।

হাত বাঁধার সময় ডান হাতের তালু বাম হাতের তালুর ওপর রেখে নাভি বরাবর স্থাপন করা সুন্নাহ। (সহিহ ইবনে খুযাইমাহ, হাদিস: ৪৭৯)

এরপর শুরুতে সানা বা দোয়ায়ে ইস্তিফতা পাঠ করা সুন্নাত। এটি হল, “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তা’আলা জাদ্দুকা, ওয়া লা ইলাহা গায়রুক।”

এরপর ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম’ ও ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বলে সুরা ফাতিহা পড়তে হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কিতাবের প্রারম্ভিক সুরা (ফাতিহা) পাঠ করে না, তার নামাজ হয় না।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭৫৬)

ফাতিহা শেষে সশব্দ নামাজে ইমাম ও মুক্তাদি উভয়েই ‘আমিন’ বলবেন। এরপর কোরআনের যা সহজসাধ্য তা তেলাওয়াত করবেন।

উত্তম হল, ফজরের নামাজে বড় সুরা, জোহর, আসর ও ইশার নামাজে মধ্যম মাপের সুরা এবং মাগরিবের নামাজে কখনও ছোট ও কখনও মধ্যম বা বড় সুরা তেলাওয়াত করা। আসরের নামাজ জোহরের চেয়ে হালকা হওয়া কাম্য।

রুকু ও কওমা: অবনত ও স্থিতিশীলতা

কোরআন তেলাওয়াত শেষে রুকুতে যাওয়ার সময় মুসল্লি ‘আল্লাহু আকবার’ বলবেন। রুকুতে মাথা পিঠের সমান্তরালে থাকবে এবং উভয় হাত হাঁটুতে রাখা হবে। আঙ্গুলগুলো হবে ছড়ানো। রুকুতে স্থিরতা বজায় রাখা জরুরি।

রুকুর তাসবিহ হল, “সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম” (মহাপ্রভুর পবিত্রতা ঘোষণা করছি), যা কমপক্ষে তিন বা ততোধিক বার বলা উত্তম।

এর সঙ্গে অতিরিক্ত দোয়া হিসেবে “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা, আল্লাহুম্মাগফির লি” (হে আল্লাহ! আমরা আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করি। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন) পাঠ করা মোস্তাহাব। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪৯৬)

সিজদার সময় বেশি বেশি দোয়া করা মুস্তাহাব, কারণ রাসুল (সা.) বলেছেন, “বান্দা তার প্রতিপালকের সবচেয়ে নিকটবর্তী হয় সিজদা-অবস্থায়। তাই তোমরা সিজদায় বেশি বেশি দোয়া করো।

এরপর রুকু থেকে ওঠার সময় ইমাম বা একাকী নামাজ আদায়কারী ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ (আল্লাহ তার প্রশংসা শুনলেন, যে তাঁর প্রশংসা করল) বলবেন। সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পর সবাই বলবেন, “রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ (হে আমাদের প্রতিপালক, আপনার জন্য সকল প্রশংসা)।”

আরো বলতে পারেন, “হামদান কাসীরান ত্বাইয়্যেবান মুবারাকান ফীহি, মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরদি, ওয়া মিলআ মা বাইনাহুমা, ওয়া মিলআ মা শি’তা মিন শাইইন বা’দ” (প্রচুর, পবিত্র, কল্যাণময় প্রশংসা, যা আকাশ, পৃথিবী ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী স্থান এবং আপনি যা কিছু চান, তা পূর্ণ করে দেয়)।

মুক্তাদিগণ রুকু থেকে ওঠার সময় কেবল ‘রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’ থেকে শেষ পর্যন্ত বলবেন। এই সময় পুনরায় হাত বাঁধার দরকার নেই।

সিজদা ও দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠক

‘আল্লাহু আকবার’ বলে সিজদায় যাওয়ার সময় সম্ভব হলে প্রথমে হাঁটু এবং এরপর হাত দু’টি মাটিতে রাখা উত্তম। যদি এতে কষ্ট হয়, তবে হাত আগে রাখা যেতে পারে।

সিজদা দিতে হবে সাতটি অঙ্গের উপর, কপাল (নাকের সঙ্গে), দুই হাত, দুই হাঁটু এবং দুই পায়ের আঙ্গুলগুলোর ভেতরের অংশ। সিজদার সময় আঙ্গুলগুলো কিবলামুখী ও মিলিত থাকবে।

সিজদার তাসবিহ হল, “সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা” (আমার মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি), যা কমপক্ষে তিন বা ততোধিক বার পাঠ করতে হবে।

সিজদার সময় বেশি বেশি দোয়া করা মুস্তাহাব, কারণ রাসুল (সা.) বলেছেন, “বান্দা তার প্রতিপালকের সবচেয়ে নিকটবর্তী হয় সিজদা-অবস্থায়। তাই তোমরা সিজদায় বেশি বেশি দোয়া করো।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪৮২)

এছাড়া, সিজদার সময় কনুইকে পাঁজর থেকে, পেটকে উরু থেকে এবং উরুকে গোছা থেকে দূরে রাখা সুন্নাহ। হাত দুটিকে কুকুরের মতো মাটিতে বিছিয়ে দেওয়া নিষেধ। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮২২; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪৯৩)

প্রথম সিজদার পর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে মাথা উঠিয়ে বসতে হবে। এসময় বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসবেন এবং ডান পা খাড়া করে রাখবেন। হাত দু’টি ঊরু ও হাঁটুর উপর থাকবে। এই বৈঠকেও স্থিরতা বজায় রাখা অপরিহার্য।

এই সময় দোয়া পড়তে হবে, “রাব্বিগফির লি, রাব্বিগফির লি” (হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ক্ষমা করে দিন)।

অন্য বর্ণনায় দীর্ঘ দোয়া রয়েছে, “আল্লাহুম্মাগফির লি ওয়ার হামনি ওয়ার যুকনি ওয়া আ’ফিনি ওয়াহদিনী ওয়াজবুরনি” (হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি দয়া করুন, আমাকে রিজিক দিন, আমাকে সুস্থতা দিন, আমাকে পথ দেখান এবং আমার ক্ষয়-ক্ষতি পূরণ করে দিন)। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৮০; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৮৫০)

এরপর দ্বিতীয় সেজদা প্রথমটির মতোই সম্পন্ন করতে হবে।

আরও পড়ুনজীবনকে ছন্দে ফেরাবে ‘ধীর নামাজ’২৪ মে ২০২৫নামাজের সমাপ্তি

দুই বা চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজের জন্য নিয়ম কিছুটা ভিন্ন।

দুই রাকাতের নামাজ ও প্রথম বৈঠক

যদি নামাজটি দুই রাকাত বিশিষ্ট হয় (যেমন ফজর, জুমা), তবে দ্বিতীয় সিজদা থেকে মাথা তুলে বাম পা বিছিয়ে ডান পা খাড়া রেখে বসবেন। ডান হাত ডান উরুর উপর থাকবে এবং শাহাদাত আঙ্গুল (তর্জনী) দিয়ে আল্লাহর তাওহিদ (একত্ববাদ) এর দিকে ইশারা করবেন। কেউ কেউ বুড়ো আঙ্গুল ও মধ্যমা দিয়ে বৃত্ত তৈরি করে শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করেন, এটাও ঠিক আছে।

এই সময় তাশাহহুদ পাঠ করতে হবে, “আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত ত্বাইয়্যিবাতু, আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিইউ ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহীন। আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসূলুহু।”

এরপর দরুদ পাঠ করবেন, “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ...” থেকে শেষ পর্যন্ত।

দরুদ শেষে দোয়া পড়বেন, এটা মোস্তাহাব। ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী যলামতু নাফসী... শেষ পর্যন্ত।

তবে কেউ কেউ দরুদ শেষে চারটি জিনিস থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে বলেন, “আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’উযুবিকা মিন আযাবি জাহান্নাম, ওয়া মিন আযাবিল ক্বাবরি, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জাল” (হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই জাহান্নামের আজাব থেকে, কবরের আজাব থেকে, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং দাজ্জালের ফিতনা থেকে)। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৫৯১)

এরপর দুনিয়া ও আখেরাতের যেকোনো কল্যাণকর দু’আ পাঠ করে ডান ও বাম দিকে সালাম ফেরাবেন: “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।”

নামাজের প্রত্যেকটি ধাপে রাসুল (সা.)-কে অনুসরণ করাই একজন মুমিনের প্রধান কর্তব্য। একমাত্র সঠিক অনুসরণের মাধ্যমেই আল্লাহর নৈকট্য ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব।

তিন বা চার রাকাতের নামাজ ও শেষ বৈঠক

যদি নামাজ তিন (মাগরিব) বা চার রাকাতবিশিষ্ট হয়, তবে প্রথম বৈঠক শেষে (তাশাহহুদ ও দরুদ ছাড়া) ‘আল্লাহু আকবার’ বলে কাঁধ বরাবর হাত তুলে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবেন। তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে কেবল সুরা ফাতিহা পড়া সুন্নাহ। তবে কখনও কখনও জোহরের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে ফাতিহার সঙ্গে কিছু অতিরিক্ত তেলাওয়াত করাও রাসুল (সা.) থেকে প্রমাণিত আছে।

তিন বা চার রাকাতের শেষ বৈঠকে পা রাখার ভঙ্গিটি হবে তাওয়াররুক। অর্থাৎ, ডান পা খাড়া রেখে বাম পা ডান পায়ের নিচের দিক দিয়ে বের করে দিয়ে নিতম্বের উপর বসবেন। এই বৈঠকের পর পূর্ণ তাশাহহুদ, দরুদ, চারটি বিষয় থেকে আশ্রয় চাওয়া এবং দোয়া পাঠ শেষে সালাম ফেরাবেন।

নামাজের পর জিকির

নামাজ শেষে তিনবার ইস্তিগফার (‘আস্তাগফিরুল্লাহ’) করার পর নিম্নোক্ত জিকিরগুলো পাঠ করা সুন্নাহ, “আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারাকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৫৯২)

এরপর একশত পূর্ণ করতে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইইন ক্বাদীর” পাঠ করবেন। এছাড়াও আয়াতুল কুরসি, সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পাঠ করা সুন্নাহ। ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর শেষ তিন সুরা তিনবার করে পড়া মুস্তাহাব। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৪১০)

দৈনন্দিন সুন্নত নামাজ

দৈনিক বারো রাকাত সুন্নত নামাজ রয়েছে, যাকে সুন্নাতে রাওয়াতিব বলা হয়। এগুলো হল:

জোহরের ফরজের আগে চার রাকাত।

জোহরের ফরজের পরে দুই রাকাত।

মাগরিবের ফরজের পরে দুই রাকাত।

ইশার ফরজের পরে দুই রাকাত।

ফজরের ফরজের আগে দুই রাকাত।

এই ১২ রাকাত নামাজ নিয়মিত আদায়কারীর জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করা হয়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭২৮)

ফজর ও বিতিরের নামাজ ব্যতীত অন্য সুন্নাতগুলো রাসুল (সা.) সফরে ছেড়ে দিতেন। ফরজ নামাজ মসজিদে আদায় করলেও এই সুন্নাতগুলো বাড়িতে আদায় করা উত্তম। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭৩১)

এছাড়াও, আসরের আগে চার রাকাত (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৪২১) এবং জোহরের আগে ও পরে চার রাকাত করে মোট আট রাকাত নামাজ আদায় করারও ফজিলত বর্ণিত আছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, “আল্লাহ সেই ব্যক্তির উপর দয়া করুন, যে আসরের আগে চার রাকাত নামাজ আদায় করে।”

নামাজের প্রত্যেকটি ধাপে রাসুল (সা.)-কে অনুসরণ করাই একজন মুমিনের প্রধান কর্তব্য। একমাত্র সঠিক অনুসরণের মাধ্যমেই আল্লাহর নৈকট্য ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব।

আরও পড়ুননামাজ: দাসের মহিমা০৪ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ