পাকিস্তানের ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় প্রাণহানি ও স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার পর এর সমুচিত জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানি সেনারা ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে মুহুর্মুহু গোলা বর্ষণ করে চলেছে; ভারতও পাল্টা গোলা ও গুলি ছুড়ছে। ফলে সীমান্তে যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে দুই দেশ।

তবে চিরবৈরী ভারত ও পাকিস্তান বিধ্বংসী পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক। দুই দেশ হামলা ও পাল্টা হামলায় প্রচলিত অস্ত্রের ব্যবহার করছে। তবে যুদ্ধের মোড় ঘুরে গেলে তারা কী পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার করতে পারে; পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কী নীতি রয়েছে দুই দেশের। 

ফোর্বস সাময়িকীর অনলাইন সংস্করণে ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের নীতির বিষয়ে বলা হয়েছে, ভারত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে প্রচলিত নীতি মেনে চলার কথা বলে। ‘প্রথমে ব্যবহার না করার’ (নো ফার্স্ট ইউজ) নীতিতে অটল তারা। এর মানে হলো, ভারত কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে না, যদি না তাদের ওপর প্রথমে পারমাণবিক হামলা হয়।

আরো পড়ুন:

পাকিস্তানে ভারতের হামলা নিয়ে সর্বশেষ যা জানা যাচ্ছে

ভারতের হামলা: ইসলামাবাদ ও পাঞ্জাবে সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা

অন্যদিকে, পাকিস্তান এই নীতিতে বিশ্বাস করে না। ভারতের বিপরীতে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারে ছোট আকারের ট্যাকটিক্যাল ওয়ারহেড আছে বলে ধারণা করা হয়, যেগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য তৈরি, যেমন ছোট ক্ষেপণাস্ত্র ‘নাসর’  দিয়ে এসব অস্ত্র ছোড়া যায়।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই ধরনের ছোট ওয়ারহেড পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। কারণ- এগুলোর ব্যবহার হলে পরিস্থিতি দ্রুত বৃহৎ পরিসরের পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে গড়াতে পারে।

ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতা সম্পর্কে আমরা কী জানি?

ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ, যা কোনো পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধক্ষেত্রে বিপজ্জনক মাত্রায় উত্তেজনার ঝুঁকি বাড়ায়।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (সিআইএ) ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক অনুযায়ী, ভারতের প্রায় ১৫ লাখ সক্রিয় সামরিক সদস্য রয়েছে, যা বিশ্বে অন্যতম বৃহৎ সেনাবাহিনী। অন্যদিকে, পাকিস্তানে প্রায় ৬ লাখ ৩০ হাজার সক্রিয় সামরিক সদস্য রয়েছে।

তবে সেনাসংখ্যায় এগিয়ে থাকলেও ভারতের বাহিনী চীনের সঙ্গে উত্তরের এবং উত্তর-পূর্বের বিতর্কিত সীমান্তে নজর দিতে গিয়ে অনেকটাই ছড়িয়ে আছে।

আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশানল ক্যাম্পেইন টু অ্যাবলিশ নিউক্লিয়ার ওয়েপনসের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারে আনুমানিক ১৬৪টি ওয়ারহেড রয়েছে, আর পাকিস্তানের আছে আনুমানিক ১৭০টি পারমাণবিক অস্ত্র।

তবে একটি বড় পার্থক্য হলো, ভারতের রয়েছে একটি পারমাণবিক ট্রায়াড (triad), অর্থাৎ তারা স্থল, আকাশ ও পানির নিচ থেকে পারমাণবিক অস্ত্র ছোড়ার সক্ষমতা রাখে। এই সুবিধা পাকিস্তানের নেই।

ঢাকা/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবহ র র

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ