সাংবাদিকতায় সততা ও দায়িত্ববোধই সবচেয়ে বড় শক্তি: জবি উপাচার্য
Published: 7th, May 2025 GMT
সাংবাদিকতায় সততা, তথ্যনিষ্ঠতা ও দায়িত্ববোধই সবচেয়ে বড় শক্তি বলে মন্তব্য করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম।
বুধবার (৭ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকতার দক্ষতা ও নৈতিকতাবিষয়ক কর্মশালায় এসব কথা বলেন তিনি। ‘ইম্পাওয়ারিং ক্যাম্পাস জার্নালিস্টস’ শীর্ষক দিনব্যাপী এ কর্মশালার আয়োজন করে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি)।
উপাচার্য বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদিচ্ছা সবসময়ই থাকে। তবে অনেক সময় প্রক্রিয়াগত জটিলতায় কাজ বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়। তারপরও আমরা শিক্ষার্থীদের অধিকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করি। সাংবাদিকদের উচিত নির্ভুল তথ্য উপস্থাপন করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখা।”
আরো পড়ুন:
‘দ্য হিন্দু’র সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবেদন ভিত্তিহীন: প্রেস উইং
নাটোরের প্রবীণ সাংবাদিক নবীউর রহমান মারা গেছেন
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.
কর্মশালায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাজ করা শিক্ষার্থী সাংবাদিক ও পিআরআইপি দপ্তরের কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।
কর্মশালা নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি সুবর্ণ আসসাইফ বলেন, “আজকের কর্মশালা সবার জন্য দারুণ অভিজ্ঞতা। সাংবাদিকতা শুধু পেশা নয়, এটি প্রতিদিন নতুন গল্প তুলে ধরার এক অনন্য সুযোগ। এ মাধ্যমে যেমন মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনা যায়, তেমনি সমাজের সত্যকে তুলে ধরা যায়।”
তিনি বলেন, “জুলাইয়ের কঠিন দিনেও এই পেশা আমাদের শক্তি জুগিয়েছে। দর্শক-পাঠকের বিশ্বাস রক্ষা করাই আমাদের অঙ্গীকার। সাংবাদিকরা প্রতিনিয়ত শুধু ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নয়, বরং ক্ষমা, কৃতজ্ঞতা, সমবেদনা ও উদারতার গল্পও বলেন। আর এটাই সাংবাদিকতার সৌন্দর্য।”
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন আইকিউএসি পরিচালক অধ্যাপক মো. আবু লায়েক। স্বাগত বক্তব্য দেন অতিরিক্ত পরিচালক মো. মেজবাহ-উল-আজম সওদাগর।
কী-নোট স্পিকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পিআরআইপি দপ্তরের পরিচালক মুহাম্মদ আনওয়ারুস সালাম এবং যমুনা টেলিভিশনের ভারপ্রাপ্ত চিফ রিপোর্টার আখলাকুস সাফা।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় উপকূলীয় বন রক্ষার বিকল্প নেই
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নানা সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে, যার বেশির ভাগ ঘটছে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে। দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে উপকূলীয় বন আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বন সংরক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে নানা কর্মকাণ্ডে এ বন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আজ সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আয়োজিত ‘ন্যাশনাল ইভেন্ট অন কোস্টাল ফরেস্ট কো ম্যানেজমেন্ট ফর ইকোসিস্টেম রিস্টোরেশন অ্যান্ড এসডিএসএস টুল’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
কর্মশালায় সরকারি কর্মকর্তারা, আইনবিদ, পরিবেশকর্মী ও উপকূলীয় অধিবাসীরা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাভিদ শফিউল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশ বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকির প্রথম সারিতে রয়েছে। এর মধ্যে নানা ধরনের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট মোকাবিলা করছি আমরা।’ এ সংকট মোকাবিলায় উপকূলীয় বন রক্ষার কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, উপকূলীয় বন শুধু আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে না, এটি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবন–জীবিকারও উৎস। তাই এ বন রক্ষার কোনো বিকল্প নেই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ বন নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আলোচনায় বেলার প্রধান নির্বাহী তাসলিমা ইসলাম বলেন, সংবিধানের ১৮ (ক) অনুচ্ছেদে জীববৈচিত্র্যসহ বন রক্ষার কথা বলা হলেও প্রকল্প প্রণয়নের সময় বনের ক্ষতির বিষয়টি সরকার মূল্যায়ন করে না। কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণে সাত লাখ ২০ হাজার গাছ ও ২৬টি পাহাড় কাটা হয়েছে। ১৯২৭ সালের বন আইনে বনের সুনির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি এবং বন অধিদপ্তরের দায়িত্ব সম্পর্কেও পরিষ্কার কোনো নির্দেশনা নেই।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বন অধিদপ্তরের বরিশাল উপকূলীয় অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বন রক্ষায় ভূমি ব্যবস্থাপনাকে একটা বড় সমস্যা হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, উপকূলীয় বনকে সংরক্ষিত ঘোষণা না করা পর্যন্ত আইনি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যায় না। সংরক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত এটি থাকে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের অধীন। বন দখল হলে এটার দায় দেওয়া হয় বন বিভাগকে।
মিহির কুমার বলেন, বন রক্ষায় সহব্যবস্থাপনা কমিটি (কো–ম্যানেজমেন্ট কমিটি) ভালো কাজ দেয়। এ কমিটির কারণে সুন্দরবনে গাছ কাটা অনেকাংশে বন্ধ হয়েছে।
সহব্যবস্থাপনা কমিটি হলো পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে সৃষ্ট একটি কমিটি, যা স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে বন রক্ষার একটি প্রয়াস।
অক্সফাম বাংলাদেশের জলবায়ুনীতি বিশেষজ্ঞ এস এম সাইফি ইকবাল বলেন, মানবসৃষ্ট কার্যকলাপ যেমন উপকূলীয় বনে চিংড়ি ঘের, গাছ কাটা এসব কারণে প্রতিবছর ১ শতাংশ করে ম্যানগ্রোভ বন কমছে। কৌশলগত অংশীদারত্ব ও সহব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ সম্ভব।
বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনের দ্বিতীয় সচিব (উন্নয়ন) জ্যাকব ডি লিউন বলেন, বাংলাদেশে আইন আছে পর্যাপ্ত; কিন্তু তা যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হয় না। জনবলের ঘাটতি, আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠে আইন প্রয়োগের পথ প্রশস্ত করতে হবে।
কর্মশালায় রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে নির্বাচনের সময় থেকে বন ও পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে অঙ্গীকার আদায়, বন রক্ষায় রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিষয়ে সবাই গুরুত্বারোপ করেন।