আইপিএলের ভবিষ্যৎ কী—গতকাল রাত থেকেই ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে এই প্রশ্ন।

ভারতের জম্মুতে কাল পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর হামলার পর ধর্মশালায় নিরাপত্তাজনিত কারণে আইপিএলে পাঞ্জাব কিংস-দিল্লি ক্যাপিটালসের ম্যাচ বাতিল করা হয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ, ম্যাচ রেফারি, আম্পায়ার, সম্প্রচারকারী টেলিভিশন চ্যানেলের ক্রুদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। দর্শকদের চলে যেতে অনুরোধ করতে দেখা যায় খোদ আইপিএল চেয়ারম্যান অরুণ ধুমালকে।

ম্যাচের ভেন্যু হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (এইচপিসিএ) স্টেডিয়ামের চারটি ফ্লাডলাইটের তিনটিই কাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সবাই কতটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন, তা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছিল।

আতঙ্কটা বেশি ছড়িয়েছে বিদেশি খেলোয়াড়দের মনে। তাঁদের বেশির ভাগকেই যে কখনো এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি। বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, আইপিএলের বিদেশি খেলোয়াড়েরা এখন ভারতে অবস্থান করাকে নিরাপদ মনে করছেন না। যতটা দ্রুত সম্ভব, তাঁরা দেশে ফিরতে চান।

এ অবস্থায় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) ‘অপেক্ষা করো এবং দেখো নীতি’র ওপর নির্ভর করছে। তার মানে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার পর নরেন্দ্র মোদির সরকার আইপিএলের ভবিষ্যৎ নিয়ে যে সিদ্ধান্ত জানাবে, বিসিসিআই সেটাই কার্যকর করবে।

কাল পাঞ্জাব কিংস–দিল্লি ক্যাপিটালস ম্যাচ বাতিল হওয়ার পর অরুণ ধুমাল পিটিআইকে সেই কথাই বলেছেন, ‘আমরা এখন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি। এটা পরিবর্তনশীল। সরকারের কাছ থেকে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের নির্দেশনা পাইনি। অবশ্যই সবকিছু বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

সূচি অনুযায়ী, আজ রাতে লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস–রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ম্যাচ আছে। খেলা হওয়ার কথা ভারতের উত্তর প্রদেশের রাজধানী লক্ষ্ণৌতে। শহরটি থেকে পাকিস্তান সীমান্তের দূরত্ব প্রায় ৯৫০ কিলোমিটার। লক্ষ্ণৌর একানা স্টেডিয়ামকে তাই আপাতত নিরাপদ ভেন্যুই মনে করা হচ্ছে।

অরুণ ধুমালও নিশ্চিত করেছেন, আজকের ম্যাচটি সূচি অনুযায়ী মাঠে গড়াবে, ‘হ্যাঁ, এখন পর্যন্ত (লক্ষ্ণৌ–বেঙ্গালুরু ম্যাচের সূচি) ঠিকঠাক আছে। তবে আমি আবারও বলছি, পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট সবার সর্বোত্তম স্বার্থ মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

কাল ম্যাচ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধর্মশালা থেকে দিল্লিতে নিয়ে যেতে ‘বন্দে ভারত’ নামে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করে বিসিসিআই। এ ব্যাপারে বোর্ডের সহসভাপতি রাজীব শুকলা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছেন, ‘আমরা উনা থেকে একটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছি। স্থানটি ধর্মশালা থেকে খুব বেশি দূরে নয়। আমরা সবাইকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে চাই। ম্যাচ বাতিল করার পর স্টেডিয়াম খালি করা হয়েছে। আগামীকাল (আজ) পরিস্থিতি দেখার পর আমরা টুর্নামেন্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব। এ মুহূর্তে খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

ভারতের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এটাও জানিয়েছে, কাল ম্যাচ বাতিল হওয়ার পরপরই জরুরি বৈঠক ডেকেছিল আইপিএল পরিচালনা পরিষদ। বৈঠকে পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের জানানো হয়, আইপিএলের কোনো ভেন্যুই এ মুহূর্তে হামলার ঝুঁকিতে নেই। তবে ভারতবাসীর অনুভূতির প্রতি সম্মান জানিয়ে ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আইপিএল স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স থ ত লক ষ ণ ন র পদ

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় ত্রাণের দায়িত্ব নিতে চায় ইসরায়েল, রাজি নয় জাতিসংঘ

গাজা উপত্যকায় চলমান মানবিক সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এ অবস্থায় গাজায় ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইসরায়েল, যা প্রত্যাখ্যান করেছে জাতিসংঘ। বিশ্ব সংস্থাটি বলছে, মানবিক নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করে– এমন কোনো ত্রাণ কার্যক্রমে তারা অংশ নেবে না।

জাতিসংঘের উপমুখপাত্র ফারহান হক বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের নেতৃত্বে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের এক অনানুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে যে নতুন ত্রাণ পরিকল্পনার কথা উঠে এসেছে, সে বিষয়ে জাতিসংঘকে সরাসরি কিছু জানানো হয়নি।

এ পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমন্বয়ে একটি বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গাজায় ব্যক্তিগত পর্যায়ে ত্রাণ পৌঁছানোর কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে উপমুখপাত্র বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, এই পরিকল্পনার মাধ্যমে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের মাত্রা এতটাই কঠোর হবে যে, তা শেষ দানা চাল ও শেষ ক্যালোরি বিন্দু পর্যন্ত নির্ধারিত থাকবে।’ জাতিসংঘ মহাসচিবের ভাষ্য অনুযায়ী, সংস্থাটি শুধু সেই ব্যবস্থাতেই অংশ নেবে, যা ‘মানবতা, নিরপেক্ষতা, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার’ মূলনীতিকে মেনে চলে।

এদিকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলের রাফায় সংঘর্ষে আরও দুই ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও চার সেনা। এক বিবৃতিতে আইডিএফ জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধে এ পর্যন্ত মোট ৮৫৬ সেনা নিহত হয়েছে। এ ছাড়া শুক্রবার গাজার বিভিন্ন অংশে ইসরায়েলের চালানো বিমান ও আর্টিলারি হামলায় চার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের একটি আবাসিক ভবনে হামলায় একই পরিবারের স্বামী-স্ত্রী ও তাদের শিশুসন্তান মারা গেছে।
একই দিন গাজার উত্তরাঞ্চলের আল-রিমাল এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে হামলায় আরও এক ফিলিস্তিনি নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ছাড়া আল-জাওয়াইদা শহরের একটি অ্যাপার্টমেন্টে হেলিকপ্টার থেকে হামলায় বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। গাজার উপকূলীয় অঞ্চলে গোলাবর্ষণ চালিয়েছে ইসরায়েলি নৌবাহিনীও। যদিও এ হামলায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

ইউএনআরডব্লিউএর ৬ স্কুল বন্ধের নির্দেশ

শুক্রবার পূর্ব জেরুজালেমের শুয়াফাত শরণার্থী শিবিরে ইউএনআরডব্লিউএ পরিচালিত ছয়টি স্কুলে অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এসব স্কুল থেকে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জোর করে বের করে দিয়ে স্কুলগুলো বন্ধ করে দেয় তারা।

এর আগে গত এপ্রিল মাসে শুয়াফাতের একটি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকাকে একটি সামরিক নির্দেশনা দেয় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। তাতে বলা হয়, ৮ মের মধ্যে স্কুল বন্ধ করতে হবে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী, ৮ মের পর থেকে স্কুল ভবনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। এবার ওই আদেশে আরও পাঁচটি স্কুল যুক্ত হয়েছে। এগুলো সিলওয়ান, ওয়াদি আল-জোজ ও সুর বাহের এলাকায় অবস্থিত। এসব স্কুলে ৮০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি শিশু পড়াশোনা করে।

২০২৩ সালের জুলাই মাসে ইউএনআরডব্লিউএকে ‘সন্ত্রাসী সংস্থা’ আখ্যা দেয় ইসরায়েল। এর পর তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে এসব স্কুল বন্ধের নির্দেশ দেয়। এসব শিক্ষার্থীকে ইসরায়েলি স্কুলে পাঠানোর নির্দেশও দেওয়া হয়। এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, ‘এই হামলা জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের পরিচয় ও অস্তিত্ব মুছে ফেলতে একটি পরিকল্পিত যুদ্ধের অংশ। এর লক্ষ্য শহরটিকে পুরোপুরি ইহুদি বানানো।’ জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি স্কুলগুলো দ্রুত খুলে দেওয়ার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছে তারা।

এদিকে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি যুদ্ধবিরতি ও পুনর্গঠনের পরিকল্পনা ঘোষণা করতে যাচ্ছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত হবে। পরিকল্পনার আওতায় গাজাজুড়ে মানবিক সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন ও অবকাঠামো পুনর্গঠনের কথা বলা হয়েছে। সূত্র: আলজাজিরা, মিডিলইস্ট মনিটর। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ