ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল শুক্রবার ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যমের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ইসরায়েলি আর্মি রেডিওর সাংবাদিক ইয়ানির কোজিন তার এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে এক পোস্টে লিখেছেন, ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠমহল মনে করছে, নেতানিয়াহু তাকে ব্যক্তিগতভাবে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন—এমন সন্দেহ থেকেই ট্রাম্প তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

অবশ্য এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল—দুই দেশের কারও পক্ষ থেকেই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে ইসরায়েল হায়োম নামের একটি পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের সঙ্গে কোজিনের বক্তব্য মিলে গেছে। ডানপন্থি এই পত্রিকা নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।

হায়োমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। দু’জনের মধ্যে বাড়তে থাকা হতাশা ও দূরত্ব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

কোজিন দাবি করেন, ট্রাম্প এখন নেতানিয়াহুর ওপর নির্ভর না করেই মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে এগিয়ে যেতে চান। এই অবস্থান থেকে বোঝা যায়, আঞ্চলিক বিষয়ে দুই নেতার দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে এখন স্পষ্ট ফারাক দেখা দিয়েছে।

কোজিন আরও উল্লেখ করেন, গত এপ্রিল মাসে ইসরায়েলের কৌশলগতবিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার ওয়াশিংটনে রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠককালে ডারমার নাকি ট্রাম্প কী করা উচিত, তা নিয়ে ‘পরামর্শ’ দেন, যা ট্রাম্পকে ক্ষুব্ধ করে তোলে।

কোজিনের মতে, ডারমারের ওই আচরণের পর থেকেই ট্রাম্পের অন্দরমহলের কর্মকর্তারা নেতানিয়াহুর বিষয়ে তাকে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিতে উৎসাহ দেন।

এর আগেই গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েল হায়োম পত্রিকা ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বর্তমানে নেতানিয়াহুর ওপর ‘হতাশ’। তিনি ভবিষ্যতে নেতানিয়াহুর অংশগ্রহণ ছাড়াই মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে চান।

সূত্র জানায়, ট্রাম্পের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থ, বিশেষ করে সৌদি আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন।

ইসরায়েল হায়োম পত্রিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইসরায়েল-সৌদি আরব সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে যে আলোচনার প্রত্যাশা করা হচ্ছে, সেই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় কিছু বড় পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে, এমন ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়েছে, ‘ট্রাম্প মনে করেন, নেতানিয়াহু ইচ্ছাকৃতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দেরি করছেন। এ জন্যই তিনি আর ইসরায়েলের অপেক্ষায় না থেকে নিজেই এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল র

এছাড়াও পড়ুন:

১৬ হাজার পায়ের ছাপে জানা গেল ডাইনোসরের অদ্ভুত আচরণ

তিনটি আঙুল। ধারালো নখ। লাতিন আমেরিকার দেশ বলিভিয়ার মধ্যাঞ্চলে এমন অসংখ্য পায়ের ছাপ দেখা যায়। ছাপগুলো ভয়ংকর দৈত্যের—এমন কথাই প্রচলিত ছিল। স্থানীয় লোকজন বলতেন, সেই দৈত্যগুলো নাকি এতটাই শক্তিশালী যে তাদের পায়ের ছাপ বসে যেত পাথরের ওপর।

একসময় কল্পনার দিন শেষ হলো। ষাটের দশকের দিকে সেখানে বিজ্ঞানীরা এলেন। পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে জানালেন, ছাপগুলো আসলে দোপেয়ে বিশাল সব ডাইনোসরের। আন্দিজ পর্বতমালার এ অঞ্চলে ছয় কোটি বছর আগে নদী–খালে দাপিয়ে বেড়াত সেগুলো। জলাশয়গুলো বিলীন হয়েছে। বর্তমানে সেখানে রয়েছে তোরো তোরো নামের একটি গ্রাম আর পার্ক।

সম্প্রতি ওই অঞ্চল নিয়ে গবেষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লোমা লিন্ডা ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক। সেখানে তাঁরা দোপেয়ে বিভিন্ন ডাইনোসরের ১৬ হাজার ৬০০ পায়ের ছাপ খুঁজে পেয়েছেন। এর মধ্যে ছিল ভয়ংকর মাংসাশী টিরানোসরাস রেক্সের পায়ের ছাপও। গবেষণার ফল গত বুধবার বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী পিএলওএস ওয়ান–এ প্রকাশিত হয়েছে।

ছয় বছর ধরে ওই গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। এতে বলিভিয়ার ওই ডাইনোসরদের অদ্ভুত একটি আচরণ সম্পর্কে জানা গেছে, তা হলো স্থলচর এই ডাইনোসরগুলো সাঁতার কাটার চেষ্টা করেছিল। এই চেষ্টার সময় জলাশয়ের তলদেশে কাদায় সেগুলোর পায়ের ছাপ পড়ে যায়। এমন ১ হাজার ৩৭৮টি পায়ের ছাপের সন্ধান পাওয়া গেছে। এত বেশি পায়ের ছাপ এর আগে একসঙ্গে কোথাও পাওয়া যায়নি।

তবে অদ্ভুত একটি বিষয় হলো, পায়ের ছাপ পাওয়া গেলেও এখানে কখনো ডাইনোসরের হাড় বা জীবাশ্ম পাওয়া যায়নি। এর পেছনে বিজ্ঞানীরা কিছু কারণ দেখছেন। এর একটি হলো চাষাবাদ ও উন্নয়ন কার্যক্রমে হাড় বিনষ্ট হয়ে যাওয়া। গবেষকেরা আরও বলেছেন, এখানে হয়তো ডাইনোসররা স্থায়ীভাবে বসবাস করতই না; বরং পেরু থেকে আর্জেন্টিনায় চলাচলের একটি পথ হিসেবে ব্যবহার করত।

তবে জীবাশ্মের চেয়ে অনেক সময় পায়ের ছাপ থেকে ডাইনোসরের আচরণ সম্পর্কে বেশি জানা যায় বলে উল্লেখ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডের গবেষক অ্যান্থনি রোমিলিও। তিনি বলেন, পায়ের ছাপ থেকে গবেষকেরা জানতে পারেন, কখন ডাইনোসররা ধীরে চলাচল করেছিল, কখন দ্রুত চলেছিল, আর কখনই–বা সেগুলো থমকে দাঁড়িয়েছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ