নেতানিয়াহুর সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প, দাবি ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের
Published: 10th, May 2025 GMT
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল শুক্রবার ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যমের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলি আর্মি রেডিওর সাংবাদিক ইয়ানির কোজিন তার এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে এক পোস্টে লিখেছেন, ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠমহল মনে করছে, নেতানিয়াহু তাকে ব্যক্তিগতভাবে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন—এমন সন্দেহ থেকেই ট্রাম্প তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
অবশ্য এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল—দুই দেশের কারও পক্ষ থেকেই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে ইসরায়েল হায়োম নামের একটি পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের সঙ্গে কোজিনের বক্তব্য মিলে গেছে। ডানপন্থি এই পত্রিকা নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।
হায়োমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। দু’জনের মধ্যে বাড়তে থাকা হতাশা ও দূরত্ব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
কোজিন দাবি করেন, ট্রাম্প এখন নেতানিয়াহুর ওপর নির্ভর না করেই মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে এগিয়ে যেতে চান। এই অবস্থান থেকে বোঝা যায়, আঞ্চলিক বিষয়ে দুই নেতার দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে এখন স্পষ্ট ফারাক দেখা দিয়েছে।
কোজিন আরও উল্লেখ করেন, গত এপ্রিল মাসে ইসরায়েলের কৌশলগতবিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার ওয়াশিংটনে রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠককালে ডারমার নাকি ট্রাম্প কী করা উচিত, তা নিয়ে ‘পরামর্শ’ দেন, যা ট্রাম্পকে ক্ষুব্ধ করে তোলে।
কোজিনের মতে, ডারমারের ওই আচরণের পর থেকেই ট্রাম্পের অন্দরমহলের কর্মকর্তারা নেতানিয়াহুর বিষয়ে তাকে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিতে উৎসাহ দেন।
এর আগেই গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েল হায়োম পত্রিকা ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বর্তমানে নেতানিয়াহুর ওপর ‘হতাশ’। তিনি ভবিষ্যতে নেতানিয়াহুর অংশগ্রহণ ছাড়াই মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে চান।
সূত্র জানায়, ট্রাম্পের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থ, বিশেষ করে সৌদি আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন।
ইসরায়েল হায়োম পত্রিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইসরায়েল-সৌদি আরব সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে যে আলোচনার প্রত্যাশা করা হচ্ছে, সেই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় কিছু বড় পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে, এমন ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়েছে, ‘ট্রাম্প মনে করেন, নেতানিয়াহু ইচ্ছাকৃতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দেরি করছেন। এ জন্যই তিনি আর ইসরায়েলের অপেক্ষায় না থেকে নিজেই এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রংপুরে মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর স্ত্রীকে হত্যায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় মামলা
রংপুরের তারাগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় ও তাঁর স্ত্রী সুবর্ণা রায়কে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে এই দম্পতির ছেলে শোভেন চন্দ্র রায় বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এতে অজ্ঞাতনাম আসামি করা হয়েছে।
নিহত দম্পতির বাড়ি তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের রহিমাপুর গ্রামে। তাঁর বড় ছেলে শোভেন চন্দ্র রায় র্যাবে ও ছোট ছেলে রাজেশ খান্না চন্দ্র রায় পুলিশে চাকরি করেন। গ্রামের বাড়িতে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দুজন থাকতেন। গতকাল রোববার সকালে নিজ বাড়ি থেকে তাঁদের লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ বলছে, চায়নিজ কুড়াল দিয়ে যোগেশের মাথার পেছনে ও তাঁর স্ত্রী সুবর্ণা রায়ের কপালে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
এ সম্পর্কে তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় ও তাঁর স্ত্রীকে হত্যার ঘটনায় তাঁর বড় ছেলে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। তদন্তের স্বার্থে বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।
মামলার বাদী শোভেন চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমার মা–বাবা শেষ বয়সে ছিলেন, তবু তাঁদের এভাবে নৃশংসভাবে মেরে ফেলা হলো। এলাকার সবাই জানেন, কারা করেছে। এক বছর আগে গ্রামের শ্মশানকে ৮ শতক জমি দান করেন বাবা। ওই দান কিছু লোক মেনে নিতে পারেনি। এটাই কাল হয়েছে।’
পুলিশ জানায়, শনিবার রাত ৯টা ২২ মিনিটে ছোট ছেলে রাজেশের সঙ্গে কথা হয় যোগেশের। গতকাল সকালে দিনমজুর দীপক চন্দ্র রায় বাড়িতে কাজে এসে প্রধান ফটকে ডাকাডাকি করলে কেউ সাড়া দেননি। পরে প্রতিবেশীদের ডেকে মই বেয়ে প্রধান ফটকের ওপর দিয়ে ভেতরে ঢুকে খাবারঘরে যোগেশ চন্দ্রের ও রান্নাঘরে সুবর্ণা রায়ের রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন।
বাড়ি থেকে ভেসে আসছে কান্নাআজ সোমবার বেলা ১১টায় রহিমাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নিহত দুজনের মরদেহ সৎকার করার জন্য বাড়ির বাইরে কাঠখড়ি জোগাড় করা হচ্ছে। বাড়ি ভেতর থেকে ভেসে আসছে কান্নার আওয়াজ। স্বজন ও প্রতিবেশীরা জড়ো হয়েছেন। সৎকারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন উপস্থিত আছেন।
এ সময় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আলী হোসেন বলেন, ‘নতুন ইউএনওকে রোববার ফুল দিয়ে বরণ করা জন্য আমরা উপজেলায় আসি। সেখানে যোগেশের যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেদিনই তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। বিজয়ের মাসে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে এভাবে হত্যা করা লজ্জাজনক। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে, না হলে কঠোর আন্দোলন হবে।’
ইউএনও মোনাব্বার হোসেন বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্রের বাড়িতে ঘুরে এসেছি। তাঁর লাশ এখনো আসেনি। মরদেহ বাড়িতে পৌঁছালে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে।’
আরও পড়ুনপরোপকারী দম্পতির এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসী১৬ ঘণ্টা আগে