আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এটি না হলে ঢাকাকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে দলটি।

দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেছেন, ‘যদি এটি করা না হয়, ছাত্র-জনতাকে সাক্ষী রেখে বলছি, বাংলাদেশ থেকে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে।’

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে আজ শনিবার বেলা তিনটার পর থেকে ঢাকার শাহবাগ মোড়ে গণজমায়েত শুরু হয়েছে। সাড়ে তিনটা থেকে শাহবাগ মোড়ের ডিজিটাল স্ক্রিনের নিচে সিঁড়ির ওপর অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা।

বিকেল পাঁচটার দিকে সেখানে বক্তব্য দেন আজিজুল হক ইসলামাবাদী। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে, ড.

ইউনূস আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছেড়ে যাব না।...আওয়ামী লীগ হলো ফেরাউনের বাহিনী। এই ফেরাউনের বাহিনী বাংলাদেশে থাকতে পারে না। কিছু রাজনৈতিক নেতার মনে আওয়ামী লীগের জন্য প্রেম জেগেছে। তারা...দাদা বাবুদের দেশে চলে যাক।’

আওয়ামী লীগকে খুনি, সন্ত্রাসী ও গণহত্যাকারী দল হিসেবে আখ্যায়িত করে হেফাজতে ইসলামের এই নেতা আরও বলেন, ‘এই দলকে নিষিদ্ধ করতেই হবে। অধ্যাপক ইউনূসকে বলতে চাই, ৯টি মাস অতিক্রান্ত হলেও আওয়ামী লীগের বিচারের কোনো অগ্রগতি নেই। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। যদি না হয়, বাংলাদেশ থেকে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব চ ছ ন ন কর ন ষ দ ধ কর ইসল ম আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক: গ্রাহক নেই, কাজও নেই

একসময় গ্রাহকের ভিড় সামলাতেই যাদের ঘাম ছুটে যেত, এখন তারা অলস সময় পার করছেন ব্যাংকের মধ্যে বসে। শাখা পর্যায়ে এখনো অর্থ ছাড় না হওয়ায় গ্রাহকের আনাগোনা শুরু হয়নি এসব ব্যাংকে। কাজ নিয়েও দেখা যায়নি ব্যতিব্যস্ততা।

লুটপাটে ফোকলা করে ফেলা দেশের পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংককে বাঁচিয়ে রাখতে এগুলোর কার্যক্রম এক ছাতার নিচে নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক; ব্যাংকগুলো মিলে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ নামে একটি একক ব্যাংক যাত্রা শুরু করেছে, ২ ডিসেম্বর যার লাইসেন্সও দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের প্রজ্ঞাপনের মাধ‌্যমে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’কে তফসিলি ব্যাংকের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তবে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো শাখা অর্থ পায়নি।

মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানী ঢাকার মতিঝিল, পল্টন, তোপখানা রোড ও কাকরাইলে একীভূত হওয়া ব্যাংকগুলোর বেশ কয়েকটি শাখায় ঘুরে দেখা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের কোনো চাপ নেই; গ্রাহকদেরও উপস্থিতি নেই।

একীভূত হওয়া পাঁচ ব্যাংক হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক।

এগুলোর মধ্যে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের তোপখানা রোড শাখায় গিয়ে দেখা যায় সুনশান নীরবতা। কর্মকর্তারা নিজেদের ডেস্কে কাজ করছেন। কাউন্টারে নেই কোনো ভিড়। টাকা গণনার মেশিনের কট কট শব্দ নেই। ডিজিটাল কাউন্টিং মেশিনে সিরিয়াল দেওয়া-নেওয়ার কোনো ব‌্যস্ততাও দেখা গেল না।

প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যে শাখাটিতে এলেন মাত্র একজন গ্রাহক। কথা হলো তার সঙ্গে। মাসিক সঞ্চয় প্রকল্পের (ডিপিএস) টাকা জমা দিতে এসেছেন তিনি। কয়েক মিনিটের মধ্যে আরেকজন গ্রাহককে পাওয়া গেল। তবে তারও একই প্রয়োজন।

প্রথম যে গ্রাহক ব‌্যাংকটির এই শাখায় আসেন তার নাম আবুল হোসেন। তিনি বলেন, “আমার পাঁচ বছর মেয়াদি একটা ডিপিএস আছে। সেই ডিপিএসের মাসিক কিস্তির টাকা জমা দিতে এসেছি। শুনেছি কয়েকটি ব‌্যাংক একত্র করে একটি ব‌্যাংক করেছে সরকার; যার মধ‌্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকও রয়েছে। যেহেতু সরকার ব‌্যাংকের দায়িত্ব নিয়েছে, তাই  বিশ্বাস আরো বেড়ে গেছে। ডিপিএসের টাকা পাবই। তাই নিয়মিত টাকা জমা দিয়ে যাচ্ছি।”

একীভূত ব্যাংকের মূলধন হিসেবে সরকার দিয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে এই টাকা ব্যাংকটির অ্যাকাউন্টে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর আমানতকারীদের শেয়ার থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা নিয়ে মোট মূলধন করা হচ্ছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা।

এই বিষয়ে জানতে কথা হয় ফার্স্ট সিকিউরিটির তোপখানা রোড শাখার ব‌্যবস্থাপক তৌফিক এলাহীর সঙ্গে। তিনি বলেন, “শুনেছি সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের জন্য বাজেট থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে সরকার। কিন্তু আমাদের শাখা পর্যায়ে এখনো কোনো টাকা বা নির্দেশনা পৌঁছায়নি।”

সাধারণ গ্রাহকদের টাকা দেওয়ার মতো অবস্থা তাদের শাখার এখনো হয়নি জানিয়ে তৌফিক এলাহী বলেন, “ব্যাংকের লিখিত নির্দেশনা ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারব না। আমরা অপেক্ষায় আছি। আমাদের শাখায় অর্থ ও নির্দেশনা এলে সেই মোতাবেক গ্রাহক সেবায় নিয়োজিত হব।”

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের নয়াপল্টন শাখায় গিয়ে প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে। অফিসের ভেতর সুনশান অবস্থা। কর্মকর্তারা নিজেদের ডেস্কে অলস সময় পার করছেন। নেই কোনো গ্রাহক উপস্থিতি।

দুপুরের পর এক্সিম ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় গিয়ে কোনো কর্মচাঞ্চল্য চোখে পড়েনি। অথচ এই শাখায় একসময় গ্রাহকদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হতো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

এই শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে অনুমতি না থাকায় তারা সংবাদমাধ্যমকে কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এমনকি শাখা ব‌্যবস্থাপকও কথা বললেন না। তিনি শুধু এতটুকু বলেন যে, “ওপর থেকে নিষেধ রয়েছে যেন গণমাধ‌্যমের সঙ্গে আলাপ না করি।”

একীভূতি ব্যাংকটিকে গ্রাহকের আস্থায় ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংক তৎপর রয়েছে। সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে একীভূত ব্যাংকটির সার্বিক কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে কথা হয়। গভর্নরের কাছ থেকে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা পেয়েছেন তিনি।

বৈঠক শেষে আইয়ুব মিয়া বলেন, “গ্রাহকের আস্থা ফেরানোই হবে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের প্রথম কাজ।”

“সরকারি মালিকানায় একটি ইসলামী ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করেছে, এটা জাতির জন্য সুসংবাদ,“ যোগ করেন তিনি।

 ব্যাংকটি সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে অনেক কারিগরি টিম কাজ করছে জানিয়ে আইয়ুব মিয়া বলেন,“দায়িত্ব নেওয়ার পর আমাদের প্রধান কাজ হবে আমানতকারীদের আস্থা ফেরান। সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক জাতির কাছে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠবে।”

গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ব্যাংকের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা নেওয়া, আইন-কানুন পর্যালোচনা করা এবং ব্যাংকের ভিশন ও মিশন সম্পর্কে ধারণা নেওয়া বৈঠকের প্রধান লক্ষ্য ছিল। পাঁচটি মিলে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ।”

সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে লাইসেন্স ইস্যুর পর মঙ্গলবার থেকে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের নতুন এই চেয়ারম্যান।

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ