আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা না হলে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার হুঁশিয়ারি হেফাজতে ইসলামের
Published: 10th, May 2025 GMT
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এটি না হলে ঢাকাকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে দলটি।
দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেছেন, ‘যদি এটি করা না হয়, ছাত্র-জনতাকে সাক্ষী রেখে বলছি, বাংলাদেশ থেকে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে।’
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে আজ শনিবার বেলা তিনটার পর থেকে ঢাকার শাহবাগ মোড়ে গণজমায়েত শুরু হয়েছে। সাড়ে তিনটা থেকে শাহবাগ মোড়ের ডিজিটাল স্ক্রিনের নিচে সিঁড়ির ওপর অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা।
বিকেল পাঁচটার দিকে সেখানে বক্তব্য দেন আজিজুল হক ইসলামাবাদী। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে, ড.
আওয়ামী লীগকে খুনি, সন্ত্রাসী ও গণহত্যাকারী দল হিসেবে আখ্যায়িত করে হেফাজতে ইসলামের এই নেতা আরও বলেন, ‘এই দলকে নিষিদ্ধ করতেই হবে। অধ্যাপক ইউনূসকে বলতে চাই, ৯টি মাস অতিক্রান্ত হলেও আওয়ামী লীগের বিচারের কোনো অগ্রগতি নেই। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। যদি না হয়, বাংলাদেশ থেকে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব চ ছ ন ন কর ন ষ দ ধ কর ইসল ম আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
অভিজ্ঞদের নিয়ে দুই প্যানেল, সরে যাচ্ছেন অন্যরা
আগামী শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্য চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) নির্বাচন। দীর্ঘ এক যুগ পর এই চট্টগ্রাম চেম্বারের সরাসরি ভোট হচ্ছে। সর্বশেষ এই চেম্বারে ভোট হয়েছিল ২০১৩ সালে। এরপর সব কমিটি গঠিত হয় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। চট্টগ্রাম চেম্বারের ভোট গ্রহণ আগামী ১ নভেম্বর। এর আগেই আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে চেম্বারের নির্বাচন। স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ব্যবসায়ীদের দুই পক্ষে বিরোধ।
এ বছর নির্বাচনে ইতিমধ্যে দুটি প্যানেল ঘোষণা করেছে ব্যবসায়ীদের দুটি পক্ষ। সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের নেতৃত্বে আছেন বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি এস এম নুরুল হক। অন্যদিকে ইউনাইটেড বিজনেস ফোরামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আমিরুল হক। তাঁরা দুজনই এর আগে চট্টগ্রাম চেম্বারে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম চেম্বারে ব্যবসায়ীদের ভোটে ১২ জন সাধারণ শ্রেণিতে, ৬ জন সহযোগী শ্রেণিতে এবং ৩ জন করে টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ শ্রেণি থেকে পরিচালক নির্বাচিত হয়ে থাকেন। তবে অকার্যকর সংগঠনকে সদস্য করা হয়েছে—এ অভিযোগ করে এই ছয় পদে প্রার্থী দেয়নি সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ। ইউনাইটেড বিজনেস ফোরামের ৬ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরিচালক নির্বাচিত হওয়ার পথে আছেন।
দুই শ্রেণির আটটি সংগঠনকে নির্বাচনের সুযোগ দেওয়ায় এফবিসিসিআইয়ের বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেন চট্টগ্রাম গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল। আদালতেও এ বিষয়ে রিট করেন তিনি। তবে পাল্টা রিট করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিষয়টি এখনো আদালতে। তবে এসবের বাইরে চলছে দুই প্যানেলের প্রচারণা।
অভিজ্ঞদের বিজনেস ফোরামচেম্বারের ২৪ পদে প্রার্থী দিয়েছে ইউনাইটেড বিজনেস ফোরাম। এই চেম্বারের মূল শক্তি—এই প্যানেলের অধিকাংশ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পোশাক, পেট্রো-কেমিক্যাল, লজিস্টিকস, মেরিন, ট্রেডিং—সব খাতের ব্যবসায়ী নিয়ে সাজানো হয়েছে এই প্যানেল। এই প্যানেলের উপদেষ্টা হিসেবে আছেন চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী ও সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম এ সালাম।
এই প্যানেলের নেতৃত্বে আছেন সিকম গ্রুপ ও প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলসের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক। দেশের পেট্রো-কেমিক্যাল, শিপিং, রিয়েল এস্টেটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যবসা রয়েছে তাঁর। তিনি চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক।
এই প্যানেলে পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আছেন বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী ও ব্যবসায়ী আবু হায়দার চৌধুরী। শিপিং ও মেরিন খাত থেকে নির্বাচন করছেন মো. গোলাম সরওয়ার, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আল আজাদ ও মোহাম্মদ মশিউল আলম। তালিকায় আছেন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) আমজাদ হোসাইন চৌধুরী।
ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে আছেন রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি এবং পরিবেশকদের জাতীয় সংগঠন বারবিডার সাবেক মহাসচিব মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। ট্রেডিং, লজিস্টিকস ও অন্যান্য খাত থেকে আছেন কামাল মোস্তফা চৌধুরী, আমান উল্লা আল ছগির, মোহাম্মদ শফিউল আলম, এ এস এম ইসমাইল খান, আসাদ ইফতেখার, মো. শহিদুল ইসলাম চৌধুরী, শহিদুল আলম, সরোয়ার আলম খান, মো. জাহিদুল হাসান, মো. নুরুল ইসলাম ও মো. সেলিম নুর।
মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই যাঁরা প্রকৃতপক্ষে ব্যবসায়ী, তাঁরা যেন চেম্বারের নেতৃত্বে আসেন। সুষ্ঠু ভোট হোক, ভোটের মধ্য দিয়ে নেতৃত্ব নির্বাচিত হোক, এটাই কাম্য।’
তরুণ-প্রবীণদের সম্মিলিত পরিষদটাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ শ্রেণি দুটিকে বাদ রেখে ১৮ পদে নির্বাচন করছে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ। পোশাক, তৃণমূল ব্যবসায়ী, গণমাধ্যমে বিনিয়োগকারী, উদ্যোক্তা—সব খাত মিলিয়েই চেম্বারে প্রতিনিধিত্ব দিতে চায় এই প্যানেল। তাঁদের ভাষ্য, সব খাতের ব্যবসায়ীরা চেম্বারে থাকলে চট্টগ্রামের সামগ্রিক ব্যবসায় প্রসার সম্ভব। এ কারণে তরুণ-প্রবীণ মিলিয়েই প্যানেল সাজানো হয়েছে।
এই প্যানেলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সহসভাপতি এস এম নুরুল হক। তিনি মোসমার্ক গ্রুপের কর্ণধার। বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সভাপতিও ছিলেন তিনি। একসময় তিনি অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালকও ছিলেন। পোশাকশিল্প ও ট্রেডিং ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত তিনি।
এই প্যানেলে পোশাক খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী আছেন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ মুছা, মো. আবচার হোসেন ও বিজিএপিএমইএর সদস্য মো. আরিফ হাসান। তৃণমূল ব্যবসায়ীদের নেতা হিসেবে আছেন কাজী ইমরান এফ রহমান, এস এম কামাল উদ্দিন, আহমদ রশিদ আমু, মো. কামরুল হুদা ও মোস্তাক আহমদ চৌধুরী।
স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মধ্যে আছেন এ টি এম রেজাউল করিম, মো. হুমায়ুন কবির পাটোয়ারী, মোহাম্মদ আজিজুল হক, মোহাম্মদ রাশেদ আলী ও জসিম উদ্দিন চৌধুরী। এ টি এম রেজাউল করিম চট্টগ্রাম বেসরকারি হাসপাতাল মালিক সমিতির সহসভাপতি। আজিজুল হকে পরিবহন খাতে চারটি সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অন্যদিকে জসিম উদ্দিন চৌধুরী দৈনিক পূর্বকোণের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক।
এই প্যানেল থেকে নির্বাচন করছেন ব্যবসায়ী ও নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আহমেদ-উল আলম চৌধুরী এবং নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর ছেলে ইমাদ এরশাদ। এ ছাড়া আছেন কাস্টমস এজেন্ট এবং লিফট ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম আমদানিকারক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এবং সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ আইয়ুব।
সরে যাচ্ছেন প্রার্থীরাএদিকে ইউনাইটেড বিজনেস ফোরামকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচনের তিন দিন আগেই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে গেছেন তিনজন। তাঁরা হলেন ওয়াইএনটি লিমিটেডের তাওসিফ ইমরোজ, আহমের ইন্টারন্যাশনালের মো. পারভেজ ইকবাল শরীফ এবং মেরিডিয়ান গ্রুপের সৈয়দ মোস্তফা কামাল পাশা। এর আগে একইভাবে সরে গেছেন রাকিবুল আলম চৌধুরী ও সারতাজ মোহাম্মদ ইমরান; যদিও তাঁরা কোনো প্যানেলকে সমর্থনের কথা জানাননি।
এর বাইরে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন মো. ছালামত আলী, জাবেদ সিদ্দিক, মাসুদ আহমেদ, মো. আবদুল কাদের, মো. আবু হেনা ফারুকী, মো. দেলওয়ার হোসেন, মো. জামাল উদ্দিন, মো. নাজমুল হুদা, রিয়াজ ওয়াজ ও মোহাম্মদ ফওজুল আলিফ খান; যদিও তাঁদের কেউ কেউ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এদিকে ইউনাইটেড বিজনেস ফোরামকে সমর্থন করে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি মো. ছালামত আলী নির্বাচন করবেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি মৌখিকভাবে ঘোষণা দিয়েছি আমি নির্বাচন করব না। বিভিন্ন সভায়ও জানিয়েছি বিষয়টি।’
জানতে চাইলে নির্বাচন বোর্ডের সদস্য আহমেদ হাছান বলেন, ‘চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় যাঁদের নাম আছে, ব্যালটেও তাঁদের নাম থাকবে। আচরণবিধি প্রকাশ হয়েছে, এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি।’