সব বিমানের জন্য আকাশসীমা খুলে দিয়েছে পাকিস্তান। আজ শনিবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তান বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। খবর আল-জাজিরা ও বিবিসির
রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থাটি বলছে, দেশের আকাশসীমা সব ফ্লাইটের জন্য সম্পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
গত কয়েক দিন ধরে চলা পাল্টাপাল্টি হামলা বন্ধে একমত হয় ভারত-পাকিস্তান। এমন ঘোষণার মধ্যে দেশের আকাশসীমা খুলে দেওয়ার কথা জানানো হল।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ভারত ও পাকিস্তান অবিলম্বে পুরোপুরি অস্ত্রবিরতিতে রাজি হয়েছে। এরপরই আলাদাভাবে দুই দেশ অস্ত্রবিরতিতে যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তান অবিলম্বে অস্ত্রবিরতি কার্যকর করতে রাজি হয়েছে।
এক্স হ্যান্ডেলে ইসহাক দার বলেন, পাকিস্তান সবসময়ই এই অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে। এ ক্ষেত্রে তারা দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার সঙ্গে কোনো আপস করেনি।
এদিকে সন্ধ্যা ৬টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে ভারতের অস্ত্রবিরতির সিদ্ধান্তের কথা জানান দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। তিনি বলেন, স্থানীয় সময় শনিবার বিকেল ৫টা থেকে স্থল, বিমান ও নৌবাহিনী পাকিস্তানের দিকে সব ধরনের গুলি চালানো বন্ধ রাখছে।
‘পাকিস্তানের ডিরেক্টর জেনারেল মিলিটারি অপারেশন্স ভারতীয় সময় তিনটা ৩৫ মিনিটে ভারতের ডিরেক্টর জেনারেল মিলিটারি অপারেশন্সকে ফোন করেছিলেন। তাদের দুজনের মধ্যে স্থির হয়েছে আজ ভারতীয় সময় বিকেল পাঁচটা থেকে দুই পক্ষই সব ধরণের গুলি-গোলা চালানো এবং স্থল, আকাশ ও জলপথে সামরিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করবে।’, উল্লেখ করেন তিনি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
১৪ কোটি টাকার আয়োজনে তিন কোটি টাকার প্যান্ডেল
আগামী বুধবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পঞ্চম সমাবর্তন। চবির সবচেয়ে বড় এই সমাবর্তন উপলক্ষে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে কর্তৃপক্ষ। সমাবর্তনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ডি-লিট ডিগ্রি প্রদান করা হবে। তার উপস্থিতি ঘিরে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। ক্যাম্পাসে চলছে নানা সংস্কারকাজ। এবারের সমাবর্তনে খরচ হতে পারে ১৪ কোটি টাকা। ব্যয়ের সবচেয়ে বড় খাত হলো তিন কোটি টাকার প্যান্ডেল। বাজেটের ৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা আয় হবে সমাবর্তীদের অংশগ্রহণ ফি থেকে। বাকি ৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা চেয়ে ইউজিসিকে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো উত্তর মেলেনি।
৯ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তন ঘিরে ক্যাম্পাসে লক্ষ্য করা গেছে বাড়তি নিরাপত্তা ও সাজসজ্জা। সমাবর্তীদের উপহার, গাউন, প্যান্ডেল, সনদ প্রস্তুত। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সমাবর্তন আয়োজন কমিটির সদস্য সচিব ড. মো. এনায়েত উল্যা পাটোয়ারী বলেন, ‘এবারের সমাবর্তনের আনুমানিক বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ১৪ কোটি টাকা। সমাবর্তীদের অংশগ্রহণ ফি থেকে আয় হবে প্রায় ৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। ইউজিসির কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়ে চিঠি পাঠানো হলেও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। ফলে ঘাটতি মেটাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফান্ড ব্যবহার করা হবে।’
তিন কোটি টাকার প্যান্ডেল : সমাবর্তনের জন্য কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে নির্মিত হচ্ছে ব্যতিক্রমধর্মী একটি মঞ্চ ও প্যান্ডেল। বিশেষ এই প্যান্ডেলের নির্মাণ ব্যয় প্রায় তিন কোটি টাকা। সমাবর্তন আয়োজন কমিটির সদস্য সচিব ড. মো. এনায়েত উল্যা পাটোয়ারী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সরেজমিন দেখা যায়, স্টিলের পাত দিয়ে শক্ত ভিত তৈরি করে ওপরে দৃষ্টিনন্দন প্লাস্টিক দিয়ে মোড়ানো হচ্ছে প্যান্ডেল। প্যান্ডেলে যাতে বৃষ্টির পানি না পড়ে সেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। গরমের কথা চিন্তা করে থাকছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। রয়েছে আইসিইউ সুবিধা, শৌচাগার এবং জরুরি প্রয়োজনের ফুড কোর্ট। প্রযুক্তি ও সুরক্ষার সমন্বয়ে নির্মিত এই মঞ্চে অতিথিদের জন্য সব ধরনের আরামদায়ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে। পুরো আয়োজনটি বাস্তবায়নে কাজ করছে দেশের খ্যাতনামা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান থ্রি ই সল্যুশন। মঞ্চ ও আসন বিন্যাস উপকমিটির দায়িত্বে রয়েছেন জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন, অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়া।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইয়াহইয়া আখতার সমকালকে বলেন, ‘আমরা এমন একটি সমাবর্তন আয়োজন করতে চাই, যা শিক্ষার্থীদের সারাজীবনের স্মৃতিতে জায়গা করে নেবে। এটি শুধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যতিক্রমধর্মী ও বিশাল পরিসরের সমাবর্তন হতে যাচ্ছে। আমরা ড. ইউনূসকে ডিলিট উপাধি দিচ্ছি, যেটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।’
সমাবর্তনের বিশেষ আকর্ষণ: এবারের সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছেন প্রায় ২২ হাজার ৬০০ জন শিক্ষার্থী। কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ থেকে ৪ হাজার ৯৮৭ জন, জীববিদ্যা অনুষদের ১ হাজার ৬৮৯ জন, বিবিএ অনুষদের ৪ হাজার ৫৯৬ জন,সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ৪ হাজার ১৫৮, আইন অনুষদের ৭০৩ জন, বিজ্ঞান অনুষদের ২ হাজার ৭৮৭ জন, শিক্ষা অনুষদের ৩১৬ জন, ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ৭৯৮ জন, মেরিন সায়েন্সেস অনুষদের ২৮৪ জন ও চিকিৎসা অনুষদের ২ হাজার ২৯৯ জন সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছেন। এছাড়া, ২২ জন পিএইচডি ও ১৭ জনকে এম ফিল ডিগ্রি প্রদান করা হবে।
এদিকে, সমাবর্তন ঘিরে সংস্কার করা হয়েছে ছয় বছর বন্ধ থাকা ঝুলন্ত সেতু। আলোক সজ্জা ও রঙিন করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে। ২ নম্বর গেট এলাকাযর রাস্তা নতুনভাবে তৈরি করা হচ্ছে, জিরো পয়েন্টে খাওয়ার পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। শহীদ মিনারের স্তম্ভে নতুন রঙ করা হচ্ছে।
ভাষা ও ভাষাতত্ত্ব বিভাগের সমাবর্তী শিক্ষার্থী ফাহিম আলম বলেন, ‘পড়াশোনা শেষ করে যখন ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাই, তখন মনে ছিল সবুজ চবির প্রতি ভালোবাসা। সমাবর্তন আবার আমাদের ক্যাম্পাসে ফেরাবে। সমাবর্তন ঘিরে ক্যাম্পাসে চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন এসেছে। দীর্ঘদিন পর প্রিয় ক্যাম্পাসের ফিরে এই রূপ দেখে মনটা আনন্দে নাচছে।’
সমাবর্তনে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজসহ আরও ৪ জন উপদেষ্টার অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে।
অনুষ্ঠানেসূচি : সমাবর্তনে অতিথিদের আসন গ্রহণ শুরু হবে দুপুর দেড়টায়। ১ টা ৪৫ মিনিটে হবে সমাবর্তন শোভাযাত্রা। তবে এতে কোনো গ্র্যাজুয়েট অংশ নিতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ জন শিক্ষক এতে অংশ নেবেন। পরে বেলা ২ টায় জাতীয় সংগীতের মধ্যে দিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে। অনুষ্ঠান শেষ হবে বিকেল চারটায়।
লোগো নিয়ে সমালোচনা : সমাবর্তন ঘিরে কিছু সমালোচনাও উঠে এসেছে। অনেক সমাবর্তী শিক্ষার্থীর অভিযোগ, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরও আয়োজনে কিছু গাফিলতি রয়েছে। অর্থনীতি বিভাগের সমাবর্তী শিক্ষার্থী তন্ময় হোসেন সমকালকে বলেন, ‘এই সমাবর্তনের অপেক্ষায় দীর্ঘ ৯ বছর কাটিয়েছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের মন ভেঙে দিয়েছে। সমাবর্তনের লোগো অত্যন্ত নিম্নমানের হয়েছে, যা দেখে আমি ব্যথিত। দীর্ঘদিন পর সমাবর্তন আয়োজন করা হচ্ছে, প্রশাসনের উচিত ছিল লোগোর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আরও যত্নশীল হওয়া। কারণ, সমাবর্তনের অন্যতম আকর্ষণই থাকে লোগো।'
এছাড়াও গ্রীষ্মে সমাবর্তনের তারিখ, আবেদনের প্রক্রিয়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান না থাকা নিয়ে ক্ষুব্ধ অংশগ্রহণকারীরা।
যা ছিল চতুর্থ সমাবর্তনে: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৪ সালে প্রথম সমাবর্তন, ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয়, ২০০৮ সালে তৃতীয় এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। চতুর্থ সমাবর্তনে তখনকার রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আব্দুল হামিদ সভাপতিত্ব করেন। সেবার কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সমাবর্তনে অংশ নেন ৭ হাজার ১৯৪ জন গ্র্যাজুয়েট। নয়জন শিক্ষার্থী পান চ্যান্সেলর পদক, ২৫ জন পিএইচডি ও ১৩ জনকে এমফিল ডিগ্রি দেওয়া হয়। সমাবর্তন বক্তা ছিলেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামান।