বৃষ্টিঝরা সন্ধ্যার আঁধারে শহরের পুরোনো পাড়ায় ভাঙা বাড়ির সামনে নীল। শ্যাওলাধরা দেয়াল, ভাঙা জানালা, তালাবদ্ধ দরজা। অথচ ভেতর থেকে ভেসে আসছে মায়াবী গানের সুর, যেন সময়ের ওপার থেকে কেউ ডাকে। এমন জায়গায় গান? কৌতূহলী নীল তালা ভাঙতে গেল, কিন্তু তালা অটুট। হঠাৎ বৃষ্টির শব্দ ছাপিয়ে ‘ক্লিক’– দরজা নিজেই খুলে গেল, যেন অদৃশ্য হাতের শারা। ভয়মিশ্রিত উত্তেজনায় নীল ঢুকল। অন্ধকার ঘরে কোণে প্রাচীন গ্রামোফোন সুর ছড়াচ্ছে, কিন্তু গায়ক নেই। নীল খুঁজতে লাগল, পায়ের তলায় মেঝে কাঁপছে যেন। হঠাৎ কুয়াশা উঠে ছায়ামূর্তি ফুটল– মেয়েটির চোখে বিষাদ, ফিকে পোশাক বাতাসে দোলে। তার মুখে নীলেরই প্রতিচ্ছবি!
‘কে তুমি?’ নীলের কণ্ঠ কাঁপে।
আমি নীলা, ‘তার ফিসফিস বৃষ্টির মতো। এ বাড়ির প্রাচীন বাসিন্দা, তোমার অতীত। আমার গান অসমাপ্ত, আমার আত্মা বন্দি। মুক্তি দেবে?’
কীভাবে? ‘নীলের হৃৎপিণ্ড থমকে যায়।
উঠানে লুকানো আমার শেষ পঙ্ক্তি গাও।’ নীলা মিলিয়ে গেল।
বৃষ্টিভেজা উঠানে নীল পাথরের ফলক খুঁজে পেল, খোদিত পঙ্ক্তি– তার নিজের হাতের লেখা। সে গাইল, সুরে জেগে উঠল হারানো স্মৃতি। নীলা হাসল, কুয়াশায় মিশে গেল। বৃষ্টি থামল, গান শেষ হলো। নীল বুঝল, নীলা তারই ভুলে যাওয়া অতীত, এ বাড়ি তার নিজের হৃদয়। দরজা বন্ধ হলো, কিন্তু নীলের মনে রইল মুক্তির আলো। v
সুহৃদ ফরিদপুর
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
৮ বছরেও শুরু হয়নি কুবির ২ বিভাগের কার্যক্রম
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) দীর্ঘ ৮ বছর আগে অনুমোদন পাওয়া দুটি বিভাগ এখনো চালু হয়নি। অনুমোদন সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ, অবকাঠামোগত প্রস্তুতি এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের ধীরগতির কারণে বিভাগ দুটি কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীনে ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকেই বিভাগ দুটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত ও শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের পরে বিভাগ দুটি চালুর পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে নতুন ভবন নির্মাণ হয়নি।
আরো পড়ুন:
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় কুবি প্রক্টরের জরুরি নির্দেশনা
সিএনজি চালকের বিরুদ্ধে কুবি শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ
এছাড়া, তৎকালীন অর্গানোগ্রামে ৩১টি বিভাগের মধ্যে এই দুইটি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত ছিল না, যা পরবর্তীতে চালু করা নিয়ে জটিলতা তৈরি করে।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে বৈঠক করে এই বিষয়ে পুনরায় আলোচনা করে। ইউজিসি নির্দেশনা অনুযায়ী, নতুন অর্গানোগ্রামে বিভাগের অন্তর্ভুক্তি ও নতুন বিভাগের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
সে অনুযায়ি ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কুবির ৮৯তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে পূর্বের ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ এর পরিবর্তে ‘লজিস্টিক্স ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ’ এবং ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’-এর পরিবর্তে ‘পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ নামে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও অর্গানোগ্রামে নতুন আরও ১৮টি বিভাগের নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
তৎকালীন বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রস্তাবক রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান বলেন, “২০১৭ সালে অনুমোদন থাকলেও জায়গা সংকটের কারণে বিভাগ চালু করা সম্ভব হয়নি। পরে প্রশাসন পাল্টালেও কেউ উদ্যোগ নেয়নি।”
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “অর্গানোগ্রামে অন্তর্ভুক্তি মানে এখনই চালু হবে না। অনুমোদন থাকলেও তৎকালীন সময়ে চালু করা সম্ভব হয়নি। এখন ইউজিসি নির্দেশনায় নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “তৎকালীন প্রশাসন বলতে পারবে কেন বিভাগ চালু হয়নি। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা মাধ্যমে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী ২ বছরের মধ্যে আশা করি বিভাগ চালু করা সম্ভব হবে, তখন নতুন ক্যাম্পাসও প্রস্তুত থাকবে।”
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী