অন্য কোনো পক্ষ ছিল কিনা, তদন্ত করছে পুলিশ
Published: 16th, May 2025 GMT
মোটরসাইকেলের ধাক্কা নিয়ে বহিরাগতদের সঙ্গে বিরোধের জেরে শাহরিয়ার আলম সাম্য খুন হয়েছেন, নাকি অন্য কারণও আছে, তা নিয়ে তদন্তে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেপ্তার তিনজন ছাড়াও তৃতীয় কেউ এ হত্যায় জড়িত থাকতে পারে বলে প্রাথমিক আভাস পাওয়ার দাবি করছে পুলিশ। তবে আরও কিছু বিষয় খোলাসা হওয়ার আগে হত্যার কারণ ও জড়িতদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসছেন না তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশের একাধিক সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও হল শাখা ছাত্রদল নেতা সাম্য খুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিন যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে খুনে অভিযুক্ত তিনজনের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল। মঙ্গলবার রাতে হত্যার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ওই মোটরসাইকেল নিয়ে তামিম হাওলাদার ও সম্রাট মল্লিক পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে যান। সেখান থেকে তাদের গ্রেপ্তার ও মোটরসাইকেল জব্দ করে পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার তিনজন সাম্য হত্যায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তবে পুলিশ বলছে, হেফাজতে এনে তাদের বিশদ জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। শনিবার তাদের রিমান্ড শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
সাম্যের পরিবার শুরু থেকে বলছে, এই হত্যা পরিকল্পিত। সাম্যের ভাই বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় যে মামলা করেছেন, সেই এজাহারে বলা হয়, পূর্বপরিকল্পিতভাবে সাম্যকে হত্যা করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জন এতে সম্পৃক্ত ছিল।
গতকাল এক অনুষ্ঠানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সাম্য হত্যার নেপথ্যে রাজনৈতিক কারণ আছে। সাম্য ছাত্রদলের এ এফ রহমান হলের একটি সম্পাদকীয় পদে রয়েছেন। পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে তিন ভবঘুরেকে। রাজনৈতিক কারণ না থাকলে সুদর্শন একটা ছেলেকে ভবঘুরেরা কেন হত্যা করবে?
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক তৌফিক হাসান বলেন, মঙ্গলবার রাতে তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর সাম্যের বন্ধুরা তাদের শনাক্ত করেছেন। গ্রেপ্তার তিনজন ঘটনাস্থলে ছিল বলে জানান তারা। পুলিশ সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা প্রায়ই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেত। সেখানে গিয়ে তারা মাদক সেবন করত কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আরও কেউ হত্যায় জড়িত কিনা, তা বের করার চেষ্টা চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত হত্যার কারণ নিয়ে পরিষ্কার কিছু বলা যাবে না। তবে প্রাথমিক তথ্য হলো, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে বের হওয়ার সময় মোটরসাইকেলে ধাক্কা থেকে ঘটনার সূত্রপাত। নিহত সাম্যের ডান পায়ের ঊরুর পেছনে ধারালো অস্ত্রের গুরুতর জখমের চিহ্ন রয়েছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাম্য হত্যায় জড়িত সন্দেহে তামিম হাওলাদার, পলাশ সরদার ও সম্রাট মল্লিক নামে যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা মাদারীপুরের বাসিন্দা। ঢাকার পূর্ব রাজাবাজারে এক রুমের একটি বাসায় তিনজন থাকতেন। কাপড়ের ব্যবসা ও একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল।
পূর্ব রাজাবাজারের যে ভাড়া বাসায় তারা বাস করতেন, সেখানে গতকাল দেখা যায়, পাঁচতলা ভবনের দোতলায় তাদের কক্ষে তালা ঝুলছে। ভবনের নিচতলায় বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক ইমরান হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাত ৪টার দিকে তামিমকে সঙ্গে নিয়ে বাসায় পুলিশ আসে। সোজা দোতলায় তাদের বাসায় গিয়ে পলাশকে নিয়ে বেরিয়ে যায় পুলিশ। ওই বাসা সম্রাট ও রাফি নামে দু’জন ভাড়া নেন। ভাড়া ঠিক করার সময় তারা জানান, রুমে তাদের দোকানের কয়েকজন কর্মচারী থাকবেন। তবে অগ্রিম টাকা দেওয়ার সময় রাফি ছাড়া আর কাউকে দেখেননি। বাসা ভাড়ার রসিদেও রাফি ও সম্রাটের নাম পাওয়া গেছে।
বাসার তত্ত্বাবধায়ক বলেন, পাঁচতলা ভবনে ১০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এর মধ্যে চারতলার দুই ফ্ল্যাটে শিক্ষার্থীরা ভাড়া থাকেন। আর দোতলার একটি ফ্ল্যাটের দুটি কক্ষে একজন দোকানি এবং একটি কক্ষে বাসার তত্ত্বাবধায়ক ইমরান, তাঁর সহযোগী শানারুল ইসলাম হিমেলসহ দু’জন থাকার কথা। তবে চলতি মাসে সেই কক্ষ রাফির কাছে ভাড়া দিয়ে বাসার চিলেকোঠায় থাকতেন তারা।
সম্রাটদের সঙ্গে একই রুমে ভাড়া থাকতেন গোপালগঞ্জের তন্ময় রায় নামে আরেকজন। ঘটনার পর থেকে তিনিও বাসা ছেড়ে চলে গেছেন। তন্ময় গতকাল বলেন, মঙ্গলবার গভীর রাতে পলাশ বাসায় এলে তাকে দরজা খুলে দিই আমি। তার পর ভোরের দিকে তাকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। এর পর আমিও বাসা ছেড়ে গাজীপুরে চলে আসি। ২০ এপ্রিল থেকে ফার্মগেট এলাকায় কাপড়ের ব্যবসা করছি। এর আগে পড়ালেখা করতাম। মঙ্গলবার রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
সাম্য হত্যায় মাদারীপুরের তিন যুবককে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, গ্রেপ্তার আসামিরা ফার্মগেট এলাকায় ফুটপাতে গেঞ্জির ব্যবসা করেন। ১৫-২০ দিন আগে মাদারীপুর থেকে ঢাকায় আসেন। ঘটনার দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাদক সেবনের জন্য গিয়েছিলেন। গ্রেপ্তার একজন একসময় গাজীপুরে থাকতেন। সেখানে তিনি কাপড়ের ব্যবসা করতেন।
গতকাল দুপুরের পর ফার্মগেট গোলচত্বরে ফোকাস কোচিং সেন্টারের সামনের ফুটপাতে একাধিক বিক্রেতার সঙ্গে কথা হয়। গ্রেপ্তার তিনজনের ছবি দেখানো ও নাম বলার পর একাধিক দোকানি তামিমকে চিনতে পারেন। সে প্রায়ই মোটরসাইকেল নিয়ে ফার্মগেটে আসত, চা খেয়ে আড্ডার পর চলে যেত।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্র জানায়, সাম্য হত্যার আদ্যোপান্ত বের করতে নানামাত্রিক তদন্ত চলছে। আশপাশ এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা করছে পুলিশ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকেন্দ্রিক বৈধ ও অবৈধ কারবারে কারা কীভাবে জড়িত ছিল, তাদের নাম-পরিচয় বের করতে চান তদন্তসংশ্লিষ্টরা। ক’টি গ্রুপ কীভাবে উদ্যানে দোকানসহ অন্যান্য ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত, তা জানার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঘটনাস্থল থেকে একটি মানিব্যাগ পাওয়া গেছে। আলামত হিসেবে তা জব্দ করা হয়েছে।
সাম্যের ঘনিষ্ঠ বন্ধু নাজমুল ইসলাম সমকালকে বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাম্যসহ তিনজন গিয়েছিল মোটরসাইকেলে। আর আমি বাইসাইকেলে যাই। কাবাব খাওয়া শেষে আমি আগে চলে আসি। পরে শুনি, সাম্যকে ‘হিট’ করা হয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে দেখি সাম্যের ঊরুতে জখম। আসলে রক্তক্ষরণে হাসপাতালে পৌঁছার আগে সে মারা গেছে।
মাদারীপুরের স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার সম্রাট একসময় রাজমিস্ত্রি ও দিনমজুরের কাজ করতেন। এলাকায় তিনি শ্রমিক দলের কমিটিতে ছিলেন। পরে ওই কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। আর পলাশ ও তামিম ঢাকায় ফুটপাতে ব্যবসা করতেন।
মাদারীপুরের ডাসারের বাসিন্দা মাইনুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ঢাকার ৩০০ ফিট, টিএসসিসহ আশপাশে তারা একটি চক্রের সঙ্গে চাঁদাবাজি করত বলে শুনেছি। এলাকায় তেমন প্রভাব বিস্তার করতে না পারলেও মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। ডাসার থানার ওসি শেখ এহতেশামুল ইসলাম বলেন, সম্রাটের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় তিনটি মাদক মামলা রয়েছে।
মাদারীপুর সদর থানার ওসি আদিলুর রহমান বলেন, একসময় পলাশ ও তামিমের স্থানীয় নেতাকর্মীর সঙ্গে উঠবস ছিল। তামিমের বিরুদ্ধে গাজীপুরের গাছা থানায় অর্থ আত্মসাতের একটি মামলা আছে।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন মাদারীপুর প্রতিনিধি ফরিদ উদ্দিন মুপ্তি)
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হত য গ র প ত র ত নজন স ম য হত য ল ইসল ম র ব যবস এল ক য় থ কত ন ব দ কর ত র কর হত য র করত ন র একট তদন ত গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
নীতি সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ, কী প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে
অবশেষে সুদের হার কমিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের পর এই প্রথম সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে দুর্বলতার লক্ষণ, আফ্রো-আমেরিকানদের মধ্যে উচ্চ বেকারত্ব, কর্মঘণ্টা কমে যাওয়া ও নতুন চাকরি সৃষ্টির গতি কমে যাওয়ায় ফেড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়ে ৪ থেকে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়ার পর ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে সুদহার আরও কমতে পারে। তিনি বলেন, শ্রমবাজারের ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা এখন তাঁর ও সহকর্মী নীতিনির্ধারকদের প্রধান উদ্বেগ। খবর রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক দিন ধরেই ব্যাপক হারে সুদ কমানোর দাবি তুলছিলেন। তাঁর বক্তব্য, এতে অর্থনীতি চাঙা হবে। তবে ফেডের এ সিদ্ধান্ত তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। ফেডের পর্ষদে নতুন গভর্নর স্টিফেন মিরান ছিলেন একমাত্র ভিন্নমতাবলম্বী। তিনি ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট হারে সুদহার কমানোর পক্ষে ছিলেন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও বড় কাটছাঁটের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সুদের হার নির্ধারণে রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্ন সব সময়ই তোলা হয়। ট্রাম্প সম্প্রতি ফেডের এক গভর্নর লিসা কুককে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। যদিও কুক আদালতের লড়াইয়ে আপাতত নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন এবং বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান মিরানকে ফেডের পর্ষদে বসান।
শ্রমবাজারে দুর্বলতাপাওয়েল বলেন, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে, তরুণেরা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়ছেন। সামগ্রিকভাবে চাকরি সৃষ্টির গতি খুবই কম। শ্রমবাজারকে আর দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না।
পাওয়েল আরও সতর্ক করেন, নতুন চাকরির সংখ্যা এখন বেকারত্বের হার স্থিতিশীল রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে সামান্য ছাঁটাইও বেকারত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে।
মূল্যস্ফীতি বনাম কর্মসংস্থানমূল্যস্ফীতি এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতির হার ৩ শতাংশে উঠবে, যেখানে ফেডের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ শতাংশ। কিন্তু ফেড মনে করছে, কর্মসংস্থানের ঝুঁকি এখন বেশি গুরুত্ব পাওয়ার মতো বিষয়।
ফেডের নতুন পূর্বাভাসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়িয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ করা হতে পারে বলা হয়েছে। বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশেই স্থির থাকবে বলে তারা অনুমান করছে।
রাজনৈতিক টানাপোড়েনএ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নাটকও কম ছিল না। ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা থাকলেও ফেডের পর্ষদের অন্য দুই ট্রাম্প-মনোনীত গভর্নর মিশেল বোম্যান ও ক্রিস্টোফার ওয়ালার শেষ পর্যন্ত মূল সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। ওয়ালার বরাবরই শ্রমবাজারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলে আসছেন।
পাওয়েল অবশ্য পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ‘আমাদের সংস্কৃতির মূল বিষয় হলো তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত। আজকের বৈঠকে সুদহার ব্যাপক হারে কমানোর বিষয়ে বিপুল সমর্থন ছিল না।’
বাজারের প্রতিক্রিয়াসুদহার কমানোর ঘোষণার পর ওয়াল স্ট্রিটে প্রথমে শেয়ারের দাম বাড়লেও পরে ওঠানামা করে। শেষমেশ মিশ্র পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন শেষ হয়। ডলার কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে ঠিক, কিন্তু ট্রেজারি বন্ডের সুদ প্রায় অপরিবর্তিত। বাজার এখন প্রায় নিশ্চিত, অক্টোবরের বৈঠকেও সুদ কমানো হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ফেডের সাম্প্রতিক নীতি পরিবর্তনের মানে হলো তারা এখন ধীরে ধীরে ‘নিরপক্ষে’ অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি সাময়িকভাবে কিছুটা বাড়লেও ২০২৬ সালের মধ্যে স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নীতিসুদ কীকেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। রেপোর বাংলা হচ্ছে পুনঃক্রয় চুক্তি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে এটি পরিচিত। অর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান দিতে বা অন্যভাবে বলতে গেলে ব্যাংকগুলোর জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সরবরাহ করতে মুদ্রানীতির এ হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ হাতিয়ার ব্যবহার করে।
কোভিডের পর রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন ফেডারেল রিজার্ভ বাজারে মুদ্রার চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে দফায় দফায় নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। ফলে নীতি সুদহার গত দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহারের প্রভাববিশ্ব অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিসুদের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। ফেডের নীতিসুদের হার বাড়লে ট্রেজারি বন্ডের দাম কমে এবং সুদহার কমলে ট্রেজারি বন্ডের দাম বাড়ে। এর কারণ হলো বাজারে নতুন ও অধিক সুদের বন্ড আসার পর পুরোনো বন্ডের কুপন (সুদ) কম মনে হয়, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম কমে যায়। আবার যখন সুদের হার কমে, তখন নতুন বন্ডের কুপন কম হওয়ায় পুরোনো বন্ডের উচ্চ কুপনযুক্ত সুদ বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম বেড়ে যায়।
নীতিসুদ কমলেও একই প্রক্রিয়া ঘটে, তবে বিপরীতভাবে। সুদের হার কমলে নতুন বন্ডের কুপনও কমে যায়। এতে আগের উচ্চ সুদের কুপনযুক্ত বন্ডগুলো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বিনিয়োগকারীরা এই পুরোনো বন্ডগুলো কিনতে আগ্রহী হন, ফলে সেগুলোর দাম বেড়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা তখন তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ বাজারেও বিনিয়োগ আগ্রহী হন। এতে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়ে এবং ডলারের চাপ কিছুটা কমে।
সে কারণে বাজার নীতি সুদহারের দিকে তাকিয়ে থাকে, সুদ কমলে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।