জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় মেহেদী হাসান আপন (১৬) নামের এক কিশোরের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাত ৯টার দিকে সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের বয়ড়া গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে ওই কিশোরের লাশ উদ্ধার করা হয়। 

মেহেদী হাসান আপন বয়ড়া গ্রামের ইটভাটার শ্রমিক শিপন মিয়ার ছেলে। সে বয়ড়া ইসরাইল আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

আপনের লাশ উদ্ধারের খবরে তার পরিবার, প্রতিবেশী, সহপাঠী ও শিক্ষকদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সবাই তাকে প্রাণবন্ত ছেলে হিসেবে জানতেন। 

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আপন বৃহস্পতিবার রাতে খাওয়া শেষ করে কিছুক্ষণ তার দাদার ঘরে অবস্থান করে। পরে সে একা নিজ কক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। দীর্ঘক্ষণ কোনো সাড়া না পাওয়ায় তার মা ডাকাডাকি শুরু করেন। ঘরের দরজা না খোলায় একপর্যায়ে পরিবারের সদস্যরা দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে তাকে ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। পাশে পড়ে ছিল একটি দুই পৃষ্ঠার চিরকুট।

চিরকুটে লেখা ছিল, “শুরুতেই বলি সালাম নিবেন। আমি আপনাদের অনেক কষ্ট দিয়েছি, ক্ষতি করেছি, খারাপ ব্যবহার করেছি। আমি ছোট থেকেই খারাপ, নিজেকে কখনও ভালো করতে পারিনি। বাবার কথা রাখতে পারিনি, তাঁর মনে অনেক কষ্ট দিয়েছি।
বাবা, আপনার পা দুটি ধরে মাফ চাইতে পারলাম না। আমাকে মাফ করে দিয়েন। মা, তুমি আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছো, অনেক বুঝিয়েছো; তবুও ভালো হতে পারলাম না। দাদার সম্মানও আমার জন্য হারিয়ে গেছে। আমি সবার মনে কষ্ট দিয়েছি।

বন্ধুদের বলি—তোদের সঙ্গে কত আড্ডা, কত আনন্দ করেছি। আমার কোনো কথায় কিছু মনে করিস না। আমার জানাজায় আসিস, আমার কবরে মাটি দিবি।

আমার কাছে যদি কেউ টাকা পেয়ে থাকে, তবে আমি আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি ভালো হতে পারিনি, তাই নিজেই পৃথিবী থেকে চলে যাচ্ছি। আপনারা ভালো থাকবেন। আপনাদের খারাপ সন্তান আর নেই।

ইতি—আপনাদের খারাপ ছেলে, আপন।”

আপনের ছোট বোন আছিয়া বলেছে, “ভাইয়া রাতে খেয়ে দাদার ঘরে গিয়েছিল। পরে সে নিজ ঘরে যায়। মা কাজ থেকে ফিরে এসে ডাকাডাকি করতে থাকেন। কিন্তু, কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে ভাইয়াকে ঝুলন্ত অবস্থায় পান।”

খবর পেয়ে সরিষাবাড়ী থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহায়তায় আপনের মরদেহ উদ্ধার করে এবং প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে।

সরিষাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাশেদ মিয়া বলেছেন, “ঘটনাস্থলে পাওয়া চিরকুটে আত্মহত্যার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত আছে। মরদেহের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/শোভন/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ রক ট আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

ঈদে ১০ দিনের ছুটির ভালো-মন্দ

এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি অফিসে ১০ দিন ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এর পর থেকে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। এক পক্ষ ঈদে যানজট এড়ানোসহ নানা যুক্তি দাঁড় করাচ্ছে। আরেক পক্ষ বলছে, শুধু ঈদযাত্রায় স্বস্তি দিতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মাসের তিনভাগের একভাগ সময় বন্ধ রাখা সুবিবেচনাপ্রসূত নয়। রোজার ঈদ উপলক্ষে দুই মাস আগে ৯ দিন বন্ধ ছিল সব কিছু।
জনপ্রশাসন ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আমাদের দেশে মানুষ এত বেশি গ্রামে যায় যে, সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তিন দিনের ঈদের ছুটিতে এক দিনে অনেক মানুষ বের হওয়ার চেষ্টা করলে, যাত্রাপথে ভোগান্তি হবেই। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করার আনন্দে বাধা হওয়া উচিত নয়। বিষয়টি যেন সহজ হয়, সে চেষ্টা করতে উপদেষ্টা পরিষদ ঈদের ছুটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছুটি একটু বেশি হলে মানুষের হাতে বিকল্প থাকবে। তখন যার যার সুবিধা মতো আসা-যাওয়া করতে পারবে। টানা বেশি দিন বন্ধ থাকলেও লাভ আছে। প্রত্যেক পেশাজীবীর বিশ্রাম প্রয়োজন। বিশ্রাম নিয়ে তারা নবউদ্যমে কাজে নামতে পারে। 

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এবার ঈদুল আজহা হতে পারে ৭ জুন, শনিবার। সরকারি ছুটি শুরু হবে ৫ জুন বৃহস্পতিবার, শেষ হবে ১৪ জুন শনিবার। ঈদুল আজহায় সাধারণত তিন দিন ছুটি থাকত। অন্তর্বর্তী সরকার ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় ছুটি বাড়িয়ে দেয়। সে অনুযায়ী এবারের ঈদুল আজহায় ছুটি হওয়ার কথা ছিল ছয় দিন। সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তা বাড়িয়ে ১০ দিন করা হয়েছে। অবশ্য ঈদের ছুটি শুরুর আগে আজ শনিবার ও ২৪ মে শনিবার সব সরকারি অফিস খোলা থাকছে।

যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বাড়ানো হয়েছে ছুটি
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সমকালকে বলেন, কোরবানির ঈদে একটি অতিরিক্ত সমস্যা আছে। রাস্তার পাশে গরুর হাট বসে। দেশের সব মানুষের সুবিধার জন্য এবার ঈদের ছুটি বাড়ানো হয়েছে। তবে ঈদের আগে দুই শনিবার অফিস খোলা থাকবে। তিনি আরও বলেন, ঈদে ছুটি না থাকলেও অনেকে অফিসে আসেন না। অযথা অফিস খোলা থাকে। জনগণও সেবা পায় না। তিনি বলেন, তবে জরুরি সব সেবা খোলা থাকবে। যেমন– কোরবানির সময় যারা কাজ করেন, তারা সবাই কাজে থাকবেন। অফিস বন্ধ থাকবে; কিন্তু মাঠে কাজ করবেন। আসলে তারা বাইরে অফিস করবেন। যাত্রা নির্বিঘ্ন ও দুর্ঘটনা কমাতে আগেই এমন প্রস্তাব ছিল। সেই প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সমকালকে বলেন, ঈদে দীর্ঘ ছুটিতে অসুবিধার চেয়ে সুবিধা বেশি। তবে নিশ্চিত করতে হবে, সেবাপ্রত্যাশী নাগরিকদের যেন কোনো সমস্যা না হয়। আর ছুটি থাকলেও জরুরি কাজ চলবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও বন্দর খোলা থাকবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জরুরি প্রয়োজনে ঈদের দিনেও কাজ করে। তিনি বলেন, ইউরোপ-আমেরিকায় ২৫ ডিসেম্বর বড় দিনে প্রায় ১৫ দিন ছুটি থাকে। ওই সময় জরুরি কাজ ছাড়া অন্য কিছু করা হয় না। আমাদের দেশের মানুষও ঈদের ছুটিতে গ্রামে যেতে চায়।

ছুটি বাড়ানোর আলোচনা ছিল ২০১৫ সালে
ঈদের ছুটি নিয়ে গত ১০ বছর ধরে আলোচনা চলছে। ২০১৫ সালের ২ নভেম্বরের মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। এজেন্ডায় ছিল পরের বছরের ছুটির তালিকা অনুমোদনের বিষয়টি। এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। ২০১৬ সালের ছুটির তালিকা অনুমোদন করার আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রীদের কোনো বক্তব্য আছে কিনা জানতে চান। তখন প্রায় সব মন্ত্রী ছুটি বাড়ানোর পক্ষে মত দেন। যুক্তি ছিল, মানুষ শহর ছেড়ে বের হওয়ার ঝক্কিঝামেলা থেকে রক্ষা পাবে। সড়কের ওপর চাপ কমবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে। মানুষও স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করে কর্মস্থলে ফিরতে পারবে। তিন দিনের ছুটি বাড়িতে যেতে-আসতে শেষ হয়ে যায়। ওই সময় আলোচনায় উঠে আসে চীনের বসন্ত উৎসবের কথা। চীনা নববর্ষ এবং বসন্ত উৎসবে টানা ১৫ দিন ছুটি দেওয়া হয়। আর ইউরোপ-আমেরিকাজুড়ে ক্রিসমাসের ছুটিও প্রায় দুই সপ্তাহের।

এর পরও একাধিকবার ছুটি বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রস্তাবে বলা হয়, নৈমিত্তিক ছুটি ২০ থেকে কমিয়ে ১৪ দিন করে বাকি ছয় দিন দুই ঈদের ছুটির সঙ্গে তিন দিন করে সমন্বয় করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ঈদের সঙ্গে ঐচ্ছিক ছুটি বাতিল হবে। 

এ ছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসবে সরকারি ছুটির সঙ্গে দু’দিন করে চার দিন ঐচ্ছিক ছুটির প্রস্তাব করা হয়। ঈদে ছুটি বাড়ানো হলে মোট ছুটির সময় ঠিক থাকবে। ফলে সরকারি কাজের জন্য সময় কমবে না। এতে সরকারি কাজেরও ক্ষতি হবে না। অন্য ধর্মের মানুষের জন্যও ছুটির ভারসাম্য থাকবে।

সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি বাদিউল কবীর বলেন, লম্বা ছুটি সবার জন্য ভালো। কর্মমুখী মানুষের যাতায়াতে সুবিধা হবে। কম ছুটিতে অনেকের কষ্ট হয়। ছুটি বাড়ানোর দাবি অনেক দিনের।

১০ দিনের ছুটি ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব ফেলবে
এসিআই মোটরস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এফ এইচ আনসারী সমকালকে বলেন, ছুটির ১০ দিন যদি ব্যাংক বন্ধ থাকে, সেটা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। সেটা হলে সরকারের উচিত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা। এ ছাড়া আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান। কৃষিপণ্য সরবরাহ করতেও সমস্যা হবে। ঈদুল ফিতরের ৯ দিনের ছুটির বিষয়ে তিনি বলেন, গতবার ঈদের আগেই পণ্যগুলো পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। কর্মীরা সক্রিয়ভাবে কাজ করেছিল, সে জন্য পুনরুদ্ধার করা গেছে।


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ