কিশোরের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার, চিরকুটে লেখা ‘মাফ করে দিয়েন’
Published: 16th, May 2025 GMT
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় মেহেদী হাসান আপন (১৬) নামের এক কিশোরের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাত ৯টার দিকে সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের বয়ড়া গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে ওই কিশোরের লাশ উদ্ধার করা হয়।
মেহেদী হাসান আপন বয়ড়া গ্রামের ইটভাটার শ্রমিক শিপন মিয়ার ছেলে। সে বয়ড়া ইসরাইল আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
আপনের লাশ উদ্ধারের খবরে তার পরিবার, প্রতিবেশী, সহপাঠী ও শিক্ষকদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সবাই তাকে প্রাণবন্ত ছেলে হিসেবে জানতেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আপন বৃহস্পতিবার রাতে খাওয়া শেষ করে কিছুক্ষণ তার দাদার ঘরে অবস্থান করে। পরে সে একা নিজ কক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। দীর্ঘক্ষণ কোনো সাড়া না পাওয়ায় তার মা ডাকাডাকি শুরু করেন। ঘরের দরজা না খোলায় একপর্যায়ে পরিবারের সদস্যরা দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে তাকে ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। পাশে পড়ে ছিল একটি দুই পৃষ্ঠার চিরকুট।
চিরকুটে লেখা ছিল, “শুরুতেই বলি সালাম নিবেন। আমি আপনাদের অনেক কষ্ট দিয়েছি, ক্ষতি করেছি, খারাপ ব্যবহার করেছি। আমি ছোট থেকেই খারাপ, নিজেকে কখনও ভালো করতে পারিনি। বাবার কথা রাখতে পারিনি, তাঁর মনে অনেক কষ্ট দিয়েছি।
বাবা, আপনার পা দুটি ধরে মাফ চাইতে পারলাম না। আমাকে মাফ করে দিয়েন। মা, তুমি আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছো, অনেক বুঝিয়েছো; তবুও ভালো হতে পারলাম না। দাদার সম্মানও আমার জন্য হারিয়ে গেছে। আমি সবার মনে কষ্ট দিয়েছি।
বন্ধুদের বলি—তোদের সঙ্গে কত আড্ডা, কত আনন্দ করেছি। আমার কোনো কথায় কিছু মনে করিস না। আমার জানাজায় আসিস, আমার কবরে মাটি দিবি।
আমার কাছে যদি কেউ টাকা পেয়ে থাকে, তবে আমি আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি ভালো হতে পারিনি, তাই নিজেই পৃথিবী থেকে চলে যাচ্ছি। আপনারা ভালো থাকবেন। আপনাদের খারাপ সন্তান আর নেই।
ইতি—আপনাদের খারাপ ছেলে, আপন।”
আপনের ছোট বোন আছিয়া বলেছে, “ভাইয়া রাতে খেয়ে দাদার ঘরে গিয়েছিল। পরে সে নিজ ঘরে যায়। মা কাজ থেকে ফিরে এসে ডাকাডাকি করতে থাকেন। কিন্তু, কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে ভাইয়াকে ঝুলন্ত অবস্থায় পান।”
খবর পেয়ে সরিষাবাড়ী থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহায়তায় আপনের মরদেহ উদ্ধার করে এবং প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে।
সরিষাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাশেদ মিয়া বলেছেন, “ঘটনাস্থলে পাওয়া চিরকুটে আত্মহত্যার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত আছে। মরদেহের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/শোভন/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ রক ট আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন সাবেক সিইসি নূরুল হুদা
দিনের ভোট রাতে করাসহ প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগে করা মামলায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) জিয়াদুর রহমান এই জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে নূরুল হুদাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, চার দিন রিমান্ড শেষে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে আজ দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় হাজির করা হয়। পরে তাঁর ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক সৈয়দ সাজেদুর রহমান।
আবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিনের ভোট রাতে করে ব্যালট বাক্স ভর্তি রাখার ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন নূরুল হুদা। তিনিসহ অন্য নির্বাচন কমিশনাররা জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে সংবিধানপরিপন্থী কাজ করেছেন। নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের দ্বারা দিনের ভোট রাতে করে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়। আর ভোটের দিন আওয়ামী লীগ ও তাঁদের সহযোগী অঙ্গসংগঠনের ক্যাডারদের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নূরুল হুদার নির্দেশে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারা ভোটকেন্দ্রে বিএনপি ও ঐক্য ফ্রন্টের প্রার্থী ও সমর্থকদের প্রবেশ করতে বাধা দেন।
এই আবেদন করার পর বেলা দুইটার দিকে নূরুল হুদাকে বিচারকের খাস কামরায় নেওয়া হয়। সেখানে রাত সাতটা পর্যন্ত তাঁর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।
গত ২২ জুন সন্ধ্যার দিকে ‘মব’ (উচ্ছৃঙ্খল জনতার বিশৃঙ্খলা) তৈরি করে নূরুল হুদাকে হেনস্তার পর পুলিশে সোপর্দ করা হয়। রাজধানীর উত্তরার বাসায় ঢুকে একদল লোক তাঁকে বের করে আনেন, জুতার মালা পরিয়ে দেন। ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ জানায়, বিএনপির করা একটি মামলায় নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
উল্লেখ্য, সেদিনই বিএনপি রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলাটি করে। মামলায় সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে দিনের ভোট রাতে করাসহ প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ আনা হয়। পরের দিন সাবেক এই সিইসির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়।
নূরুল হুদা প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকাকালে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই ভোটে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার অভিযোগ রয়েছে, যা পরে ‘রাতের ভোট’ নামে পরিচিতি পায়।