ক্রেডিট রিকভারি নিয়ে ওয়ালটনের বিশেষ প্রশিক্ষণ
Published: 21st, May 2025 GMT
দেশের অন্যতম শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি কর্পোরেট সেলস টিমের জন্য একটি সময়োপযোগী ও বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণ কর্মশালা করেছে। ‘ক্রেডিট রিকভারি ফর সিএসডি সেলস টিম’ শিরোনামে এ বিশেষ প্রশিক্ষণটি মঙ্গলবার (২০ মে) সকালে রাজধানীর ওয়ালটন কর্পোরেট অফিসে অনুষ্ঠিত হয়।
উদ্বোধনী অধিবেশন পরিচালনা করেন ওয়ালটনের লার্নিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের ট্রেইনিং ম্যানেজার মো.
টি এম আবদুল্লাহ-আল-ফুয়াদ বলেছেন, “বিক্রির প্রকৃত মূল্য তখনই নিশ্চিত হয়, যখন তা সফলভাবে আদায় হয়। কারণ, রিকভারি ছাড়া কোনো বিক্রিই বাস্তবে বিক্রি নয়, তা কেবল একতরফা অনুদানের নামান্তর।”
এ প্রশিক্ষণ কেবল একটি কর্পোরেট প্রয়াস নয়, এটি বর্তমান শিল্প খাতে ক্রমবর্ধমান ক্রেডিট ঝুঁকি, ক্যাশ ফ্লো সংকট ও ক্লায়েন্ট সম্পর্কের টানাপোড়েন সামলানোর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কারণ, একটি ভুল ক্রেডিট সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়ে তিনটি স্তরে:
১. শিল্প খাত: নগদ অর্থপ্রবাহে সংকট, মাঠপর্যায়ে বিক্রয় প্রতিনিধিদের বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস এবং আইনি জটিলতা।
২. বিক্রয় প্রতিনিধি: লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থতা, মানসিক চাপ এবং কর্মস্থলে সুনামের ক্ষয়।
৩. ক্লায়েন্ট: ব্যবসার অবনতি, ভবিষ্যৎ ক্রেডিট হারানোর ঝুঁকি এবং পারস্পরিক সম্পর্কে উত্তেজনা।
ওয়ালটন কর্পোরেট সেলস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট টিমের সদস্যরা প্রশিক্ষণে অংশ নেন, যারা বাংলাদেশের সরকারি, বেসরকারি, বহুজাতিক কোম্পানি এবং বিভিন্ন কর্পোরেট ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কাজ করেন। প্রশিক্ষণে বাস্তব অভিজ্ঞতা, কেস স্টাডি এবং ইন্টারঅ্যাকটিভ আলোচনার মাধ্যমে তারা শিখেছেন, কীভাবে গ্রাহককে প্রোফাইল করতে হয়, আগাম সংকেত চিনে নিতে হয় এবং কার্যকরভাবে রিকভারি নিশ্চিত করতে হয়।
সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন ওয়ালটনের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এবং ক্রেডিট রিকভারি বিভাগের প্রধান এস এম জাহিদ হাসান।
তিনি বলেন, “আমাদের কর্পোরেট সেলস টিম শুধু বিক্রি করে না, তারা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক নিরাপত্তার প্রথম সারির যোদ্ধা।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও লার্নিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন, এনডিসি, পিএসসি।
তিনি বলেন, “বিক্রয় ও রিকভারি—এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাই হল একটি সুস্থ ব্যবসার মূল ভিত্তি। এই প্রশিক্ষণ তারই একটি বাস্তব ও প্রাসঙ্গিক উদাহরণ।”
এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ওয়ালটন প্রমাণ করেছে যে, প্রতিষ্ঠানটি শুধু প্রযুক্তি নয়, আর্থিক নৈতিকতা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও মানবসম্পদ উন্নয়নেও দেশে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করছে।
ঢাকা/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর প র ট ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাসের নাম পরিবর্তন নিয়ে সমালোচনা
পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের তিনটি আবাসিক হল এর নাম পরিবর্তন করা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর চলছে সমালোচনার ঝড়। বিশেষ করে সুচিত্রা সেনের নাম বাদ দিয়ে নতুন করে ‘জুলাই ৩৬ ছাত্রীনিবাস’ নামকরণ করা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন অনেকেই।
সুচিত্র সেন হলের নাম পরিবর্তনে পাবনার সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।
আরো পড়ুন: এডওয়ার্ড কলেজের ৩ আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ পাবনার সাধারণ সম্পাদক ড. নরেশ মধু বলেন, “এটি কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়। সুচিত্রা সেন এই উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত অভিনেত্রী এবং পাবনাবাসীর গর্ব। তিনি যেহেতু সব ধরণের রাজনীতির ঊর্ধ্বে, সেহেতু তার নামে করা হলের নাম পরিবর্তন করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। এটি পাবনাবাসীর জন্য লজ্জাজনক ও এর ফলে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিরুপ প্রভাব পড়বে।”
তিনি বলেন, “আমরা চাই ওই ছাত্রীনিবাসের নাম সুচিত্রা সেনের নামে পুনরায় বহাল করা হোক।”
জেলার অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন পাবনা ড্রামা সার্কেলের সাবেক সভাপতি ও আমেরিকা প্রবাসী সাংস্কৃতিক সংগঠক গোপাল সান্যাল তার ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তিনি লেখেন, “পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাস–এর নাম পাল্টে দেওয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। পাবনার সংস্কৃতিপ্রেমী জনতা এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করবে বলে আমার বিশ্বাস।”
পাবনার একুশে বইমেলা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র সংসদ পাবনার সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, “শিল্প-সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে ভিত্তি করেই এই ছাত্রীনিবাসের নাম রাখা হয়। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নাম বাদ দিয়ে অন্য নামে হলের নামকরণ করা এটা খুবই গর্হিত কাজ। এর মাধ্যমে শিল্প সংস্কৃতিকে অপমান করা হয় বলে মনে করি।”
কলেজ অধ্যক্ষের বক্তব্য:
বিষয়টি নিয়ে বুধবার (২১ মে) বিকেলে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আব্দুল আউয়াল মিয়ার।
তিনি নমাকরণের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, “প্রথমে যখন নামকরণ করা হয়, তখন একাডেমিক কাউন্সিলের অধিকাংশ সদস্য এই নামকরণের (সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাস) পক্ষে ছিলেন না। তখনকার অধ্যক্ষ মহোদয় বলেছিলেন, এটা পার্শ্ববর্তী একটি দেশের কূটনীতির চাপে করতে হচ্ছে। এটা তৎকালীন একটা পলিটিক্যাল গ্রুপ তারা তখনকার প্রেসার গ্রুপ ছিল, তারা তাদের পলিটিক্যাল টার্গেটে এই নামটা ঢুকিয়েছিল এডওয়ার্ড কলেজের মধ্যে।”
অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আব্দুল আউয়াল মিয়া বলেন, “বাংলাদেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজ পর্যন্ত ছাত্রাবাস, ছাত্রীবাস, হল কোনো নায়িকার নামে নেই। সুচিত্রা সেন আমাদের দেশের নাগরিকও নন। কেন এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্রীদের হলে তার নাম আনতে হলো-এ নিয়ে তখনকার কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলে তীব্র প্রতিবাদ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রতিবাদ সেদিন টেকেনি। অধ্যক্ষ মহোদয় তখন চাপে পড়ে এই নামকরণ (সুচিত্রা সেন ছাত্রী নিবাস) প্রস্তাব করেছিলেন বলে তিনি তখন জানিয়েছিলেন।”
তিনি বলেন, “এবার যখন সুযোগ পেয়েছে একাডেমিক কাউন্সিল, তখন তারা প্রস্তাব করে বলেছে; ওই সময় আমাদের চাহিদাটা পূরণ করতে পারিনি। এখন নতুন প্রশাসনের কাছে, নতুন বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আমরা এ দাবি করছি এই নামটা আমরা পরিবর্তন চাই। তখন সব শিক্ষক, একাডেমিক কাউন্সিলের সব সদস্যের ঐক্যমতের ভিত্তিতে নামটা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ নিয়ে পরবর্তী সভায় নতুন নাম (জুলাই ৩৬ ছাত্রীনিবাস) প্রস্তাব হয় এবং সবাই একমত হন।”
তিনি বলেন, “এখানে যারা স্টেকহোল্ডার তাদের সম্মতি নিয়ে, ছাত্র সংগঠনের সম্মতি নিয়ে, ছাত্রদের দাবির প্রেক্ষিতে এবং হলের আবাসিক ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে ও তাদের সম্মতির ভিত্তিতে হলটির নতুন নামকরণ করা হয়েছে। এখন যারা সাংস্কৃতিক সংগঠনের নামে ভিন্ন কথা বলছেন, তাদের একটি নির্দিষ্ট বলয়ের চিন্তাভাবনারই প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি।”
সম্প্রতি পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের তিনটি আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন করা হয়। কলেজের শেখ রাসেল ছাত্রাবাসের পরিবর্তিত নাম ‘বিজয় ২৪ হল’, বেগম ফজিলাতুন্নেছা ছাত্রীনিবাস এর পরিবর্তিত নাম ‘আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) ছাত্রীনিবাস’ এবং সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাস এর পরিবর্তিত নাম ‘জুলাই ৩৬ ছাত্রীনিবাস’ করা হয়।
মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুরে পরিবর্তিত নতুন নামফলক উন্মোচন করেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আব্দুল আউয়াল মিয়া। এ সময় কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আব্দুল খালেক, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক প্রফেসর লুৎফর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, হল সুপার, সহকারী সুপার এবং ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
নামফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংশ্লিষ্ট হলসমূহের হল সুপাররা। সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন নামফলক তৈরি ও উদ্বোধন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর মো. আবদুল্লাহ আল মামুন।
ঢাকা/শাহীন/মাসুদ