পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও শাস্তি দেওয়ার হুমকির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বুধবার বিকেলে উপজেলার সর্বস্তরের ছাত্র–জনতার ব্যানারে আয়োজিত কর্মসূচি থেকে ইউএনওর অপসারণের দাবি জানানো হয়।

আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে উপজেলা সদরের মুক্তমঞ্চের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদের মূল ফটকের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে তাঁরা সেখানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় ঝাড়ুও প্রদর্শন করা হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, একজন ইউএনও যেভাবে একজন সাংবাদিকের সঙ্গে ঔদ্ধত্য ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন, তা খুবই ভয়ংকর ও দুঃখজনক। তিনি আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর। শেখ হাসিনার মুখ্য সচিবের আপন ভাগনি জামাই।

গত সোমবার ‘অবহিত না করে’ অনুষ্ঠান আয়োজন করা নিয়ে তর্কের জেরে উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও সাংবাদিক এ এইচ এম শহীদুল হকের সঙ্গে ইউএনওর অসৌজন্যমূলক আচরণ ও শাস্তির হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ওই দিন বাউফল আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুদকের পটুয়াখালী জেলা কার্যালয় ও বাউফল দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির আয়োজনে স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের দিনক্ষণ নির্ধারিত ছিল। দুপুর ১২টার দিকে অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে বিদ্যালয়ে এসেই ক্ষুব্ধ হন ইউএনও আমিনুল ইসলাম। এ নিয়ে শহীদুল হকের সঙ্গে ইউএনওর কথা–কাটাকাটি হয়। কথা–কাটাকাটির এক পর্যায়ে খেপে গিয়ে ইউএনওকে বলতে শোনা যায়, ‘প্রজাতন্ত্রের আমি এমন কর্মচারী মালিককে শাস্তিও দিতে পারি।’ এ–সংক্রান্ত ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

আরও পড়ুনপ্রজাতন্ত্রের আমি এমন কর্মচারী মালিককে শাস্তিও দিতে পারি: বাউফলের ইউএনও১৯ মে ২০২৫

এ এইচ এম শহীদুল হক অভিযোগ করে বলেন, ইউএনও আমিনুল ইসলাম বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁকে (শহীদুল) সমঝোতা করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। এ কারণে তিনি শঙ্কিত।

তবে ইউএনও আমিনুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি তাঁকে (শহীদুল) কোনো মাধ্যমেই সমঝোতা করার জন্য চাপ দেননি। প্রথমত তিনি (শহীদুল) অনুষ্ঠানের অনুমতি নেননি। এরপর তিনি (শহীদুল) ও তাঁর সঙ্গের লোকজন তাঁর সঙ্গে চরম অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। অথচ তাঁর (ইউএনও) বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে পরিবেশ ঘোলাটে করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম ন ল ইসল ম অন ষ ঠ ব উফল উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

আটঘরিয়ায় বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষের ঘটনায় ২ মামলা, গ্রেপ্তার নেই

পাবনার আটঘরিয়ায় বিএনপি-জামায়াতের সংঘর্ষের ঘটনার পাঁচদিন পর পৃথক দুইটি মামলা হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষ থেকে মামলা দুইটি দায়ের হয়। সংঘর্ষের ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

আটঘরিয়া থানার ওসি মো. শফিকুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, “মঙ্গলবার (২০ মে) রাতে উভয় পক্ষ পৃথক এজাহার দিয়েছে। সেগুলো মামলা হিসেবে রুজু করা হয়েছে।” তদন্তের স্বার্থে মামলা দুইটির আসামিদের নাম জানাতে রাজি হননি ওসি।

বিএনপির দায়ের করা মামলার বাদী হয়েছেন আটঘরিয়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্ববায়ক আছিম উদ্দিন। মামলায় জামায়াতের ১২৪ জনের নাম উল্লেখ এবং নাম না জানা অনেককে আসামি করা হয়েছে। মামলা নম্বর ৭। এই মামলায় উপজেলা বিএনপির অফিসে হামলা, ভাঙচুর ও মারধরের অভিযোগ করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

নাশকতা মামলায় সাংবাদিক ও আ.লীগ নেতা ফারুক গ্রেপ্তার

কিশোরগঞ্জে ছাত্র হত্যা মামলায় দুই নারীসহ ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড 

জামায়াতের দায়ের করা মামলার বাদী হয়েছেন দলটির আটঘরিয়া উপজেলার আমির মাওলানা মো. নকিবুল্লাহ। মামলায় বিএনপির ৩৬ জনের নাম উল্লেখ এবং নাম না জানা ১২০-১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলা নম্বর ৮। এই মামলায় উপজেলা জামায়াতের অফিসে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ ও মারধরের অভিযোগ করা হয়েছে।

আটঘরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুজ্জামান বলেন, “মামলা দুইটি আমরা তদন্ত করে দেখছি। যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আসামিদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।”

পুলিশের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়, জামায়াতের এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, “আমরা চাকরি করতে এসেছি। এখন কোনো দলই ক্ষমতায় নেই। আমরা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করব। আমাদের যে কাজ আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সে কাজ করব।”

ঘটনার বিষয়ে ইউএনও যা বললেন:
সেদিনের ঘটনার বিষয়ে আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিনহাজুল ইসলাম বলেন, “সেদিন মনোনয়ন ফরম তুলতে বাধা দেওয়ার বিষয়টি কলেজ অধ্যক্ষ প্রথমে জানায়। আমি থানার ওসিকে ফোন দিলে তিনি সেখানে যান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।  জামায়াতের পক্ষ থেকে প্রথমে মৌখিকভাবে আমাকে জানায়। পরে তারা লিখিত অভিযোগও দিয়েছে। সেদিনই বিকেলে দুই পক্ষকে ডেকেছিলাম। কিন্তু তার আগেই ঘটনাটি ঘটে গেল।”

তিনি বলেন, “ঘটনার পর আমরা কলেজ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বসেছিলাম কি করা যায় এটা নিয়ে। এখনো আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি। বিধি ও নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী করণীয় বিষয়ে আমরা কার্যক্রম চালাচ্ছি।”

বিএনপি-জামায়াতের অফিস ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলেন কি না এবং সেখানে কি অবস্থা দেখেছিলেন জানতে চাইলে ইউএনও সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

দেবোত্তর বাজার জামে মসজিদে পরদিন শুক্রবার (১৬ মে) জুমার নামাজ হয়নি কেন জানতে চাইলে ইউএনও মিনহাজুল ইসলাম বলেন, “ঘটনাটি আমি জেনেছি নামাজের আগ মুহূর্তে। জুমার নামাজের পর বিষয়টি বসে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি। ওই সময় তাৎক্ষনিকভাবে কাউকে পাওয়াও যাচ্ছিল না। পরে সেটি সমাধান হয়ে গেছে।”

দেবোত্তর বাজার মসজিদের ইমামের বক্তব্য:
শুক্রবার (১৬ মে) দেবোত্তর বাজার জামে মসজিদে জুমার নামাজ কেন হয়নি জানতে চাইলে- মসদিজের ইমাম মাওলানা মো. বেলাল হোসাইন বলেন, “ঘটনার দিন (১৫ মে) রাত ৮টার দিকে ইউএনও স্যার আমাকে ঘটনাস্থলে ডেকেছিলেন কথা বলার জন্য। কথা বলার এক পর্যায়ে এশার নামাজের সময় হওয়ায় আমি ইউএনও স্যারকে বলে চলে আসতে উদ্যত হই। এমন সময় বিএনপি নেতা আছিম উদ্দিনের ছেলে মিল্টন আমাকে ডেকে মুখের ওপর একটা ঘুষি মারেন। ওসি সাহেব তাদের ধমক দেন, একজন ইমাম সাহেবের গায়ে হাত তোলে কেন তিনি জানতে চান। সবাই ঘটনাটি দেখেছেন। আমি কোনো মিছিল মিটিংয়ে যাইনি। সার্বক্ষণিক মসজিদে ছিলাম।”

তিনি আরো বলেন, ‘তারপর রাতে এশার নাম পড়ে বাসায় যাই। ভোরে ফজরের নামাজ মসজিদে আমি একাই পড়ি। কেউ আসেনি। কারণ রাতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়েছিল।”

“সকালে আমার বেয়াইয়ের ছেলে জানায়, অবস্থা ভাল না। আপনি দ্রুত এখান থেকে চলে যান। তখন আমি মসজিদের সভাপতি ও সেক্রেটারিকে বিষয়টি জানাই। তারা খোঁজ নিয়ে আমাকে বলেন, আসলেই পরিবেশ বেগতিক। চাবি কারো কাছে দিয়ে চলে যান। আমরা তোমার নিরাপত্তা দিতে পারব না। তখন সেক্রেটারির কথামতো মসজিদের চাবি উজ্জল নামে একজনের কাছে দিয়ে দ্রুত চলে যাই। পরে মসজিদে তালা দেওয়া, নামাজ না হওয়ার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। মূলত আমার নিজের নিরাপত্তার জন্য মসজিদের সভাপতি ও সেক্রেটারির পরামর্শে অন্যত্র চলে যেতে হয়েছি”-যোগ করেন মাওলানা মো. বেলাল হোসাইন।

আগে যা ঘটেছিল:
পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তর ডিগ্রি (অনার্স) কলেজের অভিভাবক সদস্য পদে মনোনয়ন ফরম তোলা নিয়ে গত ১৫ মে (বৃহস্পতিবার) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় দুই দলের দলীয় কার্যালয় এবং ২৩টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হন।

সংঘর্ষ চলাকালে জামায়াতের অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয় বিএনপি নেতাকর্মীরা বলে অভিযোগ ওঠে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা গিয়ে আগুন নেভান। এ নিয়ে পরদিন পৃথক বিক্ষোভ সমাবেশ করে দুই দল। একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠে পরিস্থিতি।

‌‌এর মধ্যে গত ১৭ মে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব প্রকাশ্যে হুঁশিয়ার দিয়ে বলেন, ‘পাবনার আটঘরিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর কোনো মুয়াজ্জিন আজান দিতে পারবেন না এবং কোনো ঈমাম নামাজ পড়াতে পারবেন না।” তাঁর এই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।

ওই বক্তব্যে হাবিব আরো বলেছিলেন, “গত শুক্রবার (১৬ মে) আটঘরিয়ার দেবোত্তর বাজার জামে মসজিদে জামায়াতের কারণে মানুষ জুমার নামাজ পড়তে পারেনি। তালা দিয়ে পালিয়েছে তারা। কতটা ন্যক্কারজনক ঘটনা। জামায়াত মিথ্যা কথা বলে। এদের পেছনে নামাজ হয় না।”

ঢাকা/শাহীন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অনুমতি না নিয়ে চেয়ারম্যান পদে আ.লীগ নেতা, ক্ষোভ
  • মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু এবং শিশুর প্রতি সহিংসতায় রাষ্ট্রের নির্লিপ্ততা
  • শিশু-কিশোরেরা কেন সহিংস হয়ে উঠছে?
  • বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কা নিথর হনুমানশাবক
  • ইসি পুনর্গঠনের দাবিতে আগারগাঁওয়ে এনসিপির বিক্ষোভ কাল
  • আটঘরিয়ায় বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষের ঘটনায় ২ মামলা, গ্রেপ্তার নেই
  • আমি প্রজাতন্ত্রের এমন চাকর, মালিককে শাস্তিও দিতে পারি: বাউফলের ইউএনও
  • আমরা প্রজাতন্ত্রের এমন চাকর যে, মালিককে শাস্তি দিতে পারি: বাউফলের ইউএনও
  • প্রজাতন্ত্রের আমি এমন কর্মচারী মালিককে শাস্তিও দিতে পারি: বাউফলের ইউএনও