পাপিয়ার কারাদণ্ডের খবরে এলাকায় মিষ্টি বিতরণ
Published: 25th, May 2025 GMT
মানিলন্ডারিং আইনের মামলায় যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়াকে চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তার সাজার খবরে নরসিংদী সদর এলাকার মানুষজন স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তারা আনন্দ মিছিল করার পাশাপাশি মিষ্টি বিতরণ করেছেন।
রবিবার (২৫ মে) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৮ এর বিচারক মো. মঞ্জুরুল হোসেন রায় ঘোষণা করেন। বিচারক পাপিয়াকে ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন।
পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী, সহযোগী সাব্বির খন্দকার, শেখ তায়িবা নূর ও জুবায়ের আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তারা খালাস পেয়েছেন।
আরো পড়ুন:
যশোরে নারী মাদক ব্যবসায়ীর যাবজ্জীবন
চাঁদাবাজির মামলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক দুই নেতা রিমান্ডে
স্থানীয়রা জানান, পাপিয়ার নানা অপকর্ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ভয়ে ছিলেন। তার শাস্তির খবরে এলাকায় খুশির বন্যা বইছে। আজ সত্যিকারের বিচার হলো। এটা একটা দৃষ্টান্ত। তার সাজার খবরে আনন্দ মিছিল বের হয়। স্থানীয় যুবসমাজ ও সাধারণ মানুষ মিষ্টি বিতরণ করেন।
মো.
রুবিনা আক্তার (৩৫) বলেন, এতদিন মনে হতো, টাকার জোরে সবকিছু চাপা পড়ে যাবে। আজকের এই শাস্তি প্রমাণ করল, আইনের হাত অনেক লম্বা। আমরা খুব খুশি। এলাকার নারীরাও আজ একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে।”
বাসাইল এলাকার সমাজকর্মী সাইদুর রহমান জনি বলেন, “আমি নিজে পাপিয়ার দাপটে কতবার প্রতিবাদ করতে গিয়েও পিছু হটেছি। এই রায়ের মাধ্যমে বোঝা গেল, কেউই অপরাধ করে নিরাপদ নয়। সমাজের তরুণরা এখন আরো বেশি সচেতন হবে।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা যারা জীবনের বড় একটা সময় ন্যায়-নীতির কথা বলে কাটিয়েছি, তাদের জন্য এই রায় এক ধরনের বিজয়। এমন দৃষ্টান্তমূলক সাজা আমাদের সমাজের জন্য খুব জরুরি ছিল।”
২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জাল টাকা বহন ও অবৈধ টাকা পাচারের অভিযোগে পাপিয়াসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর তাদের কাছ থেকে সাতটি পাসপোর্ট, বাংলাদেশি দুই লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ জাল টাকা, ৩১০ ভারতীয় রুপি, ৪২০ শ্রীলঙ্কান মুদ্রা, ১১ হাজার ৯১ মার্কিন ডলার ও সাতটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি পাপিয়ার ইন্দিরা রোডের বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেকবই, বেশকিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানার মাদক ও অস্ত্র মামলা, গুলশান থানায় অর্থপাচার মামলা, বিমানবন্দর থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক মামলা করে।
২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর অর্থপাচার মামলায় পাপিয়াসহ পাঁচ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক ইব্রাহীম হোসেন।
২০২২ সালের ২১ আগস্ট পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। মামলার বিচার চলাকালে আদালত ২৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
অভিযোগ রয়েছে, ঢাকার পাঁচ তারকা হোটেলে বিলাসবহুল কক্ষ ভাড়া নিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতেন পাপিয়া। এরপর পাপিয়াকে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
২০২০ সালের ১২ অক্টোবর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমনকে অস্ত্র মামলায় ২০ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
এদিকে, কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের রেকর্ড বইয়ে পাপিয়ার বিভিন্ন অপকর্মের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়, পাপিয়া হাজতি রুনা লায়লাসহ কয়েকজন বন্দিকে গালাগাল ও ভয়ভীতি দেখাতে আঘাত করেছেন। এছাড়া, তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ইচ্ছেমতো অন্য বন্দিদের সেল পরিবর্তন করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঢাকা/হৃদয়/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
এলিট আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা কতটা নির্ভুল
বার্মিংহামের এজবাস্টনে কাল আরেকটি টেস্ট শেষ হলো। আরেকবার মাঠের আম্পায়ার হিসেবে দেখা গেল বাংলাদেশের শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকতকে এবং অনেকটা প্রত্যাশিতভাবেই তিনি আবার আলোচনায়। কারণ, ম্যাচটা যে ছিল ভারতের!
শরফুদ্দৌলা এর আগে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে ভারতের দুটি ম্যাচ (একটিতে টিভি আম্পায়ার) পরিচালনা করে আলোচিত হয়েছিলেন। এবার আম্পায়ারিং করলেন এজবাস্টনে অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফির দ্বিতীয় টেস্টে।
বাংলাদেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে জায়গা করে নেওয়া শরফুদ্দৌলা মূলত তাঁর দৃঢ় মানসিকতা ও সাহসী সিদ্ধান্তের কারণেই বারবার খবরের শিরোনাম হন।
তা এজবাস্টন টেস্টে কেমন আম্পায়ারিং করলেন শরফুদ্দৌলা? হার্শা ভোগলের মতো জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার যখন ‘সার্টিফিকেট’ দেন, তখন সেটিকে ভালো বলতেই হবে।
এজবাস্টনে কাল ইংল্যান্ডকে ৩৩৬ রানে হারিয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা ফিরিয়েছে ভারত। শুবমান গিলের দলকে হার্শা যেমন প্রশংসায় ভাসিয়েছেন, তেমনি আম্পায়ার শরফুদ্দৌলারও বন্দনা করেছেন।
এজবাস্টন টেস্টে আম্পায়ারিং নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হার্শা লিখেছেন, ‘এই ম্যাচে অসাধারণ আম্পায়ারিং হয়েছে। ক্রিস গ্যাফানির কাছ থেকে আপনি এই মানের আম্পায়ারিং আশা করতে পারেন। তবে শরফুদ্দৌলা সৈকত সত্যিই দুর্দান্ত ছিলেন।’
পরিসংখ্যান বলছে, ৪৮ বছর বয়সী শরফুদ্দৌলা এজবাস্টন টেস্টে ১০টি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর ৮টিতেই তিনি সঠিক ছিলেন, ২টি সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়েছে। সাফল্যের হার ৮০%। মানে, লেটার মার্কস বা এ+।
শরফুদ্দৌলা এলিট প্যানেলে জায়গা করে নেন গত বছরের মার্চে। এরপর থেকে মাঠের আম্পায়ার হিসেবে সাতটি টেস্ট পরিচালনা করেছেন। শুরুটা হয়েছিল গত বছরের জুলাইয়ে বেলফাস্টে আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে টেস্ট দিয়ে। সেই ম্যাচে ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস) ছিল না।
পরের ছয় টেস্টে তাঁর নেওয়া ৪১ সিদ্ধান্তের মধ্যে মাত্র ১০টিতে ব্যাটসম্যান অথবা ফিল্ডিং করা দল সফল হতে পেরেছে। ৩১টি সিদ্ধান্ত তাঁর পক্ষে গেছে। অর্থাৎ, সাফল্যের হার ৭৫.৬১%। আম্পায়ার্স কলে মাত্র ৫টি সিদ্ধান্তে আউট অথবা নট আউট হয়েছে।
১০০% সাফল্য পেয়েছেন—এমন রেকর্ডও আছে শরফুদ্দৌলার। তাও আবার একটি নয়; দুটি টেস্টে। গত বছরের অক্টোবরে মুলতানে পাকিস্তান-ইংল্যান্ড টেস্টে তাঁর নেওয়া তিনটি সিদ্ধান্তই ছিল সঠিক। এরপর নভেম্বরে ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলঙ্কা টেস্টে আট সিদ্ধান্তের সবকটি নির্ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
শরফুদ্দৌলা সবচেয়ে কম সাফল্য পেয়েছেন পাকিস্তান-ইংল্যান্ডের আরেক টেস্টে। অক্টোবরে রাওয়ালপিন্ডিতে হওয়া সেই টেস্টে তাঁর সাতটি সিদ্ধান্তের মধ্যে শুধু দুটি সঠিক ছিল (সাফল্যের হার ২৮.৫৭%)। অবশ্য রাওয়ালপিন্ডির পুরোদস্তুর স্পিন সহায়ক সেই উইকেটে আরেক আম্পায়ার ক্রিস গ্যাফানিকেও বড় পরীক্ষা দিতে হয়েছিল।
এলিট আম্পায়ার হওয়ার পর শরফুদ্দৌলা যে সাত টেস্টে মাঠের আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, এর সাতটিই আলাদা ভেন্যুতে। দেশের হিসেবে সংখ্যাটা ছয়।
ক্রিকেটারদের যেমন ক্রিকেট তীর্থ লর্ডসে খেলার ও সেখানকার অনার্স বোর্ডে নাম তোলার স্বপ্ন থাকে, আম্পায়ারদেরও নিশ্চয় সেখানে আম্পায়ারিং করার ইচ্ছা থাকে!
শরফুদ্দৌলারও সেই ইচ্ছা পূরণ হবে পরের ম্যাচেই। বৃহস্পতিবার লর্ডসে শুরু ইংল্যান্ড-ভারত তৃতীয় টেস্ট। এই ম্যাচেও মাঠের আম্পায়ার হিসেবে দেখা যাবে ‘বাংলাদেশের গর্ব’ শরফুদ্দৌলাকে।