মানিলন্ডারিং আইনের মামলায় যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়াকে চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তার সাজার খবরে নরসিংদী সদর এলাকার মানুষজন স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তারা আনন্দ মিছিল করার পাশাপাশি মিষ্টি বিতরণ করেছেন।

রবিবার (২৫ মে) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৮ এর বিচারক মো. মঞ্জুরুল হোসেন রায় ঘোষণা করেন। বিচারক পাপিয়াকে ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন।

পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী, সহযোগী সাব্বির খন্দকার, শেখ তায়িবা নূর ও জুবায়ের আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তারা খালাস পেয়েছেন। 

আরো পড়ুন:

যশোরে নারী মাদক ব্যবসায়ীর যাবজ্জীবন

চাঁদাবাজির মামলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক দুই নেতা রিমান্ডে

স্থানীয়রা জানান, পাপিয়ার নানা অপকর্ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ভয়ে ছিলেন। তার শাস্তির খবরে এলাকায় খুশির বন্যা বইছে। আজ সত্যিকারের বিচার হলো। এটা একটা দৃষ্টান্ত। তার সাজার খবরে আনন্দ মিছিল বের হয়। স্থানীয় যুবসমাজ ও সাধারণ মানুষ মিষ্টি বিতরণ করেন। 

মো.

শফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, “পাপিয়ার দৌরাত্ম্য এতটাই বেড়েছিল যে, সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে ভয় পেত। আজকে আমরা আইনের বিজয় দেখলাম। এই রায় আমাদের সাহস জোগাবে, যে অন্যায় করে কেউ রেহাই পাবে না।”

রুবিনা আক্তার (৩৫) বলেন, এতদিন মনে হতো, টাকার জোরে সবকিছু চাপা পড়ে যাবে। আজকের এই শাস্তি প্রমাণ করল, আইনের হাত অনেক লম্বা। আমরা খুব খুশি। এলাকার নারীরাও আজ একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে।”

বাসাইল এলাকার সমাজকর্মী সাইদুর রহমান জনি বলেন, “আমি নিজে পাপিয়ার দাপটে কতবার প্রতিবাদ করতে গিয়েও পিছু হটেছি। এই রায়ের মাধ্যমে বোঝা গেল, কেউই অপরাধ করে নিরাপদ নয়। সমাজের তরুণরা এখন আরো বেশি সচেতন হবে।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা যারা জীবনের বড় একটা সময় ন্যায়-নীতির কথা বলে কাটিয়েছি, তাদের জন্য এই রায় এক ধরনের বিজয়। এমন দৃষ্টান্তমূলক সাজা আমাদের সমাজের জন্য খুব জরুরি ছিল।”

২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জাল টাকা বহন ও অবৈধ টাকা পাচারের অভিযোগে পাপিয়াসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এরপর তাদের কাছ থেকে সাতটি পাসপোর্ট, বাংলাদেশি দুই লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ জাল টাকা, ৩১০ ভারতীয় রুপি, ৪২০ শ্রীলঙ্কান মুদ্রা, ১১ হাজার ৯১ মার্কিন ডলার ও সাতটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি পাপিয়ার ইন্দিরা রোডের বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেকবই, বেশকিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানার মাদক ও অস্ত্র মামলা, গুলশান থানায় অর্থপাচার মামলা, বিমানবন্দর থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক মামলা করে।

২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর অর্থপাচার মামলায় পাপিয়াসহ পাঁচ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক ইব্রাহীম হোসেন।

২০২২ সালের ২১ আগস্ট পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। মামলার বিচার চলাকালে আদালত ২৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। 

অভিযোগ রয়েছে, ঢাকার পাঁচ তারকা হোটেলে বিলাসবহুল কক্ষ ভাড়া নিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতেন পাপিয়া। এরপর পাপিয়াকে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

২০২০ সালের ১২ অক্টোবর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমনকে অস্ত্র মামলায় ২০ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

এদিকে, কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের রেকর্ড বইয়ে পাপিয়ার বিভিন্ন অপকর্মের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়, পাপিয়া হাজতি রুনা লায়লাসহ কয়েকজন বন্দিকে গালাগাল ও ভয়ভীতি দেখাতে আঘাত করেছেন। এছাড়া, তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ইচ্ছেমতো অন্য বন্দিদের সেল পরিবর্তন করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ঢাকা/হৃদয়/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র খবর

এছাড়াও পড়ুন:

পুতিন যা চান, ট্রাম্প তাঁকে সেটাই দিলেন

তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা কূটনৈতিক অচলাবস্থার পর গত কয়েক দিনে রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তিপ্রক্রিয়ায় হঠাৎ করেই কিছু পদক্ষেপ দেখা গেল। দুর্ভাগ্যজনক সত্যি হচ্ছে, এর কোনোটিই কোনো অর্থবহ অগ্রগতি আনতে পারেনি। ইস্তাম্বুলে রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনা নিয়েই প্রত্যাশার পারদটা বেশি ছিল। কিন্তু প্রতীকী কিছু অর্জন ছাড়া সেখান থেকে কিছুই আসেনি।

এরপর ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে দুই ঘণ্টার ফোনালাপ হয়। ট্রাম্পের পক্ষ থেকে শান্তি আলোচনার মধ্যস্থতা থেকে কার্যত সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত এসেছে। আবারও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সেটাই পেলেন, যেটা তিনি চেয়েছেন।

ট্রাম্প বিবৃতিতে বলেছেন, ‘শান্তির শর্ত দুই পক্ষের মধ্যেই আলোচনা করে ঠিক করতে হবে। কারণ, একমাত্র এভাবেই সেটা সম্ভব।’ তাঁর এই অবস্থান গত বছরের বক্তব্যের স্পষ্ট বিপরীত। ট্রাম্প তখন ঘোষণা দিয়েছিলেন, কেবল তিনিই এই যুদ্ধ শেষ করতে পারেন; আর সেটা এক দিনের মধ্যেই।

এখন ট্রাম্প যদি সত্যিই তাঁর স্বঘোষিত মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা থেকে সরে আসেন, তাহলে সেটা রাশিয়ার শর্তে ইউক্রেনকে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাধ্য করার যে অবস্থান, তার ইতিবাচক পরিবর্তন। এখন রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেন দর–কষাকষি করতে পারবে।

একই সঙ্গে কেউ যদি রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে সরাসরি সফল আলোচনার আশা করেন, তাঁদের উচিত সেই প্রত্যাশাটাকে কমিয়ে ফেলা। পুতিনের প্রকৃতপক্ষে শান্তি আলোচনায় বসার কোনো আগ্রহ নেই। তিনি কখনোই সেটা করবেন না। তিনি বারবার জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করতে অস্বীকার করেছেন। এর কারণ আলোচ্যসূচির অভাব নয়, বরং ইউক্রেনের নেতাকে স্বীকৃতি দিলে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব তাঁকে স্বীকার করতে হবে।

পুতিনের সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে, ইউক্রেন কোনো দেশই নয়। আর তাই ইউক্রেনে কোনো বৈধ সরকার থাকতেই পারে না। অথচ তিনিই এমন এক রাষ্ট্রনেতা, যাঁর নিজের রাজনৈতিক বৈধতা টিকে আছে ব্যালট পেপারে কারচুপি ও নির্বাচনী নাটকের ওপর।

আন্তর্জাতিক সংঘাত বিষয়ে গবেষকেরা প্রায়ই বলেন, যুদ্ধ ও শান্তি আলোচনা একই মুদ্রার দুই পিঠ। যুদ্ধে তথ্য জোগাড় করার প্রক্রিয়াটি অনেক খরুচে। দুই পক্ষের মাঠপর্যায়ের সত্যকে বের করে আনতে হয়, যাতে তাদের সক্ষমতার চিত্রটা বেরিয়ে আসে। চুক্তি করলে কোন পক্ষ কী শর্তে চুক্তি করবে, নাকি দুই পক্ষে যুদ্ধ চালিয়ে গেলে, সেটা ফয়সালার জন্য মাঠ বাস্তবতার তথ্য জোগাড় করা জরুরি। সে কারণে শান্তি আলোচনায় সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে গেলে যুদ্ধক্ষেত্রে নিজের সামর্থ্যকে দেখাতে হয়। এতে করে প্রতিপক্ষ আলোচনার টেবিলে ছাড় দিতে বাধ্য হয়।

তিন বছরের যুদ্ধের পর এটা পরিষ্কার যে ইউক্রেন নয়, রাশিয়ার সক্ষমতাই প্রশ্নের মুখে পড়েছে। বিশ্বের তথাকথিত দ্বিতীয় শক্তিশালী সেনাবাহিনী তাদের কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। জানুয়ারি থেকে রাশিয়ান বাহিনীর অগ্রগতি সামান্য। মাত্র কয়েকটি মাঠ ও পরিত্যক্ত গ্রাম তারা দখলে নিতে পেরেছে। আকারে এক হাজার বর্গকিলোমিটারের বেশি নয়।

কিন্তু নিষেধাজ্ঞা আর যুদ্ধ পরিচালনার ব্যয়ের চাপে রাশিয়ার অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে। ‘তিন দিনে কিয়েভ দখলের’ মূল পরিকল্পনা প্রথমে ব্যর্থ হয়। এরপর পুতিন দ্বিতীয় পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামলেই সেটা কেবল আত্মবিশাসী বোলচাল আর ভাগ্যের ওপর প্রত্যাশা ছাড়া আর কিছু অর্জন করতে পারেনি।

বিপরীতে ইউক্রেন প্রত্যাশার চেয়েও বেশি দৃঢ়তা ও শক্তিমত্তা দেখিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আশাজাগানিয়া একটি আন্তর্জাতিক সমর্থকগোষ্ঠী গড়ে তুলতে পেরেছেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, আলোচনা করার ক্ষেত্রে ইউক্রেন শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। এরপরও রাশিয়া নিজের চরম অবস্থানে অনড় রয়েছে।

সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই পুতিনকে কৌশলবিদ্যার মাস্টার বলা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি তা নন। কিয়েভে ব্যর্থতার পরও পুতিনের যুদ্ধকৌশলে কিছু্ই পরিবর্তন হয়নি। তিনি চাঁদটাকে হাতে চাইছেন, আর সেটা না পেলে ক্ষিপ্ত হচ্ছেন। এটা সত্য যে তিনি একজন দক্ষ প্রবঞ্চক।

পুতিন বিশ্বাস করেন, যদি তিনি শক্তির জোরে ইউক্রেনের ভূখণ্ড দখল করতে না–ও পারেন, তবে কথার খেলায় পশ্চিমা সহানুভূতিশীলদের মাধ্যমে তা আদায় করতে পারবেন।

ক্রিমিয়া থেকে শুরু করে মিনস্ক চুক্তি, সিরিয়া থেকে চেচনিয়া—পুতিন বারবার এমন বাস্তবতা তৈরি করেছেন এবং বিশ্বকে তা মেনে নিতে বাধ্য করেছেন। তাহলে এখন তিনি থামবেন কেন?

ওলগা চিজ টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক

দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বানিয়াচংয়ে পুলিশের গাড়িসহ ৪ যানবাহনে ডাকাতি
  • ১২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করা হবে কোরবানির বর্জ্য: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • বনের অসুস্থ হাতির জন্য অন্য রকম ভালোবাসা
  • ঝিনাইদহে লেখক ও নাট্যশিল্পীর বাড়িতে আগুন, থানায় অভিযোগ
  • সন্‌জীদা খাতুন আরও উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন
  • গান আবৃত্তি ও ভালোবাসায় সন্জীদা খাতুনকে স্মরণ
  • আপত্তিকর ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ২১ ভরি স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ
  • কৌতূহলে গলায় ফাঁস, প্রাণ গেল কিশোরের
  • পুতিন যা চান, ট্রাম্প তাঁকে সেটাই দিলেন