আগামী বছর থেকে কোরবানির পশুর হাটে হাসিল হবে ৩ শতাংশ
Published: 26th, May 2025 GMT
আগামী বছর থেকে কোরবানির পশুর হাটে হাসিল দামের ৩ শতাংশ করে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, এ বছর কোরবানির পশুর হাট থেকে ৫ শতাংশ হাসিল আদায় হবে। আগামী বছর থেকে ৩ শতাংশের বেশি হাসিল নেওয়া হবে না। এ ছাড়া এ বছর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ২০টি কোরবানির হাট বসবে বলে জানান তিনি।
আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর হাট ও কাঁচা চামড়ার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত সভা শেষে রোববার সাংবাদিকদের এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ বছর কোরবানির ঈদে মানুষ যাতে চামড়ার ন্যায্যমূল্য পান, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, প্রতিবছরই চামড়ার ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে ঝামেলা হয়, এ কারণে চামড়া নষ্ট হয়। এটা গরিবের হক। এ বছর মানুষ চামড়ার ন্যায্যমূল্য পাবেন, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে কোরবানির হাটে হাসিল কমানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ৫ শতাংশ হাসিল অনেক বেশি। তবে এবার হাসিল কমানো সম্ভব নয়। আগামী বছর থেকে ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদাবক্স চৌধুরী ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ উপস্থিত ছিলেন।
মোহাম্মদ এজাজ সাংবাদিকদের জানান, দুই সিটি করপোরেশনে মোট ২০টি কোরবানির হাট বসবে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরে ১০টি ও ঢাকা দক্ষিণে ১০টি। এসব হাট বসবে মহাসড়ক থেকে দূরে। যাতে যানজট তৈরি না হয়। এ বছর কোনো অবৈধ হাট বসতে দেওয়া হবে না। দুই সিটিতে কোনো অননুমোদিত জায়গায় কোরবানির হাট বসবে না। অনুমোদিত হাটে সিসি ক্যামেরা থাকবে। আনসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
চামড়ার ন্যায্যমূল্য কীভাবে নিশ্চিত হবে এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ এজাজ বলেন, অতীতে প্রতিটি চামড়ার দাম ২ হাজার টাকা উঠেছিল। গত কয়েক বছর চামড়ার দাম অনেক কমে গেছে। এবার যদি গরুর মালিক চামড়ার দাম ১২০০ টাকা পান, সেটা ন্যায্য হবে।
এ বছর চামড়া যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য বিনা পয়সায় জেলা ও থানায় পর্যাপ্ত লবণ বিতরণ করা হবে বলে জানান তিনি। তা ছাড়া চামড়া রপ্তানির জন্য এ বছর আগাম অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে চামড়া রপ্তানিতে গড়িমসি করা হতো।
গাবতলীর কোরবানির হাটের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ এজাজ বলেন, গাবতলী হাটের ইজারা দেওয়া হয়েছে। অন্য কোরবানির হাটও ইজারা দেওয়া হয়েছে।
আসন্ন কোরবানির ঈদে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.
সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো কথা থাকলে তাঁরা আলোচনা করতে পারেন বলে উল্লেখ করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারি চাকরি আইনটি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৮ সালের নির্বাচনে কারসাজি করতে সংশোধন করেছিল।’
এখন কেন অধ্যাদেশটি করা জরুরি ছিল—এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারব না। তবে যে সময় যেটার দরকার পড়ে, সে সময় সেটা করা হয়।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ হ ঙ গ র আলম চ ধ র ক রব ন র হ ট বছর থ ক হ ট বসব এ বছর
এছাড়াও পড়ুন:
ভোটের জন্য বরাদ্দ থাকছে ২০৮০ কোটি টাকা
জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ খাতে ২ হাজার ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখে বাজেট চূড়ান্ত করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে প্রয়োজন হলে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে ‘নির্বাচন’ খাতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের অন্যান্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ৫ হাজার
৯২২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার অনুরোধ জানিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। এর ভিত্তিতি দুই দফা নির্বাচন কমিশন, অর্থ বিভাগ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আলোচনার পর এ খাতে ২ হাজার ৮০ কোটি টাকা রাখা হচ্ছে। নির্বাচন পরিচালনার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাবদ খরচ ‘নির্বাচন’ খাত থেকে নির্বাহ করা হয়।
কর্মকর্তারা আরও বলেন, এবার প্রায় সব ক্ষেত্রে চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম রাখা হচ্ছে। তবে প্রয়োজন হলে পরবর্তী সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য অন্য খাত থেকেও টাকা এনে খরচ করা যেতে পারে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অনুকূলে মোট ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। এর মধ্যে বিভিন্ন নির্বাচনের জন্য বরাদ্দ প্রায় ২০০ কোটি টাকা। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে নির্বাচন কমিশনের মোট বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূল বাজেটে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। তবে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কারণে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৪ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাতীয় নির্বাচন না থাকায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয় খাতে ব্যয় হয় মাত্র ৮৭৮ কোটি টাকা। সর্বশেষ জানুয়ারি নির্বাচনে ২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকার ব্যয় ধরা হয়। এর আগে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ গতকাল রোববার সমকালকে বলেন, বাজেটে বরাদ্দ যাই থাক না কেন, প্রয়োজন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন চাইলেই সরকার টাকা দেবে। কারণ, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব ধরনের নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে কমিশন। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের খরচ যা হবে, তা সরকারকে দিতে হবে।
নির্বাচনী পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের ম্যান্ডেট হাচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর স্থানীয় নির্বাচনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সরকারকে চাহিদা দেবে। সরকারি সে চাহিদার ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। সুতরাং সরকারি চাহিদার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে তার পক্ষে মতামত দেওয়া সম্ভব নয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জুন মাস আগামী অর্থবছরের শেষ মাস।
অর্থ মন্ত্রণালয় এবং নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে ‘নির্বাচন’ খাতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের অন্যান্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ৫ হাজার ৯২১ কোটি ৭২ লাখ ৬০ হাজার টাকার চাহিদা দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা খাতে প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা দরকার বলা হয়েছিল। স্থানীয় নির্বাচনের জন্য ২ হাজার ৭৯৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়। এ ছাড়া ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র খাতে ৬৯ কোটি ২৫ লাখ টাকার চাহিদা ছিল।
গত ১৬ এপ্রিল নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকার ঘোষিত সময়সীমা ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী জুন-জুলাই মাসের মধ্যে এ-সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করা হবে।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনী প্রস্তুতির অন্যতম বষয় হলো প্রয়োজনীয় কেনাকাটা। ভোটের জন্য প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও ঢাকনা, ছবিসহ ভোটার তালিকা, ব্যালট পেপার, অমোচনীয় কালি, কয়েক ধরনের সিল, গালা, স্ট্যাম্প প্যাড, কালি, থলে, ১৭ ধরনের খাম, কাগজ, কলম, ছুরি, মোমবাতি, দেশলাইসহ অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে ব্যালট পেপারের কাগজ সাধারণত নেওয়া হয় রাষ্ট্রায়ত্ত কর্ণফুলী পেপার মিল থেকে। ভোটের বেশ আগেই তাদের কাছে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়। প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর ব্যালট পেপার ছাপা হয় সরকারি ছাপাখানায়। এর বাইরে অনেক সামগ্রী কিনতে হয় উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে। এ কারণে কিছুটা লম্বা সময় প্রয়োজন হয় কেনাকাটায়।
জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি সিটি করপোরেশন, উপজেলা-জেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ, উপনির্বাচনসহ অন্তত আড়াই হাজার নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হবে।