কুষ্টিয়া শহরে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে এক সহযোগীসহ দেশের এক শীর্ষ সন্ত্রাসীকে আটক করেছে বলে শহরে খবর ছড়িয়ে পড়েছে। সেনাবাহিনী বা পুলিশের তরফ থেকে গ্রেপ্তারের তথ্য এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। আজ মঙ্গলবার ভোর পাঁচটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত শহরের কালিশংকরপুর এলাকায় সোনার বাংলা মসজিদের পাশে একটি বাড়িতে এই অভিযান চালানো হয়।

কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ফয়সাল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কোনো অভিযান ছিল না। অন্য কোনো বাহিনী করছে কি না জানি না। জানার চেষ্টা করছি।’

সকাল নয়টার দিকে কালিশংকরপুর এলাকার ওই বাড়িতে গিয়ে বাসিন্দা ও স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তিন ঘণ্টা ধরে সেখানে অভিযান চালিয়েছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এলাকায় অধিকাংশ বাড়িতে মেস ভাড়া দেওয়া হয়। যে বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে, সেটির সামনে পৌরসভার সাইনবোর্ডে বাড়ির মালিকের নাম লেখা মীর মহিউদ্দিন। তিনতলা বাড়ির দ্বিতীয় ও তৃতীয়তলার মেসে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ১৮ জন ছাত্র থাকেন। মেসের কয়েকজন ছাত্রের ভাষ্যমতে, নিচতলাতে এই বাড়ির পেছনের বাড়ির এক স্থানীয় বাসিন্দা দুই মাস আগে ভাড়া নেন। ১২ থেকে ১৫ দিন আগে অতিথি পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তিকে রেখে যান। নিচতলায় কী হয় বা কারা থাকেন তা কখনো দেখেননি তাঁরা। তবে একজনকে দিনে দুই একবার শুধু খাবার খাওয়ার সময় বের হতে দেখেন।

ছাত্ররা জানান, আজ ভোর পাঁচটার কিছু সময় পর বাড়ির সামনে সেনাবাহিনীর ৫ থেকে ৬টি গাড়ি আসে। গাড়ির বহরে একটি কালো মাইক্রোবাসও ছিল। ২০ থেকে ৩০ জন সেনা সদস্য বাড়ির তালা খুলতে বলেন। তালা খোলার পর তাঁরা দোতলা ও তিনতলায় ওঠেন। এরপর মেসের সব বাসিন্দাকে দ্বিতীয় তলার একটি ও তৃতীয় তলার একটি কক্ষে রাখেন। এক কর্মকর্তা বলেন, ‘তোমাদের কোনো ভয় বা সমস্যা নেই। তোমরা বসে থাকো। এখানে অভিযান চলছে।’ সেনা কর্মকর্তা খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলেন বলে ছাত্ররা জানান। দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তি ওই মেসে থাকে কি না সেটি জানতে চান।

প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে নিচতলায় তল্লাশি চলে। আটটার কিছু সময় পর কালো মাইক্রোবাসটি একদম গেটের সামনে চলে আসে। নিচতলা থেকে দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তিকে হাতকড়া পরা ও মাথায় গামছা বাধা অবস্থায় গাড়িতে তোলা হয়। আরেক যুবকের কোমরে ও শরীরে দড়ি দিয়ে বাধা ছিল। এক ছাত্র কৌতূহলবশত জানতে চান কাকে নিয়ে যাচ্ছেন। তখন একজন সেনা কর্মকর্তা তাঁদের বলেন, ‘এখন বিস্তারিত বললে ভয় পাবা। পরে মিডিয়াতে দেখে নিও।’

ছাত্রদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মেসের পেছনের বাড়িতে গিয়ে ভেতর থেকে দরজা আটকানো পাওয়া যায়। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর ভেতর থেকে এক নারী বলেন, ‘বাড়িতে কেউ নেই। আপনারা চলে যান। পরে আসেন।’ তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়েছিল।

স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল আলম বলেন, তিনি সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে দেখতে পান সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি গাড়ি। দুজন ব্যক্তিকে আটক করে নিয়ে গাড়িতে করে নিয়ে যায়। স্থানীয় আরেক যুবক বলেন, সকালে বাড়ির জানালা দিয়ে দেখতে পান সড়কে সারিবদ্ধভাবে অন্তত পাঁচটি সেনাবাহিনীর গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ঘণ্টাখানেক পারে দুজন ব্যক্তিকে আটক করে গাড়িগুলো চলে যায়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন চতল

এছাড়াও পড়ুন:

সোহাগ হত্যাকাণ্ড আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ করেছে: ব্যারিস্টার আনিস

পুরোনো ঢাকার মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা আই‌নের শাসন‌কে প্রশ্ন‌বিদ্ধ কর‌ছে ব‌লে মন্তব‌্য ক‌রে‌ছেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো  চেয়ারম‌্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

দে‌শে আইনশৃঙ্খলা অবনতি ও সোহাগ হত্যার প্রতিবাদে শনিবার বিকালে গুলশানে জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ‌তি‌নি এ কথা ব‌লেন।

ব‌্যা‌রিষ্টার আ‌নিস ব‌লেন, ‘‘রাজধানীর পুরান ঢাকায় ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনা নৃশংস, বর্বর, হৃদয়বিদারক। এই ঘটনায় পুরো দেশের মানুষ স্তব্ধ, ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ। আইনশৃঙ্খলা প‌রি‌স্থি‌তি কতটা খারাপ হ‌লে দিনদুপু‌রে এমন অমানবিক ঘটনা ঘট‌তে পা‌রে। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের রাজধানীতে একজন নিরীহ নাগরিককে এভা‌বে জীবন দিতে হবে— এটা কল্পনাতীত।’’

তি‌নি ব‌লেন, ‘‘শুধু পুরান ঢাকার হত্যাকাণ্ডই নয়, দে‌শে প্রতিনিয়ত এ ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ড  ঘটছে। এমন অমানবিকতা, এমন হিংস্রতা আমাদের মানবিক মূল্যবোধ, সমাজের নৈতিকতা এবং আইনের শাসনকে চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।’’

এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানি‌য়ে অবিলম্বে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জা‌নান ব‌্যা‌রিস্টার আ‌নিস।

সভায় দ‌লের কো চেয়ারম‌্যান এ‌বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘‘দেশের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা এখন মারাত্মক হুমকির মুখে। যারা পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তারা শুধু একজন মানুষকে হত্যা করেনি, তারা রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতি আমাদের বিশ্বাসকেই রক্তাক্ত করেছে।’’

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে হত্যা, ধর্ষণ চাঁদাবাজি ডাকাতি ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে জা‌নি‌য়ে হাওলাদার ব‌লেন, ‘‘সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত ও  উদ্বিগ্ন। মানুষ‌কে শা‌ন্তি দিতে হ‌লে সরকার‌কে যে কোনো মূল্যে এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কঠোর হাতে দমন করতে হবে।’’

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর উত্তর সভাপতি শফিকুল ইসলাম সেন্টুর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক কো চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন  বাবলা, প্রেসি‌ডিয়াম সদস‌্য নাজমা আকতার, মহানগর উত্তরের নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন পাঠান, আমানত হোসেন,, দক্ষিণের নেতা সারফুদ্দিন আহমেদ শিপু, মাসুক আহমেদসহ জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন// 

সম্পর্কিত নিবন্ধ