দিন যতই গড়াচ্ছে, লামিনে ইয়ামাল নিজেকে আরও ভালো ফুটবলারে পরিণত করছেন। তাই তাঁর দিকে আরও বেশি ক্লাবের নজর পড়ছে।

তবে ইয়ামাল গত ডিসেম্বর থেকে বলে আসছেন, তিনি বার্সেলোনাতেই থাকতে চান। বার্সাও নানা সময়ে ইঙ্গিত দিয়েছে, ইয়ামালকে তারা ছাড়তে চায় না। এমনিতেই ইয়ামালের সঙ্গে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত চুক্তি আছে বার্সার। দুই পক্ষের বন্ধনটা অটুট রাখতে এবার চুক্তির মেয়াদ আরও বাড়ানো হচ্ছে।

স্পেনের দুই ক্রীড়া দৈনিক মুন্দো দেপোর্তিভো ও দিয়ারিও স্পোর্ত বলছে, বার্সার সঙ্গে ২০৩১ সাল পর্যন্ত চুক্তি করতে যাচ্ছেন ইয়ামাল। সব ঠিক থাকলে আজই চুক্তিপত্রে সই করতে পারেন এই বিস্ময় বালক।

সংবাদমাধ্যম দুটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বার্সেলোনার তোরে মেলিনা হোটেলে ইয়ামালের এজেন্ট জর্জ মেন্দেসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ক্লাব সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা এবং ক্রীড়া পরিচালক ডেকো। আলোচনা বেশ ফলপ্রসূ হয়েছে এবং বেশির ভাগ বিষয়ে দুই পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছেছে। চুক্তি হলে ইয়ামালই হবেন ক্লাবটির সর্বোচ্চ বেতনের ফুটবলার।

বার্সার খেলোয়াড়দের মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি বেতন পান রবার্ট লেভানডফস্কি। পোলিশ এই স্ট্রাইকার ক্লাব থেকে সপ্তাহে ৬ লাখ ৪০ হাজার ৯৬২ ইউরো (৮ কোটি ৯০ লাখ ২৩ হাজার টাকা) পান। বর্তমানে ইয়ামালের সাপ্তাহিক বেতন ৬৪ হাজার ৩৮ ইউরো (৮৮ লাখ ৯৪ হাজার টাকা)।

আগামী ১৩ জুলাই ১৮ বছর পূর্ণ হবে ইয়ামালের। এরপর এমনিতেই বেতন বাড়ত তাঁর। তবে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হলে তাঁর সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করেই বেতন দেওয়া হবে।

বার্সার হয়ে ২০২৪–২৫ মৌসুম দুর্দান্ত কেটেছে ইয়ামালের। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে করেছেন ১৮ গোল, সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ২৫টি। এর চেয়েও বড় ব্যাপার মাঠে তাঁর প্রভাব। এই মৌসুমে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের নাভিশ্বাস তুলে ছেড়েছেন। বেশ কয়েকটি চোখধাঁধানো গোল করেছেন, যার কয়েকটি ম্যাচের ব্যবধান গড়ে দিয়েছে।

ইয়ামালের ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাতে মুন্দো দেপোর্তিভো ও দিয়ারিও স্পোর্ত জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বার্সার সঙ্গে নতুন চুক্তি করার কথা ছিল ইয়ামালের। তবে তা আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে তিনি ব্যালন ডি’অর জিততে পারলে মোটা অঙ্কের বোনাস পাবেন।  

তবে ইয়ামালের রিলিজ ক্লজ কত হবে, তা নিয়ে দুই পক্ষ এখনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। মূল চুক্তিতে এটি ১০০ কোটি ইউরো (১৩ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা) নির্ধারণ করা হয়েছিল। এখন তা আবার পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

উয়েফা নেশনস লিগের ম্যাচ সামনে রেখে ইয়ামাল কয়েক দিনের মধ্যেই জাতীয় দল স্পেনে যোগ দেবেন। এরপর লম্বা ছুটিতে যাবেন। তাই বার্সার চাওয়া যত দ্রুত সম্ভব, ইয়ামালের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া শেষ করা।

তা ছাড়া বার্সা কর্তৃপক্ষের ধারণা, ইয়ামালের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলে চুক্তি করতে গিয়ে নানা রকম জটিলতায় পড়তে হতে পারে। ক্লাবটি তাই সব ধরনের ঝুটঝামেলা এড়িয়ে যেতে চায়।

বার্সেলোনার কোচ হিসেবে নিজের প্রথম মৌসুমেই ক্লাবকে তিনটি ট্রফি (লা লিগা, কোপা দেল রে, স্প্যানিশ সুপার কাপ) এনে দিয়েছেন হান্সি ফ্লিক। তাঁর সার্বিক কাজ নিয়ে ক্লাব কর্তৃপক্ষ বেশ সন্তুষ্ট।

কোচ হওয়ার সময় ক্লাব সভাপতি লাপোর্তাকে ফ্লিক যে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের পরিকল্পনা জমা দিয়েছিলেন, তাতে সম্মুখ সারিতেই ছিলেন ইয়ামাল। এখন তো ইয়ামালকে ছাড়া একাদশ কল্পনাই করা যায় না। তরুণ উইঙ্গারকে তাই যেকোনো মূল্যে ধরে রাখতে চাইছে বার্সা।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

চার মূলনীতি বহাল রাখার পক্ষে বাম দলগুলো

বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতি বহাল রাখার পক্ষে বাম দলগুলো। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমাতে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগের জন্য জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের সুপারিশেও সায় নেই তাদের। স্থানীয় নির্বাচনের আগে জাতীয় নির্বাচন চায় তারা। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম থাক– এটি চায় না বাম দলগুলো।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশ জাসদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী) এবং গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যভুক্ত চারটি দল প্রথম দফার সংলাপে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে এসব মতামত জানিয়েছে।
 
সংবিধান সংস্কার কমিশনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপিসহ কয়েকটি দল সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদে কী পরিবর্তন চায়, তা জানিয়ে বিস্তারিত প্রস্তাব দিলেও বাম দলগুলো তা দেয়নি। ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেডশিটে পাঁচ সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশে লিখিত ও মৌখিক মতামত দিয়েছে তারা।
সংলাপে সিপিবি ও বাসদ বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতি– জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা বহাল রাখার পক্ষে মত দেয়।

বাংলাদেশ জাসদ সংবিধানের গণতান্ত্রিক ও সেক্যুলার চরিত্র বজায় রাখার প্রস্তাব দিয়েছে। সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে সমান গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করার প্রস্তাবনা গ্রহণযোগ্য নয় বলেও মত দেয় তারা। জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকাসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিষয়গুলো নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্ক এড়ানোর কথাও বলেছে তারা। 
এনসিসি গঠন হলে দ্বৈত প্রশাসন ও ‘সুপার গভর্নমেন্ট’ প্রতিষ্ঠা হবে মত দিয়ে এর বিরোধিতা করেছে বামেরা। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭(ক) ও ৭(খ) বাতিলের প্রস্তাবে সিপিবি ও বাসদ একমত হলেও জোরপূর্বক সংবিধান বাতিল করা অপরাধ-সংক্রান্ত ৭(ক) অনুচ্ছেদ বিলুপ্তির প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে বাংলাদেশ জাসদ।
প্রাদেশিক ব্যবস্থা এবং জাতীয় সংসদের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে সিপিবি ও বাসদ। গণপরিষদ নির্বাচনের বিরোধিতার পাশাপাশি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছে তারা। 

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স সমকালকে বলেছেন, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অবাধ নির্বাচনের জন্য দ্রুত সংস্কার দরকার। 
ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে অর্থ, পেশিশক্তি, অস্ত্রের প্রভাব ও প্রশাসনিক কারসাজিমুক্ত নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেছে বাম দলগুলো। এর জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়নি তারা। সংসদে নারী সদস্যের সংখ্যা ১০০ করে সরাসরি নির্বাচনের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত তারা।

বাম দলগুলো প্রধানমন্ত্রীর পদ দুই মেয়াদে সীমাবদ্ধ করার সুপারিশে একমত হলেও প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান একই ব্যক্তি হবে কিনা– দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্ধারণের এখতিয়ার রাখায় মত দিয়েছে।
রাজনৈতিক ঐকমত্যের মাধ্যমে জাতীয় সনদ তৈরির প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে বাসদ। বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদনের কিছু বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো দুরূহ। মৌলিক বিরোধের বিষয়গুলো বাদ রেখে কাছাকাছি ও আংশিক ঐকমত্য যেখানে আছে এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যেখানে ঐকমত্য পৌঁছান যাবে, সেগুলো নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।
বাংলাদেশ জাসদ সংবিধান থেকে ৭ মার্চের ভাষণ অপসারণকে সমর্থন করেনি। সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী বাতিল থাকবে বলে মত দেয় তারা। ‘আদিবাসী’ অভিধার সংজ্ঞাসহ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে তারা।

বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, যেসব বিষয়ে ঐকমত্য সৃষ্টি হবে, সেগুলো অধ্যাদেশ ও প্রশাসনিক আদেশ দ্বারা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা যেতে পারে। যেসব প্রশ্নে দ্বিমত থাকবে, সেগুলো নিয়ে আলোচনার সুযোগ রাখতে সংসদের তৈরি সংলাপ কাঠামোকে  দায়িত্ব দিতে হবে।

বাসদ (মার্ক্সবাদী) সংসদের মেয়াদ চার বছর করা, এক ব্যক্তির টানা দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান হতে না পারা এবং সংবিধান সংশোধনে গণভোটের প্রস্তাব দিয়েছে। বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, অনেক বিষয় যথার্থ মনে হয়নি, আরও ব্যাখ্যার প্রয়োজন। আরও আলাপ-আলোচনা করতে হবে। মতপার্থক্যের জায়গাগুলো দূর করতে হবে।
গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে দেওয়ার সুপারিশ করেছে। 
গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, চার মূলনীতির ওপর দাঁড়িয়ে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে সংলাপ হয়েছে। এ বিষয়ে আরও আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে আসা যেতে পারে।


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চার মূলনীতি বহাল রাখার পক্ষে বাম দলগুলো
  • সাম্প্রতিক ঘটনাবলি জাতীয় ঐকমত্য গঠনে আমাদের কী ইঙ্গিত দেয়
  • রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা আলোচনা শুরু জুনের প্রথম সপ্তাহে
  • সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার আলোচনা শুরু জুনের প্রথম সপ্তাহে
  • রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা আলোচনা জুনে
  • জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় সনদ প্রস্তুত সম্ভব: আলী রীয়াজ
  • সংস্কারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আইন করার তাগিদ
  • নাগরিক সমাজ ছাড়া সংস্কার সম্ভব নয়: অধ্যাপক আলী রীয়াজ
  • যেসব বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা যায়নি, সেগুলোও জানানো হবে: আলী রীয়াজ