চট্টগ্রামে ‘কেএনএফের’ আরও ১১ হাজার ইউনিফর্ম জব্দ
Published: 27th, May 2025 GMT
চট্টগ্রাম নগরের একটি গুদাম থেকে আরও ১১ হাজার ৭৮৫টি সন্দেহজনক পোশাক (ইউনিফর্ম) জব্দ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার নয়াহাট এলাকার একটি গুদাম থেকে এগুলো জব্দ করেছে থানা–পুলিশ। পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, এগুলো পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ইউনিফর্ম।
তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নগর পুলিশের কেউ কথা বলতে রাজি হননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় কেউ রাজি হচ্ছেন না বক্তব্য দিতে।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
এর আগে ১৭ মে রাতে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার নয়ারহাট এলাকার রিংভো অ্যাপারেলস থেকে ২০ হাজার ৩০০টি সন্দেহজনক পোশাক (ইউনিফর্ম) জব্দ করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে এ ঘটনায় করা মামলার এজাহারে পুলিশ বলেছে, ইউনিফর্মগুলো পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ)। দুই কোটি টাকার চুক্তিতে ইউনিফর্মগুলো প্রস্তুতের ফরমাশ নেওয়া হয়।
এ ঘটনায় পোশাক কারখানাটির মালিকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার তিনজন হলেন সাহেদুল ইসলাম, গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার। পুলিশ জানিয়েছে, সাহেদুল ইসলাম কারখানার মালিক। অন্য দুজন পোশাকগুলো তৈরির ফরমাশ এনেছিলেন।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে ১৮ মে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। মামলায় গ্রেপ্তার তিনজন ছাড়াও রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের মংহলাসিন মারমা (৩৭) নামের এক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
পুলিশের করা মামলায় বলা হয়েছে, গত মার্চে পোশাকগুলো কারখানাটিতে ফরমাশ দিয়েছিলেন গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার। তাঁরা মংহলাসিন মারমা ওরফে মং নামে একজনের কাছ থেকে দুই কোটি টাকা চুক্তিতে পোশাকগুলো তৈরির ফরমাশ নেন। চলতি মাসে পোশাকগুলো সরবরাহের কথা ছিল।
ফেসবুকে পেজ খুলে দুই–তিন বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। পাহাড়ের দুই জেলার ৯টি উপজেলা নিয়ে একটি আলাদা রাজ্য গঠনের ঘোষণাও দেয় তারা। কয়েকটি সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজি ও হত্যার অভিযোগ উঠতে থাকে শুরু থেকেই। একপর্যায়ে ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাত হয় কয়েকবার।
পাহাড়ের দুই ব্যাংকের তিন শাখায় ডাকাতিও করে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। বান্দরবানের দুই উপজেলায় ১৭ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই ব্যাংকের তিন শাখায় ডাকাতির ঘটনা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নগর প ল শ র ইউন ফর ম সশস ত র ক এনএফ ফরম শ ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
রুমায় কেএনএফের আস্তানায় উদ্ধার চারটি অস্ত্রের মধ্যে দুটি পুলিশের
বান্দরবানের রুমা উপজেলায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) আস্তানায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার হওয়া চারটি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে দুটি পুলিশের বলে শনাক্ত হয়েছে। গত বছরের ২ এপ্রিল রুমা সোনালী ব্যাংকে ডাকাতির সময় এসব অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়েছিল কেএনএফ সন্ত্রাসীরা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৩ জুলাই রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নের পলিপ্রাংসা ও মুয়ালপিপাড়ার মধ্যবর্তী একটি গিরিখাতে কেএনএফের একটি গোপন আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানে দুই কেএনএফ সদস্য নিহত হন। সেখান থেকে তিনটি সাবমেশিনগান (এসএমজি), একটি চায়নিজ রাইফেলসহ বিপুল পরিমাণ গুলি উদ্ধার করা হয়।
অভিযানের সময় তাৎক্ষণিকভাবে অস্ত্রগুলোর উৎস শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। পরে যাচাই করে দেখা যায়, উদ্ধার হওয়া একটি এসএমজি ও একটি চায়নিজ রাইফেল ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে রুমা সোনালী ব্যাংকে ডাকাতির সময় পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ওই ঘটনায় ব্যাংকের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশের দুটি এসএমজি, আটটি চায়নিজ রাইফেল এবং আনসারের চারটি শটগান ছিনিয়ে নেয় কেএনএফ। এ পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে পুলিশের একটি এসএমজি ও একটি চায়নিজ রাইফেল। বাকি একটি এসএমজি, সাতটি চায়নিজ রাইফেল ও চারটি শটগান এখনো উদ্ধার হয়নি।
রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহরাওয়ার্দ্দী আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় কেএনএফ সদস্যরা মোট ১৪টি অস্ত্র লুট করেছিল। এর মধ্যে দুটি অস্ত্র এবার উদ্ধার হয়েছে। বাকি অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।’
৩ জুলাই কেএনএফের গোপন আস্তানায় অভিযান ও সন্ত্রাসীদের গুলিবর্ষণের ঘটনায় গত সোমবার (৭ জুলাই) দুটি মামলা হয়েছে। একটি সন্ত্রাসবিরোধী আইনে এবং অন্যটি অস্ত্র আইনে করা হয়েছে। দুটি মামলায় কেএনএফের সভাপতি নাথান লমচেও বম (৪৫), সশস্ত্র শাখার প্রধান ভাং চুং লিয়ান বম (৪০), মুখপাত্র লাল জং ওরফে মুইয়া বম (৫২), জনসংযোগ কর্মকর্তা লাল মুনঠিয়াল ওরফে সলোমন (৪৫), অপারেশন ইনচার্জ লালরাম তোলয়াং ওরফে কুকিরাম (৪৪), লজিস্টিক ইনচার্জ লালসাং স্টুয়ার্ট বম (৪০) এবং তথ্য ও যোগাযোগ ইনচার্জ লাল সাংলন ওরফে সাংপা বমসহ (৩৯) ১৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ থেকে ২০ জন কেএনএফ ও কেএনএ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।
ওসি সোহরাওয়ার্দ্দী বলেন, ‘সব আসামি পলাতক। তাঁদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।’