আমি আড়ালে চলে যাব না প্রকাশ্যে থাকব তা আমি বুঝব: শাবনূর
Published: 15th, January 2025 GMT
চিত্রনায়িকা শাবনূর মানেই এক মোহের নাম। যে শাবনূর কোটি কোটি ভক্তদের মানসপটে নিপুণ এক অভিনেত্রী হিসেবেই বসে আছেন। এখন পর্দায় না থাকলেও জনপ্রিয়তার এতটুকু কমতি নেই তার। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায়ই সৌন্দর্যের দ্যুতি ছড়ান তিনি। পাশাপাশি নিজের ভালো-মন্দ অনুভূতিগুলোও ভক্তদের সঙ্গে শেয়ার করেন শাবনূর।
সোমবার নিজের ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেন শাবনূর। সেখানে খানিকটা খোলামেলাভাবেই দেখা মেলে তার। পাশাপাশি অভিনেত্রীর মুটিয়ে যাওয়া লুকও ফুটে ওঠে। ফলে ভীষণ হতাশ হন শাবনূর ভক্তরা। শুধু তাই নয়, ভক্তরা ট্রলও করেন শাবনূরকে। অবশেষে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন তিনি।
এক ফেসবুক পোস্টে ‘সবার উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলতে চাই!’ শিরোনামে একটি পোস্ট দিয়েছেন শাবনূর।
পোস্টে তিনি লিখেছেন, অনেকে হয়তো জানেন যে আমি আমার সোশ্যাল মিডিয়া নিজের মতো করে হ্যান্ডেল করি। কোনো অ্যাডমিন নিয়োগ দিইনি। আমার যখন যেটা ভালো লাগে, নিজের ব্যক্তিগত পছন্দ বা বিশেষ কোনো আনন্দ-বেদনার বিষয় থাকলে তা সবার সঙ্গে শেয়ার করতে সোশ্যাল মিডিয়ায় যুক্ত রয়েছি। যে ছবি বা ভিডিও পোস্ট করি সেগুলো নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন মন্তব্য করেন। এমনকি কেউ কেউ আমার ড্রেসআপ নিয়েও উদ্ভট প্রশ্ন তোলেন।
অস্ট্রেলিয়াতে আমি সচরাচর ক্যাজুয়াল ড্রেস পরতেই অভ্যস্ত, এবং এতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আর কে কী পরবে সেটাতো তার ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যাপার, তাই না! যদি আমার শেয়ারকৃত কোনো কিছু কারো ভালো না লাগে তবে শালীনতার সঙ্গে গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু রিপিটেডলি আজেবাজে মন্তব্য যেন না করেন, তা থেকে বিরত থাকতে সবাইকে বিনীত অনুরোধ করছি। আর একান্তই যদি আমার একটিভিটিস কারো পছন্দ না হয় তবে আমাকে ফলো না করলেই পারেন।
যারা আমার ওয়ালে এসে বিরূপ মন্তব্য করেন তারা আবার দেখি আমার নামে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট খুলে, পেজ চালিয়ে, আমার পোস্ট করা ছবি বা ভিডিও নিয়ে আবার ব্যবসা করেন। আমাকে পুঁজি করে অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছেন, রমরমা ব্যবসা করছেন, তা করেন, কিন্তু আমার এখানে এসে ভণ্ডামি করছেন কেন? কেনই বা সংঘবদ্ধ হয়ে খারাপ মন্তব্য করে যাচ্ছেন? এদের আবার কেউ কেউ আমাকে আড়ালে চলে যেতে বলেন, হাহাহা। এই ডিজিটাল যুগে এসেও মানুষ এসব জ্ঞান দেয়। আমি আড়ালে চলে যাব না প্রকাশ্যে থাকব তা আমি বুঝব।
অন্যের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, আচার ব্যবহার, কথা বলার ভাষা, এইসব ব্যাপারগুলো আমাদের পারিবারিক মূল্যবোধ ও পারিবারিক শিক্ষার পরিচয় বহন করে। মন্তব্য করার ক্ষেত্রে আমরা যেন একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই। সবাই ভালো থাকবেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ বন র
এছাড়াও পড়ুন:
ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনে কি কাজ হবে
ভুয়া মামলা থেকে নিরপরাধ মানুষকে পরিত্রাণ দিতে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনের যে বার্তা দিলেন, সেটা ইতিবাচক। কিন্তু এই উদ্যোগের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া।
সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধিতে বলা আছে, কমিশনার, এসপি বা এসপি পদমর্যাদার কোনো পুলিশ কর্মকর্তা তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো মামলার বিষয়ে যদি ‘মনে করেন’, তদন্ত কর্মকর্তার কাছে প্রাথমিক প্রতিবেদন চাওয়া যৌক্তিক, তাহলে তিনি তা চাইতে পারবেন। প্রতিবেদন প্রস্তুত হলে তখন তা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেবেন। ম্যাজিস্ট্রেট যদি দেখেন, মামলায় কোনো আসামিকে বিনা অপরাধে জড়ানো হয়েছে, যাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ কোনো প্রমাণ নেই, তখন তিনি (ম্যাজিস্ট্রেট) সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে (বিনা অপরাধে জড়ানো ব্যক্তি) মুক্তি দিতে পারবেন।
এখানে ‘মনে করার’ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির (পুলিশ কর্মকর্তা) সম্পূর্ণ ইচ্ছাধীন। তিনি মনে করলে মামলার তদন্ত চলাকালে প্রাথমিক প্রতিবেদন চাইবেন, না মনে করলে চাইবেন না। আইনি বিধান এখানে বাধ্যতামূলক নয়। দু–একটি ভুয়া মামলা হলে হয়তো এই বিধান কার্যকর হতে পারে। কিন্তু যেখানে হাজার হাজার ভুয়া মামলা করা হয়েছে এবং একটি মামলায় শতাধিক কিংবা তার বেশি ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে, সেখানে আইন প্রয়োগের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার মর্জির ওপর ছেড়ে দেওয়া কতটা সমীচীন, তা–ও ভেবে দেখার বিষয়।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতসহ বিভিন্ন ঘটনায় অন্তত ১ হাজার ৪৯৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা মামলা ৫৯৯টি। অন্যান্য ৯০০টি। এসব মামলায় ১০ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যা মামলার মধ্যে অনেকগুলোর তদন্তে অগ্রগতি আছে বলেও পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। তবে ৪০টি মামলা পর্যালোচনা করে ঢালাওভাবে আসামি করাসহ নানা অসংগতি খুঁজে পেয়েছে। এসব মামলায় ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ব্যক্তিদের চেয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
ডেইলি স্টার–এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৬৬ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যাসহ ফৌজদারি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, সংস্কৃতিসেবীদের বিরুদ্ধেও ঢালাও হত্যা মামলা হয়েছে। পেশাজীবীদের কেউ দুর্নীতি করলে, কেউ স্বৈরাচারী সরকারের অপকর্মে সহায়তা করলে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা হতে পারত। কিন্তু সবাইকে গয়রহ হত্যা বা হত্যাচেষ্টা মামলায় ফাঁসানো কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী নিজেও স্বীকার করেছেন, ‘আগে ভুয়া মামলা করত পুলিশ। তারা ১০টা নাম আর ৫০টা বেনামি আসামি দিত। এখন পাবলিক (জনগণ) দিচ্ছে ১০টা নাম, ৫০টা ভুয়া নাম।’
পুলিশ মামলা দেয়নি বলে সরকার দায় এড়াতে পারে না। একই ঘটনায় একাধিক মামলা, এমনকি একই ঘটনায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে মামলা হওয়ার রহস্য কী? কেউ যদি ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের জন্য মামলা করে থাকেন, সরকারের কর্তব্য হলো তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া।
কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া—দুটিই ফৌজদারি অপরাধ এবং এর জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। বিচারক যদি মনে করেন, আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা, ভিত্তিহীন, তুচ্ছ, বিরক্তিকর বা হয়রানিমূলক এবং আসামির প্রতি চাপ সৃষ্টি করতে মামলাটি করা হয়েছে, তাহলে তিনি ওই মামলাকে মিথ্যা মামলা হিসেবে গণ্য করতে পারেন।
আওয়ামী লীগ আমলে আলোচিত ছিল গায়েবি মামলা। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে তার স্থান নিয়েছে ঢালাও মামলা। কেবল ফৌজদারি কার্যবিধি অল্প কিছু সংশোধন করে নিরীহ মানুষকে রক্ষা করা যাবে না; বরং সরকার উচ্চপর্যায়ে কমিটি করে মামলাগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যেভাবেই হোক, মামলার হয়রানি থেকে যেমন নিরপরাধ মানুষ রেহাই দিতে হবে, তেমনি প্রকৃত অপরাধীদের বিচারও নিশ্চিত করতে হবে।