সবাইকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, আগের দমনমূলক শাসনের সময় যারা নিহত, আহত বা অন্ধ হয়েছেন; তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। ক্ষতিগুলো মানুষকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করে তোলে, যা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলতে পারে। জাতীয় ঐক্যে ধরে রাখতে হবে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে নর্ডিক ডে উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার তিনটি প্রধান অগ্রাধিকারকে গুরুত্ব দিচ্ছে— বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন। বিচার প্রতিষ্ঠা সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার, যাতে অতীতের অন্যায়ের জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায়। আগের দমনমূলক শাসনের সময় যারা নিহত, আহত বা অন্ধ হয়ে গেছেন, তাদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।

সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জনগণের মধ্যে তাড়াহুড়ো থাকলেও কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে সুসংগঠিত প্রক্রিয়ার প্রয়োজন। তিনি সতর্ক করে বলেন, প্রক্রিয়া সঠিক না হলে কাঙ্ক্ষিত ফলও ন্যায়সঙ্গত হবে না।

নির্বাচন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সরকার গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে তিনি বলেন, নির্বাচনই সব সমস্যার সমাধান নয়, কাঠামোগত সংস্কারও জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়া এ সংস্কার কার্যকর হবে না।

তিনি বলেন, সরকারের সংস্কার পরিকল্পনায় খাতভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চলছে, এবং তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে আলোচনার নতুন ধাপ শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, গত ৫৩ বছরে আমাদের জনগণ বারবার গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে। তবে এবারের পরিবর্তন ছিল ব্যতিক্রম—রাজনৈতিক প্রভাব বা বাহ্যিক চাপ ছাড়াই তরুণদের উদ্যোগে এ পরিবর্তন এসেছে।

তিনি বলেন, অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখা, জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা ও আর্থিক খাতের সংকট সামলানো চ্যালেঞ্জিং। সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে একটি দুর্বল ব্যাংকিং ব্যবস্থা পেয়েছে, কিন্তু জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য।

প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সামলানো প্রসঙ্গে তিনি জানান, গত ছয় মাসে আমরা ১৮০টি আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে মোকাবিলা করেছি। প্রচলিত পুলিশি কৌশল ব্যবহার না করে ধৈর্য দেখিয়েছি, যা হয়তো একদিন স্বীকৃতি পাবে। আমাদের সামনে আরেকটি সুযোগ নেই। বাংলাদেশ বারবার গণতন্ত্রের জন্য লড়তে পারে না—এবার সঠিক পথেই হাঁটতে হবে। তিনি স্বীকার করেন, সংস্কারের চাপ যেমন আছে, তেমনি দ্রুততম সময়ে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্বও আমাদের কাঁধে।

উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান নর্ডিক দেশগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আপনাদের সহায়তা শুধুমাত্র অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য নয়, নাগরিক সমাজের জন্যও অত্যন্ত মূল্যবান। সরকারে যোগদানের আগে যখন আমি একটি বেসরকারি সংস্থা পরিচালনা করতাম, তখনও আপনাদের সমর্থন পেয়েছি।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত কিমো লাহদেভির্তা, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মোলার, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হোকন আরল্ড গুলব্রান্ডসেন এবং সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে কূটনীতিক, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন খাতের নীতিনির্ধারকরা উপস্থিত ছিলেন, যারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও পরিবেশ সংরক্ষণকে এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র গণতন ত র ন শ চ ত কর উপদ ষ ট প রসঙ গ র জন য র জওয সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনে যাদের ভরাডুবি হবে, তারাই পিআর পদ্ধতিতে ভোট চায়: সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স

কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করে নিত্যনতুন ইস্যু নিয়ে এসে জটিলতা করে নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়। ভোটের সংখ্যানুপাতে সংসদের আসন তথা পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের ধুয়া তুলে বিতর্ক সৃষ্টি করে জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরানো হচ্ছে। পিআর পদ্ধতিতে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে যেমন জনগণের অধিকার হরণ হয়, তেমনি দেশে আবার দলীয় কর্তৃত্ববাদ, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ কায়েমের পথ প্রশস্ত হবে। নির্বাচনে যাদের ভরাডুবি হবে, তারাই পিআর পদ্ধতিতে ভোট চায়।

আজ রোববার সকালে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা, ইউনিয়ন ও বিভিন্ন কলেজ ছাত্রদলের মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ। এ ছাড়া এমরান সালেহ প্রিন্স দুপুরে উপজেলা ও ইউনিয়ন মহিলা দল এবং বিকেলে উপজেলা ও ইউনিয়ন ওলামা দলের নেতাদের সঙ্গে পৃথক পৃথক মতবিনিময় সভা করেন।

ছাত্রদলের মতবিনিময় সভায় এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, যারা বলে বিএনপি শুধু নির্বাচন নির্বাচন করছে, তারা জনগণ ও নির্বাচনকে ভয় পায়। সে জন্য তারা নির্বাচন বিলম্বিত করতে কূটকৌশল করছে। বিএনপি নির্বাচন ও জনগণকে ভয় পায় না। বিএনপি দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে, দেশের স্থিতিশীলতা ও শান্তি, নিরাপত্তা এবং জন–আকাঙ্ক্ষা ও গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের স্বার্থে দ্রুত নির্বাচন চায়।

বিএনপি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংস্কার ও ফ্যাসিস্টদের বিচার ত্বরান্বিত করতে চায়।
এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান রোধে বিএনপি প্রশ্নাতীতভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ। স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ দ্বারা দেশের সঙ্গে সঙ্গে বিএনপিও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের মোকাবিলা করে বিএনপি টিকে আছে। স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের আর পুনরুত্থান যাতে না ঘটে, সে জন্য আন্তরিকভাবেই বিএনপি সংস্কার চায়। কিন্তু সংস্কারের নামে অযৌক্তিক ও জনসম্পৃক্ততাহীন নিত্যনতুন ইস্যু নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি নির্বাচন বিলম্বিত করার যড়যন্ত্র।

নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে প্রিন্স আরও বলেন, আগামী দিনে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদের প্রস্তুত থাকতে হবে। শত শহীদের রক্তে, গুম, খুনের শিকার সহকর্মীদের আত্মত্যাগে আর লাখো নেতা-কর্মীর অবর্ণনীয় দুঃখে ফ্যাসিবাদের অবসান হলেও পরিপূর্ণ বিজয় অর্জন হয়নি। দ্রুত নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। তবেই পরিপূর্ণ বিজয় ও গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের পথ প্রশস্ত হবে।

ধোবাউড়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জালাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ছাত্রদলের মতবিনিময় সভায় ধোবাউড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মফিজ উদ্দিন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক আযহারুল ইসলাম, সদস্যসচিব আনিসুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক মোয়াজ্জেম হোসেন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এবার আনিস-হাওলাদারকে অব‌্যাহ‌তি, নেতাকর্মী‌দের ক্ষোভ
  • নির্বাচন যত দেরি হবে, দেশ তত পিছিয়ে যাবে: মির্জা ফখরুল
  • সিজিএসের প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম
  • জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঐক্যের ভিত্তিতে গণতন্ত্রে ফিরতে হবে
  • একটি দলের কারণে মৌলিক সংস্কার আটকে যাচ্ছে: আখতার
  • আবু সাঈদ, মুগ্ধ বা ওয়াসিমরা রক্ত দিয়েছে শুধু স্থানীয় নির্বাচনের জন্য না: জাহিদ হোসেন
  • নির্বাচনে যাদের ভরাডুবি হবে, তারাই পিআর পদ্ধতিতে ভোট চায়: সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স
  • জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন জরুরি: জামায়াতের নায়েবে আমির
  • নির্বাচনী আচরণবিধিতে এআই নিয়ে কথা নেই কেন
  • আমাদের কি সত্যিই উচ্চকক্ষ দরকার