ক্রাচে ভর করে এক পায়ে হাঁটেন সত্তরোর্ধ্ব মোতালেব হোসেন। চার বছর আগে ডান পা হারানোর কথা মনে হলে এখনো শিউরে ওঠেন তিনি। ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর মানিক বাহিনীর লোকজন রংপুরের বদরগঞ্জ পৌরসভার বালুয়াভাটা এলাকায় দিনে-দুপুরে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করেন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার সময় তাঁর ডান পায়ের হাঁটুর ওপর থেকে কেটে ফেলতে হয়।

১৬ এপ্রিল দুপুরে বদরগঞ্জের শংকরপুর বড়াইবাড়িতে গিয়ে মোতালেব হোসেনের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি বলেন, একটি মোটরসাইকেল এজেন্সি নিয়ে তাঁর দুই ছেলের সঙ্গে বিরোধ হয় তাঁর ছোট ভাই শহিদুল হক ওরফে মানিকের। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে তাঁর বড় ছেলে গোলাম আজম ও ছোট ছেলে গোলাম হোসেনকে এলোপাতাড়ি কোপান মানিক বাহিনী সদস্যরা। দুই ছেলেকে হত্যাচেষ্টা মামলার বাদী হন তিনি। সেই আক্রোশে এমন হামলা বলে তাঁর অভিযোগ।

বদরগঞ্জে কোনো প্রশাসন নেই, বিচার নেই। সবই মানিক বাহিনীর হাতে জিম্মি।মোতালেব হোসেন, মানিক বাহিনীর হাতে নির্যাতিত

শহিদুল হক ওরফে মানিক উপজেলার কালুপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। তাঁর নামেই গড়ে উঠেছে ‘মানিক বাহিনী’। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এক যুগের বেশি সময় ধরে মানিক বাহিনী হামলা, হত্যা, চাঁদাবাজি, দখলদারিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। বদরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এই বাহিনীর নানা অপরাধের তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁদের ভাষ্য, মানিক বাহিনী বদরগঞ্জকে সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত করেছে। তাদের নির্মমতার শিকার মোতালেব আক্ষেপ করে বলেন, ‘বদরগঞ্জে কোনো প্রশাসন নেই, বিচার নেই। সবই মানিক বাহিনীর হাতে জিম্মি।’

ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল হক ওরফে মানিক। তাঁর নামেই ‘মানিক বাহিনী’.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বদরগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

‘বোম ফালাইয়া আমার ছেলেরে মাইরা ফেলছে’

সুদানের আবেই এলাকায় শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিক বেসে সন্ত্রাসীদের হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন সদস্য শহীদ হয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (৩০)।

জাহাঙ্গীরের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামে। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তার মৃত্যুর খবরে বাড়িতে চলছে মাতম।

আরো পড়ুন:

জাতিসংঘের ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সবুজের বাড়িতে শোকের মাতম

বিজয় দিবসে বর্ণাঢ্য সামরিক ফ্লাইপাস্ট ও প্যারাজাম্পের আয়োজন

শহীদ জাহাঙ্গীর তারাকান্দি গ্রামের মো. হজরত আলী রহমানের ছেলে। জাহাঙ্গীরের মৃত্যু হয়েছে জানার পর থেকে বারবার মুর্চ্ছা যাচ্ছিলেন স্ত্রী রুবাইয়া আক্তার। তার তিন বছর বয়সী একমাত্র সন্তান ইফরান কী হয়েছে বুঝতেই পারছিল না। সকলের কোলে কোলে ঘুরছিল সে, আর অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিল সবাইকে।

পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০১৪ সালের অক্টোবরে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন জাহাঙ্গীর। ৩৭ দিন আগে তিনি সুদানের আবেই অঞ্চলের জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে যোগ দেন।

নিহত জাহাঙ্গীর আলমের বাবা হজরত আলী রহমান বলেন, “রাতে আমার এক ভাই ফোন দিয়ে বলছে, সুদানে বোমা ফুটছে তোমরা খবর রাখছো। পরে আমি বাড়িতে আইসা বলি জাহাঙ্গীর যেহানো থাহে, ওইহানো বোমা ফুটছে বুলে। পরে শুনছি, বোম ফালাইয়া আমার ছেলেরে মাইরা ফেলছে।”

তিনি বলেন, “আমার ছেলে যেখানে থাকত এর থেকে একটু দূরে যারা থাকত তারা রাতে জানাইছে। যা হওয়ার তাতো হইয়া গেছে। অহন আমি সরকারের কাছে আমার ছেলের মরদেহ পাইতে হাতজোড় করতাছি।”

সেনা সদস্য জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই মো. শাহীন বলেন, “আমি পেশায় গাড়ি চালক। অনেক রাতে বাসায় ফিরে দেখি, সবাই কান্নাকাটি করতেছে। পরে জানতে পারি, আমার ভাই বোমা হামলায় মারা গেছে।” এ কথা বলেই ভাইয়ের ছেলেকে কোলে নিয়ে বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েন শাহীন। তিনি সরকারের কাছে দ্রুত তার ভাইয়ের মরদেহ পাওয়ার দাবি জানান।

নিহত জাহাঙ্গীরের চাচাতো ভাই আরিফুর ইসলাম বাধন বলেন, “শনিবার রাতে জাহাঙ্গীরের সহকর্মী মনির হোসেন এবং ভোরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইমরান টেলিফোনে ঘটনাটি আমাদের জানান। এরপর থেকে পরিবারে মাতম চলছে। কান্নায় কান্নায় সবাই পাথর হয়ে গিয়েছে। বৃদ্ধ বাবা হজরত আলী ছেলের শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছেন। জাহাঙ্গীরের স্ত্রী রুবাইয়া স্বামীর ছবি বুকে আঁকড়ে কেঁদেই চলেছেন। কখনো কখনো অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন। মাঝেমধ্যে চিৎকার করে কেঁদে উঠছেন।”

জাহাঙ্গীর আলমের মামা ওয়ালিউল্লাহ বলেন, “অফিসিয়ালি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ক্যাপ্টেন ইমরান আমাদের বিষয়টা জানান। এর আগে, শনিবার রাতে আমাদের স্বজনরা জানান, জাহাঙ্গীর মারা গেছেন।”

পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুপম দাস বলেন, “মরদেহ কীভাবে আনা হবে এ ব্যাপারে কোনো সরকারি নির্দেশনা এখনো পাইনি। আমরা যোগাযোগ রাখছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথাও হচ্ছে। যে কোন আপডেট পেলেই আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।”

ঢাকা/রুমন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ