সব আমলেই ক্ষমতাধর রংপুরের ‘মানিক বাহিনী’
Published: 21st, April 2025 GMT
ক্রাচে ভর করে এক পায়ে হাঁটেন সত্তরোর্ধ্ব মোতালেব হোসেন। চার বছর আগে ডান পা হারানোর কথা মনে হলে এখনো শিউরে ওঠেন তিনি। ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর মানিক বাহিনীর লোকজন রংপুরের বদরগঞ্জ পৌরসভার বালুয়াভাটা এলাকায় দিনে-দুপুরে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করেন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার সময় তাঁর ডান পায়ের হাঁটুর ওপর থেকে কেটে ফেলতে হয়।
১৬ এপ্রিল দুপুরে বদরগঞ্জের শংকরপুর বড়াইবাড়িতে গিয়ে মোতালেব হোসেনের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি বলেন, একটি মোটরসাইকেল এজেন্সি নিয়ে তাঁর দুই ছেলের সঙ্গে বিরোধ হয় তাঁর ছোট ভাই শহিদুল হক ওরফে মানিকের। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে তাঁর বড় ছেলে গোলাম আজম ও ছোট ছেলে গোলাম হোসেনকে এলোপাতাড়ি কোপান মানিক বাহিনী সদস্যরা। দুই ছেলেকে হত্যাচেষ্টা মামলার বাদী হন তিনি। সেই আক্রোশে এমন হামলা বলে তাঁর অভিযোগ।
বদরগঞ্জে কোনো প্রশাসন নেই, বিচার নেই। সবই মানিক বাহিনীর হাতে জিম্মি।মোতালেব হোসেন, মানিক বাহিনীর হাতে নির্যাতিতশহিদুল হক ওরফে মানিক উপজেলার কালুপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। তাঁর নামেই গড়ে উঠেছে ‘মানিক বাহিনী’। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এক যুগের বেশি সময় ধরে মানিক বাহিনী হামলা, হত্যা, চাঁদাবাজি, দখলদারিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। বদরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এই বাহিনীর নানা অপরাধের তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁদের ভাষ্য, মানিক বাহিনী বদরগঞ্জকে সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত করেছে। তাদের নির্মমতার শিকার মোতালেব আক্ষেপ করে বলেন, ‘বদরগঞ্জে কোনো প্রশাসন নেই, বিচার নেই। সবই মানিক বাহিনীর হাতে জিম্মি।’
ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল হক ওরফে মানিক। তাঁর নামেই ‘মানিক বাহিনী’.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বদরগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
সলিলের গানের ভেতরেই ছিল মিছিলের স্লোগান
‘গণসংগীত মানুষের রক্তে আগুন জ্বেলে দিয়েছে, উজ্জীবিত করেছে, মুক্তির পথ দেখিয়েছে’—আজ শহীদ মিনারে এই উচ্চারণে আবারও ফিরে এলেন সলিল চৌধুরী। বুধবার, সন্ধ্যায় উদীচীর আয়োজনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হলো কিংবদন্তি গণসংগীতকার সলিল চৌধুরীর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন ‘সতত সলিল’।
আলোচনা, গান, কবিতা ও নৃত্যে সজ্জিত এই আয়োজন ছিল একাধারে স্মরণ, শ্রদ্ধা ও চেতনার পুনর্জাগরণ। সভাপতিত্ব করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাবিবুল আলম। আলোচনায় অংশ নেন লেখক–গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সায়েম রানা এবং উদীচী কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সহসাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান।
সলিল চৌধুরী সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে আলোচকেরা বলেন, জাতির যে ঐতিহাসিক ধারাক্রম রয়েছে, সেই ধারার এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ের একজন অন্যতম পুরোধা ব্যক্তি ছিলেন সলিল চৌধুরী। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলার মানুষের প্রতিটি লড়াই–সংগ্রামে গণসংগীত মানুষের রক্তে আগুন জ্বেলেছে, মানুষকে উজ্জীবিত করেছে, মানুষকে তার মুক্তির পথ দেখিয়েছে। সলিল চৌধুরী ছিলেন সেই গণসংগীতের একজন কিংবদন্তি কারিগর। তাঁর হাত ধরে গণসংগীত পেয়েছে এক নতুন মাত্রা। তিনি কবিতাকে, মিছিলের স্লোগানকে যেমন গানে রূপান্তর করেছেন, তেমনি তাঁর রচিত সংগীত হয়ে উঠেছে মিছিলের স্লোগান। বক্তারা আরও বলেন, ‘গণমানুষের মুক্তির বাণী নিয়ে যে গান, তা আমাদের যুগে যুগে রাষ্ট্রব্যবস্থায় শাসকশ্রেণি থেকে শুরু করে অনেকেরই পছন্দের নয়। তাই হয়তো আমাদের সমাজে গণসংগীত যথাযথ স্বীকৃতি পায়নি। কিন্তু তারপরও মানবমুক্তির প্রতিটি লড়াইয়ে, প্রতিটি সংগ্রামে গণসংগীত আমাদের শক্তি জোগায়, সাহস জোগায়। বাংলা আধুনিক গানের অবিস্মরণীয় সুরস্রষ্টা ও গণসংগীতের প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তি সলিল চৌধুরীর তৈরি করা গণসংগীত সর্বকালের জন্য প্রাসঙ্গিক।’
আলোচনা শেষে আয়োজন মাতিয়ে তোলে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। বৃন্দগান পরিবেশন করে উদীচী সংগীত বিভাগ ও ‘কোরাস’। একক গান করেন তানভীর আলম সজীব এবং মনসুর আহমেদ। বৃন্দনৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন; একক নৃত্যে অংশ নেন আদৃতা আনোয়ার প্রকৃতি। আবৃত্তিতে অংশ নেয় উদীচী আবৃত্তি বিভাগ; একক আবৃত্তি করেন শাহেদ নেওয়াজ।
আলোচনা শেষে আয়োজন মাতিয়ে তোলে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা