হলিউড ২০০৩ সালেই লালগালিচায় স্বাগত জানিয়েছিল অভিনেত্রী স্কারলেট জোহানসনকে। ‘লস্ট ইন ট্রান্সলেশন’ সিনেমার মাধ্যমে তখন মাত্র ১৮ বছরের এক তরুণী সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন বিশ্বজুড়ে। নিউইয়র্কে জন্ম নেওয়া স্বর্ণকেশি সেই রহস্যময়ী স্কারলেট দ্রুতই পরিণত হন বড়পর্দার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক মুখে।

২২ বছরের অভিনয় জীবনে তিনি শুধু দর্শক নন, সমালোচকদের মনও জয় করেছেন বারবার। হলিউডের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের নানা দেশের দর্শকের কাছেও তিনি এখন পরিচিত এক নাম। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিনির্ভর চলচ্চিত্রে নতুন প্রজন্মের অন্যতম প্রতিনিধিত্বশীল মুখ তিনি। একসময় যে মেয়েটিকে দেখা যেত কেবল বোকাসোকা হাসি আর লাজুক চাহনিতে, আজ তাঁর চোখেমুখে দেখা যায় দৃঢ়তা, সাহস আর সংগ্রামের দীপ্তি। বয়স এখন ৪০। বহুবার উঠে এসেছেন বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের তালিকায়। পারিশ্রমিকের দৌড়ে তিনি অনেক আগেই টপকে গেছেন অন্যান্য নারী তারকাকে। 

২০২৫ সালের ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসব যেন তাঁর ক্যারিয়ারের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এই মর্যাদাপূর্ণ আসরে স্কারলেট শুধু অভিনেত্রী নন, পরিচালক ও প্রযোজক হিসেবেও উপস্থিত হয়েছেন। তাঁর এই –বহুমাত্রিক উপস্থিতি এক প্রতীকী দৃষ্টান্ত–নারীশিল্পীর নিজের অবস্থান গড়ে তোলার সাহসী যাত্রা। এবারের আসরে ওয়েস অ্যান্ডারসনের তারকাবহুল সিনেমা দ্য ফিন্যান্সিয়াল স্কিম প্রতিযোগিতা বিভাগে জায়গা পেয়েছে। স্কারলেট এখানে অভিনয় করেছেন বেনিসিও দেল তোরো ও টম হ্যাংকসের সঙ্গে। অন্যদিকে, পরিচালক হিসেবে তাঁর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা এলেনর দ্য গ্রেট স্থান পেয়েছে ‘আঁ সার্তে রিগা’ বিভাগে। এ সিনেমার গল্প লিখেছেন তিনি এবং প্রযোজনার দায়িত্বেও ছিলেন স্কারলেট। সিনেমাটিতে উঠে এসেছে নারীর মানসিক স্বাস্থ্য, পারিবারিক সম্পর্ক ও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির প্রশ্ন। 

নারী নির্মাতাদের যে অগ্রযাত্রা বিগত দশকে ধীরে ধীরে গতি পাচ্ছে, স্কারলেটের এই অভিষেক সেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। বহু বছর ধরে, নারীরা চলচ্চিত্র পরিচালনায় পূর্ণ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাই যখন একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী পরিচালনায় আসেন, তা হয়ে ওঠে অন্য নারীর জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা। এক সাক্ষাৎকারে স্কারলেট বলেন, ‘আমার অনেকদিনের স্বপ্ন ছিল নিজস্ব গল্প বলার। অভিনয়ের বাইরেও, ক্যামেরার পেছনে দাঁড়িয়ে আমি এক নতুন স্বাধীনতা অনুভব করছি।’

দু’বার অস্কারে মনোনীত হয়েছেন এই ‘হলিউড সুন্দরী’। তাঁর অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসাও কুড়িয়েছে বারবার। তবুও এত বছর সিনেমা জগতে কাটিয়ে একটি আক্ষেপ রয়ে গেছে তাঁর–যে ধরনের অভিনয় করতে চেয়েছিলেন, সেভাবে সুযোগ পাননি। কারণ, শুরু থেকে হলিউড তাঁকে দেখেছে যৌনতার প্রতিমূর্তি হিসেবে। তাঁর কাছে মূলত এমন চরিত্রে প্রস্তাব এসেছে, যেখানে রূপই মূল নিয়ামক।

তিনি বলেন, “হলিউড দীর্ঘদিন ধরে নারীর শরীরকেই মুখ্য করে দেখেছে। আমি শুনেছি, মেরিলিন মনরোর মতো অনেক অভিনেত্রীকে এ দৃষ্টিভঙ্গির শিকার হতে হয়েছে। সে অভিজ্ঞতা শুনে আমি সবসময় একটু সতর্ক থেকেছি।’ তবুও কাজ নিয়ে তাঁর ভালোলাগা, ভালোবাসা এবং নিজের গল্প বলার এই নতুন যাত্রা–সবকিছু মিলিয়ে স্কারলেট জোহানসনের এই পর্ব যেন এক নারীর শিল্পী হয়ে ওঠার অনন্য দলিল।
 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

শিশু হাফসা হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ, আরেক আসামি গ্রেপ্তার

পাবনা পৌর সদরের উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া এলাকায় ৯ বছরের শিশু শিক্ষার্থী হাফসা হত্যার ঘটনায় সোমবার (১৭ নভেম্বর) দায়ের করা মামলায় আরো এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মামলার নামীয় তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার হলো।

গ্রেপ্তাররা হলেন, পাবনা পৌর সদরের উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া মহল্লার টিপু সরদারের ছেলে সাব্বির সরদার (২৬), ছবেদ আলীর ছেলে রমজান আলী (৩০) ও খালেক সরদারের ছেলে পান্না সরদার (২৮)। এদের মধ্যে সাব্বির ও রমজানকে রবিবার এবং পান্নাকে সোমবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

আরো পড়ুন:

‘আবর্জনার মতো লাগে’ বলে অর্ধশত বকুলগাছ কাটা সেই ব্যক্তি গ্রেপ্তার

বরগুনায় নাশকতার অভিযোগে ৩ আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার 

এদিকে, শিশু হাফসাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্য করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ।

পাবনা সদর থানার ওসি (অপারেশন) সঞ্জয় কুমার সাহা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, নিহত হাফসার মা রিতু খাতুন বাদী হয়ে সোমবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনজন নামীয়সহ অজ্ঞাতনামা আরো অনেককে আসামি করা হয়েছে।

তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার দুপুরে পাবনা টেক্সটাইল কলেজ এলাকা থেকে অভিযুক্ত পান্না সরদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে মামলার প্রধান অভিযুক্ত নামীয় তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

এদিকে, শিশু হাফসা হত্যার প্রতিবাদে ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।

সোমবার (১৬ নভেম্বর) সকালে উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে জেলা প্রশাসক কর্যালয়ের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে তারা। সেখানে নিহত শিশু শিক্ষার্থী হাফসার স্বজন ও এলাকাবাসী বক্তব্য দেন।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে তারা মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ শেষে তারা আসামিদের গ্রেপ্তার করতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। অন্যত্থায় আরো কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেন।

এ সময় প্রায় ১ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে সদর থানার ওসি আব্দুস সালাম ঘটনাস্থলে গিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা।

এর আগে, শনিবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে শিশু হাফসাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার সন্ধান চেয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে প্রায় ২ ঘণ্টা পর রাত ৮টার দিকে বাড়ির পেছনের জঙ্গলের ভেতর পাটিতে মোড়ানো কাদা মাখা অবস্থায় হাফসার মরদেহ পাওয়া যায়।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় রাতেই সন্দেহভাজন হিসেবে রমজান ও সাব্বির নামের দুইজনকে আটক করা হয়।

নিহত হাফসা সদর উপজেলার মালঞ্চি ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামের প্রবাসী হাফিজুর রহমানের মেয়ে এবং স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

হাফসার নানার বাড়ির পাশের বাগানটি দীর্ঘদিন ধরে বখাটে, মাদকসেবী ও জুয়ারুদের আড্ডাস্থল ছিল বলে জানায় স্থানীয়রা। তারা এ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পাবনা সদর থানার ওসি (অপারেশন) সঞ্জয় কুমার সাহা বলেন, “মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে শিশু হাফসাকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ধর্ষণের পর তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। এছাড়া পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতিয়মান হয়েছে।”

ঢাকা/শাহীন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ