বিদেশে কিছু খাতের খরচ পরিশোধ করতে আন্তর্জাতিক কার্ড প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারবে ব্যাংকগুলো। এ খাতগুলোর মধ্যে আছে সদস্যপদ ফি, তথ্যপ্রযুক্তি-সংক্রান্ত ব্যয়, বিদেশে পড়াশোনার ব্যয়, ভিসা ফি, বিদেশে প্রশিক্ষণের নিবন্ধন ফি, চিকিৎসাসংক্রান্ত ব্যয় ইত্যাদি। আজ রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

আগে ব্যাংকগুলো নিজস্ব নামে ইস্যুকৃত আন্তর্জাতিক কার্ডের মাধ্যমে এ ধরনের খরচ পাঠাতে পারত। নতুন প্রজ্ঞাপনে এই সুযোগকে আরও সম্প্রসারিত করে আন্তর্জাতিক কার্ড প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দিন দিন প্রয়োজনীয় খরচ পরিশোধ উন্মুক্ত করার দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এত দিন বিদেশে খরচ পাঠাতে নানা জটিলতা ও নিয়মকানুনের মধ্য দিয়ে যেতে হতো। এতে নানা ভোগান্তিরও অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করে বলেছে, আন্তর্জাতিক কার্ড প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনুমোদিত রেমিট্যান্স প্রেরণের অনুমতি ব্যাংকগুলোকে প্রদান করা হয়েছে। এই কার্ড প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কতিপয় খাতে রেমিট্যান্স প্রেরণ করা যাবে, যার মধ্যে রয়েছে সদস্যপদ ফি, তথ্যপ্রযুক্তি-সংক্রান্ত ব্যয়, বিদেশে পড়াশোনার ব্যয়, ভিসা ফি, বিদেশে প্রশিক্ষণের নিবন্ধন ফি, চিকিৎসাসংক্রান্ত ব্যয় ইত্যাদি।

খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আন্তর্জাতিক কার্ড প্ল্যাটফর্ম একটি বিকল্প রেমিট্যান্স চ্যানেল হিসেবে কাজ করবে। বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন উদ্যোগ। এই কার্ড চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানো হলে খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।

গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ডলারের বাজার নিয়ে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে বাড়ছে প্রবাসী আয়। পাশাপাশি বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও। এ জন্য ধীরে ধীরে ডলারের বাজার ও ব্যবহার উন্মুক্ত করার দিকে ঝুঁকছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র খরচ প

এছাড়াও পড়ুন:

দুপুর ১টা বাজলেই ছুটির ঘণ্টা

ঘড়ির কাঁটা দুপুর ১টা পেরোলেই ঢংঢং করে বেজে ওঠে ছুটির ঘণ্টা। খানিক বাদেই স্কুলের শ্রেণিকক্ষগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। কোলাহলের পরিবর্তে নেমে আসে সুনসান নীরবতা। এটি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হাসিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিদিনকার চিত্র। 
শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে ক্লাস শুরু হয়ে বিকেল ৪টায় ছুটি দেওয়ার কথা। কিন্তু হাসিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস চলে প্রধান শিক্ষকের খেয়ালখুশিমতো। সেখানে নিয়মিতভাবে দুপুর ১টা বাজলেই পড়ে ছুটির ঘণ্টা। এ নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। 
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হাসিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস হয় না। শিক্ষকরা 
বিদ্যালয়ে এসে ক্লাসে না গিয়ে কার্যালয়ে বসে থাকেন। দুপুর ১টা বাজলেই ছুটি দিয়ে চলে যান যে যাঁর মতো।
অষ্টম শ্রেণির ছাত্র রাহুল হোসেন জানায়, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নাম ডাকে। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে স্কুল ছুটি হয়ে যায়। 
নবম শ্রেণির ছাত্রী শাকিলা খাতুনের ভাষ্য, প্রতিদিনই একটা-দুটো ক্লাস নেন শিক্ষকরা। দুপুর ১টা বাজলেই ছুটি দেওয়া হয়। সামনে পরীক্ষা  তবুও অন্যান্য ক্লাস হয় না। একই ভাষ্য ওই শ্রেণির অনন্যা খাতুনেরও। 

অভিভাবক মোহাম্মদ আলী বলেন, ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলে আগের মতো লেখাপড়া হয় না। শিক্ষকরা সবাই দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। 
বিদ্যালয় থেকে প্রায় ৩০ গজ দূরে ব্যবসায়ী আব্দুর রহিমের দোকান। তাঁর মেয়ে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আব্দুর রহিম জানান, স্কুলে ঠিকমতো ক্লাস হয় না। প্রতিদিন দুপুর ১টা বাজলেই ছুটি হয়ে যায়। এসব দেখার যেন কেউ নেই। স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। 
বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির অভিভাবক সদস্য হাসানুর রহমান জানান, বিদ্যালয়ে ঠিকমতো ক্লাস হচ্ছে না। প্রধান শিক্ষক নানা অনিয়মে জড়িত। স্কুলের বিষয়ে কিছু বলতে গেলে দুর্ব্যবহার করেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি শিগগিরই ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেবেন। 
বিদ্যালয়ের পাশেই সহকারী শিক্ষক আবু খোকনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন দুপুর ১টার দিকে বিদ্যালয় ছুটি হয়। এটা প্রধান শিক্ষকের ব্যাপার।’
গত রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। নেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী। পরিচ্ছন্নতাকর্মী পতাকা নামাচ্ছেন। শ্রেণিকক্ষগুলোতে তালা ঝুলছে। শিক্ষক কক্ষে শূন্য চেয়ার-টেবিল। 
বিকেল ৪টার আগে ছুটি দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক আশরাফুল আলম বলেন, ‘ছুটির বিষয়ে হেড স্যারের (প্রধান শিক্ষক) সঙ্গে কথা বলেন।’
এসএসসি পরীক্ষার অজুহাত দিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগে প্রতিদিন বিদ্যালয় ছুটি দেওয়ার কথা স্বীকার করেন প্রধান শিক্ষক মো. নুর উদ্দিন। 
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হক জানান, বিকেল ৪টার আগে বিদ্যালয় ছুটি দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ