বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছরের মতো এবারও হাজিদের নিয়ে ফ্লাইট যাত্রা শুরু করেছে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ৮৭ হাজার ১০০ জন হজ করতে যাবেন। তার মধ্যে ৫ হাজার ২০০ জন যাবেন সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং ৮১ হাজার ৯০০ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। এবার হজ ব্যবস্থাপনাকে আরও আধুনিক ও সহজ করতে হাজিদের জন্য একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছে। এতে হাজিদের জন্য যোগাযোগ সুবিধা, হজ প্রিপেইড কার্ড এবং মোবাইল সিমের রোমিং সুবিধাও রাখা হয়েছে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৫ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা।
কোনো মুসলিম ব্যক্তির যদি পরিবারের আবশ্যকীয় খরচ বাদে মক্কা শরিফ থেকে হজ করে বাড়িতে ফিরে আসা পর্যন্ত আর্থিক সামর্থ্য থাকে, তাহলে তার ওপর হজ আদায় করা ফরজ। হজ ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম। শারীরিক ও আর্থিক সক্ষমতার সমন্বয়ে এই ইবাদত পালন করা হয়। পবিত্র কোরআনের সুরা আল-ইমরানের ৯৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘এই ঘরে হজ করা মানুষের ওপর আল্লাহর প্রাপ্য– যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌঁছার।’ প্রতিবছর হজে অংশ নিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ মুসলমান সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে একত্র হন। ৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত মোট পাঁচ দিন চলে হজের মূল কার্যক্রম।
হজ সফরের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে হাজিদের শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি নিতে হয়। এ ছাড়াও হজযাত্রীদের সৌদি আরবের আইনকানুন জেনে নেওয়া এবং তা মেনে চলা এবং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকাও অত্যন্ত জরুরি। হজের সফরে যথেষ্ট হাঁটাচলা করতে হয়। যাতায়াতের জন্য যখন-তখন যানবাহন পাওয়া যায় না। তাই কাবা শরিফ তাওয়াফ, সায়ি, মিনা, জামারায় পাথর নিক্ষেপ, মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে হজের তাওয়াফ ইত্যাদি করতে প্রচুর হাঁটাচলা করতে হয়। এসবের জন্য মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা জরুরি। হজের সময় ব্যবহারযোগ্য ব্যাগ গলায় ঝুলিয়ে রাখা প্রয়োজন, যেখানে পাসপোর্ট, ভিসার কপি, টিকিট, হজের বই, প্রয়োজনীয় জিনিস থাকবে।
হজে যাওয়ার আগে অবশ্যই এর যাবতীয় নিয়ম জেনে নেওয়া কর্তব্য। হজ সফরে কোথায়, কখন ও কোন আমলগুলো ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ইত্যাদি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। হজ-সংক্রান্ত বই পড়েও জেনে নেওয়া যায়।
হজ বিশ্ব মুসলিমের বার্ষিক মিলনমেলা। আল্লাহতায়ালা দিনে পাঁচবার জামাতে কিছুসংখ্যক লোকের; এর পর সপ্তাহে একবার জুমার দিনে আরও বেশি লোকের; এর পর বছরে দু’বার আরও বেশি লোকের; এর পর বছরে একবার হজে আরাফাতের মাঠে বিশ্বের সব মানুষকে একত্র হওয়ার সুব্যবস্থা করেছেন। হজ মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক।
আল্লাহর পবিত্র ঘর দেখা থেকে শুরু করে বিদায়ী তাওয়াফ পর্যন্ত প্রতিটি কাজই আল্লাহর একত্ববাদ, বিশ্ব মুসলমানের ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য ও সংহতির প্রশিক্ষণ। হজের মাধ্যমে একজন হাজি নিজেকে জান্নাতে যাওয়ার উপযোগী করে গড়ে তোলেন। তাই মহানবী (সা.
সে জন্য হজ যাতে রাসুল (সা.)-এর নির্দেশিত পথে যথাযথভাবে আদায় করা যায়, সেই প্রস্তুতি ও নিয়ত থাকা জরুরি। মদিনায় মহানবীর (সা.) রওজা জিয়ারতের আনুষ্ঠানিকতাও হাজিদের মাথায় রাখতে হয়। হজের নির্দিষ্ট দিনের জরুরি আনুষ্ঠানিকতা যেন আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করা যায়, সে জন্য প্রস্তুত থাকা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি মক্কা ও মদিনায় কাটানো অন্য সময়ের সদ্ব্যবহারও গুরুত্বপূর্ণ। পুরো হজের সফর সাফল্যমণ্ডিত করতে তাই হাজিদের শারীরিক ও মানসিক উভয় দিক থেকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
ড. মো. শাহজাহান কবীর: বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রস ত ত ব যবস থ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
রাত পেরিয়ে ভোর, অবস্থানে অনড় ছাত্র-জনতা
রাত পেরিয়ে ভোর। ঘড়ির কাটায় ৪টা বেজে ২৫ মিনিট। কাকরাইল মসজিদ থেকে ভেসে আসছে মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনি। সময় বলে দিচ্ছে সময়টা ফজরের আজানের। তবুও যমুনার সামনের রাস্তায় আওয়ামী লীগের বিচার ও তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধে দাবিতে ছাত্র-জনতার অনড় অবস্থান।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাত ১০টা থেকে শুরু হওয়া এই অবস্থান কর্মসূচি চলমান রয়েছে ভোর রাতেও। কখনো গান, কখনো কবিতা, আবার কখনো স্লোগানে স্লোগানে উজ্জীবিত রাখা হচ্ছে কর্মসূচিকে। রাত ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত ১ মিনিটের জন্যও থামেনি স্লোগান, গান, কবিতা। ক্লান্ত হয়ে পড়েনি জুলাই যোদ্ধারা। শেষ রাতে তাদের কন্ঠ আরো জোড়ালো। আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ না করে তারা সরবেন না।
ফজরের নামাজের জন্য দেওয়া হয়েছে নামাজের বিরতি। তবে, সবাই একসাথে নামাজে যায়নি। পর্যায়ক্রমে তারা যাচ্ছেন নামাজে। তারা রাজপথ ছাড়বেন না। তাই এই ব্যবস্থা। তবে, কাউকে কাউকে দেখা গেছে, রমনা পার্ক ঘেষা ফুটপাতের গাছের গোড়ায় বসে বা শুয়ে বিশ্রাম নিতে। আবার কেউ ফুটপাতে বা কেউ রাস্তায় শুয়ে পড়েছেন। তবুও ছাড়ছেন না রাজপথ।
আরো পড়ুন:
যমুনার সামনে অবস্থান নিলো শিবিরের নেতাকর্মীরাও
যমুনার সামনে রাজপথে জুলাই আহতরা
ঢাকা/সুকান্ত/ফিরোজ