দুটি চরিত্র বিপরীত হলেও এক সুতোয় বাঁধা: রাশমিকা
Published: 11th, May 2025 GMT
‘সামি সামি’ গানের তালে আপামর ভারতীয়ের হৃদয়ে হিল্লোল তুলেছিলেন দক্ষিণী অভিনেত্রী রাশমিকা মান্দানা। বলিউডে তার অভিষেক হয়েছিল দক্ষিণী বহুভাষিক ছবি ‘পুষ্পা’র হাত ধরে। তারপর তিনি অভিনয় করেন রণবীর কাপুরের বিপরীতে ‘অ্যানিম্যাল’ ছবিতে ‘গীতাঞ্জলি’রূপে।
এ সিনেমায় অভিনয় করে অবশ্য রাশমিকা খানিকটা সমালোচিত হয়েছিলেন। তার চরিত্র নিয়ে যেমন দর্শকের মনে প্রশ্ন ছিল, তেমনই প্রশ্ন উঠেছিল তার অভিনয়প্রতিভা নিয়েও। তারপর এ অভিনেত্রীকে দেখা যায় সালমানের বিপরীতে ‘সিকান্দার’ সিনেমায়। আবারও বলিউডের সিনেমায় অভিনয় করছেন রাশমিকা। এবার তার নায়ক আয়ুষ্মান খুরানা। এ ছবি হতে চলেছে ‘হরর-কমেডি’ ধারার। নাম ‘থামা’। ‘হরর-কমেডি’ ছবি বানাতে সিদ্ধহস্ত দীনেশ বিজন।
২০১৮ সালে তাঁর প্রযোজনায় মুক্তি পায় ‘স্ত্রী’। তারপর ‘ভেড়িয়া’, ‘মুঞ্জা’। শ্রদ্ধা কাপুর ও রাজকুমার রাও অভিনীত ‘স্ত্রী’ এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে তার সিক্যুয়াল ‘স্ত্রী ২’ ব্যাপক ব্যবসা করে। এরপর এখন তিনি নির্মাণ করছেন ‘থামা’।
এই সিনেমার ‘থামা’ নামটি এসেছে মহাভারতের অমর চরিত্র ‘অশ্বত্থামা’ থেকে। প্রেম, অভিশাপ আর অমরতার গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। এটি নির্মাণ করছেন ‘মুঞ্জা’খ্যাত নির্মাতা আদিত্য সারপোতদার। ভ্যাম্পায়ার থিমে তৈরি এ রোমান্টিক-কমেডি সিনেমার দৃশ্যধারণ হয়েছে উটির ঘন জঙ্গলে। কুয়াশার চাদরে ঢাকা উটির জঙ্গলে গাছের ফাঁকে ভেসে আসে পাখির ডাক, আর ক্যামেরার লেন্সে ধরা পড়ে এক অসমাপ্ত ভালোবাসার নতুন গল্প। সিনেমার গল্পে দেখা যায় তরুণ গবেষক অর্জুন (আয়ুষ্মান খুরানা) বিজয়নগরের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ দেখতে যান।
পুরাকীর্তির মাঝে তিনি খুঁজে পান কিছু অজানা লিপি, কিছু ছেঁড়া দলিল আর এক অভিশপ্ত প্রেমের চিহ্ন। ঠিক তখনই তার জীবনে প্রবেশ করে অনন্যা (রাশমিকা)–এক ভ্রমণপিপাসু, ইতিহাসপ্রেমী, স্বতঃস্ফূর্ত মেয়ে, যার উপস্থিতি রং ছড়ায় অর্জুনের গবেষণায়। এ দু’জনের সম্পর্ক শুরু হওয়ার আগে, ছায়ার মতো তাদের পিছু নেয় অতীত–ভয়ানক, রক্তাক্ত অতীত। সেই অতীতে ছিল বিজয়নগরের এক রাজকুমারী (রাশমিকা) এবং এক অভিশপ্ত যোদ্ধা অশ্বত্থামা (আয়ুষ্মান)।
হাজার বছরের শাপ বয়ে চলা সেই প্রেম, যাকে মৃত্যু স্পর্শ করতে পারেনি, যাকে ভোলা যায়নি–তারই ছায়া ঘিরে ধরে বর্তমানকে। এখানেই শুরু হয় গল্পের আসল মোড়। এ পর্যায়ে গল্পে প্রবেশ করেন এক রহস্যময় চরিত্র–নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি। এক সময় যে ছিলেন রাজদরবারের গোপন রক্ষক, এখন হয়ে উঠেছেন ভয়ের প্রতীক। তার আগমনে সামনে আসে সেই অশ্বত্থামার অতীত–যেখানে প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতা আর রক্তের অন্ধকার একে অপরকে ছুঁয়ে গিয়েছিল।
সিনেমাটি নিয়ে রাশমিকা বলেন, ‘এই সিনেমায় আমি দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছি। আমি একইসঙ্গে আধুনিক যুগের অনন্যা আর অতীতের রাজকুমারী। দুই চরিত্র দুই বিপরীত দিক, কিন্তু এক সুতোয় বাঁধা। প্রতিটি দৃশ্য করতে গিয়ে বুক কেঁপেছে।’
আয়ুষ্মান বলেন, ‘এ ছবিতে আমি শুধু প্রেমিক নই, আমি এক অভিশপ্ত আত্মা। সেই আত্মার মধ্য দিয়ে আমি বুঝেছি–ভালোবাসা যদি সত্য হয়, তাহলে সময় কখনও তাকে হারাতে পারে না। সিনেমার নির্মাতা পৌরাণিকতা আর আধুনিক সময়ের রোমান্স একসঙ্গে মিশিয়েছেন এমনভাবে, যেন বাস্তব আর কল্পনার মাঝখানে দাঁড়িয়ে দর্শক নিজের আত্মার কোনো হারানো ইতিহাস খুঁজে পাবে।’
ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, নির্মাতারা অপেক্ষা করছেন দীপাবলির। কারণ, চলতি বছরের দীপাবলির উৎসবের আলোয় যখন ‘থামা’ মুক্তি পাবে, তখন হয়তো অন্ধকার জঙ্গল আর অতীতের ছায়ার মাঝে নতুন আলো খুঁজে পাবেন দর্শক। হয়তো ভালোবাসা আবারও এক নতুন অর্থে ধরা দেবে–থেমে না থেকে, অমর হয়ে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আয় ষ ম ন ব পর ত চর ত র করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্ত: বিএসএফের গুলি-নির্যাতনে এক বছরে হতাহত ৭
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, আখাউড়া ও বিজয়নগর এই তিন উপজেলার ৭২ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে ভারতের সঙ্গে। গত এক বছর এই তিন উপজেলার সীমান্তে ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) গুলি ও নির্যাতনে অন্তত সাত বাংলাদেশি হতাহত হয়েছেন। তাদের গুলিতে একজন ভারতীয় নাগরিকও আহত হন। এসব ঘটনায় আতঙ্ক বাড়ছে সীমান্ত ঘেঁষা বাসিন্দাদের মধ্যে।
এসব ঘটনায় বিএসএফকে জোরালো প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি স্থানীয়দের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সীমান্তের ১৫০ গজের ভেতর না যাওয়ার পরামর্শ তাদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি কসবার পুটিয়া সীমান্তে গরু চড়াতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে আল আমিন নামে এক কৃষক নিহত হন। পরে পতাকা বৈঠক করে তার মরদেহ ফিরিয়ে আনে বিজিবি। গত ৮ এপ্রিল বিজয়নগরের সেজামুড়া সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনে মৃত্যু হয় মুরাদুর রহমান নামে এক কৃষকের। গত ২৫ এপ্রিল আখাউড়ার ইটনা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে গুরুতর আহত হন আসাদুল ইসলাম নামে এক যুবক।
আরো পড়ুন:
হবিগঞ্জ সীমান্তে বিজিবির নিরাপত্তা জোরদার
বিজিবির অভিযানে এপ্রিলে শত কোটি টাকার পণ্যসামগ্রী জব্দ
এছাড়া, ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল কসবার পুটিয়া সীমান্তে ঘোরাফেরার সময় বিএসএফ গুলি করে হত্যা করে হাসান নামে এক যুবককে। সেই বছরের ২৫ নভেম্বর কসবার বায়েক সীমান্তে ঘুরতে গিয়ে বিএসএফের ছুঁড়া গুলিতে আহত হন রুকন উদ্দিন ও জাকির হোসেন নামে আরো দুই যুবক।
সবশেষ ৫ মে কসবা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে সাকিব নামের এক তরুণ নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় সুজন বর্মণ (৩৫) নামে এক ভারতীয় নাগরিকও গুলিবিদ্ধ হন।
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলার প্রায় ৭২ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এসব সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোতে ক্রমেই বাড়ছে আতঙ্ক। চোরাকারবারি ধরার অজুহাতে নিজেদের সীমানা অতিক্রম করে বাংলাদেশিদের হয়রানি করে বিএসএফ সদস্যরা বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। মূলত সীমান্তের দেড়শ গজের মধ্যে অনেক বাংলাদেশি নিজেদের জমি চাষ করেন, চড়াতে দেন গবাধি পশু। ফলে শূন্যরেখায় আনাগোনা থাকে স্থানীয়দের।
বিজয়নগরে বিএসএফের নির্যাতনে নিহত মুরাদুর রহমানের স্ত্রী রত্না বেগম বলেন, “আমার স্বামীকে বিএসএফের সদস্যরা ডেকে নিয়ে যান। তাকে ক্যাম্পে নিয়ে মারধর করে তারা। পরে বিএসএফ তাকে ধানের জমিতে ফেলে রেখে যায়। আমার স্বামী কোনো দিন কোনো খারাপ কাজ করেনি। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই।”
নিহত আল-আমিনের বাবা সুলতান মিয়া জানান, বাড়ির একটি গরু ছুটে গেলে সেটিকে আনতে সীমান্ত এলাকায় যান তার ছেলে। এসময় ছেলেকে গুলি করা হয়।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ২৫ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারাহ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, “আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে যখন ভেতরে চলে যায় তখন বিএসএফ বাধা দেয়। আমরা বারবার বলি সীমান্তের ১৫০ গজের ভেতর যাবেন না। ভেতরে গেলে সীমান্ত হত্যার একটা বিষয় থাকে। এখন আমরা বিএসএফের সঙ্গে যে কোনো বিষয়ে কঠোরভাবে কথা বলছি।”
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ৬০ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউর রহমান জানান, “বিএসএফের প্রতিটি গুলির ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের সঙ্গে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আলোচনা হয়। কিভাবে কী ঘটেছে, সেগুলো জানার চেষ্টা করা হয়।”
ঢাকা/মনিরুজ্জামান/মাসুদ