‘সামি সামি’ গানের তালে আপামর ভারতীয়ের হৃদয়ে হিল্লোল তুলেছিলেন দক্ষিণী অভিনেত্রী রাশমিকা মান্দানা। বলিউডে তার অভিষেক হয়েছিল দক্ষিণী বহুভাষিক ছবি ‘পুষ্পা’র হাত ধরে। তারপর তিনি অভিনয় করেন রণবীর কাপুরের বিপরীতে ‘অ্যানিম্যাল’ ছবিতে ‘গীতাঞ্জলি’রূপে।

এ সিনেমায় অভিনয় করে অবশ্য রাশমিকা খানিকটা সমালোচিত হয়েছিলেন। তার চরিত্র নিয়ে যেমন দর্শকের মনে প্রশ্ন ছিল, তেমনই প্রশ্ন উঠেছিল তার অভিনয়প্রতিভা নিয়েও। তারপর এ অভিনেত্রীকে দেখা যায় সালমানের বিপরীতে ‘সিকান্দার’ সিনেমায়।  আবারও বলিউডের সিনেমায় অভিনয় করছেন রাশমিকা। এবার তার নায়ক আয়ুষ্মান খুরানা। এ ছবি হতে চলেছে ‘হরর-কমেডি’ ধারার। নাম ‘থামা’। ‘হরর-কমেডি’ ছবি বানাতে সিদ্ধহস্ত দীনেশ বিজন।

২০১৮ সালে তাঁর প্রযোজনায় মুক্তি পায় ‘স্ত্রী’। তারপর ‘ভেড়িয়া’, ‘মুঞ্জা’। শ্রদ্ধা কাপুর ও রাজকুমার রাও অভিনীত ‘স্ত্রী’ এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে তার সিক্যুয়াল ‘স্ত্রী ২’ ব্যাপক ব্যবসা করে। এরপর এখন তিনি নির্মাণ করছেন ‘থামা’।

এই সিনেমার ‘থামা’ নামটি এসেছে মহাভারতের অমর চরিত্র ‘অশ্বত্থামা’ থেকে। প্রেম, অভিশাপ আর অমরতার গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। এটি নির্মাণ করছেন ‘মুঞ্জা’খ্যাত নির্মাতা আদিত্য সারপোতদার। ভ্যাম্পায়ার থিমে তৈরি এ রোমান্টিক-কমেডি সিনেমার দৃশ্যধারণ হয়েছে উটির ঘন জঙ্গলে। কুয়াশার চাদরে ঢাকা উটির জঙ্গলে গাছের ফাঁকে ভেসে আসে পাখির ডাক, আর ক্যামেরার লেন্সে ধরা পড়ে এক অসমাপ্ত ভালোবাসার নতুন গল্প। সিনেমার গল্পে দেখা যায় তরুণ গবেষক অর্জুন (আয়ুষ্মান খুরানা) বিজয়নগরের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ দেখতে যান। 

পুরাকীর্তির মাঝে তিনি খুঁজে পান কিছু অজানা লিপি, কিছু ছেঁড়া দলিল আর এক অভিশপ্ত প্রেমের চিহ্ন। ঠিক তখনই তার জীবনে প্রবেশ করে অনন্যা (রাশমিকা)–এক ভ্রমণপিপাসু, ইতিহাসপ্রেমী, স্বতঃস্ফূর্ত মেয়ে, যার উপস্থিতি রং ছড়ায় অর্জুনের গবেষণায়। এ দু’জনের সম্পর্ক শুরু হওয়ার আগে, ছায়ার মতো তাদের পিছু নেয় অতীত–ভয়ানক, রক্তাক্ত অতীত। সেই অতীতে ছিল বিজয়নগরের এক রাজকুমারী (রাশমিকা) এবং এক অভিশপ্ত যোদ্ধা অশ্বত্থামা (আয়ুষ্মান)।

হাজার বছরের শাপ বয়ে চলা সেই প্রেম, যাকে মৃত্যু স্পর্শ করতে পারেনি, যাকে ভোলা যায়নি–তারই ছায়া ঘিরে ধরে বর্তমানকে। এখানেই শুরু হয় গল্পের আসল মোড়। এ পর্যায়ে গল্পে প্রবেশ করেন এক রহস্যময় চরিত্র–নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি। এক সময় যে ছিলেন রাজদরবারের গোপন রক্ষক, এখন হয়ে উঠেছেন ভয়ের প্রতীক। তার আগমনে সামনে আসে সেই অশ্বত্থামার অতীত–যেখানে প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতা আর রক্তের অন্ধকার একে অপরকে ছুঁয়ে গিয়েছিল। 

সিনেমাটি নিয়ে রাশমিকা বলেন, ‘এই সিনেমায় আমি দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছি। আমি একইসঙ্গে আধুনিক যুগের অনন্যা আর অতীতের রাজকুমারী। দুই চরিত্র দুই বিপরীত দিক, কিন্তু এক সুতোয় বাঁধা। প্রতিটি দৃশ্য করতে গিয়ে বুক কেঁপেছে।’

আয়ুষ্মান বলেন, ‘এ ছবিতে আমি শুধু প্রেমিক নই, আমি এক অভিশপ্ত আত্মা। সেই আত্মার মধ্য দিয়ে আমি বুঝেছি–ভালোবাসা যদি সত্য হয়, তাহলে সময় কখনও তাকে হারাতে পারে না। সিনেমার নির্মাতা পৌরাণিকতা আর আধুনিক সময়ের রোমান্স একসঙ্গে মিশিয়েছেন এমনভাবে, যেন বাস্তব আর কল্পনার মাঝখানে দাঁড়িয়ে দর্শক নিজের আত্মার কোনো হারানো ইতিহাস খুঁজে পাবে।’

ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, নির্মাতারা অপেক্ষা করছেন দীপাবলির। কারণ, চলতি বছরের দীপাবলির উৎসবের আলোয় যখন ‘থামা’ মুক্তি পাবে, তখন হয়তো অন্ধকার জঙ্গল আর অতীতের ছায়ার মাঝে নতুন আলো খুঁজে পাবেন দর্শক। হয়তো ভালোবাসা আবারও এক নতুন অর্থে ধরা দেবে–থেমে না থেকে, অমর হয়ে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আয় ষ ম ন ব পর ত চর ত র করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে

প্রযুক্তির উৎকর্ষের মধ্যেও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে প্রায়ই বিকৃতভাবে বা ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। গুগলে ‘ইনডিজেনাস পিপল’ লিখে খোঁজা হলে মাঝেমধ্যে এমন ছবি দেখানো হয়, যা তাদের ‘আদিম’, ‘বন্য’, ‘বর্বর’, ‘জংলি’ ও ‘হিংস্র’ আকারে উপস্থাপন করে।

সোমবার রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জা​দুঘর মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এমন অভিযোগ করেন। ‘আদিবাসী নারীর অধিকার রক্ষা ও ভবিষ্যৎ গড়ার লড়াইয়ে আধুনিক প্রযুক্তির ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক।

আলোচনা সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী ত্রিপুরা। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের ঘিরে এমন উপস্থাপনের প্রভাব নারীদের ওপরও পড়বে।

মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির বলেন, দেশে জাতিসংঘের অনেকগুলো দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হলেও আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন করা হয় না। তিনি বলেন, বুঝুক আর না বুঝুক বাংলাদেশ জাতিসংঘের বিভিন্ন কনভেনশনকে তড়িঘড়ি করে সমর্থন করে। কিন্তু এই কনভেনশনকে সমর্থন করেনি। সরকার বুঝেশুনেই সমর্থন করেনি। আগের সরকার বলেছে, বাংলাদেশে আদিবাসী নেই, এই সরকারও আদিবাসীদের স্বীকৃতি দিচ্ছে না।

একটাই ধর্ম ও জাতিসত্তা থাকবে, এমন মনোভাব কাম্য নয় উল্লেখ করে এই মানবাধিকারকর্মী বলেন, ‘কিসের ভয়ে আমরা দেশে ভিন্ন ধর্ম, চিন্তা ও জাতিসত্তার মানুষকে থাকতে দেব না? কে অধিকার দিয়েছে যে একটি মাত্র মতবাদ, চিন্তা, ভাষা জাতি ও ধর্ম থাকবে? রাষ্ট্রের জন্য এটা কাম্য হতে পারে না।’

চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে সমতল ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখ করে খুশী কবির বলেন, অভ্যুত্থানের পরে আর নারীদের কোনো অংশগ্রহণ নেই। নারী কমিশন গঠন করা হয়। কিন্তু কমিশনের কোনো কিছু গ্রহণ করা হয়নি। এর অর্থ সরকার নারীদের ভয় পায়। এই অবস্থা টিকে থাকার জন্য অভ্যুত্থান হয়নি। তাই অধিকার আদায়ে নারীদের শক্ত ভূমিকা রাখতে হবে। এখনই উত্তম সময়।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির ছবি: প্রথম আলো হেডিং: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে

সম্পর্কিত নিবন্ধ