রাষ্ট্র ও সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ব্যক্তিদের পেছনে থাকে মায়েদের ত্যাগ, অক্লান্ত শ্রম ও অনুপ্রেরণা। মায়েদের এই অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে গরবিনী মা সম্মাননা দিয়ে আসছে রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এ বছর এই সম্মাননা পেয়েছেন ১২ মা।
আজ রোববার মহাখালীর রাওয়া কনভেনশন সেন্টারে ‘গরবিনী মা-২০২৫’ সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিশ্ব মা দিবসে ১২ মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয় সম্মাননা। এটি ছিল গরবিনী মা সম্মাননার যুগপূর্তি।
সম্মাননা পাওয়া মায়েরা হলেন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান নাসরীন আফরোজের মা মনোয়ারা বেগম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ রেজাউল করিমের মা রেজীয়া বেগম, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানের মা রেজিয়া খাতুন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখার মা আয়েশা আক্তার, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার কাজী নুসরাত এদীবের মা ফরিদা আফরোজা, জাপান–বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান সরদার এ নাঈমের মা রাজিয়া কাদের, প্রকৌশলী এ কে এম সাইফুল বারির মা হাজেরা বেগম, বেসরকারি টেলিভিশন বাংলাভিশনের ডেপুটি হেড অব নিউজ মো.
অনুষ্ঠানে মায়ের স্মৃতি মনে করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধান অতিথি শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। নিজের হাতের ওপর মায়ের মৃত্যুর কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘মা বেঁচে থাকলে আজকে আমার জন্য গর্ববোধ করতেন। জীবনের যত অর্জন আছে, তাঁর সবটাই মায়ের দোয়ায় পেয়েছি।’
সন্তানের লালন–পালনে বাবাদের অবদানও অনস্বীকার্য বলে উল্লেখ করেন সাখাওয়াত হোসেন। বাবা স্বল্প বেতনের সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, বাবা সব সময় বলতেন, যা–ই করি সততার সঙ্গে জীবন পার করতে হবে। এটাই জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা ছিল।
প্রতিটি দিনকে মা দিবস উল্লেখ করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নাজমুল হোসেন বলেন, ‘মাতৃত্বের বিজয় সার্বিক। আমি যখন মেডিকেল কলেজে পড়তাম, তখন ৩০ শতাংশ মেয়ে ছিল। কিন্তু সর্বশেষ মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ৬৩ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী। নারীরা এখন এগিয়ে যাচ্ছেন।’
গরবিনী মা সম্মাননা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শ্রম উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। রোববার রাওয়া কনভেনশন সেন্টারেউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তারিক সিদ্দিক ও তাঁর স্ত্রীর বাগানবাড়ি, ফ্ল্যাট, জমিসহ বিপুল সম্পদের খোঁজ
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও তাঁর স্ত্রী শাহিদ সিদ্দিকের বাগানবাড়ি, ফ্ল্যাট ও বিপুল জমির খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাঁদের এসব সম্পদ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে।
দুদকের কর্মকর্তারা বলছেন, অনুসন্ধান এখনো চলছে। আরও সম্পদ পাওয়া যাবে বলে ধারণা করছেন তাঁরা। ব্যাংকে তারিক সিদ্দিক ও তাঁর স্ত্রীর টাকা আছে কি না, কত লেনদেন হয়েছে, সেই তথ্য পাওয়া এখনো বাকি।
দুদকের নথি অনুযায়ী, তারিক সিদ্দিকের নামে গাজীপুরে বাগানবাড়ি আছে দুটি। ঢাকার গুলশানে রয়েছে একটি সাততলা বাড়ি। ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তিনটি প্লট রয়েছে তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর।
বারিধারায় রয়েছে চারটি ফ্ল্যাট ও একটি ফ্ল্যাটের একাংশ। গাজীপুরে আরেকটি সাততলা বাড়ির চার ভাগের এক ভাগের মালিকানা তারেক সিদ্দিকের নামে। এর বাইরে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে তারিক সিদ্দিক ও তাঁর স্ত্রীর নামে প্রায় ৪৮ বিঘা জমি রয়েছে।
বাগানবাড়ি, জমি ও ফ্ল্যাট মিলিয়ে তারিক সিদ্দিকের সম্পদের দলিলমূল্য দেখানো হয়েছে ৩৮ কোটি টাকার বেশি। যদিও স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সেখানে যে দামে সম্পদের দলিল দেখানো হয়েছে, বাজারমূল্য তার কয়েক গুণ।
শেখ হাসিনার শাসনামলে খুবই প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন তারেক সিদ্দিক। তিনি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার দেবর।আরও পড়ুনতারিক সিদ্দিক, টিউলিপ সিদ্দিক ও সায়মা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু১৫ জানুয়ারি ২০২৫দুদক জানিয়েছে, তারা ২৪ বিঘা জমি এবং ৪টি ফ্ল্যাট ও ১টি ফ্ল্যাটের একাংশ আদালতের আদেশে জব্দ করেছে। বাকি সম্পদও জব্দের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদেশে তারিক সিদ্দিকের সম্পদ আছে কি না, তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনার পরিবারের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক একটি আলাদা দল করেছে। সেই দলের সদস্যরা এই অনুসন্ধান চালাচ্ছেন। দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তারেক সিদ্দিক, তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে প্রায় শতকোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁর বিদেশে সম্পদ রয়েছে কি না, সেই তথ্য জানতে বিএফআইইউকে (বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট) চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন তারিক সিদ্দিক ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ধারণা করা হয়, তাঁরা দেশ ছেড়েছেন। তারিক সিদ্দিকের বিরুদ্ধে জুলাই হত্যাকাণ্ড ও শেখ হাসিনার আমলে গুমের ঘটনায় মামলা এবং দুর্নীতির একাধিক মামলা রয়েছে। মামলাগুলোতে তাঁদের নিয়োগ করা কোনো আইনজীবীর খোঁজ পাওয়া যায়নি। ফলে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ সম্পর্কে তারেক সিদ্দিক বা তাঁর স্ত্রীর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
শেখ হাসিনার শাসনামলে খুবই প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন তারেক সিদ্দিক। তিনি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার দেবর।
শেখ হাসিনার পরিবারের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক একটি আলাদা দল করেছে। সেই দলের সদস্যরা এই অনুসন্ধান চালাচ্ছেন।আরও পড়ুনদুর্নীতির অভিযোগ থাকায় মাল্টার নাগরিকত্ব চেয়েও পাননি তারিক সিদ্দিকের স্ত্রী-কন্যা১০ জানুয়ারি ২০২৫তারিক সিদ্দিক