সাতক্ষীরার বাজার গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ ও গোলাপখাস আমে ভরপুর। চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি আম বাজারে ওঠায় দাম কমেছে। দাম কমে যাওয়া, হিমাগার আম না থাকা ও আড়ৎদারদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে গাছ পরিচর্যা করায় হতাশ আম চাষিরা। 

আবহাওয়া ও মাটির বিশেষ গুণাগুণের কারণে দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় আগেভাগে পাকে সাতক্ষীরার আম। এর মধ্যে গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই, হিমসাগর, ন্যাংড়া ও আম্রপালি দেশে ও বিদেশে বেশ কদর লাভ করেছে। সাতক্ষীরার আম বিষমুক্ত ও সুস্বাদু হওয়ায় দেশ ও বিদেশে চাহিদা বেশি। সরকারিভাবে ৫ মে থেকে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, গোলাপখাসসহ স্থানীয় জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে। গত বছর এ সময় সাতক্ষীরার তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ঘোরাফেরা করলেও এবারের তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৩৯ ডিগ্রি থাকায় হিমসাগর আম পাকতে শুরু করেছে।

তবে সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজার, তালা, কলারোয়া, আশাশুনি, কালীগঞ্জ সদর ও দেবহাটার বাজারে চাহিদার তুলনায় বেশি আম ওঠায় কমেছে দাম। তবে সরকারি পৃষ্টপোষকতা না পেয়ে আড়ৎদারদের কাছ থেকে গাছ পরিচর্যার জন্য দাদন নেয়া, আম বিক্রির জন্য সময় কম পাওয়া ও জেলায় হিমাগার না থাকায় হতাশ আম চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ৪ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার আমবাগান রয়েছে। এর অর্ধেকের বেশি জমিতে গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, গোলাপখাস ও সরাইখাসসহ স্থানীয় জাতের আম উৎপাদন হয়। চলতি মৌসুমে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ হাজার মেট্রিক টন। ১৩ হাজার ১০০ জন আম চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।

সদর উপজেলার ফিংড়ি গ্রামের আম চাষি কমলেশ সরদার জানান, এবার আমের ফলন বেশি। গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ আম ১৫ দিন বাজারে থাকে। কিন্তু সরকারিভাবে তিন থেকে চার মাসের জন্য চাষিদের স্বল্প সুদে ঋণ না দেয়ায় বাধ্য হয়ে আড়ৎদারদের কাছ থেকে দাদন নিতে হয়েছে। ফলে বাজার দামের চেয়ে ওই আড়ৎদারের কাছে কেজি প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা কম দামে আম বিক্রি করতে হচ্ছে।

একই গ্রামের গোবিন্দ ঘোষ জানান, তাদের দুই ভাইয়ের ৩০ বিঘা জমিতে আম বাগান রয়েছে। এবার গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, গোলাপখাস, হিমসাগর, ন্যাংড়া, রুপালীসহ নানা জাতের আম রয়েছে তাদের বাগানে। তবে তারা যে দামে আম বিক্রি করেছেন, তার চেয়ে অধিক দামে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। এতে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, লাভবান হয় মধ্যস্বত্বভোগীরা। 

শহরের সুলতানপুর বড়বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম জানান, গত বছরের এ সময় গোবিন্দভোগ আম ২৮০০ টাকায় মণ বিক্রি হলেও এবার ১৮০০ থেকে ২০০০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। সেই হিসাবে প্রতিকেজি আমের দাম ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। চাষিদের সুবিধার্থে সরকারকে সাতক্ষীরায় হিমাগার স্থাপনের দাবি করেন তিনি।

সাতক্ষীরার বড় বাজারে আম চাষি মোকাররম হোসেন জানান, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় আমের সাইজ একটু ছোট হয়েছে। তারপরও ফলন খুব ভালো। দেশে ও দেশের বাইরে সাতক্ষীরার আমের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। বাজারে আমের দাম ভালো থাকলে আম চাষি ও ব্যবসায়ী লাভবান হবেন বলে আশা করেন তিনি।

সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড় বাজারের কাঁচা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রওশান আলী জানান, প্রতিদিন বাজার আমে সয়লাব হয়ে যায়। কিন্তু বাজারে খরিদ্দার কম। তাই চাষি ও ব্যবসায়ীরা কম দামে আম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, ‘‘গোপালভোগ ও গোবিন্দভোগ আম পাড়ার দিন এক সপ্তাহ আগে এগিয়ে আনলে চাষি ও কৃষক উপকৃত হতেন।’’

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনির হোসেন জানান, সাতক্ষীরার আমের সুনাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ৭০ হাজার হেক্টর আমের উৎপাদন নির্ধারণ করা হয়েছে। ৪০০ কোটি টাকার আম এবার বিক্রি করা যাবে বলে তিনি আশাবাদী। একইসঙ্গে বিদেশেও আম পাঠানো হবে। 

গরম বেড়ে যাওয়ায় চাষি ও ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে হিমসাগর আম পাড়ার দিন ২০ মে থেকে এগিয়ে এনে ১৫ মে নির্ধারণ করা হয়েছে। বুধবার (১৪ মে) সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সংক্রান্ত জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। 

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, জেলায় ৪ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে ছোট-বড় মিলিয়ে ৫ হাজার ২৯৯টি বাগানে ১৩ হাজার ১০০ জন চাষি আম চাষ করেছেন। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬২ হাজার ৮০০ টন।

তিনি আরো জানান, চলতি মৌসুমে উৎপাদিত আমের মধ্যে এক–চতুর্থাংশ জমিতে হিমসাগর আম উৎপাদিত হয়েছে। এ আম বিদেশেও রপ্তানি হয়। চলতি বছর বিদেশে হিমসাগর আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ মেট্রিক টন। কিন্তু আবহাওয়ার কারণে অন্য বছরের তুলনায় চলতি বছর হিমসাগর আম আগে পাকতে শুরু করেছে। 

তিনি জানান, আম পাড়ার ক্যালেন্ডার অনুযায়ী গোবিন্দভোগ, গোলাপখাস, বৈশাখীসহ অন্যান্য দেশি জাতের আম ৫ মে থেকে পাড়া শুরু হয়েছে।

ঢাকা/শাহীন/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম উৎপ দ আম ব ক র জ ত র আম ম উৎপ দ ব যবস য় আম চ ষ আম প ড় র আম র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নৌভ্রমণে গিয়ে নৌকাডুবে দুই মেয়ের মৃত্যু, সাঁতরে বেঁচে ফিরলেন বাবা-মা  

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চরফরাদি ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্রে নদে শুক্রবার বিকালে নৌকাডুবির ঘটনায় দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। কলেজ পড়ুয়া বড়বোন নিলার (১৭) লাশ শুক্রবারই ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল উদ্ধার করে। ছোট বোন চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া নীহাকে (৯) শুক্রবার খুঁজে পাওয়া যায়নি। আজ শনিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে তার লাশ উদ্ধার করেছে ডুবুরি দল। তারা কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার চৌদ্দশত ইউনিয়নের জালুয়াপাড়া গ্রামের ভাঙারি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান ও নীপা আক্তার দম্পতির সন্তান। 

দু’টি সন্তান নিয়ে ছিল তাদের সুখের সংসার। এখন পরিবারটিতে চলছে কেবলই আর্তনাদ। সন্তানদের হারিয়ে এখন কেবলই বিলাপ করছেন। মাঝে মাঝেই মা নীপা আক্তার মূর্ছা যাচ্ছেন। 

পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বিল্লাল হোসেন জানিয়েছেন, মা-বাবা তাদের দুই মেয়েকে নিয়ে শুক্রবার বিকেলে চরফরাদি ইউনিয়নের দক্ষিণ চরটেকি এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের বেড়িবাঁধে বেড়াতে গিয়েছিলেন। এ সময় নৌভ্রমণে বের হলে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। আব্দুর রহমান সাঁতরে রক্ষা পেলেও মা নীপা ও বড় মেয়ে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী নীলাকে উদ্ধার করে পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরীক্ষা করে চিকিৎসক নীলাকে মৃত ঘোষণা করেন। আর নীপাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে ছোট মেয়ে নীহাকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চালিয়েও পাওয়া যায়নি। শনিবার বেলা পৌনে ১২টার সময় মরদেহ ভেসে উঠলে ডুবুরি দল তাকে উদ্ধার করে। 

দুই সন্তান হারিয়ে আব্দুর রহমান জানান, দু’টি মেয়ে সারাক্ষণ আনন্দে সংসার ভরিয়ে রাখতো। আশা ছিল- পড়ালেখা করে অনেক বড় হবে। আমরা সমাজে মর্যাদা নিয়ে বাঁচবো। তা আর হলো না। আমাদের একেবারে শূন্য করে চলে গেল। এই শূন্যতা কীভাবে ভুলবো? 

চৌদ্দশত ইউপি চেয়ারম্যান মো. আতাহার আলী জানান, আব্দুর রহমান পাশের পুলেরঘাট বাজারে ভাঙারি ব্যবসা করেন। নিলা ও নীহার মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোক বিরাজ করছে। 
  
এর আগে ১ জুলাই সকালে নৌকায় মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে পাকুন্দিয়ার চরফরাদি ইউনিয়নের চরআলগি গ্রামের তিন শিক্ষার্থী জুবায়ের (৭), শাপলা (১৪) ও শাপলার ভাতিজা আবির (৬) ব্রহ্মপুত্রে নৌকাডুবে মারা যায়। শুক্রবারও একই নদীতে ঘটলো আরেকটি দুর্ঘটনা।

এ ঘটনার পর ইউএনও মো. বিল্লাল হোসেন শুক্রবার রাতে এক ভিডিও বার্তায় ব্রহ্মপুত্রের দক্ষিণ চরটেকি এলাকার বেড়িবাঁধে ভ্রমণ আপাতত বন্ধ ঘোষণা করেছেন। নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে ভ্রমণের অনুমতি দেবেন না বলে তিনি জানিয়েছেন।  

সম্পর্কিত নিবন্ধ