সাতক্ষীরার বাজার আমে সয়লাব, দামে হতাশ চাষিরা
Published: 15th, May 2025 GMT
সাতক্ষীরার বাজার গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ ও গোলাপখাস আমে ভরপুর। চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি আম বাজারে ওঠায় দাম কমেছে। দাম কমে যাওয়া, হিমাগার আম না থাকা ও আড়ৎদারদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে গাছ পরিচর্যা করায় হতাশ আম চাষিরা।
আবহাওয়া ও মাটির বিশেষ গুণাগুণের কারণে দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় আগেভাগে পাকে সাতক্ষীরার আম। এর মধ্যে গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই, হিমসাগর, ন্যাংড়া ও আম্রপালি দেশে ও বিদেশে বেশ কদর লাভ করেছে। সাতক্ষীরার আম বিষমুক্ত ও সুস্বাদু হওয়ায় দেশ ও বিদেশে চাহিদা বেশি। সরকারিভাবে ৫ মে থেকে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, গোলাপখাসসহ স্থানীয় জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে। গত বছর এ সময় সাতক্ষীরার তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ঘোরাফেরা করলেও এবারের তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৩৯ ডিগ্রি থাকায় হিমসাগর আম পাকতে শুরু করেছে।
তবে সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজার, তালা, কলারোয়া, আশাশুনি, কালীগঞ্জ সদর ও দেবহাটার বাজারে চাহিদার তুলনায় বেশি আম ওঠায় কমেছে দাম। তবে সরকারি পৃষ্টপোষকতা না পেয়ে আড়ৎদারদের কাছ থেকে গাছ পরিচর্যার জন্য দাদন নেয়া, আম বিক্রির জন্য সময় কম পাওয়া ও জেলায় হিমাগার না থাকায় হতাশ আম চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ৪ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার আমবাগান রয়েছে। এর অর্ধেকের বেশি জমিতে গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, গোলাপখাস ও সরাইখাসসহ স্থানীয় জাতের আম উৎপাদন হয়। চলতি মৌসুমে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ হাজার মেট্রিক টন। ১৩ হাজার ১০০ জন আম চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
সদর উপজেলার ফিংড়ি গ্রামের আম চাষি কমলেশ সরদার জানান, এবার আমের ফলন বেশি। গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ আম ১৫ দিন বাজারে থাকে। কিন্তু সরকারিভাবে তিন থেকে চার মাসের জন্য চাষিদের স্বল্প সুদে ঋণ না দেয়ায় বাধ্য হয়ে আড়ৎদারদের কাছ থেকে দাদন নিতে হয়েছে। ফলে বাজার দামের চেয়ে ওই আড়ৎদারের কাছে কেজি প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা কম দামে আম বিক্রি করতে হচ্ছে।
একই গ্রামের গোবিন্দ ঘোষ জানান, তাদের দুই ভাইয়ের ৩০ বিঘা জমিতে আম বাগান রয়েছে। এবার গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, গোলাপখাস, হিমসাগর, ন্যাংড়া, রুপালীসহ নানা জাতের আম রয়েছে তাদের বাগানে। তবে তারা যে দামে আম বিক্রি করেছেন, তার চেয়ে অধিক দামে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। এতে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, লাভবান হয় মধ্যস্বত্বভোগীরা।
শহরের সুলতানপুর বড়বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম জানান, গত বছরের এ সময় গোবিন্দভোগ আম ২৮০০ টাকায় মণ বিক্রি হলেও এবার ১৮০০ থেকে ২০০০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। সেই হিসাবে প্রতিকেজি আমের দাম ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। চাষিদের সুবিধার্থে সরকারকে সাতক্ষীরায় হিমাগার স্থাপনের দাবি করেন তিনি।
সাতক্ষীরার বড় বাজারে আম চাষি মোকাররম হোসেন জানান, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় আমের সাইজ একটু ছোট হয়েছে। তারপরও ফলন খুব ভালো। দেশে ও দেশের বাইরে সাতক্ষীরার আমের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। বাজারে আমের দাম ভালো থাকলে আম চাষি ও ব্যবসায়ী লাভবান হবেন বলে আশা করেন তিনি।
সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড় বাজারের কাঁচা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রওশান আলী জানান, প্রতিদিন বাজার আমে সয়লাব হয়ে যায়। কিন্তু বাজারে খরিদ্দার কম। তাই চাষি ও ব্যবসায়ীরা কম দামে আম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘‘গোপালভোগ ও গোবিন্দভোগ আম পাড়ার দিন এক সপ্তাহ আগে এগিয়ে আনলে চাষি ও কৃষক উপকৃত হতেন।’’
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনির হোসেন জানান, সাতক্ষীরার আমের সুনাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ৭০ হাজার হেক্টর আমের উৎপাদন নির্ধারণ করা হয়েছে। ৪০০ কোটি টাকার আম এবার বিক্রি করা যাবে বলে তিনি আশাবাদী। একইসঙ্গে বিদেশেও আম পাঠানো হবে।
গরম বেড়ে যাওয়ায় চাষি ও ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে হিমসাগর আম পাড়ার দিন ২০ মে থেকে এগিয়ে এনে ১৫ মে নির্ধারণ করা হয়েছে। বুধবার (১৪ মে) সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সংক্রান্ত জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, জেলায় ৪ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে ছোট-বড় মিলিয়ে ৫ হাজার ২৯৯টি বাগানে ১৩ হাজার ১০০ জন চাষি আম চাষ করেছেন। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬২ হাজার ৮০০ টন।
তিনি আরো জানান, চলতি মৌসুমে উৎপাদিত আমের মধ্যে এক–চতুর্থাংশ জমিতে হিমসাগর আম উৎপাদিত হয়েছে। এ আম বিদেশেও রপ্তানি হয়। চলতি বছর বিদেশে হিমসাগর আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ মেট্রিক টন। কিন্তু আবহাওয়ার কারণে অন্য বছরের তুলনায় চলতি বছর হিমসাগর আম আগে পাকতে শুরু করেছে।
তিনি জানান, আম পাড়ার ক্যালেন্ডার অনুযায়ী গোবিন্দভোগ, গোলাপখাস, বৈশাখীসহ অন্যান্য দেশি জাতের আম ৫ মে থেকে পাড়া শুরু হয়েছে।
ঢাকা/শাহীন/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম উৎপ দ আম ব ক র জ ত র আম ম উৎপ দ ব যবস য় আম চ ষ আম প ড় র আম র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’