আকর্ষণ হারাচ্ছে জাতীয় জাদুঘর, কমছে দর্শক
Published: 18th, May 2025 GMT
জাতীয় জাদুঘরের প্রতি আকর্ষণ কমছে দর্শকদের। ঢাকায় বেড়াতে আসা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কাছে একসময় আকর্ষণীয় স্থান ছিল জাতীয় জাদুঘর। এখন সেই আকর্ষণ নেই। গত পাঁচ বছরে দর্শনার্থীর সংখ্যা ক্রমেই কমছে। এমন প্রেক্ষাপটে আজ রোববার পালিত হচ্ছে বিশ্ব জাদুঘর দিবস।
জাদুঘরের আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব মিউজিয়ামস (আইকম) প্রতিবছর ১৮ মে আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস উদ্যাপন করে থাকে। এবার দিবসের প্রতিপাদ্য ‘দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজে জাদুঘরের ভবিষ্যৎ’। দিবসটি উপলক্ষে সকাল ১০টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে শোভাযাত্রা, এরপর সেমিনার ও নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে বিশেষ প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।
দর্শক কত কমলবছর দশেক আগেও প্রতিবছর গড়ে ছয় লাখ দর্শনার্থী জাতীয় জাদুঘর পরিদর্শন করতেন। ২০১৮-১৯ সালে দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৩০ হাজার ৩৩ জন। ২০১৯-২০ সালে দর্শনার্থীর সংখ্যা ৪ লাখ ১৪ হাজার ৫৮৯ জনে নেমে আসে। পরের বছর আরও কমে হয় ১ লাখ ১৪ হাজার ৩০৪ জন। করোনা তার একটি প্রধান কারণ। ২০২২-২৩ সালে বেড়ে ৪ লাখ ৩৪ হাজার হলেও পরের বছর দর্শনার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমে যায়।
জাদুঘরবিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশেষ কোনো কর্মসূচি নেই। দিবসভিত্তিক গতানুগতিক ধাঁচে যেসব অনুষ্ঠান হয়, তা অনেকটাই দায় রক্ষার মতো। ফলে মানুষের তেমন আগ্রহ জাগে না। তবে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এ জন্য করোনা, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচিকে দায়ী করছে।
বছর দশেক আগেও প্রতিবছর গড়ে ছয় লাখ দর্শনার্থী জাতীয় জাদুঘর পরিদর্শন করতেন। ২০১৮-১৯ সালে দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৩০ হাজার ৩৩ জন। ২০১৯-২০ সালে দর্শনার্থীর সংখ্যা ৪ লাখ ১৪ হাজার ৫৮৯ জনে নেমে আসে।কী আছে জাতীয় জাদুঘরে১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ঢাকা জাদুঘর। পরে শাহবাগে ভবন নির্মাণের মধ্য দিয়ে ১৯৮৩ সালে জাতীয় জাদুঘরের কার্যক্রম শুরু হয়। এখানে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় মোট ৪৬টি গ্যালারিতে নিদর্শনগুলো প্রদর্শন করা হচ্ছে। জাতীয় জাদুঘরের সচিব মো.
এসব নিদর্শন চারটি ভাগে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রাকৃতিক ইতিহাস বিভাগে আছে ভূতাত্ত্বিক নিদর্শন, ভৌগোলিক পরিচিতিসহ বিভিন্ন তথ্য–উপাত্ত। জাতিতত্ত্ব ও অলংকরণ শিল্পকলা বিভাগে আছে জনজাতির ইতিহাস, পোশাক, অলংকার, লোকসংস্কৃতি ও কারুশিল্প ইত্যাদি। ইতিহাস ও ধ্রুপদি শিল্প বিভাগে আছে প্রাচীন ইতিহাসের নিদর্শন, বিভিন্ন সময়ের মূর্তি, ভাস্কর্য ও মুদ্রা ইত্যাদি। মহান মুক্তিযুদ্ধ–সম্পর্কিত নিদর্শনগুলোও এই বিভাগে উপস্থাপন করা হয়েছে। সমকালীন শিল্পকলা ও বিশ্বসাহিত্য বিভাগে আছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, এস এম সুলতান, সফিউদ্দিন আহমদসহ দেশের পথিকৃৎ শিল্পী থেকে সম্ভাবনাময় নবীন শিল্পীদের বিপুলসংখ্যক চিত্রকলা ও ভাস্কর্য; আছে বিদেশি শিল্পীদের চারু ও কারুশিল্পসামগ্রী।
জাতীয় জাদুঘরে বেশ কিছু নিদর্শন রয়েছে, যা খুবই দুর্লভ এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। যেমন ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকের বেশ কিছু বিষ্ণু ও বুদ্ধমূর্তি রয়েছে, যা অতি বিরল। এ ছাড়া বিষ্ণুর ১০ অবতারের মধ্যে ৭টি অবতারের মূর্তি রয়েছে জাতীয় জাদুঘরে, যা অন্যত্র নেই। নবাব সিরাজউদ্দৌলার ব্যবহৃত তরবারি, গালিচা, প্রাচীন যুগের ছাপ–অঙ্কিত ও ঢালাই করা মুদ্রা, দুই লাখ বছরের বেশি পুরোনো গাছের জীবাশ্মসহ বিভিন্ন দুর্লভ নিদর্শন আছে, যা কেবল এই জাদুঘরেই দেখা যাবে। আর আছে মহান মুক্তিযুদ্ধের অনেক গৌরবময় স্মারক।
বর্তমানে জাদুঘরে ১ লাখ ১৯ হাজারের বেশি নিদর্শন সংগৃহীত ও সংরক্ষিত আছে। দর্শকদের জন্য প্রদর্শন করা হচ্ছে মাত্র পাঁচ হাজার নিদর্শন।জাতীয় জাদুঘরের সচিব মো. সাদেকুল ইসলাম ও জনশিক্ষা বিভাগের কিপার আসমা ফেরদৌসীদর্শকের মন্তব্যগতকাল শনিবার জাতীয় জাদুঘরে গিয়ে বেশ কিছু দর্শনার্থীর দেখা মিলল। তাঁদের অধিকাংশ মূলত এসেছিলেন শাহবাগ এলাকার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার প্রয়োজনে। হাতে খানিকটা সময় পাওয়ায় চলে এসেছেন জাতীয় জাদুঘরে। ময়মনসিংহ থেকে এসেছিলেন জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা নুরুল মোমেন, তাঁর স্ত্রী উত্তরা ব্যাংকের কর্মকর্তা ফারিয়া আক্তার, বড় মেয়ে ময়মনসিংহ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নূরহান ফারজিন ও নার্সারির শিক্ষার্থী রুফাইদা নূর। চিকিৎসার প্রয়োজনে ঢাকায় এসে একফাঁকে তাঁরা জাদুঘর দেখতে আসেন। মন্তব্য বইয়ে নূরহান লিখেছে, প্রথমবার জাদুঘরে এসে তার ভালো লেগেছে। তার বাবা নুরুল মোমেন বলেন, বছর দশেক আগে তিনি প্রথম এসেছিলেন। তখন যেমন দেখেছেন, এখনো তেমনই আছে, বিশেষ কোনো পরিবর্তন তাঁর চোখে পড়েনি; বরং দর্শনার্থীদের বসার ব্যবস্থা কম। এত বড় জাদুঘরে হেঁটে হেঁটে ক্লান্তি আসে। আরও বেশি বসার ব্যবস্থা থাকা দরকার। তা ছাড়া বাচ্চাদের আকর্ষণ করে এমন বিশেষ কিছু থাকা প্রয়োজন, বলেন তিনি।
ঢাকার রায়েরবাজার হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম এসেছিল তার মা সনিয়া বেগমকে নিয়ে। সামিউল জানায়, বারডেম হাসপাতালে মায়ের চিকিৎসার জন্য এসেছিল তারা। একফাঁকে জাদুঘরে এসেছে। প্রাচীন মূর্তি আর বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের জীবনযাত্রা নিয়ে তৈরি মডেলগুলো তার ভালো লেগেছে। তার পাঠ্যবইতে এসবের পরিচিতি ছিল।
জাতীয় জাদুঘরে বেশ কিছু নিদর্শন রয়েছে, যা খুবই দুর্লভ এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। যেমন ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকের বেশ কিছু বিষ্ণু ও বুদ্ধমূর্তি রয়েছে, যা অতি বিরল। এ ছাড়া বিষ্ণুর ১০ অবতারের মধ্যে ৭টি অবতারের মূর্তি রয়েছে জাতীয় জাদুঘরে, যা অন্যত্র নেই।কেন আকর্ষণ হারাচ্ছেজাতীয় জাদুঘরের প্রতি দর্শকদের আকর্ষণ কমে যাওয়ার কিছু কারণ খুঁজে পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একই নিদর্শন দীর্ঘদিন ধরে প্রদর্শন করা, প্রচারে ঘাটতি, পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবলের অভাব—এমন অনেক কারণের কথা উল্লেখ করেছেন তাঁরা।
জাতীয় জাদুঘরের কিপার আসমা ফেরদৌসী বলেন, সম্প্রতি বেশ কিছু গ্যালারি নতুন করে সাজানো হয়েছে। চিনামাটির সামগ্রী নিয়ে ২৫ নম্বর গ্যালারি নতুন করে সাজানো হয়েছে, পুতুল দিয়ে সাজানো হয়েছে ৪৬ নম্বর গ্যালারি। তবে ‘জাদুঘর মার্কেটিং’–এ কিছু ঘাটতি আছে।
নবাব সিরাজউদ্দৌলার ব্যবহৃত তরবারি, গালিচা, প্রাচীন যুগের ছাপ–অঙ্কিত ও ঢালাই করা মুদ্রা, দুই লাখ বছরের বেশি পুরোনো গাছের জীবাশ্মসহ বিভিন্ন দুর্লভ নিদর্শন আছে, যা কেবল এই জাদুঘরেই দেখা যাবে। আর আছে মহান মুক্তিযুদ্ধের অনেক গৌরবময় স্মারক।জাদুঘর পরিচালনার জন্য ছয়টি বিভাগ রয়েছে। দুটি বিভাগের নিয়মিত কিপার আছেন। অন্য চার বিভাগে কিপার আছেন চলতি দায়িত্বে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে উপসচিব পদমর্যাদায় জাদুঘরের সচিব পদে এসেছেন তিনজন; আর মহাপরিচালক পদে পাঁচজনের পদায়ন হয়েছে। এখনো স্থায়ী মহাপরিচালক নেই। বর্তমানে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফরহাদ সিদ্দিক অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। অধিকাংশ সময় তিনি সচিবালয়ে ব্যস্ত থাকেন। সময় পেলে জাদুঘরে আসেন। এ পরিস্থিতিতে জাতীয় জাদুঘরের প্রাত্যহিক দাপ্তরিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে। সংস্কার বা উন্নয়নমূলক কাজ বিশেষ হচ্ছে না।
জাতীয় জাদুঘরের কার্যক্রম কেবল শাহবাগের জাতীয় জাদুঘর নিয়েই নয়, পুরান ঢাকার আহসান মঞ্জিল জাদুঘর, এলিফ্যান্ট রোডে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা জাদুঘর (বর্তমানে বন্ধ) চট্টগ্রামে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর, সিলেটে ওসমানী স্মৃতি জাদুঘর, ময়মনসিংহে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা, ফরিদপুরে পল্লিকবি জসীমউদ্দীন সংগ্রহশালা ও জাদুঘর, কুষ্টিয়ায় সাংবাদিক কাঙ্গাল হরিনাথ সংগ্রহশালা ও জাদুঘর এবং কুমিল্লায় নবাব ফয়জুন্নেসা স্মৃতি জাদুঘরও পরিচালনা করে থাকে জাতীয় জাদুঘর। এসব প্রতিষ্ঠানও চলছে গতানুগতিকভাবে।
আইকম (ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব মিউজিয়ামস) বাংলাদেশের অনারারি চেয়ারপারসন ও জাতীয় জাদুঘরের সাবেক কিপার জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় জাদুঘরকে আরও আকর্ষণীয় করতে হলে এর আধুনিকায়ন দরকার। সবচেয়ে জরুরি হলো দক্ষ জনবল গড়ে তোলা। নিদর্শন উপস্থাপনা, সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষায়িত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ত য় জ দ ঘর র স অবত র র ম র জন য এস ছ ল
এছাড়াও পড়ুন:
রেলওয়ের জমির ‘লাভ খাচ্ছে’ মসিক, উচ্ছেদে বাধা
ময়মনসিংহ নগরীতে বাংলাদেশ রেলওয়ের জমি ইজারা দিয়ে কোটি টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের (মসিক) বিরুদ্ধে। গত বুধবার সকাল ১১টা থেকেই সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতায় রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগের উদ্যোগে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। এর ৪ ঘণ্টা পরেই মসিকের প্রশাসক ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের টেলিফোনে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেল কর্তৃপক্ষের মতে, ময়মনসিংহ নগরীর ভেতর দিয়ে যে রেললাইন চলমান তার উভয় পাশে ৩০-৫০ ফুট জায়গা রেলওয়ের কেনা সম্পত্তি। তাদের অভিযোগের বেশিরভাগ জায়গা ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বেদখল হয়ে গেছে। নগরীর ভেতর সানকিপাড়া ও মিন্টু কলেজ রেললাইনের পাশে বসে ময়মনসিংহের সবচেয়ে জমজমাট ও গুরুত্বপূর্ণ কাঁচাবাজার। এই দুটি বাজারই ইজারা দিয়ে রেখেছে সিটি কর্পোরেশনের বাজার বিভাগ।
পূর্বনির্ধারিত এই উচ্ছেদ অভিযান ময়মনসিংহ নগরীর সানকিপাড়া বাজার এলাকায় শুরু হয়। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (উপ-সচিব) নাসির উদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানের পূর্বে উচ্ছেদের কথা শোনা গেলেও, এর ব্যাপকতা আঁচ করতে না পারায় অনেকেই তাদের দোকান ও মালামাল সরাতে পারেননি।
উপ-সচিব নাসির উদ্দিন মাহমুদ জানান, অভিযান চলাকালে হঠাৎ ফোন আসে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার ও সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মো. মোখতার আহমেদের কাছ থেকে। পরে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অভিযান তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু এর সম্পত্তিগুলো সম্পূর্ণ রেলের জমিতে। এসব জমি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে সিটি কর্পোরেশন ইজারা দিয়ে রেখেছে বছরের পর বছর।
ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন সূত্র থেকে জানা যায়, সানকিপাড়া রেলগেট বাজারে সর্বশেষ বাংলা ১৪৩১ সালে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন ইজারা দিয়েছে ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকায়। এর আগের দুই বছর সিটি কর্পোরেশন ইজারা পেয়েছে যথাক্রমে ১৩ লাখ ২৩ হাজার ও ১০ লাখ টাকা।
অপরদিকে জনবহুল আরেক বাজার মিন্টু কলেজ রেলগেইট বাজার থেকে সর্বশেষ বছরে ইজারা পেয়েছে ৪২ হাজার ৬৭০ টাকা, তার আগের ২ বছর ইজারা পেয়েছে ৬৯ হাজার ৬৭০ টাকা ও ১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা।
ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন গঠিত হয় ২০১৮ সালের এপ্রিলে। এর আগে ময়মনসিংহ পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৬৯ সালে। মসিকের হিসেবে শুধু ২০১৮ সাল থেকেই রেলওয়ের এ দুটি বাজার ইজারা দিয়ে কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে তারা। অথচ নগরীতে এ বাজারগুলো প্রায় ৫০-৬০ বছর আগে থেকেই জমজমাটভাবে পরিচালিত হয়ে আছে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব জায়গার মালিক বাংলাদেশ রেলওয়ে। সিটি কর্পোরেশন অবৈধভাবে এসব জায়গা ইজারা দিয়েছে। বাজার ও দোকানপাট ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে মসিকের পক্ষ থেকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি। অথচ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নিজেরাও জনগণকে জমি ইজারা দিয়ে থাকে।
সানকিপাড়া এলাকায় প্রায় ৪০ বছর ধরে মাংস বিক্রি করেন আবুল কাশেম। সপ্তাহে ৪০০ টাকা ইজারা দেন তিনি। তিনি সমকালকে বলেন, আমরা জানতাম এই জায়গা সিটি কর্পোরেশনের। আমার বাবার আমল থেকে এই বাজারে ইজারা দিয়ে ব্যবসা করে আসছি। হঠাৎ করে দুদিন আগে রেল কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়ে আমাদের দোকান-পাট সব ভেঙে দেয়। এখন আমরা খোলা আকাশের নিচে দোকান নিয়ে বসেছি।
মাছ ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া জানান, রেললাইনের পাশে সিটি কর্পোরেশন শেড ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে। আমরা সেখানে দীর্ঘদিন ইজারা দিয়ে ব্যবসা করছি। রেলের ভ্রাম্যমাণ আদালত এসে হঠাৎ আমাদের বাজারটি ভেঙে দিয়েছে। পরে শেড ঘরটি ভাঙতে আসলে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ও ইজারাদাররা বাধা দিলে তারা ফেরত চলে যায়। আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই।
সানকিপাড়া বাজারের ইজারাদার তানভীরুল ইসলাম টুটুল বলেন, সিটি কর্পোরেশনের শিডিউলে ১৪ লাখ টাকা উল্লেখ থাকলেও ভ্যাটসহ ২৮ লক্ষ টাকা দিয়ে বাজারটি ইজারা নিয়েছি। শুনেছি ১৯৯০ সাল থেকে বাজারটি পৌরসভা এবং সিটি কর্পোরেশন ইজারা দিয়ে আসছে। সে অনুযায়ী আমরা এবার সর্বোচ্চ মূল্য দিয়ে ইজারা নিয়েছি। হঠাৎ করেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে আমাদের ৬০-৭০ টি দোকান ভেঙে দিয়েছে। এতে আমরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (উপ-সচিব) নাসির উদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, অভিযান চলাকালে বাধার মুখে পড়ে কিছুটা বিব্রতবোধ করেছি। পরে বিভাগীয় কমিশনারকে অনুরোধ করেছি রেল সচিবের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য। আমাদের পরিকল্পনা ছিল সানকিপাড়া থেকে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত সমস্ত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা। কিন্তু শেডঘরটি ভাঙতে গেলেই প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে থেকে বিভিন্ন নির্দেশ আসতে থাকে। তবে আলোচনা শেষ হলে আমরা আবারও উচ্ছেদ অভিযানে নামবো।
বিশিষ্ট লেখক ও অধিকারকর্মী আবুল কালাম আজাদের ভাষ্য, রেলওয়ের জায়গা সিটি কর্পোরেশন কোনভাবেই যারা দিতে পারে না। জনগণকে ধোঁকা দিয়ে ইজারা মূল্যের অল্প কিছু টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা তারা নিজেদের পকেটে ভরেছে। তবে রেল কর্তৃপক্ষের হঠাৎ অভিযানের কারণে শত শত ব্যবসায়ী পথে বসে গেছে। অবৈধভাবে যে টাকাগুলো লেনদেন হয়েছে সেগুলো উদ্ধারের ব্যাপারে দ্রুত সরকারের পদক্ষেপ নিতে হবে।
ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের সচিব (উপ-সচিব) সুমনা আল মজিদ বলেন, জায়গাটি রেলের হলেও বাজারটি জনস্বার্থে গড়ে উঠেছে। ঢাকা সিটিতে রেলের ১১টি জায়গায় বাজার ইজারা দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। যেহেতু বাজারে পাবলিক ফাংশন জড়িত, তাই সেখানে নাগরিক সেবার অনেক বিষয় আছে। সেজন্য এ বাজারগুলো সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন থাকাই ভালো।
তবে মসিকের প্রশাসক মো. মোখতার আহমেদ বলেন, বিষয়টি সমাধানের জন্য রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। শুধুমাত্র বাজারের জায়গাটুকু যদি আমাদেরকে পরিচালনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাহলে ইজারাকৃত অংশটি বাদ দিয়ে বাকি অংশটি উচ্ছেদ করতে হবে। জায়গাটি রেলের এটা আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি, কিন্তু ইজারা থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব সরকারি কোষাগারেই জমা হয়েছে।