ভারত-পাকিস্তানের আড়াই হাজারের বেশি সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের সার্ভারে গত এক মাসে ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল অব সার্ভিস (ডিডস) হামলা চালিয়েছে সুপরিচিত ও বিদেশি হ্যাক্টিভিস্ট চক্র। আবার এ নিয়ে কিছু মিথ্যা তথ্যও ছড়াচ্ছে। লিখেছেন সাব্বিন হাসান
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে পেহেলগাম ঘটনার পর থেকেই কূটনৈতিক সম্পর্ক একেবারে সাংঘর্ষিক আর মুখোমুখি রূপ ধারণ করে।
অন্যদিকে শুরু হয় আরেক যুদ্ধ– সাইবার যুদ্ধ, যা এখনও চলছে। কারণ ছাড়াই বিদেশি সাইবার চক্র নিজেদের কারিগরি দক্ষতার পরীক্ষায় নেমেছে। সারাবিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এমন যুদ্ধে
অংশ নেয় আগ্রহীরা।
আপাতত যুদ্ধ থেমে গেলেও দুই দেশের সাইবার যুদ্ধ এখনও চলমান। সাইবার জগতে এখনও বন্ধ হয়নি বিরোধী মতবাদের হ্যাকার চক্রের গুপ্ত হামলা। অন্যদিকে, ভারত-পাকিস্তানে থেমে নেই বিদেশি সাইবার হামলা। ভারত-পাকিস্তান হ্যাকার সামলাতে বহুগুণ দূরদর্শী সাইবার শক্তি প্রয়োগ ও নিয়োগ করেছে বলে জানা গেছে। সঙ্গে রয়েছে বহু বিদেশি হ্যাকার চক্রের অর্থের বিনিময়ে সময়োপযোগী উৎপাত। দুই দেশের সম্পর্ক অবনতিতে যা আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করেছে। যারা উত্তপ্ত কূটনৈতিক আবহে কারণ ছাড়াই হামলা করছে। ভারত-পাকিস্তানের সরকারি-বেসরকারি ডিজিটাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার হচ্ছে সাইবার হামলার মূল লক্ষ্য। যার মধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়, সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর ও জাতীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো জনসেবামূলক দপ্তর, রেল ও বিমান সংস্থার মতো পরিবহন পরিষেবা দপ্তর– সবই রয়েছে আক্রমণের লক্ষ্য। সবখানে আক্রমণ হয়েছে দফায় দফায়। ফলে সাইবার সুরক্ষায় নিয়োজিত দপ্তর রীতিমতো নির্ঘুম রয়েছে। ভারত-পাকিস্তানের ভেতরে স্থিরতা দৃশ্যমান হলেও সাইবার জগৎ কিন্তু উত্তপ্তই রয়েছে। সাইবার সুরক্ষায় নিয়োজিত কয়েকটি সংস্থা বলছে, গত ২২ এপ্রিল থেকে ১০ মে সময়ের মধ্যে অন্তত হাজারের বেশি সাইবার হামলা হয়েছে দুটি দেশেই। যার পেছনে কাজ করেছে বিদেশি হ্যাকার চক্র। আরেক সাইবার সুরক্ষা সংস্থা ফ্যালকনফিডস (ডট) আইও দাবি করেছে, দুই দেশের কমপক্ষে আড়াই হাজারের বেশি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সার্ভারে ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল অব সার্ভিস (ডিডস) হামলা চালিয়েছে সুপরিচিত আর বিদেশি হ্যাক্টিভিস্ট চক্র। সর্বাধিক হামলা পরিচালনা করা হয় ৭ থেকে ১০ মে সময়ের মধ্যে। যার মধ্যে বেশির ভাগ টার্গেট ছিল সরকারি পরিষেবার সব প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে, দুই দেশেরই শিক্ষাক্ষেত্রে ৮ শতাংশ, ফিন্যান্স খাতে ৭ শতাংশ, ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে ৬ শতাংশ এবং টেলিকম খাতে হামলার গ্রাফ ছিল উল্লেখযোগ্য।
ঠিক কোন জায়গা থেকে হামলা পরিচালনা করা হয়েছে, ওই তালিকায় ভারত-পাকিস্তান ছাড়াও বিদেশি সূত্রে পাওয়া যাচ্ছে মরোক্কান সোলজার্স, টিম আর৭০ (রাশিয়া), লুলজসেক আরবস (পশ্চিম এশিয়া), ইসলামিক হ্যাকার আর্মি (ইরাক) এবং টিম আজারেল-অ্যাঞ্জেল অব ডেথের (প্যালেস্টাইন) মতো সাইবার চক্রের নাম।
হ্যাকার সূত্রের অনুসন্ধানে অবাক করার মতো তথ্য পেয়েছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ওই সব সাইবার হামলা পরিচালনা করা চক্রের অধিকাংশই হ্যাকার সিন্ডিকেটের অংশ নয়; বরং বেশির ভাগই বিদেশি স্ক্রিপ্ট কিডজ বা তরুণ হ্যাকার, যারা প্রি-রিটেন স্ক্রিপ্ট ও টুলস ব্যবহার করে সাইবার লড়াইয়ে কারণ ছাড়াই অংশ নিয়েছে নিজেদের পরিচিত করতে। হামলার আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল দক্ষতার যাচাই করা।
সারাবিশ্ব যখন মুখিয়ে ছিল, তখন নিজেদের তাবৎ মিডিয়ার কাছে জাহির করতেই ঘটেছে এমন বহুমাত্রিক বিদেশি হামলা।
সাইবার সুরক্ষা সংস্থা ক্লাউডসেক অবশ্য বলছে, ওই সব স্ক্রিপ্ট কিডজরা টাকার জন্য হ্যাক করতে উদ্যত হয়েছে, তা ঠিক বলা যাবে না। বরং তাদের অধিকাংশই মতাদর্শ প্রদর্শনের স্বার্থে সাইবার হামলা করেছে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটে এসব হামলার সংখ্যা, সক্ষমতা ও পরিসর নিয়ে যে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে, তা বহুলাংশে মিথ্যা।
তাই খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো তেমন কারণ দেখছেন না সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। তবে সাইবার জগতে এমন লড়াই নতুন মাত্রা পাবে,
তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলেছেন বিশ্লেষকরা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ পর ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে বেরোবি
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ব্রাকসু) নিয়ে অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চলেছে শিক্ষার্থীদের। গত ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের গেজেট প্রকাশ হয়ছে গঠনতন্ত্র।
এরই মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পর হতে যাচ্ছে কাঙিক্ষত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ তথা ব্যাকসু নির্বাচন। তবে এর জন্য আমরণ অনশন থেকে শুরু করে সব ধরনের কর্মসুচিই পালন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আরো পড়ুন:
‘আমরা একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করতে চাই’
বেরোবিতে শহীদ আবু সাঈদ স্মৃতিস্তম্ভের মডেল প্রদর্শন
জুলাই অভ্যুত্থান পর গণরুম ও গেস্ট রুমের যে সাংস্কৃতি ছিল, তা এখন বন্ধ হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের কমকাণ্ডে সামিল হওয়াও বাধ্যতামুলক নয়।
তাই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ ছাত্র সংসদ। যাতে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষিত হবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বেরোবির বিধিমালা অনুযায়ী, ১৩টি পদে সরাসরি নির্বাচন ও হল সংসদে নয়টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সব ধরনের কথা তুলে ধরতে পারবেন।
পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী শেখর রায় বলেন, “সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও লেজুরবিত্তিক রাজনীতি ব্যতীত একটি নির্বাচন হোক। যোগ্য, আদর্শ, উত্তম চরিত্র ও মনের প্রার্থী বিজয়ী হোক। নির্বাচিত হয়ে তারা হয়ে উঠুক বেরোবির একেকজন যোগ্য প্রতিনিধি। তারা ন্যায়ের পক্ষে থাকুক । তাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাক বেরোবি।”
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী জাওয়াদ সাজিদ বলেন, “ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের দাবি, অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার প্রধান মঞ্চ। এটি প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে, যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কণ্ঠ পৌঁছে যায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের টেবিলে। কিন্তু এজন্য সংসদকে দলীয় প্রভাবমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে। প্রকৃত অর্থে ছাত্র সংসদ তখনই সফল, যখন তা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে তাদের সমস্যার সমাধান ও কল্যাণে কাজ করে।”
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান বলেন, “আমরা এমন ছাত্র সংসদ চাই, যেখানে যোগ্য নেতৃত্ব আসবে এবং সব শিক্ষার্থীর সমস্যা সমাধানের হাতিয়ার হয়ে কাজ করবে। সবমিলিয়ে সবার বিশ্বস্ত জায়গা হবে এই ছাত্র সংসদ।”
ঢাকা/সাজ্জাদ/মেহেদী