বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা পুঁজিবাজার উন্নয়নে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন, সে সব নিয়েই অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করতে এসেছিলাম। আর রটে গেল আমি পদত্যাগ করছি! সারাদিন খালি গুজব ছড়ায় ‘আমি পদত্যাগ করছি’। বাজারে কি এর প্রভাব পড়ে না?

সোমবার (১৯ মে) সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড.

সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভা শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

এর আগে সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের বৈঠকের সময় নির্ধারিত হলে রবিবার (১৮ মে) রাতে তার পদত্যাগের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে সভা শেষে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা (কিছু গণমাধ্যম) তো নিউজ বানিয়ে দিয়েছেন। কোথা থেকে এসব সংবাদ পান? আমি আসলাম প্রধান উপদেষ্টার পাঁচটি নির্দেশনা নিয়ে; এতক্ষণ তাই নিয়ে আলোচনা করছিলাম। আমি এসেছি একটা কাজে, আর আপনারা বানিয়ে দিলেন পদত্যাগ! এটার একটা প্রভাব বাজারে পড়ে না?

প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা প্রসঙ্গে খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টার যে পাঁচটি নির্দেশনা, তার বেশিরভাগই আমাদের কাজ না। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের। সেটার কো-অর্ডিনেশন আপনারা করবেন। এটার জন্যই আজকে আসা। এটাকে আপনারা বানিয়ে দিলেন- আমি পৌনে ১০টায় কেন আর্জেন্ট আসছি? আমি পদত্যাগ করব। এই যদি হয়, একটা মানুষ কাজ করবে কি?

কেন বারবার পদত্যাগের গুঞ্জন ছড়াচ্ছে? সাংবাদিকের করা এমন প্রশ্নের জবাবে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, গুজব ছড়ালো আমি আমেরিকায় যে ফিরবো না? আমি যদি আমেরিকায় যেতাম, সবাই জানে ১২ বছর আমেরিকায় আমার ট্যাক্স ফাইল করতে হয়েছে। আমার তো ওখান থেকে কোনো দিন দেশেই ফেরার দরকার ছিল না। সাত বছর ইন্টারন্যাশনাল নিউ ইয়র্কের এমপ্লয়ি ছিলাম। আমার পে-রোল হতো নিউ ইয়র্কে। আমার বোনাস হতো নিউ ইয়র্কে। তো আমাকে ট্যাক্সফাইল করতে হচ্ছে। প্রাইভেট সেক্টরের চাকরি-বাকরি ছেড়ে সরকারি বেতনে কেন আসছি? দেশের কাজ করার জন্য।

এ সময় অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে কী আলোচনা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার যে পাঁচটি নির্দেশনা, সেটা কে কোথায় কীভাবে করবে? কাকে কী দায়িত্ব কাঁধে নিতে হবে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

আগামী বাজেট সামনে রেখে স্টেকহোল্ডাররা বিভিন্ন দাবি জানিয়েছেন এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি? জানতে চাইলে রে তিনি বলেন, বিষয়গুলো নিয়ে আজকেও আলোচনা হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা মহোদয় বিষয়গুলো দেখছেন। কীভাবে কোথায় এগোতে হবে, কার সঙ্গে কী মিটিং সে বিষয়ে বলেছেন।

আসন্ন বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য কোনো সুখবর আসার লক্ষণ দেখছেন কিনা? জানতে চাইলে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, এটা আমরা বলতে পারব না, যারা বাজেট দেবেন তারাই বলতে পারবেন। আমরা আমাদের চাহিদাগুলো জানিয়েছি।

ঢাকা/হাসনাত//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পদত য গ ব এসইস আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে

অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।

১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’

এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।

পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।

পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।

আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)

সম্পর্কিত নিবন্ধ