শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএমই বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ বাতিল দাবি, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত
Published: 21st, May 2025 GMT
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম ও খনি প্রকৌশল (পিএমই) বিভাগে প্রভাষক তাজবিউল ইসলামের নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলে টানা চার দিন ধরে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করছেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বিভাগের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। ফলে সব ধরনের একাডেমিক ও গবেষণাগারের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
গত শনিবার থেকে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের মধ্য দিয়ে তাজবিউল ইসলামের নিয়োগ বাতিলের দাবি করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ সিন্ডিকেটে নেওয়া সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি তুলেছেন তাঁরা।
আরও পড়ুনশাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে সিন্ডিকেট বৈঠক, বাইরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ১৭ মে ২০২৫শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে শিক্ষকেরাও একমত বলে জানিয়েছেন পিএমই বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শনিবার সিন্ডিকেটের ২৩৬তম সভার পর থেকে বিভাগে ক্লাস, পরীক্ষা ও ল্যাব কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ আছে। শিক্ষার্থীরা অফিসে তালা দিয়েছেন। বিভাগের শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একমত। কারণ, যোগ্যতা ছাড়া কোনো নিয়োগ বিভাগ মেনে নেবে না।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের জুনে তাজবিউল ইসলামকে পিএমই বিভাগে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেয় তৎকালীন প্রশাসন। অভিযোগ ওঠে, প্রভাষক পদের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও অনিয়মের মাধ্যমে তিনি নিয়োগ পেয়েছেন। ৯ জুন বিভাগটিতে যোগদানের পর থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ নিয়োগের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নতুন প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ দেয় বিভাগ। এর পরিপ্রেক্ষিতে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। কমিটির প্রতিবেদনে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নেয়, তাজবিউল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে, বেতনসহ সব আর্থিক সুবিধা বন্ধ থাকবে এবং লিখিত জবাব পাওয়ার পর আইন উপদেষ্টার মতামত নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পিএমই বিভাগের শিক্ষার্থী সাঈদুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত কমিটির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও গত দুই সিন্ডিকেটে এই শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল ও নিয়োগে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় আমরা পিএমই বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছি এবং বিভাগের অফিসকক্ষে তালা দিয়েছি। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলমান থাকবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সৈয়দ ছলিম মোহাম্মদ আবদুল কাদির বলেন, সিন্ডিকেটের ২৩৫তম সভার সিদ্ধান্তই কার্যকর আছে। ওই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে প্রভাষক তাজবিউল ইসলামকে গত দুই দিনে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। এ কারণে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ওই প্রভাষকের বিষয়ে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ আমরা বুঝি। আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই ব্যবস্থা নিতে হবে। মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের প্রভাষকের বিষয়টি নিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। আমরা সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। প্রভাষককেও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা দ্রুত বিষয়টির নিষ্পত্তির চেষ্টা করছি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প এমই ব ভ গ ল ইসল ম পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
গণভোটের মাধ্যমে সংস্কার চায় জামায়াত
গণভোটের মাধ্যমে সংস্কারের বাস্তবায়ন চায় জামায়াতে ইসলামী। দলটির ভাষ্য, সংস্কারকে স্থায়ী এবং প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতেই গণভোট প্রয়োজন। যাতে সংবিধানের সংশোধনী বা অন্য কোন উপায়ে ভবিষ্যতে বাতিল করা না যায়। গণভোট জাতীয় নির্বাচনে আগে না কি একসঙ্গে হবে তা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করার প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত।
রোববার জাতীয় সংসদে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে বিফ্রিংয়ে দলের এই অবস্থান জানিয়েছেন জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের। জামায়াত আগের প্রস্তাবে জানিয়েছিল, সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহাল চায়। আগের নিয়মে সর্বশেষ প্রধান বিচারপতি হবেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।
রোববার কমিশনের সঙ্গে সংলাপে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত। এতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা এবং প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত সার্চ কমিটির মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করা হবে।
ডা. তাহের বলেন, গত ২৬ এপ্রিল প্রথম দিনের সংলাপে যেসব বিষয়ে জামায়াত একমত ছিল না, এর কয়েকটিতে দ্বিতীয় দিনের সংলাপে রাজি হয়েছে। সংস্কারের জন্য দেশ ও জাতির স্বার্থে জামায়াত দলীয় সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির ঊর্ধ্বে উঠেছে। অন্য দলগুলোর কাছ থেকে একই ভূমিকা প্রত্যাশা করে।
নির্বাচনকালীন সরকারের উপদেষ্টা সার্চ কমিটির মাধ্যমে নিয়োগের প্রস্তাব করেছিল জামায়াত। তবে কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। দলটি ১৬৬ সুপারিশের ৭৭টিতে আগে একমত ছিল। দুই দিনের বৈঠক শেষে এই সংখ্যা ১২০ এর বেশি জানিয়ে ডা. তাহের বলেছেন, কমিশনের অবস্থান হল, নির্বাচনকালীন সরকার নির্বিঘ্নে পরিচালনার স্বার্থে প্রধান উপদেষ্টার হাতে উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষমতা থাকা উচিত। নির্বাচনকালীন সরকার যেহেতু সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য হবে, তাই জামায়াত এই কমিশনের এই সুপারিশে একমত হয়েছে।
নির্বাচন কবে চান- এ প্রশ্নে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেছেন, সংস্কার শেষ যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন হওয়া উচিত। এতে বিলম্ব করা উচিত নয়। জামায়াত চায়, সংসদ এবং স্থানীয় দুই নির্বাচনই অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে হোক।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কারো বিরুদ্ধে গঠিত অভিযোগ আদালত গ্রহণ করলে, সেই আসামি দণ্ডিত হওয়ার আগেই নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। এতে আগে রাজি না হলেও রোববার একমত হয়েছে জামায়াত।
ডা. তাহের বলেছেন, সাধারণ নিয়মে কারো দুই বছরের বেশি কারাদণ্ড হলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। জুলাই গণহত্যার বিষয়ে ব্যবস্থা হিসেবে কমিশন সুপারিশ করেছে, আইসিটিতে অভিযুক্তরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। জামায়াত এতে একমত হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে আইসিটিতে। অভিযোগ করা হচ্ছে, সাজার আগেই তাদেরকে নির্বাচনে অযোগ্য করতে নির্বাচনী আইনে সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ডা. তাহের বলেছেন, ত্রিয়াত্তরেও আইসিটি আইনে অভিযুক্তরা নির্বাচনে অযোগ্য ছিল। জুলাই গণহত্যার চূড়ান্ত বিচার শিগগিরই হচ্ছে না। ট্রাইব্যুনালের পর সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারবেন আসামিরা। এসব বিবেচনায় জামায়াত একমত হয়েছে ট্রাইব্যুনাল কারো বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করলে, সেই ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন ঐকমত্য কমিশন সংস্কারের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে ছয়টি বিকল্প দিয়েছিল। এগুলো হলো- অধ্যাদেশ, নির্বাচনের আগে গণভোট, সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট, গণপরিষদ, পরবর্তী সংসদ এবং একই সঙ্গে গণপরিষদ ও আইনসভা নির্বাচন।
বিএনপি চায় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোরর মধ্যে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেগুলো নিয়ে জুলাই সনদ সই হবে। পরবর্তী সংসদে সনদ অনুযায়ী সাংবিধানিক সংস্কার হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি চায় গণপরিষদের মাধ্যমে সংস্কার হবে।
জামায়াত কমিশনের স্প্রেডশিটে সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে মতামত জানায়নি। রোববার জানায়, গণভোটের মাধ্যমে সংস্কার হবে। দলটির নায়েবে আমির বলেন, রাজনৈতিক ঐকমত্যে জুলাই সনদ সই হওয়ার পর, তা গণভোটে অনুমোদনের মাধ্যমে সাংবিধানিক সংস্কার হবে।
ডা. তাহের সমকালকে বলেছেন, অতীতে সংবিধানের কিছু সংশোধনী সংসদে বাতিল হয়েছে। আবার কিছু আদালতের মাধ্যমে বাতিল হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে যে সংস্কার হতে যাচ্ছে, তা চিরস্থায়ী করতে জামায়াত গণভোট চায়। গণভোটে সংবিধানের সংশোধনী অনুমোদিত হলে, পরবর্তীতে কোনো সংসদ, আদালত বাতিল করতে পারবে না।