জীবন একটি চক্রের মতো, যেখানে ভালো ও খারাপ সময় আসে পালা করে। দিন ও রাতের মতো, আলো ও অন্ধকারের মতো আমাদের জীবনেও সুখ ও দুঃখের মুহূর্তগুলো পরিবর্তিত হয়। পরিবার বা বন্ধুরা হয়তো আপনাকে বুঝতে ব্যর্থ হয় বা দূরে সরে যায়। এমনকি সব সময় প্রত্যাশিত ভালোবাসা বা সমর্থন না–ও পেতে পারেন। এসব মুহূর্তে জীবন একাকী ও অন্ধকার মনে হয়।

তবুও যখন আপনি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র ওপর বিশ্বাস রেখেছেন, তখন আপনি সঠিক পথে আছেন। এই বিশ্বাসের মূলে রয়েছে আল্লাহর প্রতি ভরসা—তিনি আপনাকে পথ দেখাবেন, সাহায্য করবেন। এই পথনির্দেশনার একটি অমূল্য উৎস হলো পবিত্র কোরআন, যাকে আল্লাহ হৃদয়ের নিরাময় বলে অভিহিত করেছেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.

) ও প্রাথমিক যুগের মুসলিমরা সুখে–দুঃখে সব সময় পবিত্র কোরআনের দিকে ফিরে গেছেন।

এখানে পবিত্র কোরআনের পাঁচটি আয়াত উল্লেখ করা হলো, যেগুলো আপনার অন্ধকারতম দিনগুলোয় আশার আলো দেখাবে।

১. তিনি আপনার কথা শোনেন

‘আর (হে নবী) যখন আমার বান্দারা তোমার কাছে আমার বিষয়ে জানতে আসে, তদ্রূপ আমি কাছে আছি। আমি যে কারও ডাক শুনি, যখন সে আমাকে ডাকতে আসে। তাহলে তারা যেন আমার প্রতি আনুগত্য করে এবং আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, যাতে তারা সঠিকভাবে পথপ্রদর্শিত হতে পারে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬)

আল্লাহর সঙ্গে সংযোগ কখনো বিচ্ছিন্ন হয় না। মানুষের কাছে পৌঁছানোর পথ বন্ধ হলেও আল্লাহর দরজা ২৪/৭ খোলা। তিনি আপনার প্রশ্ন জানেন, আপনার ফিসফিস শোনেন, এমনকি আপনার নীরব অশ্রুও দেখেন। তিনি সাত আসমানের ওপরে থাকলেও আপনার হৃদয় থেকে দূরে নয়। যখন শয়তান আপনাকে ভাবায় যে আল্লাহ দূরে, তখন এই আয়াতের কথা স্মরণ করুন। প্রার্থনা করুন, কারণ তিনি আপনার ডাকের অপেক্ষায় আছেন।

আরও পড়ুনতওবা যেভাবে করা যায়১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

২. তিনি আপনাকে পথ দেখান

‘আর তিনি তোমাকে পথ না–জানা অবস্থায় পেয়েছিলেন এবং তোমাকে পথ দেখিয়েছেন।’ (সুরা দুহা, আয়াত: ৭)

একবার ভেবে দেখুন, কতবার আপনি পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না? আল্লাহই আপনাকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে এসেছেন। তিনি আপনাকে ইসলামের পথে রেখেছেন। যিনি এই ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়েও আপনাকে এত দূর অবধি এনেছেন, তিনি কি আজ আপনাকে ছেড়ে দেবেন? এই আয়াত সুরা আদ–দুহার অংশ, যা মহানবী (সা.)–কে কঠিন সময়ে অপূর্ব সান্ত্বনা দিয়েছে। আল্লাহ আপনার স্রষ্টা, তিনি আপনাকে গড়েছেন এবং পথ দেখিয়েছেন। ভরসা রাখুন, তিনি আজও আপনার পাশে আছেন।

৩. তিনি জানেন আপনার কী প্রয়োজন

‘এবং যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি জানবেন না? তিনি তো সূক্ষ্ম, সূক্ষ্মভাবে জানেন।’ (সুরা মুলক, আয়াত: ১৪)

আল্লাহ আমাদের স্রষ্টা। তিনি আমাদের শরীরের প্রতিটি শিরা, প্রতিটি চুল, প্রতিটি কোষ গড়েছেন। তিনি জানেন আমাদের কী প্রয়োজন এবং কখন প্রয়োজন। তিনি আল–খাবির (সর্বজ্ঞ) ও আল–লতিফ (সূক্ষ্মদর্শী)। যখন আমরা দুঃখে ডুবে থাকি, তখন তিনি আমাদের জন্য সমাধান প্রস্তুত করছেন। তাঁর পরিকল্পনা সূক্ষ্ম, তিনি আমাদের সবচেয়ে সুন্দর উপায়ে পথ দেখাবেন। ধৈর্য ধরুন, তাঁর সাহায্য আসছে।

আরও পড়ুনঅর্থ বুঝে নামাজ পড়ার ফজিলত১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

৪. তিনি আপনার সঙ্গে আছেন

‘তিনি আপনার সঙ্গে আছেন, যেখানে আপনি আছেন।’ (সুরা হাদিদ, আয়াত: ৪)

যত কঠিন পরিস্থিতিই হোক, আল্লাহ আপনার সঙ্গে আছেন। তিনি আপনার কথা শোনেন, আপনার কাজ দেখেন, আপনার হৃদয় জানেন। তিনি কখনো আপনাকে একা ছাড়েননি, ছাড়বেনও না। যখন পৃথিবী আপনার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তখন জানুন, আল–ওয়ালী (রক্ষক বন্ধু) আপনার পাশে। এই আয়াত মনে করিয়ে দেয় যে আপনি কখনো একা নন।

৫. তিনি আপনাকে সুস্থ করেন

‘আর রাসুলদের এসব সংবাদ আমি তোমার কাছে বর্ণনা করছি, যার দ্বারা আমি তোমার মনকে স্থির করি আর এতে তোমার কাছে এসেছে সত্য এবং মুমিনদের জন্য উপদেশ ও স্মরণ।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ১২০)

পবিত্র কোরআনের প্রায় এক–তৃতীয়াংশ ঘটনা দিয়ে গঠিত। এতে ২৫ নবী ও সৎ ব্যক্তিদের কাহিনি রয়েছে, যেগুলো আমাদের জন্য নির্দেশনা। আপনার সমস্যা যা–ই হোক, পবিত্র কোরআনের গল্পে তার সমাধান পাবেন। যদি আপনার পরিবার ইসলামের বিরোধিতা করে, তবে হজরত ইব্রাহিম (আ.)–এর ঘটনা পড়ুন। যদি দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগেন, তাহলে আইয়ুব (আ.)–এর কাহিনিতে সান্ত্বনা পাবেন। প্রিয়জন হারালে ইয়াকুব (আ.)–এর কথা ভাবুন, অবিচারের শিকার হলে ইউসুফ (আ.)–এর জীবন আপনাকে শান্তি দেবে।

সুতরাং পবিত্র কোরআন পড়ুন এবং পবিত্র কোরআনের আয়াতে শান্তি খুঁজুন। এই পাঁচ আয়াত আপনাকে মনে করিয়ে দেবে যে আল্লাহ আপনার সঙ্গে আছেন, আপনার কথা শোনেন, আপনার প্রয়োজন জানেন এবং আপনাকে পথ দেখান। আমরা প্রার্থনা করি, আল্লাহ আমাদের বিপদ থেকে মুক্তি দিন এবং এখানে ও পরকালে শান্তিপূর্ণ জীবন দান করুন।

 ‘ডিসকভারিং ইসলাম’ আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুননামাজের ভেতরে দরুদ পড়ার নিয়ম০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আপন র প আপন র স আপন র ক আম দ র পথ দ খ আল ল হ আপন ক ন আপন

এছাড়াও পড়ুন:

শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা

বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।  

অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা। 

আরো পড়ুন:

শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?

পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?

বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।  

শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।” 

একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।” 

শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি। 

১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা। 

দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী। 

১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ। 

একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা। 

অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ