রাজধানীর রাজপথ অবরোধ করে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের দাবি আদায়ের আন্দোলন থেকে মুক্তি পাচ্ছে না নগরবাসী। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন দাবিতে রাজপথ দখল করে বিক্ষোভ হচ্ছে। ফলে সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে নানা কাজে বাইরে বের হওয়া মানুষকে। বিশেষ করে অফিসগামী ও অফিস ফেরত মানুষ, স্কুলগামী শিক্ষার্থী, রোগী, নারী ও শিশুরা বেশি ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। ক্ষুব্ধ মানুষ বলছেন, প্রতিদিনই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দখল করে একটা না একটা আন্দোলন লেগে আছে। এভাবে কোনো শহর চলতে পারে না। পুলিশও বলছে, রাজধানীতে যান চলাচল ঠিক রাখতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ছিল আন্দোলনকারীদের দখলে। ফলে তীব্র যানজট ছিল রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকায়। এর মধ্যে টানা বৃষ্টি ভোগান্তির মাত্রা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে ভিজেই অনেককে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়।
সড়কে যানজটের কারণে মেট্রোরেলে ছিল যাত্রীদের বাড়তি চাপ। কিন্তু ভিড়ের কারণে অনেকে প্রথম দফায় ট্রেনে উঠতে ব্যর্থ হন।
গুলিস্তান থেকে বঙ্গবাজার অবরোধ
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ আয়োজনের দাবিতে টানা ছয়দিন ধরে চলছে নগরভবন অবরোধ। গতকালও ইশরাক অনুসারীরা সকাল ১০টায় গোলাপশাহ মাজার থেকে বঙ্গবাজার মোড় পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নেন। এ সময় কাকরাইল থেকে গুলিস্তান হয়ে পুরান ঢাকার সর্বত্র যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ১০ মিনিটের পথ চলতে লেগে যায় কয়েক ঘণ্টা। নারী ও শিশুদের দুর্ভোগ ছিল সীমাহীন।
সাম্যর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শাহবাগে ছাত্রদল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে দুপুরে শাহবাগে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে ছাত্রদল। এ সময় সায়েন্স ল্যাবরেটরি, নীলক্ষেত, বাংলামোটর, মৎস্য ভবনসহ আশপাশের সব এলাকায় যানজট ছড়িয়ে পড়ে। শাহবাগ দিয়ে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। এর মধ্যে বৃষ্টি শুরু হলে পথ চলতি মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়।
কাকরাইল মোড়ে পোশাক শ্রমিকদের অবস্থান
দুপুর ৩টার দিকে পল্টনের শ্রম ভবন থেকে মিছিল নিয়ে কয়েকশ পোশাকশ্রমিক ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি শুরু করে। কিন্তু কাকরাইলে প্রধান বিচারপতির বাসভবন সংলগ্ন মোড়ে তাদের আটকে দেয় পুলিশ। শ্রমিকরা পরে রাস্তাতেই বসে পড়েন। বৃষ্টির মধ্যেই তারা নানা স্লোগান দিয়ে বকেয়া ১৪ মাসের বেতন আদায়ের আন্দোলন চালিয়ে যান। বিক্ষোভরতরা জানান, তারা গাজীপুরের টিএনজেড গ্রুপের ৮টি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তাদের ১৪ মাস ধরে বেতন ও অন্যান্য পাওনা বকেয়া রয়েছে।
শ্রমিকদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে কাকরাইলে অবস্থান নেন বামপন্থি কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরাও। ফলে আশপাশের সড়কে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। অলিগলিতেও ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করে। সেগুনবাগিচা, কাকরাইল, নয়াপল্টন, মালিবাগ, মগবাজার ও আশপাশের এলাকায় যানজট ছড়িয়ে পড়ে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক রমনা জোনের সহকারী কমিশনার আব্দুল হান্নান খান বলেন, শ্রমিকদের অবরোধের কারণে যান চলাচল ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। অনেক কৌশল করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
গুলশানে গণঅধিকার পরিষদের বিক্ষোভ সমাবেশ
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গণঅধিকার পরিষদের উদ্যোগে ডিএনসিসি নগরভবনের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে। ফলে গুলশান ২ নম্বর গোলচত্বর ও আশপাশের এলাকায় যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
বাবুবাজারের বাসিন্দা আরিফ হোসেন বলেন, একটা প্রয়োজনে কুড়িল যাওয়ার প্রয়োজন ছিল। সকাল ১০টার দিকে বাসা থেকে বের হন। এক ঘণ্টায় গুলিস্তান পর্যন্ত পৌঁছান। এর পর আর যেন গাড়ি আগায় না। এক পর্যায়ে বাসায় ফিরে যেতে বাধ্য হন।
ভোগান্তি ছিল অফিস শেষে ঘরমুখো মানুষেরও। মতিঝিলের অফিস থেকে বের হয়ে মহাখালী যাওয়ার একটি বাসে ওঠেন মুক্তার হোসেন। তিনি জানান, মহাখালীর ওয়্যারলেস গেট পর্যন্ত পৌঁছতে তাঁর সময় লেগেছে দুই ঘণ্টা। তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্রতিদিনই একটা না একটা আন্দোলন লেগেই আছে। এভাবে কোনো শহর চলতে পারে না।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল য নজট অবর ধ ব ক ষ ভ সম ব শ অবস থ ন আশপ শ র এল ক য় অবর ধ য নজট
এছাড়াও পড়ুন:
‘বউ পেটানো’ অভিনেতার দ্বিতীয় সংসার ভাঙার গুঞ্জন
সৈয়দা আলিজা সুলতানের সঙ্গে ঘর বেঁধেছিলেন পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেতা ফিরোজ খান। তাদের এই সংসার ভেঙে গেছে। আলিজা অভিযোগ করেছিলেন, তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন ফিরোজ। কেবল তাই নয়, শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের ছবিও প্রকাশ করেছিলেন। এরপর তোপের মুখে পড়েন ফিরোজ খান। নেটিজেনদের অনেকে তাকে ‘বউ পেটানো’ অভিনেতার তকমাও দেন।
প্রথম সংসার ভাঙার প্রায় দুই বছর পর ডা. জয়নবের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ফিরোজ খান। এদিকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্বিতীয় সংসার ভাঙার গুঞ্জন ছড়িয়েছে। মূলত, বিনোদনভিত্তিক একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ডা. জয়নবের ইনস্টাগ্রাম পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করা হয়। তারপরই শুরু হয় ফিরোজ খানের সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদের গুঞ্জন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে জয়নবের অভিযোগের স্ক্রিনশট।
ডা. জয়নব কথিত এই নোটে বলেন, “আমি আমার সহনসীমার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। অবিরাম মানসিক চাপ ও উদ্বেগে ক্লান্ত। এমন একজন মানুষের সঙ্গে সম্পর্কে আছি, যে আমাকে বিশ্বাস করে না। আমি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি এখন ক্লান্ত। প্রতিটি কথোপকথন একটা লড়াইয়ের মতো লাগে, প্রতিটি মতবিরোধ যেন যুদ্ধ। এমন আচরণের শিকার হয়ে আমি ক্লান্ত। আমি যখন তাকে কিছু বলি, সে আমার উপর রাগ ঝাড়ে।”
স্ত্রী জয়নবের সঙ্গে ফিরোজ খান
সুখ স্মৃতিগুলো কষ্টে ঢাকা পড়ে গিয়েছে। এমন মন্তব্য করে জয়নব বলেন, “সত্যি বলতে, আমরা একসঙ্গে যে স্মৃতিগুলো তৈরি করেছিলাম, তা এখন কষ্ট ও আঘাতে ঢাকা পড়ে গেছে। আমি অসংখ্যবার তাকে ক্ষমা করেছি। কিন্তু সেই ক্ষতগুলো কখনো পুরোপুরি সারেনি। বুঝতে পারছি, আমি এক ধরণের মানসিক অস্থিরতার মধ্যে বাস করছি, একটা সম্পর্কে আটকে আছি, যা আমার জীবনের শক্তি শুষে নিচ্ছে। আমি জানি, আমি এর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য। আমি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কোমলতার যোগ্য। সবকিছু ঠিক আছে—আমি আর এই ভান করতে চাই না।”
ডিভোর্সের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে জয়নব বলেন “এমন বিষাক্ত একটা সম্পর্কের জন্য আমি আমার সুখ ত্যাগ করেছি। আমি এখন নিজের জন্য, নিজের মানসিক সুস্থতার জন্য দাঁড়াচ্ছি। বেদনা ও কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে, আমি আমার জীবনের এই অধ্যায় (বিবাহিত জীবন) শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি ডিভোর্স নিচ্ছি। কারণ আমি জানি, এর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরুর জন্য আমি প্রস্তুত, যেখানে আমাকে মূল্য দেওয়া হবে, সম্মান করা হবে, ভালোবাসা হবে।”
জয়নবের এই ‘ডিভোর্স নোট’ নিয়ে যখন জোর চর্চা চলছে, তখন মুখে কুলুপ এঁটেছেন ফিরোজ খান। তবে এর আগে ফিরোজ খানের অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি পোস্টে দেখা যায়। তাতে জয়নবের বিরুদ্ধে ‘ব্ল্যাকমেইল’ ও ‘মানসিক চাপের’ অভিযোগ তোলেন। যদিও পরবর্তীতে পোস্টটি মুছে ফেলা হয়। পাশাপাশি এই অভিনেতা জানান, তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছিল।
ডা. জয়নব
তবে সংসার ভাঙার গুঞ্জনে সরাসরি কোনো বক্তব্য দেননি ফিরোজ খান কিংবা তার স্ত্রী ডা. জয়নব। তবে বিনোদনভিত্তিক যে পেজ থেকে জয়নবের ‘ডিভোস নোট’ ছড়ানো হয়েছে, সেই পোস্টে মন্তব্য করেছেন তিনি। তাতে জয়নব লেখেন, “এই ধরনের পেজগুলো আনফলো করুন অথবা রিপোর্ট করুন। এই ধরনের পেজ থেকে ভুয়া খবর ছড়িয়ে মানুষকে বিরক্ত করা হচ্ছে। সত্যি বলছি, আমি জানি না কীভাবে তারা আমার স্টোরিতে পোস্টটি করার অ্যাকসেস পেয়েছে। এই পোস্ট আমি কখনো করিনি।”
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম স্ত্রী সৈয়দ আলিজা সুলতানের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় ফিরোজ খানের। এ সংসারে সুলতান খান ও ফাতিমা খান নামে দুই সন্তান রয়েছে। বর্তমানে দুই সন্তানের দায়িত্ব নিয়ে আদালতে মামলা লড়ছেন এই প্রাক্তন দম্পতি। ২০২৪ সালে ডা. জয়নবকে বিয়ে করেন ফিরোজ খান।
ঢাকা/শান্ত