প্রবাসী আয় পাঠানোর আনুষ্ঠানিক চ্যানেল আরও আকর্ষণীয় করতে হবে
Published: 21st, May 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক প্রস্তাব—যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো বৈদেশিক রেমিট্যান্সে ৫ শতাংশ হারে করারোপ—বাংলাদেশের জন্য গুরুতর উদ্বেগের কারণ হবে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় গ্রহণকারী প্রধান দেশগুলোর একটি হওয়ায় এ প্রস্তাব কার্যকর হলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসীরা বাংলাদেশে প্রায় ৩ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন বা ৩৯৪ কোটি মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন। দেশের মোট রেমিট্যান্স আয়ের যা ১৮ শতাংশের বেশি। এ পরিসংখ্যান থেকে মার্কিন প্রবাসী বাংলাদেশিদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান এবং জাতীয় অর্থনীতিতে তাঁদের ভূমিকা কতটা, তা পরিষ্কার হয়ে যায়।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশে প্রবাসী আয়প্রবাহে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। এর পেছনে আছে তুলনামূলকভাবে অনুকূল বিনিময় হার এবং আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে বিনিময় হারের ব্যবধান কমে আসা। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় অনেক উপসাগরীয় দেশের তুলনায় বেশি। অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে, আর্থিক সহায়তার উৎসে পরিবর্তন আসছে। ২০২৫ সালের মার্চে বাংলাদেশ রেকর্ড পরিমাণ ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন বা ৩২৯ কোটি মার্কিন ডলার প্রবাসী আয় হিসেবে পেয়েছে। এ ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয়, এই আয় উৎস দেশের অসংখ্য পরিবারে, বিশেষ করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
এ ধরনের করারোপ করা হলে সরাসরি প্রবাসী পরিবারের প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ কমে যাবে। তখন অনেকে আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং চ্যানেলের পরিবর্তে অনানুষ্ঠানিক পন্থা অবলম্বনে বাধ্য হবেন। ফলে হুন্ডির মতো অনিয়ন্ত্রিত পন্থার ব্যবহার বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে আর্থিক প্রবাহ পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে। এ পরিস্থিতির কারণে প্রবাসী আয়ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে নেওয়া দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগগুলো দুর্বল হয়ে যাবে। এ ছাড়া এমন সময় দেশের অর্থনীতি ঝুঁকির মুখে পড়বে, যখন বৈদেশিক খাত এখনো চাপের মুখে আছে।
এ প্রস্তাবের সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের উচিত হবে, যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ করা। সেই সঙ্গে কর প্রস্তাবের পরিণতি এবং এর ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর লাখ লাখ পরিবারের ওপর যে প্রভাব পড়বে, তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা। প্রবাসী আয় পাঠানোর আনুষ্ঠানিক চ্যানেলগুলো আরও আকর্ষণীয় করে তোলার দিকেও নজর দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংকিং সেবার সহজলভ্যতা বাড়ানো, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর ব্যবহার আরও সহজ করা আর দ্রুত ও কম খরচে লেনদেনের সুযোগ তৈরি করা।
এ ছাড়া প্রবাসী আয় প্রেরক ও দেশীয় গ্রহীতাদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের উপকারিতা ও নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে জনসচেতনতামূলক প্রচার চালানো জরুরি। অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে কড়া নজরদারি করাও গুরুত্বপূর্ণ, যাতে সেগুলোর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সবশেষে সম্প্রতি যে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থা নেওয়া হলো, তা কার্যকর করা সময়ের দাবি। এতে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলগুলো আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে এবং প্রবাসীরা হুন্ডির মতো পথ থেকে সরে এসে ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহারে উৎসাহিত হবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ব ব যবহ র প রব স
এছাড়াও পড়ুন:
যুবদল-ছাত্রদল-স্বেচ্ছাসেবক দলের সংঘর্ষ, আহত ১৩
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে যুবদল, ছাত্রদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। উপজেলার নওয়াবেঁকী বাজারে মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়ে ১০টা পর্যন্ত চলে। এ ঘটনায় ১২-১৩ জন আহত হন। তবে আহতদের মধ্যে চারজনকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
সংঘর্ষে আহত আলআমিনের অবস্থা গুরুতর। তিনি উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়ন যুবদলের ১নং ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক। হাসপাতালে ভর্তি অন্যরা হলেন- যুবদল কর্মী জাহাঙ্গীর, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য আরাফাত হোসেন (২০) ও শ্রমিক দলের সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন (৩০)।
স্থানীয়রা জানান, খোলপেটুয়া নদী থেকে বালু উত্তোলন নিয়ে স্থানীয় বিএনপি’র অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও শ্রমিক দলের নেতাকর্মীরা সরাসরি অংশ নিলেও উপজেলা বিএনপির কয়েকজন নেতা এ ঘটনায় মদদ দিয়েছেন। সম্প্রতি ডাক হওয়া হিজলদিয়া বালুমহালের ইজারা নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জেরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
আটুলিয়া ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক আলআমিন হোসেন জানান, সম্প্রতি বিএনপি নেতা আনোয়ারুল ইসলাম হিজলদিয়া বালুমহাল ইজারা পেয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে বোটম্যান আব্দুল হাকিম বালু উত্তোলন করতে সেখানে যান। দুপুর দুইটার দিকে আটুলিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাবিবুল্লাহ ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল ইসলাম ঘটনাস্থল থেকে তাকে তুলে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নিয়ে যান। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আমাদের কর্মী-সমর্থকরা জড়ো হতে শুরু করলে হাবিবুল্লাহ ও রেজাউল তাদের কর্মীদের নিয়ে চলে যান। পরবর্তীতে রাত আটটার দিকে তারাসহ ছাত্রদল নেতা বেলাল হোসেনের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জন এসে আমাদের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় আমাদের সাতজন আহত হন। তবে তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ দিকে ছাত্রদল নেতা হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘প্রশাসনের নির্দেশে আমরা হাকিমকে আটক করে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নিয়ে আসি। এ সময় আমাদের ওপর প্রতিপক্ষ চড়াও হওয়ার চেষ্টা করলে সেখান থেকে চলে আসি। একপর্যায়ে রাতে আমরা কিছু কর্মী-সমর্থক নিয়ে সেখানে বসে ছিলাম। তখন প্রতিপক্ষ আমাদের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করলে এ সংঘর্ষ হয়। এ সময় আমাদের ছয় জন আহত হলেও যুবদল কর্মী হাফিজুরকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি।;
উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, নীতিমালা মেনে বালুমহাল ইজারা নিয়েছি। কিন্তু ইজারা নিতে ব্যর্থ প্রতিপক্ষ ব্যবসায়িকভাবে আমাদের ক্ষতির চেষ্টা করছে। এ সবের অংশ হিসেবে আমাদের বোটম্যান আব্দুল হাকিমকে তুলে নিয়ে যায় তারা। পরবর্তীতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রেজাউল ও সাবেক ছাত্রদল নেতা হাবিবুল্লাহর নেতৃত্বে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন নেতাদের জানানো হয়েছে।
উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সোলায়মান কবীর বলেন, বিষয়টি খুবই খারাপ হয়েছে। ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
শ্যামনগর থানার ওসি মো. হুমায়ুন কবির বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তবে আজ বুধবার বিকেল পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি।