পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির সন্দেহে স্থানীয় এক ইউটিউবার, একজন ব্যবসায়ী ও এক ছাত্রসহ ৯ জন নারী-পুরুষকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের পুলিশ।

পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশসহ একাধিক রাজ্যে অভিযান চালিয়ে এদের আটক করা হয়েছে বলে পৃথক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি বাংলা ও ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। 

গ্রেপ্তারদের মধ্যে সবথেকে বেশি আলোচনা হচ্ছে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য হরিয়ানার বাসিন্দা জ্যোতি মালহোত্রার নাম। তিনি পর্যটন সংক্রান্ত ভ্লগ বানান।

মালহোত্রা সহ মোট ৯ জনকে একই অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলেন-

জ্যোতি মালহোত্রা

ট্র্যাভেল ভ্লগার জ্যোতি মালহোত্রা, যিনি 'ট্র্যাভেল উইথ জেও' নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল চালান, তিনি হরিয়ানার হিসারের বাসিন্দা। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতীয় সামরিক তথ্য ভাগ করে নেওয়ার জন্য তাকে গত সপ্তাহে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পুলিশ জানায়, ৩৩ বছর বয়সী এই তরুণী পাকিস্তান হাই কমিশনের একজন কর্মকর্তার সংস্পর্শে এসেছিলেন এবং কমপক্ষে দুবার পাকিস্তান সফর করেছিলেন। পুলিশ আরো জানায়, পাকিস্তানি গোয়েন্দারা তাকে ভারতে তাদের সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।

দেবেন্দ্র সিং

পাতিয়ালার খালসা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র দেবেন্দ্র সিং (২৫)। ১২ মে, ফেসবুকে পিস্তল এবং বন্দুকের ছবি আপলোড করার জন্য তাকে হরিয়ানার কৈথাল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে যে তিনি গত নভেম্বরে পাকিস্তান সফর করেছিলেন এবং ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে সংবেদনশীল তথ্য শেয়ার করেছিলেন, যার মধ্যে পাতিয়ালা সামরিক সেনানিবাসের ছবিও ছিল।

নওমান ইলাহি

হরিয়ানায় নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করা ২৪ বছর বয়সী নওমান ইলাহিকে কয়েকদিন আগে পানিপথ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে তিনি পাকিস্তানে একজন আইএসআই হ্যান্ডলারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা ইসলামাবাদে তথ্য সরবরাহের জন্য পাকিস্তান থেকে তার শ্যালকের অ্যাকাউন্টে টাকা পেতেন।

আরমান

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ১৬ মে হরিয়ানার নুহ থেকে ২৩ বছর বয়সী আরমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির সময় তাকে পাকিস্তানে সংবেদনশীল তথ্য পাচার করতে দেখা গেছে। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে এবং সন্দেহভাজনকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তারিফ

হরিয়ানার নুহ থেকে গ্রেপ্তার হওয়া দ্বিতীয় অভিযুক্ত ছিল তারিফ। আরমানের গ্রেপ্তারের দুই দিন পর, তাওয়াডু মহকুমার কাঙ্গারকা গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, পুলিশকে দেখে সে তার মোবাইলের কিছু চ্যাট মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল। তদন্তে জানা গেছে, তার ফোন থেকে পাকিস্তানি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরের কিছু ডেটাও মুছে ফেলা হয়েছিল।

শাহজাদ

উত্তর প্রদেশের রামপুরের ব্যবসায়ী শাহজাদকে রোববার মোরাদাবাদে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স গ্রেপ্তার করেছে। তিনি জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত সংবেদনশীল তথ্য তার হ্যান্ডলারদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন। তিনি একাধিকবার পাকিস্তান ভ্রমণ করেছিলেন এবং প্রসাধনী, পোশাক এবং মশলা পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

মোহাম্মদ মুর্তজা আলী

জলন্ধরে গুজরাট পুলিশের অভিযানের সময় মোহাম্মদ মুর্তজা আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের আইএসআইয়ের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, তার নিজের তৈরি একটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তিনি এটি করছিলেন। তার কাছ থেকে চারটি মোবাইল ফোন এবং তিনটি সিম কার্ড পাওয়া গেছে।

এছাড়া গাজালা ও ইয়ামিন মোহাম্মদ নামে আরও দুইজনকে একই অভিযোগে পাঞ্জাব থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির কয়েকদিন পর এই গ্রেপ্তারের ঘটনা তাৎপর্যপূর্ণ। পহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর ভারত পাকিস্তানের সন্ত্রাসী পরিকাঠামোকে দায়ী করেছিল।

হামলার জবাবে, ভারত পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী শিবিরগুলোতে হামলা চালানোর জন্য অপারেশন সিন্দুর শুরু করে। এর জবাবে পাকিস্তানও ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালায়। প্রতিশোধ হিসেবে, ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানের বিমানঘাঁটিতে হামলা চালায়। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ প তচরব ত ত গ র প ত র কর কর ছ ল ন র জন য র কর ছ

এছাড়াও পড়ুন:

বিচ্ছেদের পর স্বামী–স্ত্রীর দুজনেরই অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেলে কন্যাসন্তান কার জিম্মায় থাকবে?

প্রশ্ন: বিচ্ছেদের পর স্বামী–স্ত্রীর দুজনেরই অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেলে কন্যাসন্তান কার জিম্মায় থাকবে? আইন অনুযায়ী যদি বাবা অভিভাবকত্ব পান, সে ক্ষেত্রে তিনি কি মায়ের থেকে সন্তানকে দূরে রাখার অধিকার রাখেন? এমন পরিস্থিতিতে কোন ধরনের আইনিব্যবস্থা নিলে সুফল পাওয়া যাবে? নিজেদের মধ্যে আলোচনায় ব্যর্থ হয়েই পরামর্শ চাইছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

উত্তর: পারিবারিক আইনের আওতায় প্রায় সব ধর্মেই বাবা সন্তানের প্রকৃত আইনগত অভিভাবক। সাধারণত সব ধর্মেই মা–বাবার বিচ্ছেদ বা যেকোনো একজনের মৃত্যুর পরই অভিভাবকত্বের প্রশ্নটি আসে। মুসলিম পারিবারিক আইনে সন্তানের তিন ধরনের অভিভাবকত্বের কথা বলা আছে, সেগুলো হলো সন্তানের অভিভাবকত্ব, সন্তানের সম্পত্তির অভিভাবকত্ব, সন্তানের বিয়ের অভিভাবকত্ব।

মুসলিম আইনে শিশুসন্তানের দেখাশোনার বিষয়ে (জিম্মাদারের ক্ষেত্রে) সবচেয়ে বড় অধিকারী হলেন মা। তিনি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সন্তানের জিম্মাদার হয়ে থাকেন, কিন্তু কখনো অভিভাবক হতে পারেন না। এই জিম্মাদারির সময়কাল ছেলেসন্তানের ক্ষেত্রে সাত বছর, মেয়েসন্তানের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত। তবে নাবালকের কল্যাণেই নির্দিষ্ট বয়সের পরও মায়ের জিম্মায় সন্তান থাকতে পারে। যদি আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয় যে সন্তান মায়ের কাছে থাকলে তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ স্বাভাবিক হবে, সন্তানের কল্যাণ হবে এবং স্বার্থ রক্ষা হবে, সে ক্ষেত্রে আদালত মাকে ওই বয়সের পরও সন্তানের জিম্মাদার হিসেবে নিয়োগ করতে পারেন।

আরও পড়ুনবাংলাদেশে সন্তান কি দত্তক নেওয়া যায়১৫ মে ২০২৪

নাবালক সন্তানের ভরণপোষণ, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ অন্যান্য সব ব্যাপারে নৈতিক এবং অর্থনৈতিক সব সুবিধা প্রদান করা একজন অভিভাবকের দায়িত্ব। প্রচলিত একটি ধারণা রয়েছে যে মা পুনরায় বিয়ে করলে নাবালক সন্তানের জিম্মার অধিকার হারান। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে আদালত অবস্থা বিবেচনা করে নাবালককে তার মায়ের পুনর্বিবাহ হলেও তাঁর জিম্মায় রাখার আদেশ দিতে পারেন। কাজেই বিষয়টি সম্পূর্ণ আদালতের ব্যাপার। আপনার সন্তানের বয়স কত, তা জানাননি। আদালত সন্তানের কল্যাণের বিষয়টি আমলে নিয়ে নির্ধারণ করবেন সন্তান কার কাছে থাকবে। আপস-মীমাংসার মাধ্যমেও সন্তানকে নিজের কাছে আনা যায়। তবে সেটাতেও যেহেতু ব্যর্থ হয়েছেন, এখন আপনি চাইলে নাবালক সন্তানের জিম্মাদারির জন্য পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেন। পারিবারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজের আদালতে আপিল করা যায়।

একজন শিশুর সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার জন্য মা ও বাবা দুজনের ভালোবাসাই প্রয়োজন আছে। আশা করি, দুজনই সন্তানের সর্বোত্তম কল্যাণের কথা ভেবে বিষয়টি সমাধান করার পদক্ষেপ নেবেন।

লেখা পাঠানোর ঠিকানা

পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: [email protected] (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ডাক ঠিকানা : প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA

আরও পড়ুনপ্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে আবার ফিরে এসেছেন স্ত্রী২৮ আগস্ট ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পোশাক নিয়ে তনুশ্রীকে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য
  • চবি শিক্ষার্থীর হারানো মোবাইল পেয়ে ফেরত দিলেন রিকশাচালক
  • অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত একটি সংস্কারও করতে পারেনি: মান্না
  • পাকিস্তানি গুপ্তচর সন্দেহে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ভারত সরকার 
  • চোখের জলে, উষ্ণ অভ্যর্থনায় ম্যানসিটি ছাড়লেন ডি ব্রুইন
  • পারকিনসন্স রোগের কারণ ও করণীয়
  • বিচ্ছেদের পর স্বামী–স্ত্রীর দুজনেরই অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেলে কন্যাসন্তান কার জিম্মায় থাকবে?
  • পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে এবার উত্তর প্রদেশে একজনকে গ্রেপ্তার
  • পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ভারতে এবার ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার