সিলেটে বিএনপি নেতার ফোনে আ.লীগের সাবেক মেয়রের ‘কল’, ফেসবুকে সমালোচনা
Published: 21st, May 2025 GMT
সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর মুঠোফোনে সিলেট সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ‘কল’ এসেছে—এমন অভিযোগ তুলে ইমদাদের বিপক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু করেছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের একটি অংশ।
তবে বিএনপি নেতা ইমদাদ হোসেন চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরের বারুতখানা এলাকায় বিএনপির নেতাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের একটি মতবিনিময় সভা ছিল। সভার একপর্যায়ে মাগরিবের নামাজে যান ইমদাদ। তখন তাঁর মুঠোফোনটি অন্য একজনের কাছে ছিল। তখন ইমদাদের মুঠোফোনে একটি কল আসে এবং ডিসপ্লেতে দেখা যায়, ‘আনোয়ারুজ্জামান ইউকে’। এ দৃশ্য সেখানে থাকা কয়েকজন তাঁদের মুঠোফোনে ধারণ করেন। সভা শেষে সন্ধ্যায় ফেসবুকে এর স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই ইমদাদের মুঠোফোনে লন্ডনে অবস্থানরত সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের কল দেওয়া নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে আলোচনা–সমালোচনা শুরু হয়।
এ নিয়ে গতকাল রাত ১১টার দিকে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে নিজের ব্যাখ্যা দেন ইমদাদ হোসেন চৌধুরী। এ সময় তিনি দাবি করেন, অনুষ্ঠানের ছবি তোলার জন্য আখতার নামের একজনের কাছে তাঁর মুঠোফোনটি ছিল। সভা শেষে নামাজ সেরে নাশতা খেয়ে ওই স্থান থেকে বের হওয়ার পর একজন তাঁকে কল করে জানান, তাঁর (ইমদাদ) ফোনে নাকি আনোয়ারুজ্জামানের কল এসেছে। তখন তিনি কললিস্ট ঘেঁটে দেখতে পান, ৬টা ৫১ মিনিটে ‘আনোয়ারুজ্জামান ইউকে’ লেখা একটি নম্বর থেকে কল এসেছে।
ইমদাদ হোসেন চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কল এসেছে দেখতে পেয়ে তিনি আখতারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করেন। তখন আখতার তাঁকে জানান, তাঁর (আখতার) কাছে ফোন থাকাকালে বিএনপির সিলেট বিমানবন্দর থানা শাখার সদস্যসচিব সৈয়দ সারোয়ার রেজা ও মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) ইমন কিছুক্ষণের জন্য আখতারকে নিয়ে আলাদা একটি টেবিলে বসেন এবং ওই সময় ইমদাদের ফোনের ডিসপ্লের ছবি সরোয়ার-ইমন তুলেছেন। এর বেশি কিছু আখতার জানেন না।
মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘যে আনোয়ারুজ্জামানের কারণে সিলেটের রাজনীতি কলুষিত হয়েছে, যাঁর আদেশে নগরে জুলাইয়ে আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীরা হামলার শিকার হয়েছে। সেই ডেভিল আনোয়ারুজ্জামানের সঙ্গে আমার যোগাযোগ থাকার প্রশ্নই আসে না। যাঁরা ফোনের ছবি তুলেছেন, তাঁরাই ষড়যন্ত্র করে আমার ইমেজকে নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তাঁরা এমনটা করেছেন।’
ইমদাদ হোসেন চৌধুরী দাবি করেন, যুক্তরাজ্যে থাকা অবস্থায় ৮ থেকে ১০ বছর আগে আনোয়ারুজ্জামানের মুঠোফোন নম্বর তাঁর মুঠোফোনে স্টোর হয়ে থাকতে পারে। তবে কখনো আনোয়ারুজ্জামানের সঙ্গে তাঁর কথা হয়নি।
আজ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে যোগাযোগ করলে ইমদাদ হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যিনি আমার জনপ্রিয়তায় অ্যাফেকটেড, তিনিই এ ষড়যন্ত্র করেছেন। তিনিই পিএস দিয়ে এমন ষড়যন্ত্র করেছেন। কারণ, তখন আমার হাতে ফোনটি ছিল না। কোনো প্রযুক্তি দিয়েই হোক কিংবা কাউকে দিয়ে আনোয়ারুজ্জামানের ফোন থেকে হোক, ঠিক জানি না, কীভাবে এ কল করিয়েছে। মোটকথা আনোয়ারুজ্জামান আমাকে কল করার কথা নয়।’
এ ঘটনার নেপথ্যে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী সম্পৃক্ত আছেন বলে ইমদাদ হোসেন প্রথম আলোর এ প্রতিবেদককে ইঙ্গিত দেন।
তবে ইমদাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে রেজাউল হাসান কয়েস লোদী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কোনো পিএসই নেই। এ ছাড়া এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা বলেন, গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান লন্ডনে চলে যান। তিনি কেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদককে কল করবেন? নিশ্চয়ই তাঁর (ইমদাদ) সঙ্গে আনোয়ারুজ্জামানের সখ্য, আঁতাত কিংবা যোগাযোগ আছে। এ বিষয়টির সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। নতুবা দলের তৃণমূলে ভুল বার্তা যাবে।
স্থানীয় বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন করতে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী দীর্ঘদিন ধরে নগরে কাজ করছেন। মেয়র পদে ইমদাদ হোসেনও দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন করতে আগ্রহী। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে ভেতরে ভেতরে দূরত্বও আছে। তবে লোদী-ইমদাদ ছাড়াও মেয়র পদে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকীর নামও জোরেশোরে আলোচনায় আছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইমদ দ হ স ন চ ধ র ব এনপ র স ইমদ দ র কর ছ ন আখত র
এছাড়াও পড়ুন:
মামদানির জয়ে ইসলামবিদ্বেষের জ্বালা
নিউইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে প্রাথমিকভাবে জোহরান মামদানির বিস্ময়কর বিজয় দুটি শহর ও দুটি আমেরিকার গল্প। একটিতে আশাবাদী ও প্রগতিশীল রাজনীতির বাহক একজন যুবক, যা তাদের বিশাল তহবিল, নেটওয়ার্ক এবং ডেমোক্রেটিক দলের সিলসিলার মধ্য দিয়ে এস্টাবলিশমেন্ট বা ক্ষমতা বলয়ের হর্তাকর্তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করলেন এবং বিজয় ছিনিয়ে আনলেন।
অন্য গল্পে বর্ণবাদ ও ইসলামবিদ্বেষের এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে মুসলিমবিদ্বেষী যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহরটি দখল করেছে। মামদানির জয়ের পর প্রবল স্রোত, তীব্র ও নোংরা বর্জ্যের মতো মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা অনিয়ন্ত্রিত ও অপ্রতিরোধ্যভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আজকাল অবাক করে দেওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনেক কিছু করতে হয়। কিন্তু মামদানি মূলধারার কুসংস্কারের অশ্লীল মাত্রা তুলে ধরতে বা উদোম করে দিতে অল্পতেই সক্ষম হয়েছেন।
রাজনীতিবিদ, জনসাধারণ, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সদস্য এবং সামাজিক মাধ্যমের প্রভাব-অনুসারীদের নরককুণ্ড– সবাই একত্রে এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যা কেবল একটি সম্মিলিতভাবে স্বপ্রণোদিত ভ্রান্ত ধারণা বলে তুলে ধরা যেতে পারে। যেমন স্ট্যাচু অব লিবার্টির ওপর বোরকার একটি ছবি; হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের মধ্যে ডেপুটি চিফ স্টিফেন মিলার বলেছেন, মামদানির জয় তখনই ঘটে, যখন কোনো দেশ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়।
রিপাবলিকান ও কংগ্রেস সদস্য অ্যান্ডি ওগলস মামদানিকে ‘ছোট্ট মুহাম্মদ’ বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করে দেশ থেকে নির্বাসনের আবেদন করেছেন। তাঁকে ‘হামাস সন্ত্রাসীদের প্রতি সহানুভূতিশীল’ ও ‘জিহাদি সন্ত্রাসী’ বলা হয়েছে।
মামদানিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘কমিউনিস্ট-পাগল’ বলার মধ্য দিয়ে কতটা বর্ণবাদী প্রতিক্রিয়ার চাষ হয়েছে, তার পরিমাপক হিসেবে দেখা যায়। তবে তার একটি পরিমাপক হলো তুলনামূলক সংযত থাকা। কিছু প্রতিক্রিয়া এতটাই উগ্র ছিল, আমি প্রায়ই বুঝতে পারতাম না, কোনটা আসল আর কোনটা উপহাস। কারণ মামদানির ব্যাপারে একজন ভয়ংকর ইসলামপন্থি স্লিপার এজেন্টের ধারণাটি স্পষ্টতই রসিকতা, যার জীবনাচার অন্য সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে প্রচণ্ড আন্তরিকতাই প্রধান।
কিন্তু এটা কোনো রসিকতা নয় এবং যদি তাই-ই হয়, তাহলে এটা আমার ওপরই নির্ভর করছে। কারণ এত বছর পরও জনসাধারণের মধ্যে মুসলমানরা জনসাধারণের মন ও মগজে কী প্রভাব ফেলে, তা অবমূল্যায়ন করছি। আর অনেকেই মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা নিয়ে কতটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এবং কেন তারা তা করবেন না? আজ পর্যন্ত মামদানির নিজ দলের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব, চাক শুমার ও হাকিম জেফ্রিস এই আক্রমণের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করেননি। আর যেসব রাজনীতিবিদ ও চেনামুখ এটি তৈরি করেছেন, তাদের কোনো নিন্দা বা পরিণতি ভোগ করতে হবে না। কারণ মৌলিকভাবে মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা সব ধরনের বর্ণবাদের মতো যখন এটি স্বাভাবিক হয়ে ওঠে, তখনই তা বৃদ্ধি পায় যখন এর একটি পদ্ধতিগত সমর্থনের প্রক্রিয়া থাকে। যার ফলে এর আক্রমণাত্মক দিকও প্রকাশ পায় না।
কিন্তু মামদানির বিরুদ্ধে আক্রমণের প্রতি উদাসীনতার কারণ হলো তিনি কেবল তাঁর ধর্মীয় পটভূমিতেই নন, বরং আরও গুরুত্বপূর্ণ দিক থেকে একজন বহিরাগত। তাঁর অপরাধ তিনি একজন মুসলিম ও রাজনীতিবিদ হতে সাহস দেখিয়েছেন, তা কিন্তু নয়। বরং তিনি যদি একজন প্রচলিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপক হতেন, তবে তিনি ‘পাস’ করতে পারতেন। এ ছাড়া অর্থনীতি ও রাজনীতি সম্পর্কে তাঁর দৃঢ় মতামত রয়েছে, যা তাঁকে পুঁজিবাদ ও ইসরায়েলের ব্যাপারে মূলধারার গোঁড়ামির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চিহ্নিত করে।
কর ও ভাড়া নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে তাঁর বাম ধারার মতামত এবং মার্কিন পয়সায় ফিলিস্তিনিদের হত্যার বিরুদ্ধে আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে মামদানির প্রতি প্রতিক্রিয়া সব সময়ই সম্ভব ছিল। কিন্তু তিনি এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অনেক কিছু করেছেন। তিনি ইহুদিবিদ্বেষের প্রতি তাঁর বিরোধিতা, সব ধরনের ঘৃণামূলক অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁর অর্থনৈতিক এজেন্ডা হলো শহরটিতে খাদ্য থেকে শুরু করে শিশুযত্ন আরও সাশ্রয়ী করে তোলার পাটাতন গড়ে তোলা, যার বিস্তারিত ব্যাখ্যা তিনি তুলে ধরেছেন।
‘ইন্তিফাদা বিশ্বায়ন করুন’ বাক্যাংশটি প্রত্যাখ্যান করতে মামদানি অস্বীকৃতি জানান। কারণ এটি ‘ফিলিস্তিনি মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সমতা এবং সমানাধিকারের জন্য মরিয়া আকাঙ্ক্ষা’ প্রকাশ করে। এটি একটি ইঙ্গিত হিসেবে ধরা হয়েছে, তিনি এক ধরনের সহিংস জিহাদকে সমর্থন করেন। এটি এমন এক পাঠ, যা ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকারের ক্ষেত্রে তাঁর বারবার দাবি তোলা এবং ইহুদিদের বিরুদ্ধে যে কোনো সহিংসতার নিন্দা করাকে উপেক্ষা করে।
মামদানি এখনও মেয়র হননি এবং সম্ভবত তিনি পরিচয় ব্যবহার করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই তাঁর বিশ্বাসকে অসম্মান করার জন্য ক্রমবর্ধমান প্রোপাগান্ডার মুখোমুখি হবেন। আর এখানেই তাঁর জয়ের প্রতিক্রিয়া উদ্বেগজনক এবং সম্ভাব্যভাবে প্ররোচিত। যেমন জ্বরের শেষ ভাঙনের আগ পর্যন্ত জমাট বাঁধা রূপ।
নাসরিন মালিক: গার্ডিয়ানের কলাম লেখক;
দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর
ইফতেখারুল ইসলাম