সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর মুঠোফোনে সিলেট সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ‘কল’ এসেছে—এমন অভিযোগ তুলে ইমদাদের বিপক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু করেছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের একটি অংশ।

তবে বিএনপি নেতা ইমদাদ হোসেন চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরের বারুতখানা এলাকায় বিএনপির নেতাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের একটি মতবিনিময় সভা ছিল। সভার একপর্যায়ে মাগরিবের নামাজে যান ইমদাদ। তখন তাঁর মুঠোফোনটি অন্য একজনের কাছে ছিল। তখন ইমদাদের মুঠোফোনে একটি কল আসে এবং ডিসপ্লেতে দেখা যায়, ‘আনোয়ারুজ্জামান ইউকে’। এ দৃশ্য সেখানে থাকা কয়েকজন তাঁদের মুঠোফোনে ধারণ করেন। সভা শেষে সন্ধ্যায় ফেসবুকে এর স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই ইমদাদের মুঠোফোনে লন্ডনে অবস্থানরত সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের কল দেওয়া নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে আলোচনা–সমালোচনা শুরু হয়।

এ নিয়ে গতকাল রাত ১১টার দিকে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে নিজের ব্যাখ্যা দেন ইমদাদ হোসেন চৌধুরী। এ সময় তিনি দাবি করেন, অনুষ্ঠানের ছবি তোলার জন্য আখতার নামের একজনের কাছে তাঁর মুঠোফোনটি ছিল। সভা শেষে নামাজ সেরে নাশতা খেয়ে ওই স্থান থেকে বের হওয়ার পর একজন তাঁকে কল করে জানান, তাঁর (ইমদাদ) ফোনে নাকি আনোয়ারুজ্জামানের কল এসেছে। তখন তিনি কললিস্ট ঘেঁটে দেখতে পান, ৬টা ৫১ মিনিটে ‘আনোয়ারুজ্জামান ইউকে’ লেখা একটি নম্বর থেকে কল এসেছে।

ইমদাদ হোসেন চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কল এসেছে দেখতে পেয়ে তিনি আখতারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করেন। তখন আখতার তাঁকে জানান, তাঁর (আখতার) কাছে ফোন থাকাকালে বিএনপির সিলেট বিমানবন্দর থানা শাখার সদস্যসচিব সৈয়দ সারোয়ার রেজা ও মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) ইমন কিছুক্ষণের জন্য আখতারকে নিয়ে আলাদা একটি টেবিলে বসেন এবং ওই সময় ইমদাদের ফোনের ডিসপ্লের ছবি সরোয়ার-ইমন তুলেছেন। এর বেশি কিছু আখতার জানেন না।

মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘যে আনোয়ারুজ্জামানের কারণে সিলেটের রাজনীতি কলুষিত হয়েছে, যাঁর আদেশে নগরে জুলাইয়ে আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীরা হামলার শিকার হয়েছে। সেই ডেভিল আনোয়ারুজ্জামানের সঙ্গে আমার যোগাযোগ থাকার প্রশ্নই আসে না। যাঁরা ফোনের ছবি তুলেছেন, তাঁরাই ষড়যন্ত্র করে আমার ইমেজকে নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তাঁরা এমনটা করেছেন।’

ইমদাদ হোসেন চৌধুরী দাবি করেন, যুক্তরাজ্যে থাকা অবস্থায় ৮ থেকে ১০ বছর আগে আনোয়ারুজ্জামানের মুঠোফোন নম্বর তাঁর মুঠোফোনে স্টোর হয়ে থাকতে পারে। তবে কখনো আনোয়ারুজ্জামানের সঙ্গে তাঁর কথা হয়নি।

আজ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে যোগাযোগ করলে ইমদাদ হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যিনি আমার জনপ্রিয়তায় অ্যাফেকটেড, তিনিই এ ষড়যন্ত্র করেছেন। তিনিই পিএস দিয়ে এমন ষড়যন্ত্র করেছেন। কারণ, তখন আমার হাতে ফোনটি ছিল না। কোনো প্রযুক্তি দিয়েই হোক কিংবা কাউকে দিয়ে আনোয়ারুজ্জামানের ফোন থেকে হোক, ঠিক জানি না, কীভাবে এ কল করিয়েছে। মোটকথা আনোয়ারুজ্জামান আমাকে কল করার কথা নয়।’

এ ঘটনার নেপথ্যে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী সম্পৃক্ত আছেন বলে ইমদাদ হোসেন প্রথম আলোর এ প্রতিবেদককে ইঙ্গিত দেন।

তবে ইমদাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে রেজাউল হাসান কয়েস লোদী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কোনো পিএসই নেই। এ ছাড়া এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা বলেন, গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান লন্ডনে চলে যান। তিনি কেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদককে কল করবেন? নিশ্চয়ই তাঁর (ইমদাদ) সঙ্গে আনোয়ারুজ্জামানের সখ্য, আঁতাত কিংবা যোগাযোগ আছে। এ বিষয়টির সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। নতুবা দলের তৃণমূলে ভুল বার্তা যাবে।

স্থানীয় বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন করতে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী দীর্ঘদিন ধরে নগরে কাজ করছেন। মেয়র পদে ইমদাদ হোসেনও দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন করতে আগ্রহী। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে ভেতরে ভেতরে দূরত্বও আছে। তবে লোদী-ইমদাদ ছাড়াও মেয়র পদে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকীর নামও জোরেশোরে আলোচনায় আছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইমদ দ হ স ন চ ধ র ব এনপ র স ইমদ দ র কর ছ ন আখত র

এছাড়াও পড়ুন:

অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত একটি সংস্কারও করতে পারেনি: মান্না

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সাড়ে ৯ মাসে একটি সংস্কারও করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।

আজ বুধবার দুপুরে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের ‘ফ্যাসিবাদ, গণ–অভ্যুত্থান, বিপ্লব ও সংবিধান বিতর্ক’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। বেলা সোয়া ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এই সভা শুরু হয়। সভার আয়োজক ‘কালের দাবি প্রকাশনা’।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় কাজ হলো নির্বাচনের, সংস্কারের ব্যবস্থা করা। কিন্তু একটা সংস্কারও এই সরকার এখন পর্যন্ত করতে পারেনি।

মান্না বলেন, ‘ড. ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর ন্যূনতম ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার করে নির্বাচনের কথা বলেছিলেন। ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৪৬টিতে সবগুলো দল একমত হয়েছে। বেশির ভাগই তো ঐক্য হয়েছে। তারপরও নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন না কেন?’

স্টারলিংকের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাইবার সিস্টেমের কর্তৃত্ব বিদেশিদের কাছে চলে যাচ্ছে কি না অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রশ্ন রাখেন তিনি।

বর্তমানে দেশে বিদেশি পাসপোর্টধারী কতজন আছেন, সেই হিসাব পাওয়া মুশকিল বলে উল্লেখ করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি। তিনি বলেন, ‘ওই রকম একজন মানুষ, যিনি বাংলাদেশে এর আগে কখনো সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ছিলেন না, তাঁকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন আবার শুনছি সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার আর্মির ওপর কন্ট্রোল নেওয়ার জন্য বিশেষভাবে চেষ্টা করছেন। জানি না। তবে এগুলো মানুষের মধ্যে গুজব বা সংশয় তৈরি করছে।’

অন্তর্বর্তী সরকার তার এজেন্ডার বাইরে গিয়ে অনেক কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে উচ্চ আদালতের রায়ে একজন মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। একই উচ্চ আদালতের রায়ে বিএনপির ইশরাক মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। কিন্তু সেটি নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে ঢাকা শহরে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। রিট করা হয়েছে। তার মানে আইন কি একেক শহর বা ব্যক্তির জন্য একেক রকম?

মিয়ানমারে করিডর বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও জনগণের সঙ্গে সরকারের খোলাখুলি কথা বলা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ। তিনি বলেন, এটি নিরাপত্তাব্যবস্থাকে কতটা সাহায্য বা বিপদজনক করে তুলবে, সেটির বাস্তব বিশ্লেষণ হওয়া উচিত। দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হয়, এমন কিছু দেশের মানুষ মেনে নেবে না বলেও মনে করেন তিনি।

চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার বিষয়ে মাহবুব উল্লাহ বলেন, আধুনিক বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বাইরের এজেন্সিকে দিয়ে কিছু কাজ করানো অযৌক্তিক কিছু নয়। সে জন্য পুরোনো মাইন্ডসেট থেকে বেরিয়ে আসা দরকার।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে আরেক সদস্য আকবর খান।

সভায় আরও বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশরেকা অদিতি হক, লেখক অনিন্দ্য আরিফ, সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, কবি মোহন রায়হান ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুন নুর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চবিতে ৬ ছাত্রীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, একজনের স্থায়ী বহিষ্কার বহাল
  • আইরিশ নাবিকের চোখে বাংলার হজযাত্রী
  • চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ ছাত্রীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, দুজনের স্থায়ী বহিস্কার বহাল
  • গরমেও কেন নাক বন্ধ থাকে
  • নারী কমিশন নিয়ে গালাগাল আলোচনাকে খারাপ দিকে নিয়ে গেছে: ফরহাদ মজহার
  • যশোর ডিসি অফিসে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সাহায্য চাওয়া নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড
  • পোশাক নিয়ে তনুশ্রীকে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য
  • চবি শিক্ষার্থীর হারানো মোবাইল পেয়ে ফেরত দিলেন রিকশাচালক
  • অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত একটি সংস্কারও করতে পারেনি: মান্না