রোগপ্রতিরোধী গুণাবলি ও পুষ্টির জন্য পরিচিত মিষ্টি আলু। এর তিনটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। অধিক ফলনশীল কমলা, বেগুনি ও গোলাপি রঙের এ আলু চাষ করা যাবে সারা বছরই। এ ছাড়া রয়েছে এমন পুষ্টি, যা ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।
বাকৃবির কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদপ্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড.
গবেষক দল সমকালকে জানিয়েছে, পেরুতে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল পটেটো সেন্টারের সদরদপ্তর থেকে বিশেষ বীজ এনে পলিক্রস ব্রিডিং পদ্ধতিতে জাতগুলো উদ্ভাবন করা হয়েছে। এগুলো সাধারণ মিষ্টি আলুর চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি ফলনশীল। প্রতিটি গাছে গড়ে এক থেকে দেড় কেজি আলু পাওয়া যায়। ফসল তোলা যায় মাত্র ৯০ থেকে ১০০ দিনেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ– এই আলু সারাবছরই চাষ করা যাবে। এতে কৃষক যেমন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন আবার সারাবছরই মিলবে পুষ্টির জোগান।
তারা আরও জানান, নতুন উদ্ভাবিত কমলা রঙের মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-সি ও খনিজ উপাদান রয়েছে; যা চোখের রোগ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। বেগুনি মিষ্টি আলুতে অ্যান্থোসায়ানিন ও পলিফেনল থাকায় এটি ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। গোলাপি জাত থেকেও মিলবে এমন পুষ্টি।
বর্তমানে বাকৃবির মাঠ, ব্রহ্মপুত্র নদের চর ও কিশোরগঞ্জ জেলায় নতুন এ আলুগুলো পরীক্ষামূলকভাবে চাষ হচ্ছে। দেশজুড়ে জাতগুলো ছড়িয়ে দিতে এরইমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মাধ্যমে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রধান গবেষক অধ্যাপক আরিফ হাসান সমকালকে বলেন, দেশে বর্তমানে ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু চাষ হয়। প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ১০ টন ধরে উৎপাদন হয় আড়াই লাখ টনের মতো। অথচ চাহিদা এর প্রায় দ্বিগুণ। এখন নতুন জাতগুলো মিষ্টি আলুর উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি পুষ্টিচাহিদা পূরণেও রাখবে উল্লেখযোগ্য অবদান।
তিনি আরও বলেন, উদ্ভাবিত তিন জাতের আলুতেই প্রচুর পরিমাণে অ্যান্থোসায়ানিন, কেরাটিন ও ফাইবার রয়েছে, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই আলু নিয়মিত খেলে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ নানা অন্ত্রের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। রক্ত পরিষ্কারে সহায়তা এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও এর পুষ্টিগুণ ভূমিকা রাখে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ময়মনস হ
এছাড়াও পড়ুন:
ফেনীতে নামছে বন্যার পানি, ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন
ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে, উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারী বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট এই বন্যার পানি যত কমছে; ততই স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র।
শুক্রবার (১১ জুলাই) সরেজমিন বন্যাকবলিত জেলার পাঁচটি উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, স্রোতে ভেঙে গেছে বিভিন্ন সড়ক। অনেক সড়ক এখনো পানির নিচে। এখনো কিছু বাড়িঘরে পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন অনেকে।
এর আগে, গত মঙ্গলবার মুহুরি, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি স্থান ভেঙে একের পর এক জনপদ প্লাবিত হয়।
আরো পড়ুন:
দুই জেলার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা
ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত
পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া এলাকার বাসিন্দা মাসুম চৌধুরী বলেন, ‘‘সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে ঘর বানিয়েছিলাম। কিন্তু, একদিনও থাকতে পারিনি। বাঁধ ভাঙার খবর পেয়ে ঠেকাতে গিয়েছিলাম। তবে তার আগেই পানি ঢুকে ঘরটি চোখের সামনে ভেসে যায়।’’
ফুলগাজীর উত্তর শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা আলী আশরাফ বলেন, ‘‘নদীর পাড়ে থাকি বলে প্রতি বছরই এই দুঃখ সইতে হয়। কিন্তু, বারবার সব তছনছ হয়ে গেলে আমরা কীভাবে বাঁচব?’’
দৌলতপুর এলাকার জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘এক সপ্তাহ পর আজ সূর্যের দেখা মিলেছে। এখনো বাড়িতে হাঁটুপানি। আশা করছি, আর বৃষ্টি না হলে পানি দ্রুত নামবে।’’
পশ্চিম অলকার বাসিন্দা মহসিন বলেন, ‘‘বাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে, তবে ঘরটা ভেঙে একাকার। প্রতি বছরই এমন দুর্ভোগে পড়তে হয়।’’
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, এবার বন্যায় পাঁচ উপজেলার ১০৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ৮২টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ৯ হাজার ৫০০ মানুষ।
জেলা কৃষি ও মৎস্য বিভাগের প্রাথমিক হিসাবে জানা গেছে, এবারের বন্যায় ১ হাজারেরও বেশি মৎস্য ঘের ও পুকুর এবং ১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে। মোট ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে।
জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘‘গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা স্বস্তির খবর।’’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, “পরশুরাম ও ফুলগাজী অংশে নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে, ছাগলনাইয়া ও সদর এলাকায় পানি এখনো বাড়তি। পানি কমার পর বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হবে।”
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, “খাদ্য ও প্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ চলছে। জনগণের নিরাপত্তায় কোথাও কোথাও সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।”
ঢাকা/সাহাব/রাজীব