বৃষ্টি যেন ধানচাষিদের কান্না হয়ে ঝরছে
Published: 24th, May 2025 GMT
বর্গা নিয়ে তিন বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছিলেন নওগাঁর মান্দা উপজেলার বড় বেলালদহ গ্রামের কৃষক সাহার আলী (৫৫)। সোনার ফসলের জন্য চার মাস রাত-দিন কষ্ট করেছেন। খরচের কমতি রাখেননি। এখনো তিনি ধান ঘরে তুলতে পারেননি। শ্রমিক লাগিয়ে তিন বিঘা জমির ধান কেটে শুকানোর জন্য মাঠেই ফেলে রেখেছিলেন। কিন্তু গত চার-পাঁচ দিনের ভারী বৃষ্টিতে তাঁর কষ্টের ফসল নষ্ট হতে চলেছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে ধান মাঠ থেকে ঘরে তুলতে না পারলে সব ধান নষ্ট হয়ে যাবে।
সাহার আলী জানান, বসতবাড়ির অল্প জমি ছাড়া তাঁর নিজের কোনো জমিজমা নেই। মানুষের কাছ থেকে জমি বর্গা নিয়ে সবজি, শর্ষে ও ধান আবাদ করে সংসার চলে। বর্গা নেওয়া তিন বিঘা জমিতে শর্ষের আবাদ করেছিলেন। জানুয়ারি মাসে সরিষা কাটার পর জমিতে বোরো আবাদ করেন। কিন্তু ফসল ঘরে তোলার আগমুহূর্তে বৈরী আবহাওয়ায় তাঁর স্বপ্ন ধূলিসাৎ হতে চলেছে।
সাহার আলী বলেন, গত সোমবার শ্রমিক দিয়ে তিন বিঘা জমির ধান কেটে নেন। সেদিন ঝলমলে রোদ ছিল। কাটা ধান শুকানোর জন্য আঁটি বেঁধে খেতেই রাখতে বলেন শ্রমিকদের। দুই দিন মাঠে ফেলে রাখলে ধান শুকিয়ে যায়। এই ধান দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। কিন্তু ধান কাটার পরদিন মঙ্গলবার থেকে শুরু হয় বৃষ্টি। প্রতিদিন থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। জমিতে পানি জমে যাওয়ায় কেটে রাখা ধান নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ভেজা ধান তোলা ও মাড়াই করা সমস্যা। এ জন্য শ্রমিকেরাও তুলতে চাইছে না।
সাহার আলীর মতো বোরো ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ওই এলাকার জিল্লুর রহমান, ইয়াছিন আলী, পলাশ সরকার, জাহান আলীসহ আরও অনেকে। কৃষকেরা জানান, যেসব খেতে মৌসুমের শুরুতেই ধান লাগানো হয়েছিল, সেই সব খেতের ধান এরই মধ্যে কাটা-মাড়াই শেষ হয়েছে। যেসব জমিতে শর্ষে ও আলুর আবাদ করা হয়েছিল, সেখানে বোরো ধান লাগাতে কিছুটা দেরি হয়। এখন মাঠের প্রায় সব খেতেই ধান পেকে গেছে। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া, পানিতে ডুবে ধান নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং ঝড়ে খেতের ধান এলোমেলোভাবে নুয়ে পড়ায় ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছেন না তাঁরা। চার-পাঁচ দিন ধরে প্রতিদিনই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। খেতে বৃষ্টির পানি জমে গেছে। এতে খেতেই নষ্ট হচ্ছে ধান।
নওগাঁর বদলগাছীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের তথ্যমতে, আজ শনিবার দুপুর পর্যন্ত নওগাঁয় ২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গত পাঁচ দিনে প্রতিদিন গড়ে বৃষ্টি হয়েছে ২২ মিলিমিটার।
মান্দা উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় বোরো আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে। এরই মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ জমির ধান কাটা-মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। এবার আলু আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে এবং শর্ষে হয়েছে ৫ হাজার ২০০ হেক্টরে। এসব জমিতে আলু ও শর্ষে কেটে বোরো ধান রোপণ করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। এই দেরির কারণে এখন ধান কাটতে একটু দেরি হচ্ছে। ধান পাকার সময়ে টানা বৃষ্টির কারণে ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষকেরা।
মান্দার পশ্চিম নুরুল্লাবাদ গ্রামের কৃষক আবদুল জলিল বলেন, ‘আমন ধান কাটার পর দুই বিঘা জমিতে আলু চাষ করি। আলু তোলার পর সেই জমিতে বোরো ধান লাগাই। পাকা ধান কেটে শুকানোর জন্য জমিতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সেই ধান আর ঘরে তুলতে পারছি না। খেতেই ধান পচে যাচ্ছে। খুব বিপদে আছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, মান্দায় সবচেয়ে বেশি শর্ষে ও আলুর আবাদ হয়। এ বছর প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু ও শর্ষের আবাদ হয়েছিল। আলু ও শর্ষে তোলার পর বোরো লাগাতে একটু দেরি হওয়ায় ধান কাটা-মাড়াই করতেও দেরি হচ্ছে। অতিবৃষ্টির কারণে কৃষকেরা দেরিতে রোপণ করা ধান কাটতে একটু বিড়ম্বনায় পড়েছেন। বৈরী আবহাওয়ার কারণে মাঠে থাকা ধানের বিষয়ে তাঁরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। পাশাপাশি সুযোগ পেলে কৃষকদের দ্রুত ধান কাটতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স হ র আল র জন য উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
যারা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছে তাদের কেনার ক্ষমতা কোনো দলের হয়নি: নাহিদ ইসলাম
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমরা দেশের সংষ্কার চেয়েছি, বিচার চেয়েছি এবং নতুন সংবিধান চেয়েছি। কিন্তু এই সকল জনদাবির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে একটি পক্ষ। যারা পুরাতন বন্দোবস্তকে টিকিয়ে রাখতে রাখতে চায়, যারা চাঁদাবাজ এবং সন্ত্রাসকে টিকিয়ে রাখতে চায়। কিন্তু আমরা বলেছি, গণঅভ্যুত্থানের পরে এত মানুষের জীবনদানের পরেও তারা যদি মনে করে পুরাতন রাজনীতিকে টিকিয়ে রাখবে, এটা এত সহজ হবে না।
তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের শক্তি এখনও বাকি আছে, এখনও তাদের গণজোয়ার রয়েছে। যারা বিপ্লবের শক্তি, যারা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে তাদেরকে কেনার ক্ষমতা বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের হয়নি।
শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা শহীদ আসিফ চত্বরে এক পথসভায় প্রধান অতিথি বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন। জুলাই পদযাত্রার ১২তম দিনে খুলনা থেকে সাতক্ষীরা পৌঁছায় পদযাত্রা। সেখানে এনসিপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী কেন্দ্রীয় নেতাদের স্বাগত জানান।
একটি রাজনৈতিক দলকে উদ্দেশ্য করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘তারা ভেবেছিল ২/৩টা আসন দেখিয়ে, ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারার লোভ দেখিয়ে তারা গণঅভ্যুত্থানের শক্তিকে কিনে নেবে। কিন্তু যারা বিপ্লবের শক্তি, যারা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে তাদেরকে কেনার ক্ষমতা বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের হয়নি।’
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট আমরা বলেছিলাম, আসুন জাতীয় সরকার করি, দেশটাকে পুর্র্নগঠন করি, সকল বিভাজন সবকিছুর উর্দ্ধে গিয়ে দেশকে নতুন করে গড়ে তুলি কিন্তু তারা আমাদের সেই প্রস্তাবে সায় দেয়নি। তারা বলেছিল তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে, আবার বলেছে ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। ক্ষমতার ভাগবাটোয়া ছাড়া দেশ সংস্কারের কোনো বিষয়ে তাদের সমর্থন পাওয়া যায়নি। আমরা বলেছিলাম আমরা দেশের ভিতরে শত্রু তৈরি করতে চাই না। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ পুনর্গঠন করতে চায়। আমরা এখনও বলছি, নির্বাচনী ভাগবাটোয়ারা নয়, দেশ সংস্কারে আমাদের দরজা এখনও খোলা আছে। যদি এবার দরজা বন্ধ হয়, তবে জনগন আপনাদের আর ক্ষমা করবে না।
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সার্জিস আলমের সঞ্চলনায় পথসভায় বক্তব্য দেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, ডা. তাসনুবা জাবিন, মেসবাহ কামাল, ডা. মনিরুজ্জামান, ডা. তাসনিম জারা প্রমুখ।
পথসভায় উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্থা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম, মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরউদ্দীন পাটোয়ারীসহ অন্যান্য নেতারা।
তীব্র গরম ও প্রচণ্ড রোদ্র উপেক্ষা করে নেতৃবৃন্দ সাতক্ষীরার খুলনা রোড মোড়ে শহীদ আসিফ চত্বরে পৌঁছালে সমাবেশস্থল স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে।
এ সময় নাহিদ ইসলাম তার বক্তব্যে আরও বলেন, ‘আপনারা উপকূল এলাকার বাসিন্দা। ঘূর্ণিঝড় ও নানা প্রতিকুলতা সত্ত্বেও এই দেশের উপকূলকে পাহারা দিয়ে যাচ্ছেন। সাতক্ষীরার শিক্ষা, স্বাস্থ্যের অব্যবস্থাপনা, যাতায়াত ব্যবস্থার অবস্থাপনা আমরা জানি। সাতক্ষীরাবাসী এখনও রেললাইনের সুযোগ পায় না, কোনো রেল সংযোগ ৫৪ বছরেও সাতক্ষীরায় এসে পৌঁছায়নি।
তিনি উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা কী সাতক্ষীরায় রেললাইন চাই? সাতক্ষীরায় শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি চাই? স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি চাই?’ এ সময় উপস্থিত জনতা হাত উচিয়ে এতে সমর্থন জানান। এ সময় নাহিদ আরও বলেন, ‘আমাদের জলবায়ু আমাদের রক্ষা করতে হবে। আমাদের সুন্দরবন, আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। সাতক্ষীরার মানুষ মাটির মানুষ, আপনাদের জলবায়ু নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি কাজ করবে। আপনারা নাগরিক পার্টির সঙ্গে থাকবেন, চাঁদাবাজদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।’
প্রচন্ড গরমের কারণে অনুষ্ঠানে নেতাদের বক্তব্য সীমিত করে পদযাত্রা, অফিস উদ্বোধনসহ অন্যান্য কর্মসুচি বাদ দিয়ে তারা বাগেরহাট জেলার উদ্দেশে সাতক্ষীরা ত্যাগ করেন।