দেশ এখন সংকটময় অবস্থা পার করছে। জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন বাড়ছে। সরকারের সঙ্গেও রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব বাড়ছে। এ থেকে উত্তরণে রাজনৈতিক দলগুলোকে বিভাজনের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং দলীয় স্বার্থ ত্যাগ করে জাতীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও ভূমিকা রাখতে হবে।

আজ রোববার দুপুরে গণতন্ত্র মঞ্চের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা উঠে আসে। দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর তোপখানা রোডে নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়।

সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, বাংলাদেশ জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ৫ আগস্টের পরে যত দিন যাচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এবং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে। এটাই বর্তমান সংকট।

এমন পরিস্থিতিতে দলীয় স্বার্থ ত্যাগ করে জাতীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে হবে উল্লেখ করে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক বলেন, জাতীয় স্বার্থ বাস্তবায়নের প্রধান দায়িত্ব সরকারের, তারপর রাজনৈতিক দলগুলোর। সরকারকে এমন ভূমিকা নিতে হবে, যাতে কোনো একটি বিশেষ পক্ষের প্রতিনিধি মনে না হয়।

হাসনাত কাইয়ুম বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বা এর আগে স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতা কাঠামোকে ব্যবহার করে গুম, খুন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচার; সাংবিধানিক ও ক্ষমতা কাঠামোর সংস্কার এবং নির্বাচন ব্যবস্থাকে একটি নিয়মিত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিণত করতে হবে। কিন্তু এসব আকাঙ্ক্ষার কোনো কোনোটিকে এগিয়ে আনা বা পেছনে ফেলার জন্য কোনো কোনো রাজনৈতিক দল অশুভ অপতৎপরতা চালিয়েছে। এর ফলে বিভাজনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকারের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংযোগ থাকতে হবে। জাতীয় রাজনৈতিক কাউন্সিল গঠন করতে হবে। জাতীয় ঐক্য রক্ষার জন্যও এসব লাগবে। এটি না হওয়ায় বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব বাড়ছে।

আগামী জুলাই মাসের মধ্যে সরকারকে জুলাইয়ের সনদ বা জাতীয় সনদ প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে এটি করতে হবে। আর দ্বিমতের বিষয়গুলো মীমাংসা করার জন্য নির্বাচন দরকার। সে জন্য নির্বাচনের স্পষ্ট রোডম্যাপ (পথনকশা) থাকতে হবে। ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত নয়, সুনির্দিষ্ট সময়সীমা লাগবে। কারণ নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তুতির বিষয়ও রয়েছে।

সংবিধান সংশ্লিষ্ট সংস্কারগুলো টেকসই করার জন্য সরকারকে রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রীয় অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ করতে হবে বলে উল্লেখ করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, দেশ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সে জন্য সরকারকে দলনিরপেক্ষ বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। যেসব বিষয়ে বিতর্ক আছে, সেসব বিষয়ে বিশেষ করে প্রয়োজনবোধে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করতে হবে।

আগামী এক মাসের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে জুলাই সনদ দেওয়ার বিষয়ে সরকারকে দৃশ্যমান উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সাইফুল হক আগামী তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে বিচার, সংস্কার এবং নির্বাচনের বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা দেওয়ার আহাবান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ্ কায়সার, ঢাকা ভাসানী জনশক্তি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক মেহেদী হাসান তালুকদার তপন প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স থ ত সরক র র র জন য র র জন

এছাড়াও পড়ুন:

দেশকে নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেওয়া হচ্ছে: মেজর হাফিজ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, বাংলাদেশকে আবার নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তা সমাধানে প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা পরিষদের প্রতি অনুরোধ করেছেন তিনি।

আজ শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে দ্বীপ জেলা ভোলা নাগরিক ঐক্য ফোরাম আয়োজিত ‘ভোলা জেলার উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব এ কথা বলেন হাফিজ উদ্দিন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘বর্তমান সরকার তাদের আমরা সবাই সাপোর্ট (সমর্থন) করেছি। আওয়ামী লীগ ছাড়া সবাই তাদের আমরা সমর্থন দিয়েছি; কিন্তু তাদের কাছ থেকে তো আমরা গণতন্ত্র চাই। যে গণতন্ত্রের জন্য ১৭ বছর জনগণ ভোট দিতে পারে নাই। সে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কত মানুষ জীবন দিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু টেলিভিশন খুললে উপদেষ্টাদের বক্তব্য শুনি। নির্বাচনের কোনো কথাবার্তা নাই। দুনিয়ার কথা বলে, নির্বাচন সম্বন্ধে কোন কথা বলে না। দু–একজন বলে নির্বাচন দিলে তো বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। ভাই এটা কি আমাদের অপরাধ। জনগণ যদি বিএনপিকে ভোট দেয় তো আমাদের দোষটা কি। তারা তো সবাইকে দেখেছে, সবাইকে চিনেছে।’

হাফিজ উদ্দিন আরও বলেন, সরকারের ৯ মাস চলে গেলেও একটা অভিযোগপত্র দেয়নি। তারা খালি মুখে মুখেই বিচার করে, মুখে মুখেই সংস্কার করে। আওয়ামী লীগ দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে দেশটিকে ফোকলা করে দিয়ে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছে। সেই বিষয়ে কোনো কথা নেই। তিনি বলেন, যে মুহূর্তে একটা গণতান্ত্রিক সরকার প্রয়োজন, সেই মুহূর্তে ক্রমেই গণতন্ত্রকে আস্তে আস্তে যেন দূরে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে যারা উপদেষ্টা পরিষদে আছেন, তাঁরা দেশের সাধারণ মানুষের জন্য কি করেছেন এমন প্রশ্ন করে বিএনপির এই নেতা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে নানা ধরনের অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। এরা অতীতে সব সংগ্রামে জনগণের পাশে থেকে স্বৈরশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারকেও বিদায় করেছে সাধারণ মানুষ।

দ্বীপজেলা ভোলা নাগরিক ঐক্য ফোরামের সদস্যসচিব মো. মোস্তফার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন দ্বীপজেলা ভোলা নাগরিক ঐক্য ফোরামের আহ্বায়ক মো. নূর মোরশেদ।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হায়দার আলী, দ্বীপজেলা ভোলা নাগরিক ঐক্য ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল মালেক প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুর্নীতি কমেনি বরং বেড়েছে: গয়েশ্বর
  • সংবিধানে হাত দেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে না: মুনীরুজ্জামান
  • রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর যেভাবে হতে পারে
  • অন্তর্বর্তী সরকার নয়, জনগণ নির্বাচিত সরকার চায়: নজরুল ইসলাম খান
  • ‘বিতর্কিত’দের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের দাবি বিএনপির
  • দেশকে নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেওয়া হচ্ছে: মেজর হাফিজ
  • সংকট সমাধানের একমাত্র পথ হলো গণতান্ত্রিক উত্তরণ: মঈন খান
  • দেশ এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে দাঁড়ালো, প্রশ্ন মঈন খানের 
  • বার্ট্রান্ড রাসেল কেন জরুরি