ভিন্ন ভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে বিক্ষোভ ও আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনের সামনে আজ রোববারও চলছে অবস্থান কর্মসূচি। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে বেলা ১১টা থেকে সেখানে অবস্থান নেন তাঁর সমর্থক ও করপোরেশনের বড় একটি অংশের কর্মচারীরা। এই কর্মসূচির কারণে গুরুত্বপূর্ণ এসব জায়গায় স্বাভাবিক কাজকর্ম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

সচিবালয়ে বড় বিক্ষোভ

‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদনের প্রতিবাদে সচিবালয়ের ভেতরে আজ দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ-মিছিল করেছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। তাঁরা এই অনুমোদিত খসড়াটিকে ‘নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।

আরও পড়ুনইশরাককে মেয়র করার দাবিতে আজও অবস্থান, নগর ভবন অচল২ ঘণ্টা আগে

বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের ব্যানারে এই আন্দোলন হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধন করে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়।

অভিযোগ উঠেছে, সাড়ে চার দশক আগের বিশেষ বিধানের কিছু ‘নিবর্তনমূলক ধারা’ সংযোজন করে অধ্যাদেশের খসড়াটি করা হয়েছে। অধ্যাদেশের খসড়ায় শৃঙ্খলা বিঘ্ন, কর্তব্য সম্পাদনে বাধা, ছুটি ছাড়া কর্মে অনুপস্থিত, কর্তব্য পালন না করার জন্য আত্মপক্ষ সমর্থনের পর্যাপ্ত সুযোগ না দিয়ে চাকরিচ্যুতির বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সহজেই শাস্তি, এমনকি চাকরি থেকে বরখাস্ত করার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে বলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে। অধ্যাদেশের খসড়াটিকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক আখ্যায়িত করে তা পুনর্বিবেচনারও দাবি করছেন কর্মচারীরা।

আজ সকালে সচিবালয়ে দেখা যায়, শত শত কর্মচারী দপ্তর ছেড়ে মিছিলে যোগ দেন। মিছিল থেকে ‘অবৈধ কালো আইন মানব না’, ‘লেগেছে রে লেগেছে রক্তে আগুন লেগেছে’ ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়। মিছিলটি সচিবালয়ের ভেতরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রদক্ষিণ করে।

একপর্যায়ে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে সমাবেশ করেন কর্মচারীরা। সেখানে দাবি পূরণ না হলে আগামীকাল সোমবার সচিবালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।

এ সময় কয়েকজন নেতা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.

) মো. জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর সেখান থেকে মিছিল নিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের দপ্তরে যান। অবশ্য তখন তিনি দপ্তরে ছিলেন না। এরপর সেখান থেকে বের হয়ে তাঁরা সচিবালয়ে মূল ফটকের কাছে যান। এ সময় কিছুক্ষণের জন্য ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সেখানে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর অনুমোদিত অধ্যাদেশের খসড়াকে কালাকানুন আখ্যায়িত করে বলেন, এটি প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তাঁরা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। দুপুরে তিনি এই ঘোষণা দেন। এরপর সচিবালয় চত্বরে বাদামতলায় অবস্থান নেন কর্মচারীরা।

পরে অবশ্য উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কর্মচারী নেতারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান তাঁদের বলেছেন দাবির বিষয়টি তিনি প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরবেন।

এ রকম পরিস্থিতিতে একজন কর্মচারী নেতা বলেন আগামীকাল সোমবার সচিবালয়ের ফটকগুলোর কাছে অবস্থান নেবেন কর্মচারীরা। এ সময় কাউকে ঢুকতে এবং বের হতে দেওয়া হবে না।

আরও পড়ুনসকাল থেকে কর্মবিরতি চলছে, অচল এনবিআর৪ ঘণ্টা আগেঅচল এনবিআর

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির অধ্যাদেশ জারির প্রতিবাদে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে কর্মবিরতি কর্মসূচি চলছে। বেশির ভাগ শুল্ক-কর কর্মকর্তা-কর্মচারী এনবিআরের নিচতলায় প্রধান ফটকের পাশেই অবস্থান নেন। এতে বন্ধ রয়েছে প্রবেশের প্রধান দুই ফটক। আজ সকাল নয়টা থেকে এ পরিস্থিতি চলছে। এ কারণে এনবিআরের কার্যক্রম কার্যত বন্ধ আছে। কয়েক দিন ধরে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এ আন্দোলন চলছে।

এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ করে ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর পর থেকে এর প্রতিবাদ করে আসছেন রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

আজ সরেজমিন দেখা গেছে, সকাল নয়টার পর থেকেই কর্মকর্তারা প্রধান ফটক ও দোতলার মিলনায়তনে অবস্থান নিয়েছেন। প্রধান ফটকে কারও কারও হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এনবিআর চেয়ারম্যান নিজের কার্যালয়ে আসেননি। তবে গতকালের মতো আজও ভবনের ভেতরে ও বাইরে অবস্থান নিয়েছেন পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য। এদিকে প্রধান ফটক বন্ধ থাকায় গাড়ি নিয়ে ঢোকা কিংবা বের হওয়া যাচ্ছে না। তাই হেঁটে কর্মকর্তারা ভবনে ঢোকেন।

গতকাল বিকেলে আগামী দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। ঘোষিত কর্মসূচি হলো আজ রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কাস্টম হাউস এবং শুল্ক স্টেশন ব্যতীত আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগে সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সব দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে। আগামীকাল সোমবার আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ব্যতীত আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে।

আরও পড়ুনপ্রত্যাহার না করা পর্যন্ত সচিবালয়ে বিক্ষোভ চালানোর ঘোষণা কর্মচারীদের৬ ঘণ্টা আগেনগর ভবনেও অচলাবস্থা

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনের সামনে আজ রোববারও চলছে অবস্থান কর্মসূচি। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে বেলা ১১টা থেকে সেখানে অবস্থান নিয়েছেন তাঁর সমর্থক ও করপোরেশনের বড় একটি অংশের কর্মচারীরা।

১৪ মে থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন মাঝে ৪৮ ঘণ্টার বিরতি দিয়ে এখনো চলছে। এতে নাগরিক সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।

আজ দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, নগর ভবনের ফটকগুলোতে এখনো তালা ঝুলছে। ‘ঢাকাবাসী’র ব্যানারে ইশরাকের সমর্থকেরা কিছুক্ষণ পরপর নগর ভবন প্রাঙ্গণে মিছিল করছেন। মিছিল শেষ হলে নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিচ্ছেন।

বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একজন বলছেন, জনতার মেয়র ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবেই। তা না হলে তাঁরা ঘরে ফিরবেন না।

নগর ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলছে। ফটকে তালা থাকায় নগর ভবনের ভেতরে ঢুকতে পারছেন না সেবাপ্রত্যাশীরা। বন্ধ রয়েছে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন, জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন, হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধসহ সব নাগরিক সেবা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নগর ভবন র স অবস থ ন ন য় কর মকর ত উপদ ষ ট অন ম দ র স মন সরক র ইশর ক

এছাড়াও পড়ুন:

চার সীমান্ত দিয়ে আরও ১৫৩ জনকে পুশইন বিএসএফের

সিলেটের বিয়ানীবাজার, মৌলভীবাজারের বড়লেখা ও মেহেরপুরের মুজিবনগরসহ চার সীমান্ত এলাকা দিয়ে আরও ১৭২ জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। এর মধ্যে বিয়ানীবাজার ও বড়লেখার তিন সীমান্ত দিয়ে পুশইন করা হয়েছে নারী-শিশুসহ ১৫৩ জনকে। মেহেরপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ১৯ জনকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তাদের সবাইকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় বিজিবি আটক করে হস্তান্তর করেছে পুলিশের কাছে। গত ৪ মে থেকে রোববার পর্যন্ত বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে মোট ৬৪৬ জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দিল বিএসএফ। 

বিয়ানীবাজারের নয়াগ্রাম সীমান্তে রোববার ভোরে ৩২ জনকে সীমান্তের ৫৩৮ একর অমীমাংসিত ভূমির একটি বিলে ছেড়ে দেয় বিএসএফ। তাদের মধ্যে রয়েছেন ৯ জন পুরুষ, ৯ জন নারী ও ১৪ জন শিশু। ভোরে বিজিবির টহল দল ও স্থানীয়রা তাদের দেখতে পেয়ে আটক করে নয়াগ্রাম প্রগতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন। সেখানে তাদের পরিচয় শনাক্ত করার পর বিয়ানীবাজার থানায় হস্তান্তর করা হয়। 

বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের বিয়ানীবাজার সদরদপ্তর সূত্র জানায়, একই ভোরে উপজেলার বড়লেখার লাতু বিওপি এলাকায় ৭৯ জন এবং পাল্লাথল বিওপি এলাকায় আরও ৪২ জনকে পুশইন করে বিএসএফ। এর মধ্যে লাতু সীমান্তে আটক ৭৯ জনের মধ্যে পুরুষ ২৫ জন, নারী ১৯ জন এবং শিশু ২০ জন এবং পাল্লাথল সীমান্তে আটক ৪২ জনের মধ্যে রয়েছেন পুরুষ ২৪ জন, নারী ১৬ জন ও শিশু ১৭ জন। তাদের বড়লেখা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়ন বিয়ানীবাজারের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী হাসান বলেন, আটক ১৫৩ জনের সবাই বাংলাদেশি। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের কাঁটাতারের পাশঘেঁষা শূন্য রেখার একটি বিলে ছেড়ে দেয় বিএসএফ। আটক বেশির ভাগের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলায়।

একই দিন মেহেরপুরের মুজিবনগর সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ ১৯ জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ। ভোরে উপজেলার সোনাপুর মাঝপাড়া সীমান্ত দিয়ে তাদের পুশইন করা হয়। এই ১৯ জন সীমান্ত পার হয়ে উপজেলার কেদারগঞ্জ বাজারে অবস্থান করার খবর পেয়ে মুজিবনগর থানা পুলিশ তাদের আটক করে হেফাজতে নেয়। খবর পেয়ে মুজিবনগর বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা সেখানে যান। আটকদের মধ্যে পুরুষ ৯ জন, শিশু ৫ জন ও নারী ৫ জন। তারা সবাই বাংলাদেশি বলে জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

আটকরা হলেন– কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী থানার কাঠগিরি গ্রামের আব্দুল জলিলের মেয়ে মোমেনা খাতুন, মোজাম্মেল হক, মোস্তাক আহমেদ ও কাবিল; কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী থানার জয় মঙ্গল, মাথা গ্রামের জালালউদ্দিনের ছেলে মইনুল ইসলাম, স্ত্রী কাঞ্চন ও ছেলে কারণ, রবিউল এবং মেয়ে মরিয়ম; লালমনিরহাট সদর থানার চুঙ্গগাড়া গ্রামের মৃত গণেশ চন্দ্র পালের ছেলে নিতাই চন্দ্র পাল, তাঁর স্ত্রী গীতা রানী পাল, মেয়ে পার্বতী পাল, পূজা রানী পাল ও আরতী পাল; কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী থানার কুঠিচন্দ্রখানা গ্রামের মো. খলিলের ছেলে আমিনুল ইসলাম, তাঁর স্ত্রী পারুল, দুই মেয়ে আমেনা ও আরফিনা। আটকরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তারা বিভিন্ন সময় কাজের সন্ধানে অবৈধভাবে ভারতে গিয়েছিলেন। 

মুজিবনগর থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করায় বিজিবি আটকদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তাদের রোববার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত প্রাপ্তবয়স্কদের জেলা হাজতে পাঠাতে এবং শিশুদের সার্বিক বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সমাজসেবা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ