মানবিক করিডর ও চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার ভার বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার তৎপরতা নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘মানবিক করিডরের প্রশ্নই ওঠে না। মানবিক করিডরের ব্যাপারে আমরা (প্রধান উপদেষ্টাকে) “নো” বলে এসেছি, বন্দরের ব্যাপারে “নো” বলে এসেছি। দেশের স্বার্থের বিরোধী আমরা কোনো কিছুতে “হ্যাঁ” বলিনি। দেশের স্বার্থ বিচ্যুত হবে, সেখানেই আমাদের “নো”। আমরা বলেছি, এই দুইটা বিষয়ে না আগানোই ভালো।’

আজ রোববার দুপুরে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বিভিন্ন চা-বাগানের শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের আমির এ কথাগুলো বলেন। তিনি বলেন, নির্বাচিত সরকারের যদি এ ধরনের কোনো ইস্যু থাকে, তাহলে সংসদে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এখন যদি সিদ্ধান্ত নিতে চান, তাহলে সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে বসতে হবে, তাদের নিয়ে কথা বলতে হবে, তাদের কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। তারপর সামষ্টিকভাবে দেশের জন্য ভালো হবে এমনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, ‘গতকাল শনিবার আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে বলেছি, আপনি একজন সম্মানিত মানুষ, আমরা সবাই আপনাকে এই মহান দায়িত্ব দিয়েছি। আপনি বলেছেন, এই বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে আপনি নির্বাচন দেবেন। তিনি বলেছেন, “আমি আমার কথায় শক্ত আছি, সেই নির্বাচন আপনারাই পাবেন। তবে আমি চাচ্ছি, এমন একটা নির্বাচন যেটা ইতিহাস সৃষ্টি করবে এবং যেখানে প্রত্যেক মানুষ ভোট দিয়ে হাসিমুখে বের হবে। এমন হবে না যে তার ভোট আরেকজন দিয়ে দেবে।” আমরা বলেছি, নির্বাচনের জন্য সুইটেবল টাইম দুইটা। একটা হলো রোজার আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির মাঝখানে। আরেকটা হলো, যদি রোজার আগে না হয়, আপনাদের কিছু কাজ একান্তই বাকি থেকে যায়, ম্যাক্সিমাম এটা এপ্রিল পার হওয়া উচিত হবে না। আমাদের বিশ্বাস এই সময়ের ভেতরে তিনি নির্বাচন দেবেন।’

জামায়াতের কুলাউড়া উপজেলা শাখা এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। এতে জনপ্রতিনিধিসহ উপজেলার বিভিন্ন চা-বাগানের শ্রমিক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় চা-শ্রমিকদের উদ্দেশে জামায়াতের আমির বলেন, ‘অনেকে বলেন শ্রমিকেরা শিক্ষিত হলে নাকি শ্রমিক খুঁজে পাওয়া যাবে না। আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ হলে চা-বাগানেও পরিবর্তন সম্ভব। জনগণ ও আল্লাহর ইচ্ছায় দায়িত্ব পেলে চা-শ্রমিকদের সন্তানদের প্রতিভার বিকাশে সহযোগিতা করব।’

আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘ইলেকশন করতে পারি, না-ও পারি। ইলেকশন করা একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। মানুষের গায়ে লেগে থাকতে চাই। মানুষের পাশে থাকতে চাই।’

দুপুর ১২টার দিকে কুলাউড়া পৌর শহরের দক্ষিণ বাজার এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে সভা শুরু হয়। উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির আবদুল মুন্তাজিমের সঞ্চালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিলন বৈদ্য ও লংলা ভ্যালি চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জু গোস্বামী বক্তব্য দেন। সভায় জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকাল ১০টার দিকে জামায়াতের আমির উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার এলাকায় নারী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দিনব্যাপী দলীয় কর্মসূচিতে তাঁর যোগদানের কথা আছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ম য় ত র আম র উপজ ল র

এছাড়াও পড়ুন:

বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ‘নাকাল’ কুবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক অবকাঠামো ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ১৮ বছর পরও বিদ্যুৎ বিভ্রাটে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই নিজস্ব প্রধান সাব-স্টেশন অথবা কোনো কার্যকর জেনারেটর। ফলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট কুবির প্রতিদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শিক্ষা কার্যক্রম, গবেষণা, অনলাইন ক্লাস, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ইন্টারনেটসহ দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে বিঘ্ন ঘটছে। এমনকি বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিক আবহাওয়াতেও দিনে সাত-আটবার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

আরো পড়ুন:

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে বয়সসীমা থাকছে না

জাবিতে গাঁজা সেবনকালে সাবেক ছাত্রলীগ কর্মীসহ আটক ৪

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক আবাসিক হল ও বিভাগ ঘুরে দেখা গেছে, বিদ্যুৎ না থাকায় পানি সংকট দেখা দেয়, বন্ধ হয়ে যায় ওয়াইফাই। এতে অনলাইন ক্লাস ও গবেষণার কাজ স্থবির হয়ে পড়ে।

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে জানান, সামান্য বৃষ্টি বা বজ্রপাত হলেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ সমস্যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শিক্ষকদের দৈনন্দিন জীবন ও শিক্ষাকার্যক্রমে চরম ব্যাঘাত ঘটছে। তাদের দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ সমস্যা নিরসন করে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা প্রদান করতে হবে। 

বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন নিয়ে নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মায়া ইসলাম বলেন, “প্রায় প্রতিদিন লোডশেডিং হয়। এতে খাবার পানি সংগ্রহ থেকে শুরু করে অনলাইন ক্লাসেও অংশ নিতে পারি না।”

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, “প্রতিদিনই বিদ্যুৎ চলে যায়, ভোল্টেজ থাকে কম। এতে ইন্টারনেটও বারবার বিচ্ছিন্ন হয়। ক্লাস, টিউশনি শেষে হলে ফিরে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারি না।”

শুধু শিক্ষার্থীরাই নন, শিক্ষকরাও এ সমস্যায় ভুগছেন। ক্লাস চলাকালে বিদ্যুৎ চলে গেলে মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জাম অচল হয়ে যায়। এতে পাঠদান ব্যাহত হয়।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিজয়-২৪ হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ মাহমুদুল হাছান খান বলেন, “কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে আবাসিক হলগুলোতে বিদ্যুৎ না থাকায় পানি সংকটের পাশাপাশি ইন্টারনেট সংযোগে সমস্যা দেখা দিচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবন ও শিক্ষাচর্চায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।”

বিদ্যুৎ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে শিক্ষার্থীরা গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন। এরপর শনিবার (২৪ মে) রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ আসে কোটবাড়ি সাব-স্টেশন থেকে। সেখান থেকে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করা হয়। ফলে যেকোনো মেরামত বা দুর্যোগে একযোগে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানগুলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বৈদ্যুতিক) মো. জাকির হোসেন বলেন, “হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা রাইস কুকার, হিটার, ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহার করেন, যা নির্ধারিত ক্ষমতার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ টানে। এ অতিরিক্ত লোডের কারণে সার্কিট পুড়ে যায় এবং লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।”

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “আমরা সিন্ডিকেট সভায় বিষয়টি তুলেছি। লাইনটি বনজঙ্গল ঘেরা এলাকায় হওয়ায় সামান্য ঝড়বৃষ্টিতেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবলিংয়ের উদ্যোগ নিচ্ছি।”

তবে জেনারেটর স্থাপন নিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মতো জেনারেটর স্থাপন অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। বিষয়টি আপাতত বিবেচনায় নেই।”

কোটবাড়ি সাব-স্টেশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. পিন্টু বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করছি। তবে নিজস্ব প্রধান সাব-স্টেশন স্থাপন করতে হলে কর্তৃপক্ষকে বিদ্যুৎ চাহিদা উল্লেখ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। এটি তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়।”

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ