একদিকে বৃষ্টি, অন্যদিকে সড়কে চলছে পিচ ঢালায়ের কাজ। বৃষ্টিতে সড়কে দেওয়া প্রাইমকোট (বিটুমিনের আস্তরণ) ধুয়ে গেলেও, সেদিকে কোনো দৃষ্টি নেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। এভাবেই শরীয়তপুরের একটি গ্রামীণ সড়কে কাজ চলছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। তাদের ভাষ্য, নয়-ছয়ভাবে কাজ করলে সড়কটি মজবুত হবে না।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি নিয়ম মেনেই কাজ করছেন তারা। বিষয়টি অবগত হয়ে রোদ না ওঠা পর্যন্ত কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী।

এলজিইডি সূত্র জানায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নের চর সোনামুখী দাড়িয়া বাড়ি থেকে পশ্চিম সোনামুখী পর্যন্ত ১ হাজার ৮০০ মিটার সড়ক সংস্কার করার জন্য ৮৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় এলজিইডি। রাজিব হোসেন নামে স্থানীয় এক ঠিকাদার কাজটি করছেন। 

আরো পড়ুন:

রাজবাড়ীর পদ্মার চ‌রে ১৯ বাড়িতে হামলা, অ‌গ্নিসং‌যোগ

বানিয়াচংয়ে পুলিশের গাড়িসহ ৪ যানবাহনে ডাকাতি

এলাকাবাসী জানান, সড়কটিতে শুরু থেকেই অনিয়ম করে আসছেন ঠিকাদারের লোকজন। সড়কের দুই পাশের (এজিং) কিছু স্থান এবং খোয়ায় নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। কয়েকদিন আগে পিচ ঢালাইয়ের জন্য সড়কে প্রাইমকোট দেওয়া হয়। তবে, তা বৃষ্টিতে ধুয়ে গেলেও নতুন করে আর প্রাইমকোট দেওয়া হয়নি। গত দুইদিন শনিবার ও রবিবার (২৫ মে) সকালে বৃষ্টির মধ্যেই সড়কে পিচ ঢালাইয়ের কাজ হয়েছে। যে কারণে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।  

রবিবার সকাল ৭টা বেজে ২০ মিনিটে গিয়ে দেখা যায়, আধা ঘণ্টা আগে শুরু হওয়া বৃষ্টির মধ্যেই চলছে সড়কে পিচ ঢালাইয়ের কাজ। শ্রমিকরা বৃষ্টিতে ভিজে কাজ চালু রেখেছেন। সড়কের পাশে জমে থাকা বৃষ্টির পানি বেলচার সাহায্যে সরিয়ে নিতে দেখা যায় তাদের। এরপর সেই স্থানেই পিচ দিচ্ছিলেন তারা।  

স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বজিৎ দাড়িয়া বলেন, “গত দুইদিন ধরে সকালে বৃষ্টি হচ্ছে। শ্রমিকরা বৃষ্টির পানিতে ভিজে সড়কে পিচ দেওয়ার কাজ করেছেন। বৃষ্টিতে প্রাইমকোট ধুয়ে গেলেও সেই অবস্থায় কাজ করা হচ্ছে। এসময় অনেক জায়গায় রাস্তায় জল জমে ছিল।”

তিনি বলেন, “এভাবে যদি অনিয়ম করে সড়কের কাজ করা হয়, তাহলে এই সড়ক বেশিদিন টিকবে না। আমরা চাই, বৃষ্টির মধ্যে কাজ বন্ধ রেখে নতুন করে প্রাইমকোট দিয়ে আবার খরার মধ্যে কাজ করা হোক।”

স্থানীয় বাসিন্দা বাবুল কুলু বলেন, “রাস্তায় দুই পাশে আর খোয়ার কাজে পচা ইট ব্যবহার করেছে ঠিকাদার। তখন আমাদের অনেকেই বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তারা আমাদের কথা শোনেনি।”

তিনি বলেন, “গত দুইদিন ধরে সকালে বৃষ্টির মধ্যে সড়ক পিচ ঢালাইয়ের কাজ করেছেন তারা। অনেক জায়গায় তো পানি জমে ছিল। এভাবে নয়-ছয়ভাবে কাজ করলে আমাদের এই সড়কটি মজবুত হবে না।” 

ঘটনাস্থলে দায়িত্বে থাকা সদর উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ের কার্যসহকারী শরীয়তউল্লাহর কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। একপর্যায়ে তিনি সেখান থেকে চলে যান। পরবর্তীতে তিনি কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেন শ্রমিকদের।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিষয়টি অস্বীকার করে ঠিকাদার রাজিব হোসেন বলেন, “বৃষ্টির মধ্যে কোনো কাজ হয়নি। যেটুকু সময় কাজ হয়েছে তা নিয়ম মেনেই হয়েছে।” 

শরীয়তপুর জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রাফেউল ইসলাম বলেন, “বৃষ্টির মধ্যে কাজ করলে সেটি টেকসই হবে না। আমরা খবর পেয়ে ঠিকাদারকে কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। রোদ না ওঠা পর্যন্ত কাজ চালু করা যাবে না। আগের কাজ সংশোধন শেষে নতুন কাজ করার জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছি।”

ঢাকা/সাইফুল/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ প র ইমক ট ক জ বন ধ ক জ কর ই সড়ক

এছাড়াও পড়ুন:

শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতুর সংযোগ সড়কে ভাঙন

উদ্বোধনের আড়াই বছরের মধ্যে নারায়ণগেঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিত তৃতীয় সেতুর সংযোগ সড়কে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেখানে সৃষ্ট হয়েছে বড় গর্তের। ভেঙে যাওয়া সড়কের ওই অংশে চালকদের সতর্ক করার জন্য লাল কাপড়সহ ডিভাইডার বসিয়েছে কর্তৃপক্ষ। 

সেতু নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য লোকবল নিয়োগ থাকলেও কিভাবে সড়ক ভেঙ্গে যায় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। সেই সঙ্গে তারা সেতুটির নির্মাণ কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। 

গত শুক্রবার (১৬ মে) রাতে ভারী বর্ষণের পর সেতুর পশ্চিমে অর্থাৎ নারায়ণগঞ্জ সদরের সৈয়দপুর অংশে ভাঙন সৃষ্টি হয়। ২০২২ সালের ১০ অক্টোবরে উদ্বোধন করা হয় শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতু।

আরো পড়ুন:

শিবচরে র‌্যাব পরিচয়ে প্রতারণা: বরখাস্ত হওয়া সেনা সদস্য আটক

‘জীবন’ হাতে নিয়ে পার হতে হয় যে সেতু 

শুক্রবার (২৩ মে) সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর সৈয়দপুর অংশে সংযোগ সড়কের কার্পেটিংয়ের মাটি সরে গিয়ে সড়ক ভেঙে গেছে। সড়কের মূল অংশ থেকে অন্তত আনুমানিক কয়েক ফুট গভীর গর্ত তৈরি হয়েছে। চালকদের সতর্ক করতে চারদিকে লাল কাপড় দেওয়া হয়েছে। দ্রুত ওই ভাঙা অংশ সংস্কার করা না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা স্থানীয়দের।

বন্দরের বুরুন্দী এলাকার বাসিন্দা খিদির মিয়া বলেন, “গত শুক্রবার বৃষ্টির পর সড়কের নিচের মাটি সরে গিয়ে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এই ব্রিজ উদ্বোধন করার আগে তাড়াহুড়ো করে কাজ করেছে কর্তৃপক্ষ। ঠিকমতো মাটি বসানো হয়নি। বৃষ্টির পানিতে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে যাবে এটা হতাশাজনক।”

নিতাইগঞ্জের চাল ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া বলেন, “এই নতুন সেতুর সড়কটি এক দিনের বৃষ্টিতেই ভেঙে গেছে। এই সেতু আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের মালামাল পরিবহণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তৎকালীন সরকারের আমলে কাজটি ঠিক মতো না করার কারণেই সেতুর সংযোগ সড়কের বেহাল দশা।”

নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে একনেকে ৩৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জ থেকে সদর উপজেলার সৈয়দপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণের অনুমোদন হয়। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয় সেতুর কাজ। ব্যায় হয় ৬০৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সেতু নির্মাণে সৌদি উন্নয়ন তহবিল (এসএফডি) ও বাংলাদেশ সরকার অর্থায়ন করে।

২০২২ সালের ১০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত নাসিম ওসমানের নামে সেতুটি নামকরণ করে উদ্বোধন করা হয়। গত বছরের ৫ আগস্টের পর স্থানীয়রা সেতুর নাম পরিবর্তন করে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু নামকরণ করেন। 

শীতলক্ষ্যার ওপর নির্মিত এই সেতু নারায়ণগঞ্জের সদর ও বন্দরকে সংযুক্ত করার পাশাপাশি পদ্মা সেতু থেকে মুন্সিগঞ্জ হয়ে ঢাকায় প্রবেশ না করেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যুক্ত হবার পথ সুগম করে। এর ফলে যেমন দূরত্ব কমে আসে, তেমনি স্থানীয় বাসিন্দাদের যোগাযোগের সুবিধা বৃদ্ধি পায়। 

নারায়ণগঞ্জ জেলা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আল রাজী লিয়ন বলেন, “সেতুর ওপরের অংশে একাধিক স্থানে পানি সরানোর জন্য পাইপ বসানো হলেও সেগুলোর প্রতিটির মুখ স্থানীয়রা বন্ধ করে দিয়েছেন। এর ফলে পানি সড়কের ওপর দিয়ে সরে যেত। ভারী বর্ষণের ফলে সড়কটির একটি অংশ ভেঙে গেছে। দ্রুতই সংস্কার কাজ করা হবে। কাজ শেষে সড়কটি পুরোপুরি চলার উপযোগী হয়ে যাবে।”

ঢাকা/অনিক/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রূপগঞ্জে মহাসড়ক আটকিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সমাবেশ, ভোগান্তি
  • শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতুর সংযোগ সড়কে ভাঙন
  • সাতছড়িতে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিন