বৃষ্টির মধ্যেই সড়কে পিচ ঢালাইয়ের অভিযোগ
Published: 25th, May 2025 GMT
একদিকে বৃষ্টি, অন্যদিকে সড়কে চলছে পিচ ঢালায়ের কাজ। বৃষ্টিতে সড়কে দেওয়া প্রাইমকোট (বিটুমিনের আস্তরণ) ধুয়ে গেলেও, সেদিকে কোনো দৃষ্টি নেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। এভাবেই শরীয়তপুরের একটি গ্রামীণ সড়কে কাজ চলছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। তাদের ভাষ্য, নয়-ছয়ভাবে কাজ করলে সড়কটি মজবুত হবে না।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি নিয়ম মেনেই কাজ করছেন তারা। বিষয়টি অবগত হয়ে রোদ না ওঠা পর্যন্ত কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী।
এলজিইডি সূত্র জানায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নের চর সোনামুখী দাড়িয়া বাড়ি থেকে পশ্চিম সোনামুখী পর্যন্ত ১ হাজার ৮০০ মিটার সড়ক সংস্কার করার জন্য ৮৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় এলজিইডি। রাজিব হোসেন নামে স্থানীয় এক ঠিকাদার কাজটি করছেন।
আরো পড়ুন:
রাজবাড়ীর পদ্মার চরে ১৯ বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ
বানিয়াচংয়ে পুলিশের গাড়িসহ ৪ যানবাহনে ডাকাতি
এলাকাবাসী জানান, সড়কটিতে শুরু থেকেই অনিয়ম করে আসছেন ঠিকাদারের লোকজন। সড়কের দুই পাশের (এজিং) কিছু স্থান এবং খোয়ায় নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। কয়েকদিন আগে পিচ ঢালাইয়ের জন্য সড়কে প্রাইমকোট দেওয়া হয়। তবে, তা বৃষ্টিতে ধুয়ে গেলেও নতুন করে আর প্রাইমকোট দেওয়া হয়নি। গত দুইদিন শনিবার ও রবিবার (২৫ মে) সকালে বৃষ্টির মধ্যেই সড়কে পিচ ঢালাইয়ের কাজ হয়েছে। যে কারণে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
রবিবার সকাল ৭টা বেজে ২০ মিনিটে গিয়ে দেখা যায়, আধা ঘণ্টা আগে শুরু হওয়া বৃষ্টির মধ্যেই চলছে সড়কে পিচ ঢালাইয়ের কাজ। শ্রমিকরা বৃষ্টিতে ভিজে কাজ চালু রেখেছেন। সড়কের পাশে জমে থাকা বৃষ্টির পানি বেলচার সাহায্যে সরিয়ে নিতে দেখা যায় তাদের। এরপর সেই স্থানেই পিচ দিচ্ছিলেন তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বজিৎ দাড়িয়া বলেন, “গত দুইদিন ধরে সকালে বৃষ্টি হচ্ছে। শ্রমিকরা বৃষ্টির পানিতে ভিজে সড়কে পিচ দেওয়ার কাজ করেছেন। বৃষ্টিতে প্রাইমকোট ধুয়ে গেলেও সেই অবস্থায় কাজ করা হচ্ছে। এসময় অনেক জায়গায় রাস্তায় জল জমে ছিল।”
তিনি বলেন, “এভাবে যদি অনিয়ম করে সড়কের কাজ করা হয়, তাহলে এই সড়ক বেশিদিন টিকবে না। আমরা চাই, বৃষ্টির মধ্যে কাজ বন্ধ রেখে নতুন করে প্রাইমকোট দিয়ে আবার খরার মধ্যে কাজ করা হোক।”
স্থানীয় বাসিন্দা বাবুল কুলু বলেন, “রাস্তায় দুই পাশে আর খোয়ার কাজে পচা ইট ব্যবহার করেছে ঠিকাদার। তখন আমাদের অনেকেই বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তারা আমাদের কথা শোনেনি।”
তিনি বলেন, “গত দুইদিন ধরে সকালে বৃষ্টির মধ্যে সড়ক পিচ ঢালাইয়ের কাজ করেছেন তারা। অনেক জায়গায় তো পানি জমে ছিল। এভাবে নয়-ছয়ভাবে কাজ করলে আমাদের এই সড়কটি মজবুত হবে না।”
ঘটনাস্থলে দায়িত্বে থাকা সদর উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ের কার্যসহকারী শরীয়তউল্লাহর কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। একপর্যায়ে তিনি সেখান থেকে চলে যান। পরবর্তীতে তিনি কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেন শ্রমিকদের।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিষয়টি অস্বীকার করে ঠিকাদার রাজিব হোসেন বলেন, “বৃষ্টির মধ্যে কোনো কাজ হয়নি। যেটুকু সময় কাজ হয়েছে তা নিয়ম মেনেই হয়েছে।”
শরীয়তপুর জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রাফেউল ইসলাম বলেন, “বৃষ্টির মধ্যে কাজ করলে সেটি টেকসই হবে না। আমরা খবর পেয়ে ঠিকাদারকে কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। রোদ না ওঠা পর্যন্ত কাজ চালু করা যাবে না। আগের কাজ সংশোধন শেষে নতুন কাজ করার জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছি।”
ঢাকা/সাইফুল/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ প র ইমক ট ক জ বন ধ ক জ কর ই সড়ক
এছাড়াও পড়ুন:
যে কারণে ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর
শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক ফেনী শহরের ব্যস্ততম রাস্তা। এই সড়কের পাশেই শহরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা। একটু ভারী বৃষ্টিতেই ডুবে যায় সড়কটি। গত বছরের আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় সড়কের দুই কিলোমিটার অংশ কোমরপানিতে তলিয়ে ছিল পাঁচ দিন। এতে সড়কের বিভিন্ন স্থান ভেঙে খানাখন্দ তৈরি হয়। পানি নেমে যাওয়ার পর পাথর ও ইটের সুরকি দিয়ে অস্থায়ী মেরামত করা হলেও স্থায়ী সংস্কার হয়নি। এ বছর বর্ষায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় আরও বেহাল হয়েছে সড়কটির দশা। ছোট ছোট গর্তে ভরা এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলে ধীরগতিতে। ফলে সড়কে যানজট লেগেই থাকে।
পৌর শহরের এই প্রধান সড়কে তা–ও যানবাহন চলে কোনোরকমে। শহরের অলিগলি আর অভ্যন্তরীণ সড়কের দশা এর চেয়ে অনেক বেহাল। শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক থেকে একটু এগোলে হাসপাতাল মোড় থেকে সালাহ উদ্দিন মোড় পর্যন্ত যে সড়কটি রয়েছে, তাতে আগাগোড়াই বড় বড় খানাখন্দ। সড়কটির সাহেববাড়ি অংশে বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় ইট দিয়ে সাময়িক মেরামত করলেও ছোট-বড় গাড়ির চাকা সেসবকে স্থায়ী হতে দেয়নি। এটিসহ পৌরসভার ছোট-বড় প্রায় ৩০টির বেশি সড়ক এখনো বন্যার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে। ২০২৪ সালের বন্যার এক বছর পার হলেও ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর দৃশ্যমান কোনো সংস্কার হয়নি। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো দ্রুত মেরামতের কাজ অচিরেই শুরু হবে।
একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে গাড়ি চলে হেলেদুলে। হালকা বৃষ্টিতেও প্রায় সব সড়কে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। অধিকাংশ সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক শহরকে যেমন শ্রীহীন করেছে, তেমনি বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ।
সরেজমিন ঘুরে শহরের পাঠানবাড়ি সড়ক, মাস্টারপাড়া মুন্সিবাড়ি সড়ক, কদল গাজী সড়ক, বিরিঞ্চি প্রাইমারি স্কুল সড়ক, বিরিঞ্চি রতন সড়ক, সুলতানপুর আমির উদ্দিন সড়ক, গাজী ক্রস রোড, সুফি সদর উদ্দিন সড়ক, আবু বক্কর সড়ক, শহীদ ওবায়দুল হক সড়ক, মহিপাল চৌধুরী বাড়ি সড়ক, চাড়িপুর মৌলভী আব্দুস সালাম সড়ক, উত্তর চারিপুর বাইতুশ শরিফ সড়ক, পূর্ব বিজয় সিং ছোট হুদা দিঘি সড়ক, মধুপুর মালেক মিয়া বাজার সড়কের বেহাল দশা দেখা গেছে। সব মিলিয়ে ৩০টি সড়কের সব কটিই এখন বেহাল।
একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে গাড়ি চলে হেলেদুলে। হালকা বৃষ্টিতেও প্রায় সব সড়কে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। অধিকাংশ সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক শহরকে যেমন শ্রীহীন করেছে, তেমনি বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ।ফেনী পৌরসভায় ইজিবাইক চালান সুজাউদ্দিন। ভাঙাচোরা সড়কের কারণে অন্য অনেকের চেয়ে তাঁকে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে জানিয়েছেন। ফেনীর শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে সম্প্রতি সুজাউদ্দিনের সঙ্গে দেখা হয়। কথায় কথায় তিনি বলেন, ছোট-বড় গর্ত থাকায় অতিরিক্ত ঝাঁকুনিতে প্রতিনিয়ত গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় যাত্রীরা গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার দশা হয়। রাস্তা খারাপ হওয়ায় ভাড়াও কমেছে তাঁর।
শাহিন একাডেমি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহিম শহরের সড়কগুলোর ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সড়কের পাশে পর্যাপ্ত নালা নেই। এ কারণে একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে। বাড়ির সামনের সড়কের এই হাল হলে আর কাজকর্ম করতে ইচ্ছা হয় না।
ফেনী পৌরসভার বিসিক–মুক্তার বাড়ি সড়কের মাঝে এমন বড় বড় খানাখন্দ