যুক্তরাষ্ট্রের জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্টস সেন্টারে ৩৪তম নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলার বর্ণাঢ্য উদ্বোধন করা হয়েছে। স্থানীয় সময় গত শুক্রবার বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় শুরু হওয়া এই বইমেলা চলবে চার দিন। মেলায় লেখকের সঙ্গে পাঠকের সরাসরি আড্ডা, বইয়ের আলোচনা, কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, বিতর্ক, সেমিনারসহ থাকছে নানা আয়োজন।

গত তিন দশকের মতো এবারও বইমেলাটির আয়োজন করেছে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন। এতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা প্রান্তের লেখক, কবি, সাহিত্যিক ও প্রকাশকেরা অংশ নিয়েছেন। এবারের বইমেলার উদ্বোধন করেছেন লেখক সাদাত হোসাইন।

উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন মার্কিন বন্ধু ফিলিস টেইলর। তাঁর প্রয়াত স্বামী রিচার্ড টেইলর ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া ও বাল্টিমোর বন্দরে অস্ত্রবাহী জাহাজ অবরোধ করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পাকিস্তানে গোপনে অস্ত্র পাঠানোর বিরুদ্ধে এ প্রতিরোধ আন্তর্জাতিক পরিসরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

বক্তৃতায় ফিলিস টেইলর বলেন, ‘এই মঞ্চের আলোতে আমি সেই আলোকিত মানুষদের দেখতে পাই, যাঁরা ’৭১ সালে একটি জাতির জন্য কাজ করেছিলেন। তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ, যাঁরা আমাকে এখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আপনারা জানেন আমার স্বামী রিচার্ড টেইলর মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকার অস্ত্রবাহী জাহাজ আটকে দিতে কাজ করেছিলেন। এই নিয়ে তিনি ‘ব্লকেড’ নাম দিয়ে একটি বইও লিখেছিলেন। আজ তিনি নেই। কিন্তু এটা পরিষ্কার যে তিনি আমাদের সঙ্গে আজ এখানে আছেন। তাঁকে গভীরভাবে স্মরণ করছি।’

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান বলেন, ‘ফিলিস টেইলরের সঙ্গে একই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারাটা খুব আনন্দের। তাঁকে এবং তাঁর স্বামী রিচার্ডকে আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি আন্তরিকভাবে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানাই। তাঁরা বইমেলার আয়োজন করছেন। এটি আমাদের ভঙ্গুর এবং ক্ষীয়মাণ সংস্কৃতিকে মজবুত করতে সাহায্য করবে।’

সাহিত্য সমালোচক ও দার্শনিক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক বলেন, ‘বইমেলা জিনিসটা আমার কাছে অন্য রকম। বইমেলার কথা শুনে আমি ছুটে আসি। আমার মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে। তিনি বীরাঙ্গনাদের জন্য অনেক কাজ করেছেন। ১৯৭৩ সালে আমরা মায়ের সঙ্গে ঢাকায় গিয়েছিলাম। সেখানে আমার এক অসাধারণ সময় কেটেছে। আমার বাবা তখন ঢাকায় কাজ করতেন।’

আয়োজকেরা জানান, এ বছর ৩০টির বেশি প্রকাশনা সংস্থা বইমেলায় অংশ নিচ্ছে। এরই মধ্যে অনেক লেখক ও প্রকাশক নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন।

বইমেলায় লেখকের সঙ্গে পাঠকের সরাসরি আড্ডা, নতুন বই নিয়ে আলোচনা, কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, বিতর্ক, সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একই সঙ্গে থাকছে ‘অমর একুশ: ভাষা আন্দোলনের সচিত্র ইতিহাস (১৯৪৭-১৯৫৬)’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। এর আয়োজন করছে যুক্তরাষ্ট্রের একুশে চেতনা পরিষদ।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক রওনক জাহান বলেন, ‘দুই বছর পর বইমেলায় আসতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। একসময় প্রচুর আসতাম। এখন আবার আসলাম। বিশ্বজিত যে ৩৪ বছর ধরে এমন একটি অসাধারণ কাজ করে যাচ্ছে এবং এর সঙ্গে যাঁরা যুক্ত হচ্ছেন, তাঁদের সবার প্রতি আমার অভিনন্দন। সবাইকে অনুরোধ করব বই কিনুন। বাংলাদেশের বাইরে বাংলা বইয়ের ইংরেজি অনুবাদ বাড়াতে হবে। আমি প্রকাশকদের অনুরোধ করব, বাংলাদেশে এবং উত্তর আমেরিকা—দুই এলাকা মিলে আমরা যেন এই কাজটি করতে পারি। আশা করি প্রকাশকেরা এই বিষয়টি ভেবে দেখবেন। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।’

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বীরপ্রতীক ক্যাপ্টেন সিতারা বেগম বলেন, ‘মুক্তধারার এই আন্তর্জাতিক বইমেলায় আমি এসে খুব আনন্দিত। এখানে আগেও এসেছি। দেখতে পাই সবাই কি সুন্দর শাড়ি আর পাঞ্জাবি পরেছে।’

আরও পড়ুন৩৪তম নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা শুরু ২৩ মে১৮ মে ২০২৫

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বইমেলার আহ্বায়ক ও ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান রোকেয়া হায়দার। ছিলেন মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত সাহা। ছিলেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন জিয়াউদ্দীন আহমেদ, কো-চেয়ারপারসন নজরুল ইসলাম ও সউদ চৌধুরী, উপদেষ্টা গোলাম ফারুক ভূঁইয়া ও জ্যেষ্ঠ সদস্য ওবায়েদুল্লাহ মামুন।

১৯৯২ সালে ‘বাঙালির চেতনা মঞ্চ’ ও ‘মুক্তধারা নিউইয়র্ক’–এর যৌথ উদ্যোগে এ বইমেলার সূচনা হয়। পরে মুক্তধারা নিউইয়র্ক ও এর পর থেকে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন এককভাবে দায়িত্ব নিয়ে বইমেলাটি সফলভাবে পরিচালনা করছে। এই সংগঠনের সঙ্গে শহীদ পরিবারের সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, সাংবাদিক ও তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা যুক্ত রয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন উইয র ক বইম ল র ক জ কর অন ষ ঠ আম র ক ট ইলর

এছাড়াও পড়ুন:

গ্যাস-বিদ্যুৎ দিতে না পারলে সরকার কারখানা চালাক

প্রতিশ্রুতি দিয়েও শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহে ব্যর্থতার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন বস্ত্র ও পোশাকশিল্প খাতের উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলছেন, সরকার যদি শিল্পে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে হাজার হাজার কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। তখন সরকার নিজেই এসব কারখানা চালাক, অথবা যেসব বিদেশিকে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হচ্ছে, তাদের হাতে এসব শিল্প তুলে দেওয়া হোক।

গতকাল রোববার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতারা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ), বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিটিএমএলইএর শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই, বিসিআই এবং আইসিসি-বাংলাদেশসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক চেম্বারের প্রতিনিধিরা।

দেশে বেকার সংকট বৃদ্ধির কারণে বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলন হয়েছিল। তারপরই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে– স্মরণ করিয়ে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, এ সরকারের দায় কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেওয়া। অথচ উল্টো শিল্প বন্ধ করা হচ্ছে; মানুষ নতুন করে বেকার হচ্ছে। একদিকে গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে কারখানা বন্ধ থাকবে; অন্যদিকে ব্যাংকে বেশি সুদ দিতে হবে। আবার এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলনে জাহাজীকরণও বন্ধ। এত কিছুর পর সময়মতো শ্রমিকদের বেতন-ভাতাও দিতে হবে। ব্যর্থ হলে মালিকদের গাড়ি-বাড়ি বিক্রি করে বেতন পরিশোধ করবে সরকার। এমনকি জেলে পাঠানোরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কারখানা বন্ধ থাকলে শ্রমিকদের বসিয়ে রেখে কীভাবে বেতন দেওয়া হবে? 

বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘কভিড মহামারিকালেও শ্রমিকদের বেতন দিয়েছি। আন্দোলনের সময়েও কারখানা বন্ধ রেখে বেতন দিয়েছি। এখন আর পারছি না। নিয়মিত বিল দিচ্ছি, তবুও গ্যাস পাচ্ছি না।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বিটিএমএ পরিচালক রাজীব হায়দার, খোরশেদ আলম, বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী, বিটিটিএমএলইএর চেয়ারম্যান হোসেন মাহমুদ, একই সংগঠনের সাবেক চেয়ারম্যান শাহাদৎ হোসেন সোহেল, বিটিএমএ সহসভাপতি সালেউদ জামান খান, পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন, এফবিসিসিআইর সদস্য জাকির হোসেন নয়ন প্রমুখ। 

তীব্র গ্যাস সংকট সমাধানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ, স্কয়ার টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান তপন চৌধুরী, বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল এবং বিটিএমএর সাবেক সভাপতি মতিন চৌধুরী।

মতিন চৌধুরী সমকালকে জানান, গ্যাস সংকটে দেশের কারখানাগুলোতে কী সংকট চলছে, তা জ্বালানি উপদেষ্টাকে বলা হয়েছে। এতে যে রপ্তানি ব্যাহত হবে– সতর্ক করা হয়েছে সে বিষয়ে। উপদেষ্টা বাস্তব অবস্থা দেখতে সোমবার (আজ) ঢাকার অদূরে আশুলিয়া অঞ্চলে বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শনে যাবেন। এর পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ