চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সবচেয়ে পুরোনো ‘১০ সেল’। দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ১০ জনকে এখানে রাখা হতো। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর এটি ‘আওয়ামী সেল’ তকমা পেয়েছে।

ভয়ংকর সব অপরাধীকে অন্যত্র সরিয়ে ১০ সেলে রাখা হচ্ছে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি, মেয়র, কাউন্সিলরসহ শীর্ষ নেতাদের। ৩৬ বর্গফুট আয়তনের একেকটি সেলে রাখা হচ্ছে দু’জনকে।

বর্তমানে ১০ সেলে আছেন– চট্টগ্রাম-১০ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, চট্টগ্রাম-১৬ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের সাবেক এমপি আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী, ফেনী-৩ আসনের সাবেক এমপি রহিমুল্লাহ, ফটিকছড়ি পৌরসভার সাবেক মেয়র মুহাম্মদ ইসমাঈল হোসেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক, সাবেক কাউন্সিলর জহিরুল আলম জসিম, চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজসহ অন্তত ১২ জন।

অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এরই মধ্যে ১০ সেলে বন্দিজীবন কাটিয়েছেন রাউজানের সাবেক এমপি ফজলে করিম চৌধুরী, টেকনাফের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি, নোয়াখালীর সাবেক এমপি একরামুল করিম চৌধুরী ও হাতিয়ার সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী। অন্য মামলায় ঢাকা, নোয়াখালী ও কক্সবাজারে থাকলে, চট্টগ্রাম কারাগারে এলে তাদের এখানেই রাখা হয়।

কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার ইকবাল হোসেন সমকালকে বলেন, বিশেষ ক্ষমতা আইনে, বিস্ফোরক ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের বিভিন্ন ধারার মামলায় প্রতিদিন আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠাচ্ছেন আদালত। যেসব আসামির ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে, তাদেরই আমরা ১০ সেলে রাখছি। বর্তমানে এখানে অন্তত তিনজন সাবেক এমপি রয়েছেন। সেলটিতে সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে মনিটর করা হয়। কারারক্ষীরা বন্দিদের ওপর নজর রাখেন।

এক সময় যুবলীগের সন্ত্রাসী দীপক দত্ত ভোলা, শামীম উদ্দিন, নাছির উদ্দিন ওরফে শিবির নাছির, বিধান বড়ুয়া, জঙ্গি কার্যক্রমে ২৪৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী জাবেদ ইকবালসহ অনেকে ১০ সেলে বন্দিজীবন কাটিয়েছেন।

জানা যায়, জঙ্গি, মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া কয়েদি এবং শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে পুরুষ বন্দিদের চট্টগ্রাম কারাগারের ১০ ও ৬৪ সেল ভবনে রাখা হয়। একই ধরনের নারী আসামির জন্য পাঁচটি সেল রয়েছে। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে সেলগুলোতে ১০ গুণ বেশি বন্দি রয়েছেন। জায়গার সংকুলান না হওয়ায় প্রথমে ১০ সেল ও ৬৪ সেল থেকে বান্দরবানের ১০৩ কেএনএফ সন্ত্রাসীকে বিশেষ ওয়ার্ড তৈরি করে সেখানে স্থানান্তর করা হয়।

প্রতিটি সেলের সঙ্গে সংযুক্ত টয়লেট ও ফ্যান সুবিধা রয়েছে। ১০ সেল ভবনটি সাধারণ বন্দি ওয়ার্ড ভবন থেকে একটু দূরে। সাধারণ বন্দিরা ১০ ও ৬৪ সেলের আশপাশে হাঁটাচলা করতে পারেন না।

কারাগারের জেলার মাসুদ হাসান জুয়েল বলেন, ‘১০ সেলে আগে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও ভয়ংকর আসামি ছিলেন। এখানকার বন্দিদের ৬৪ সেলে স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে রাজনৈতিক স্পর্শকাতর আসামিদের ১০ সেলে রাখা হচ্ছে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ র স ব ক এমপ ১০ স ল ৬৪ স ল আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনের সময়সীমা জুন কেন, সন্দেহ বিএনপির

এত আলোচনা ও দাবির পরও জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন ডিসেম্বরের মধ্যে নয়, কেন সেটি প্রাকৃতিক বৈরী মৌসুম জুন পর্যন্ত নিতে হবে, সেটা বুঝে উঠতে পারছে না বিএনপি। দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, এ নিয়ে সংশয়-সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।

বিএনপি মনে করছে, নানাভাবে নির্বাচন বিলম্ব করার জন্য কিছু দৃশ্যপট তৈরি করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির নেতারা ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এখন পর্যন্ত সে ঘোষণা না আসায় তাঁরা হতাশ।

এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি। দলের গুলশানের কার্যালয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকারের কাছে নির্বাচন বিষয়ে আমরা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আশা করেছিলাম। সেটি হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার আলোচনার বিষয়ে তাঁর প্রেস সচিবের মাধ্যমে সরকারের যে বক্তব্য পাওয়া গেছে, তাতে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপের ঘোষণা না থাকায় বিএনপি হতাশ হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মোশাররফ ‘নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্য কিছু অসিলা তৈরি করা হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘যেমন একটা অসিলা হলো (আওয়ামী লীগের) বিচার শেষ করতে হবে। আমরাও তো বিচার চাই। এই আওয়ামী লীগ স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে, তারা আমাদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য কী করেনি!...এরপরও কেন প্রশ্ন আসে, আমরা তাদের বিচার চাইব না।’

স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার যে অভিযোগ সরকারের পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হয়েছে, সেটা মূলত সরকারের ‘নিজস্ব অর্জন’ বলেও মনে করে বিএনপি।

গত শনিবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপির চার সদস্যের প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। সে বৈঠকে নির্বাচনের সময় নিয়ে আলোচনায় বিএনপি সন্তুষ্ট হতে পারেনি। বৈঠকের তিন দিন পর এ বিষয়ে গতকাল দলীয়ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাল বিএনপি। দলটি অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ (পথনকশা) ঘোষণার দাবিতে অনড় অবস্থানই প্রকাশ করেছে।

এর আগে গত সোমবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গুলশানের কার্যালয়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের অধীন ‘টক শো ডিসকাশন গ্রুপ’-এর মতবিনিময় সভা হয়। সেখানে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রুদ্ধদ্বার এই সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে দুরভিসন্ধির অভিযোগ করেন। বিষয়টি টেলিভিশন ও ইউটিউব চ্যানেলগুলোতে অংশ নেওয়া আলোচকদের ভালোভাবে তুলে ধরার আহ্বান জানান। তিনি প্রশ্ন তোলেন, নির্বাচন কেন ডিসেম্বরের মধ্যে নয়, কেন সেটি জুন পর্যন্ত নিতে হবে। এর মধ্যে নিশ্চয়ই সরকারের কোনো দুরভিসন্ধি রয়েছে।

আমরা আগেও বলেছি নির্বাচনের জন্য ডিসেম্বর মাস উপযুক্ত সময়, এখনো সেই কথার ওপরই আছি।খন্দকার মোশাররফ হোসেন , বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য

তারেক রহমানের সভাপতিত্বে এই সভায় ৬০ জন অংশ নেন। টক শোর আলোচকদের মধ্যে বিএনপির নেতা-কর্মী ছাড়াও সরাসরি বিএনপি করেন না কিন্তু সমর্থন করেন, এমন অনেকে অংশ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মিডিয়া সেলের সদস্যসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘টক শো ডিসকাশন গ্রুপ বিএনপির মিডিয়া সেলের অধীন। আমরা প্রতি মাসে সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয়ে মতবিনিময় করি। সেখানে আমাদের আলোচকেরা যাতে যে বিষয়ের ওপর আলোচনা করবেন, সে বিষয়ে জেনেবুঝে কথা বলেন, অহেতুক ও অযৌক্তিক কথা না বলেন, এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পরামর্শ দিয়েছেন। এবারের মতবিনিময়ে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে।’

টক শো ডিসকাশন গ্রুপের আলোচনায় কয়েকজন বক্তা বিএনপির নেতাদের বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। তাঁরা দলীয় প্রধান ও মহাসচিবের বক্তব্য অনুসরণ করার কথা বলেছেন।

জুন মাস নির্বাচনের উপযুক্ত সময় নয়

প্রধান উপদেষ্টা এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে সময়সীমা দিয়েছেন, সেটি নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় নয় বলে মনে করে বিএনপি।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি নির্বাচনের জন্য ডিসেম্বর মাস উপযুক্ত সময়, এখনো সেই কথার ওপরই আছি।’ এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ডিসেম্বরের পর ফেব্রুয়ারিতে রোজা চলে আসবে। এরপর বর্ষা। এসএসসি ও এইচএসসির মতো বড় পাবলিক পরীক্ষাগুলো আছে। সে জন্য ওই সময়টা নির্বাচন আয়োজনের জন্য উপযুক্ত সময় নয়।

বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলটির নেতারা। ঢাকা, ২৭ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ