সরকারি চাকরি (সংশোধনী) অধ্যাদেশ, ২০২৫–এর প্রতিবাদে সচিবালয়ে আজও (২৭ মে) বিক্ষোভ করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের পাশে বাদামতলা চত্বরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছেন তারা।
‘অবৈধ কালো আইন বাতিল কর, করতে হবে’, ‘কর্মচারী মানে না, অবৈধ কালো আইন’, ‘মানি না মানব না, অবৈধ কালো আইন’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘এক হও লড়াই কর, ১৮ লাখ কর্মচারী’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’—এমন স্লোগানে মুখরিত সচিবালয়।
বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজকরা জানিয়েছেন, এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে সরকারি চাকরিজীবীদের অধিকার খর্ব করা হয়েছে এবং তা ‘অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক’। তাদের দাবি, এ অধ্যাদেশ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
কর্মচারীদের মধ্যে যারা শুরুতে আন্দোলনে অংশ নেননি, তাদেরকেও আহ্বান জানানো হচ্ছে আন্দোলনে যোগ দিতে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, “এটা শুধু একজনের বা কয়েকজনের লড়াই নয়, এটা আমাদের সবার অধিকার রক্ষার লড়াই।”
প্রতিদিনের মতো আজও কর্মসূচিতে যুক্ত হয়েছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। মিছিলকারীরা সচিবালয়ের বিভিন্ন ভবনের সামনে গিয়ে স্লোগান দিয়ে সহকর্মীদের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক কর্মচারী বলেছেন, “আমাদের চাকরির নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং ন্যায্যতা এই কালো অধ্যাদেশ ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমরা এর বিরুদ্ধে না দাঁড়ালে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মুখোমুখি হবে ভয়ঙ্কর পরিণতির।”
আন্দোলনের চতুর্থ দিনেও কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে, প্রশাসন আন্দোলন পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানা গেছে।
কর্মচারীরা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা সচিবালয় চত্বরে অবস্থান ও বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন। প্রয়োজনে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
সচিবালয়ের এক নিরাপত্তাকর্মী জানিয়েছেন, এমন বিক্ষোভ সচিবালয়ে সচরাচর দেখা যায় না। প্রতিদিন ভিড় বাড়ছে।
মঙ্গলবারের (২৭ মে) বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো.
মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, “সরকারি চাকরি সংশোধনী অধ্যাদেশ ২০২৫ সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও একতরফা। আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। আমরা এই কালো আইন মানি না, মানব না। অবিলম্বে এ অধ্যাদেশ বাতিল করতে হবে, তা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”
মো. রবিউল ইসলাম বলেন, “এই আইনের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের হয়রানি, শাস্তি ও বদলির সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। এতে চাকরিজীবীদের নিরাপত্তাহীনতায় পড়তে হবে। আমরা এই আইনের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরব না।”
শাহিনুর রহমান বলেন, “১৮ লাখ সরকারি কর্মচারীর রক্তে আগুন জ্বলে উঠেছে। আমরা ঐক্যবদ্ধ। এই আন্দোলন শুধু সচিবালয় নয়; জেলা, বিভাগ ও উপজেলাতেও ছড়িয়ে পড়বে।”
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
অনেক কর্মকর্তা অফিসিয়াল ইউনিফর্মে বিক্ষোভে অংশ নেন এবং প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে নানা স্লোগানে সরকারের প্রতি দাবি জানান।
সরকারি চাকরি (সংশোধনী) অধ্যাদেশ, ২০২৫ সম্প্রতি জারি করা হয়েছে। এতে চাকরিজীবীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও বদলির ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই অধ্যাদেশকে ‘কর্মচারীবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের সরকারি কর্মচারীরাও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
ঢাকা/এএএম/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ক ষ ভ কর কর মকর ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আজও সচিবালয়ে বিক্ষোভ
‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ প্রত্যাহারের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো সচিবালয়ের ভেতরে বিক্ষোভ করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সোমবার (২৬ মে) সকাল থেকেই সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের সামনে বাদামতলায় জড়ো হতে থাকেন কর্মকর্তারা। সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যেই বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী সেখানে উপস্থিত হন।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের ব্যানারে এই আন্দোলন হচ্ছে।
আরো পড়ুন:
নির্বাচন ৩০ জুনের ওই পারে যাবে না, সবাই সন্তুষ্ট: প্রেস সচিব
বৈঠক শেষে মান্না: সরকারের মেয়াদ ‘স্পষ্ট’ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা
সকালে সচিবালয়ে দেখা গেছে, শত শত কর্মচারী দপ্তর ছেড়ে বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেন। মিছিল থেকে ‘অবৈধ কালো আইন মানব না’, ‘লেগেছে রে লেগেছে রক্তে আগুন লেগেছে’ ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি মো. নূরুল ইসলাম বলেন, “এ অধ্যাদেশ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
এর আগে গত ২২ মে সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ আকারে জারি করার প্রস্তাবে সায় দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এখন রাষ্ট্রপতির অনুমোদন দিলে তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে।
নতুন অধ্যাদেশের মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সহজেই শাস্তি, এমনকি চাকরি থেকে বরখাস্ত করার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে বলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে।
গত শনিবার থেকে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ-মিছিল করছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। তারা এই অনুমোদিত খসড়াটিকে ‘নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
ঢাকা/এএএম/ইভা