‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকারি বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম। 

মঙ্গলবার (২৭ মে) দুপুরে সচিবালয়ে এ অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে টানা চতুর্থ দিনের মতো কর্মসূচি চলাকালে এ ঘোষণা দেন  ফোরামের সভাপতি এ বি এম আবদুস ছাত্তার। 

এ বি এম আবদুস ছাত্তারের দাবি, “এই কালো আইন রাষ্ট্রীয় স্বার্থে নয়, বরং সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ঢুকে পড়া ষড়যন্ত্রকারীদের স্বার্থ রক্ষায় করা হয়েছে।”

আরো পড়ুন:

সচিবালয়ে নিরাপত্তা জোরদার, বিজিবি মোতায়েন

সচিবালয় ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ

তিনি বলেন, “আমরা সচিবালয়ে প্রবেশ করতে গিয়েছিলাম, কারণ আইনত আমাদের প্রবেশে বাধা দেওয়ার কোনো অধিকার কারও নেই। কিন্তু আজ আমাকে এবং আমার সহকর্মীদের গেটেই আটকে দেওয়া হয়েছে। আমি জানতে চাই, আমাদের অপরাধ কী?” 

তিনি আরও বলেন, “সরকার বলছে অধ্যাদেশ স্থগিত করতে চায়, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি, স্থগিতাদেশের লিখিত আদেশ না এলে আমাদের আন্দোলন চলবে। আন্দোলন এখন আর শুধু সচিবালয়ভিত্তিক নয়—এটা ছড়িয়ে গেছে সারা দেশের প্রতিটি অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ইউএনও অফিস এবং মাঠ প্রশাসনের সর্বত্র।”

অধ্যাদেশের বিষয়ে তিনি বলেন, “এটি এমন এক আইন, যেখানে কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিনা কারণ, বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করা যাবে। এটা কোনো সভ্য সমাজের নিয়ম হতে পারে না। এমনকি শেখ হাসিনার শাসনামলেও এ ধরনের ফ্যাসিস্ট আইন ছিল না।”

আওয়ামী লীগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়েছে, তাদের অঙ্গসংগঠনও নিষিদ্ধ হয়েছে। যারা তাদের দোসর, তাদের তালিকাও প্রকাশ হয়েছে। তারা এখনো সরকারের অভ্যন্তরে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কেন এখনো উচ্চপদে আছে? তাদের থাকার ন্যূনতম নৈতিক অধিকার নেই।”

তিনি আরো বলেন, “আমাদের মূল দাবি ছিল প্রশাসন থেকে আওয়ামী দোসরদের অপসারণ। অথচ তার পরিবর্তে সরকার আমাদের দমাতে কালো আইন নিয়ে এসেছে। এখন যেটা হচ্ছে সেটা একটা ভয়াবহ প্রশাসনিক সংকট।”

আন্দোলনের ফলস্বরূপ রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে ছাত্তার বলেন, “এই অচলাবস্থা সরকার সৃষ্টি করেছে। সরকার প্রধানকে বিভ্রান্ত করে কিছু ষড়যন্ত্রকারী এমন এক আইন করেছে, যার দায় সরকারকেই নিতে হবে। মাঠ পর্যায়ে পল্লীবিদ্যুৎ, শিক্ষা, এনবিআর, স্থানীয় সরকারসহ সবখানে এখন অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে।”

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ফোরামের সিনিয়র সহসভাপতি মো.

শাহাবুদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুবিনা ইয়াসমিন, সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলমগীর, কোষাধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম এবং ঢাকা বিভাগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

আজ বেলা ১১টার দিকে সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের পাশে বাদামতলা চত্বরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ পরিস্থিতিতে সচিবালয় এলাকায় কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সচিবালয়ের প্রধান ফটকে বিশেষায়িত বাহিনী সোয়াট মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া, সচিবালয়ের সামনে বিজিবি ও র‍্যাব মোতায়েন রয়েছে।

গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশ অনুমোদনের পর রবিবার গেজেট আকারে জারি হয়। এর আগে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর থেকেই কর্মচারীরা এটি বাতিলের দাবিতে মিছিল সমাবেশ করে আসছে।

তারা অভিযোগ করেন, এই আইন সরকারি কর্মচারীদের সাংবিধানিক অধিকারকে খর্ব করবে এবং চাকরির নিরাপত্তা অনিশ্চিত করে তুলবে।

অধ্যাদেশে যা আছে: অধ্যাদেশটিতে চারটি বিষয়কে অপরাধের আওতায় এনে তিনটি শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলো বরখাস্ত, অব্যাহতি এবং বেতন ও পদের গ্রেড কমিয়ে দেওয়া।

যেসব অপরাধের জন্য শাস্তি দেওয়া যাবে সেগুলো হলো- অনানুগত্য দেখানো ও কাজে বাধা দেওয়া, একক বা সমবেতভাবে কাজে অনুপস্থিত থাকা, কাউকে কাজ থেকে বিরত থাকতে উস্কানি দেওয়া এবং কাউকে কাজ করতে বাধা দেওয়া।

অধ্যাদেশের সরকারি কর্মচারীদের আচরণ ও দণ্ড সংক্রান্ত বিশেষ বিধান সংক্রান্ত ধারায় বলা হয়েছে- কোনো সরকারি কর্মচারী যদি এমন কোনো কাজে লিপ্ত হন যা অনানুগত্যের শামিল বা যা অন্য কোনো কর্মচারীদের মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কাজে বাধা তৈরি করে তাহলে সেটি হবে একটি অসদাচরণ।

এমন অপরাধের জন্য পদ বা বেতন গ্রেড অবনমিতকরণ, চাকরি হতে অপসারণ এবং এমনকি চাকরি থেকে বরখাস্ত করা যাবে।

আবার কেউ যদি একক বা দলবদ্ধভাবে ছুটি বা যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই কাজে অনুপস্থিত থাকেন বা এ ধরনের কাজ করতে কাউকে উস্কানি দেন বা কাউকে কাজ করতে বাধা দেন তাহলে তার জন্য একই শাস্তি প্রযোজ্য হবে।

এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বা এ বিষয়ে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি অভিযোগ গঠন করে সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শাও নোটিশ দেবেন। 

নোটিশের জবাব পেলে সেটি বিবেচনা করে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা হলে কিংবা তাকে কেন দণ্ড দেওয়া হবে না সেজন্য নোটিশ জারির সাত কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শাও নোটিশ দিবেন কর্তৃপক্ষ।

এরপর অভিযুক্ত ব্যক্তি কারণ ব্যাখ্যা করে জবাব দিলে তা বিবেচনা করে বা জবাব না দিলে অধ্যাদেশে যেসব শাস্তির কথা বলা হয়েছে তার যেকোনো দণ্ড দেওয়া যাবে।

কোনো কর্মচারীকে দণ্ড দেওয়া হলে তিনি ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে আপিল করতে পারবেন।

তবে রাষ্ট্রপতির আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না। যদিও দণ্ডপ্রাপ্ত কর্মচারী আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে পারবেন। এরপর রাষ্ট্রপতি যেভাবে মনে করবেন সেভাবে আদেশ দিতে পারবেন।

কর্মচারীদের যে কারণে আপত্তি: সরকারি কর্মচারীরা আশঙ্কা করছেন, এ অধ্যাদেশের কারণে সরকারি কর্মচারীদের যে কোনো নিবর্তনমূলক সিদ্ধান্তও বিনা প্রতিবাদে মেনে নিতে হবে। পাশাপাশি তাদের মত প্রকাশের অধিকারও ক্ষুণ্ণ হতে পারে।

কারণ কাজ বন্ধ করে সভা সমাবেশ কিংবা কর্মবিরতির মতো প্রতিবাদ কর্মসূচি তারা আর করতে পারবেন না, যেটিকে তারা তাদের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার বলে তারা মনে করেন।

আবার এটি প্রয়োগ করে যে কাউকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার মাধ্যমে ভিন্নমতে বিশ্বাসীদের জন্য চাকরি করা কঠিন হয়ে উঠতে পারে বলেও তারা অনেকে মনে করেন।

ঢাকা/এএএম/ইভা 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য আম দ র প রব ন অপর ধ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় সংসদের জন্য ২৩২ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জাতীয় সংসদের জন্য ২৩২ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সংসদ সচিবালয় কমিশন। মঙ্গলবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিশনের সভায় এ বাজেট অনুমোদন করা হয়।

সংসদ সচিবালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে পরিচালন ব্যয় ও উন্নয়ন খাতে ১৫৪ কোটি ৪ লাখ ৫ হাজার টাকা এবং আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে পরিচালন ও উন্নয়ন খাতে ২৩২ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট প্রাক্কলন, ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ২৪৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং ২০২৭-২৮ অর্থবছরে ২৫৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকার বাজেট প্রক্ষেপণ অনুমোদন করা হয়।

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ বাজেট অনুমোদন করা হয়।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব হাফিজ আহমেদ চৌধুরী এবং অর্থ বিভাগের সচিব মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ