ইসরায়েলি হামলায় ধসে পড়া ভবনজুড়ে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। তার ভেতর থেকেই হেঁটে বেরিয়ে আসছে একটি শিশু।

গতকাল সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওতে দেখা যাওয়া ফিলিস্তিনি শিশুটির নাম ওয়ার্দ শেখ খলিল।

ওয়ার্দ তার মা ও ছয় ভাই–বোনের সঙ্গে গাজা নগরীর ফাহমি আল-জারজাউই স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিল। স্থানীয় সময় গত রোববার রাতে ওই স্কুলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েল। হামলায় স্কুলের প্রায় অর্ধেক অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। হামলায় অন্তত ৩৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৮টি শিশু রয়েছে।

সিবিসি নিউজের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, স্কুলে হামলায় ওয়ার্দের মা ও পাঁচ (আল–জাজিরা ছয় বলেছে) ভাই–বোন নিহত হয়েছেন। ভাই-বোনদের বয়স ২ থেকে ১৮ বছর। তাঁরা সবাই হামলার সময় ঘুমিয়ে ছিলেন। ওয়ার্দের বাবা ও এক ভাই গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি, তাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ওয়ার্দের বয়স সাত বছর। যদিও কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে তার বয়স পাঁচ বা ছয় বছরও বলা হয়েছে।

আগুনের ভেতর থেকে ওয়ার্দকে হেঁটে বেরিয়ে আসতে দেখে উদ্ধারকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন বলে জানিয়েছে সিবিসি নিউজ।

গতকাল সিবিসি নিউজকে ওয়ার্দ বলেন, ‘আমি আগুন দেখে খুব ভয় পেয়েছিলাম। পুরো স্কুলে আগুন জ্বলছিল।’

সিবিসি নিউজের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, স্কুলে হামলায় ওয়ার্দের মা ও পাঁচ (আল–জাজিরা ছয় বলেছে) ভাই–বোন নিহত হয়েছেন। ভাই-বোনদের বয়স ২ থেকে ১৮ বছর। তাঁরা সবাই হামলার সময় ঘুমিয়ে ছিলেন। ওয়ার্দের বাবা ও এক ভাই গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি, তাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

একজন প্যারামেডিক এবং ওয়ার্দের চাচা আইয়াদ আল-শেখ খলিল ভিডিওতে জ্বলন্ত স্কুলভবনের ভেতর দেখা যাওয়া শিশুটি ওয়ার্দ বলে নিশ্চিত করেছেন।

আরও পড়ুনগাজার স্কুলে ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের ১৮ জনই শিশু১৭ ঘণ্টা আগে

আইয়াদ আল-শেখ খলিল সিবিসি নিউজকে বলেছেন, তিনি স্কুলে হামলার খবর পেয়েছিলেন। পরে বুঝতে পারেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে থাকা শিশুটি তাঁর ভাইয়ের মেয়ে ওয়ার্দ।

হামলার পর ওয়ার্দ বলেছে, ‘ক্ষেপণাস্ত্র আমাদের আঘাত করে ও স্কুলে আগুন ধরে যায়। আমার পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে।’

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের হামলার অন্যতম লক্ষবস্তুতে পরিণত হয়েছে স্কুল ও হাসপাতালগুলো। এর আগে গত বছরের আগস্টে গাজা নগরীর আল-তাবিন স্কুলে বড় হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েলি বাহিনী। সেই হামলায় ফজরের নামাজ আদায় করতে স্কুলটিতে জড়ো হওয়া শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র বয়স অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরা নীরব ছিলাম, ভয় আমাদের স্তব্ধ করে রেখেছিল’

‘সোহাগকে শত শত মানুষের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আমি সেখানে ছিলাম। সবাই তাঁর আর্তনাদ শুনেছে, কিন্তু আমরা সবাই নীরব ছিলাম। কেউ ভিডিও করছিল, কেউ দূর থেকে দেখছিল, কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করেনি। ভয় আমাদের স্তব্ধ করে রেখেছিল। সন্ত্রাসী আর চাঁদাবাজদের ভয় আমাদের সবাইকে পঙ্গু করে দিয়েছিল। এটি আমার জীবনে দুঃসহ স্মৃতি হয়ে থাকবে।’

বলছিলেন ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী পুরান ঢাকার এক রাসায়নিক ব্যবসায়ী।

গত বুধবার সন্ত্রাসীরা চাঁদার টাকা না পেয়ে সোহাগকে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে তুলে এনে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের কাছে নিয়ে পিটিয়ে এবং ইট-পাথর দিয়ে আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই ঘটনায় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততার কথা জানা গেছে। নিহত লাল চাঁদ একসময় যুবদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরান ঢাকার ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখন ভাবি, আমরা যদি সেদিন চুপ না থাকতাম, একসঙ্গে প্রতিবাদ করতাম, তাহলে হয়তো সোহাগ বেঁচে থাকতেন। কিন্তু আমরা ভয়ের কারণে আগাতে পারিনি। এ কথা মনে পড়লে অনুশোচনা হয়। আমরা চাই এমন নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি না ঘটুক। চাঁদাবাজ আর সন্ত্রাসীদের যেন কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি হয়।’

৪ নম্বর রজনী বোস লেনে ‘সোহানা মেটাল’ নামে দোকান আছে সোহাগের। ওই দোকানের পাশে দোকান আছে মোহাম্মদ আলী নামের এক ব্যবসায়ীর।
শরীয়তপুর স্টোর নামের ওই দোকানের মালিক ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে তাঁর দোকান থেকে তুলে নিয়ে যেতে দেখেছেন। মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সোহাগ মাঝেমধ্যে দোকানে আসতেন। গত বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আমি দোকানে কাজ করছিলাম। এমন সময় দেখি ২০ থেকে ২২ জন যুবক ও তরুণ এসে সোহাগকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। এ সময় আমিসহ অন্যান্য দোকানদার সোহাগকে নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তারা বলে, “চুপ করে দোকানে বসে থাক, নইলে খবর আছে।” এরপর তারা সোহাগকে চড়–থাপ্পড় ও কিলঘুষি দিয়ে টেনেহিঁচড়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের গেটের সামনে নিয়ে যায়। ঘণ্টাখানেক পর শুনতে পাই সোহাগকে হত্যা করা হয়েছে।’

‘চাঁদা না দেওয়ায় হত্যা’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুরান ঢাকার তামা–কাঁসার এক ব্যবসায়ী বলেন, সোহাগ কয়েক মাস আগে ওই এলাকায় দোকান ভাড়া নেন। প্রায় চার মাস ধরে মাহমুদুল হাসান (মহিন), ছোট মনির, আলমগীরসহ কয়েকজন সোহাগের কাছে প্রতি মাসে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। পরে বিএনপির এক নেতার মধ্যস্থতায় মাসে দুই লাখ টাকায় রফা হয়। গত বুধবার বিকেলে সোহাগের কাছে তারা চাঁদা নিতে আসে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁকে দোকান থেকে তুলে নিয়ে যায়।

ফ্ল্যাটে ঝুলছে তালা

কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন আবাসিক এলাকায় একটি বাড়ির নবম তলায় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন সোহাগ। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ফ্ল্যাটে তালা ঝুলছে।

বাড়ির অষ্টম তলার ভাড়াটে মো. আলী নুর বলেন, ‘সোহাগ ভাই খুব শান্ত স্বভাবের ছিলেন। ঈদ ও বিভিন্ন উৎসবে প্রতি ফ্ল্যাটে খাবার ও উপহারসামগ্রী পাঠাতেন। গত সোমবার সকালে দোকানে যাওয়ার সময় সোহাগ ভাইয়ের সাথে আমার শেষ কথা হয়। তিনি খুব চাপা স্বভাবের ছিলেন।’

ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

সারা দেশে হত্যা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে প্রতিবাদ সভা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনের সড়কে এ প্রতিবাদ সভা হয়।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিগবাতুল্লাহ, প্রকাশনা সম্পাদক আজিজুর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ